সিতেশ বাবুর চিড়িয়াখানা যাবার উপায় ও ভ্রমন টিপস

বন্যপ্রাণী দেখতে ছোট বড় কার না ভালো লাগে। আর তা যদি চোঁখের সামনে হয় তাহলে তো আর কথাই নাই। এমনি একটি বন্যপ্রাণী সংরক্ষন এলাকা হলো মৌলভীবাজার জেলার শ্রীমঙ্গল উপজেলার সিতেশ বাবুর চিড়িয়াখানা। যেখানে প্রতিদিন স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা, কিন্ডারগার্টেনের শিক্ষা সফর সহ দেশের হাজার হাজার দর্শনার্থীরা ভিড় করেন বন্য প্রাণী দেখতে। বিষয়টি সিতেশ বাবুর চিড়িয়াখানা যাবার উপায় ও ভ্রমন টিপস এর উপর।

সিতেশ বাবুর চিড়িয়াখানা (Shitesh Babu’s Zoo) মৌলভীবাজার জেলার শ্রীমঙ্গল উপজেলার একটি সমৃদ্ধ ও একমাত্র চিড়িয়াখানা (যেটি বর্তমানে বন্য প্রানী সেবা ফাউন্ডেশন)। চিড়িয়াখানটি শ্রীমঙ্গল শহরের অদূরে হাইল হাওরের কাছে অবস্থিত। শ্রীমঙ্গল শহর থেকে প্রায় ১ কি.মি পশ্চিমে একশত আশি একর জায়গাজুড়ে সিতেশ বাবুর গড়ে তুলেন।

বাংলাদেশের অন্যতম পর্যটন নগরী শ্রীমঙ্গলে এই চিড়িয়াখানাটি স্থাপিত হওয়ায় দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের পর্যটকসহ বিদেশি অনেক পর্যটকও প্রতিদিন ভিড় করেন এ চিড়িয়াখানায়। অত্র এলাকার মানুষের শিক্ষার সহায়ক একটি ক্ষেত্রও বলা যায় এই চিড়িয়াখানাকে।

সিতেশ বাবুর চিড়িয়াখানা
সিতেশ বাবুর চিড়িয়াখানা, লজ্জাবতী বানর

চিড়িয়াখানার সংক্ষিপ্ত বিবরণ

১৯৭১ সালের বাংলাদেশ স্বাধীনের পূর্বে সিতেশ বাবুর পিতার তত্ত্বাবধানে তাদের নোয়াগাঁওয়ের বাড়িতে একটি ছোটখাটো চিড়িয়াখানা ছিল। তারপর ১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দে সিতেশ বাবু তার নিজ বাড়িতে পিতার দেখানু পথে শখের বসবর্তি হয়ে চিড়িয়াখানাটিকে আরও কিছুটা প্রশস্ত করে গড়ে তুলেছিলেন। পরবর্তিতে দর্শনার্থী ভাড়ার পাশাপাশি প্রাণীদের রাখার স্থান সংকুলান না হওয়ায় ২০০৯ খ্রিষ্টাব্দে চিড়িয়াখানটি স্থানান্তর করেন শ্রীমঙ্গল শহর থেকে প্রায় ১ কিলোমিটার দূরে হাইল হাওরের কাছাকাছি, ১.৮০ একর এলাকাজুড়ে সিতেশ রঞ্জন বাবুর রূপসপুর মৎস্য খামার বাড়ীতে। সিতেশ বাবুর চিড়িয়াখানাটি বর্তমানে পরিচালনা করেন সিতেশ বাবুর ছেলে সজল দেব।

সিতেশ বাবুর চিড়িয়াখানা
সিতেশ বাবুর চিড়িয়াখানা

কি কি আছে সিতেশ বাবুর চিড়িয়াখানায়

সিতেশ বাবুর পরিবার দীর্ঘ ৪৭ বছর ধরে বিভিন্ন জায়গা থেকে বিভিন্ন ধরনের প্রাণি সংগ্রহের পর বর্তমানে এটি একটি পরিপূর্ণ চিড়িয়াখানায় পরিণত হয়েছে। চিড়িয়াখানায় সংরক্ষিত বিভিন্ন ধরনের জীব জন্তুর মধ্যে রয়েছে: দেশের একমাত্র বিলুপ্ত প্রায় সাদা বাঘ, বিরল প্রজাতির সোনালী বাঘ, হিংস্র মেছোবাঘ, সোনালী হনুমান, সজারু, চারপাশে আতপ চালে গন্ধ ছড়ানো গন্ধগোকুল,নিশি বক, পাহাড়ি বক, সোনালী কচ্ছপ, বন মোরগ, ডাহুক, জংলী রাজহাস, সবুজ ঘুঘু, ধনেশ, তিলা ঘুঘু, রাজ সরলী, চা পাখি, অজগর, তোতা,ময়না, কচ্চপ, ভল্লুক ও অসংখ্য বিরল প্রজাতির প্রাণী।

এছাড়াও আছে লজ্জাবতী বানর, লাল উড়ন্ত কাঠবিড়ালি, হনুমান, মায়া হরিণসহ প্রায় দেড়শ প্রজাতির জীবজন্তু। রয়েছে কালো-হলুদ ডোরাকাটা ত্রিভুজাকৃতির বিলুপ্তপ্রায় শঙ্খিনীণি, আছে হিমালয়ান সিভিটকেট, সোনালি কচুয়া, বন্য খরগোশ,মথুরা, বন্য রাজহাঁস, লেঞ্জা, ধলা বালিহাঁস, প্যারিহাঁস,চিত্রা হরিণ, কোয়েল, লাভবার্ড, কাসে-চড়া,বনরুই, বিভিন্ন রঙের খরগোশ, সোনালি খাটাশ, বড় গুইসাপ, ধনেশ, হিমালয়ান টিয়া, ময়না, ময়ূর, কালিম, বাজিরিক, শঙ্খ চিল, হরিয়াল প্রভৃতিও।

বন্য পশুপাখি সংগ্রহের ব্যাপারে সিতেশ রঞ্জন বাবুর অভিমত:

বনের প্রাণীরা লোকালয়ে এসে মানুষের হাতে ধরা পড়ে। মানুষ আহতাবস্থায় প্রাণীগুলো চিড়িয়াখানায় দিয়ে যায়। কখনোবা খবর পেয়ে নিজেরাই প্রাণীগুলোকে গিয়ে উদ্ধার করে নিয়ে আসি।

চিড়িয়াখানার প্রাণীদের খাবার

চিড়িয়াখানার পশুপাখিদের খাবার হিসাবে সাধারণত সরবরাহ করা হয় সবজি, কাঁচা মাংস, বিচি, বাদাম। তবে বিশাক্ত শঙ্খিনীণি সাপের জন্য সরবরাহ করতে হয় টিকটিকি, সাপ, মাটিয়া সাপ লেঞ্জা (এরেলা সাপ)।

সাদা বাঘ

সীতেশ বাবুর সাদা বাঘ
সাদা বাঘ

সীতেশ বাবুর সাদা বাঘ সারা পৃথিবীর মধ্যে মাত্র গুটি কয়েক আছে। এই সাদা বাঘ একটা সিতেশ বাবুর চিড়িয়াখানায় রয়েছে। সবচেয়ে আশ্চর্যের বিষয় হলো সাদা বাঘটির চোখ ক্ষণে ক্ষণে বদলায়- কখনও সাদা, কখনও হলুদ, কখনও লাল হয়। বিলুপ্তপ্রায় এই বাঘ সংগ্রহের কারণে তার সংগৃহীত এই বাঘটিকে সিতেশবাবুর সাদা বাঘ বলেই চেনেন সবাই। ধবধবে সাদা এ বাঘটি ২.৫ ফুট দীর্ঘ আর উচ্চতায় প্রায় ১.৫ ফুট। হিংস্র প্রকৃতির এ বাঘটির প্রধান খাদ্য মাংস।

চিড়িয়াখানার টিকেট মূল্য ও প্রবেশের সময়সূচী

সিতেশ বাবুর চিড়িয়াখানার প্রবেশ করতে ৩০ টাকা মূল্যর (সময়ের ব্যবধানে তা কম বেশি হতে পারে) টিকেট সংগ্রহ করতে হবে। এবং প্রতিদিন  দুপুর ১২.০০ টা থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত খোলা থাকে।
তবে যোগাযোগ করে চিড়িয়াখানায় যাওয়া ভালো:
যোগাযোগের জন্য মোবাইল নম্বর: +৮৮০১৭৩৬৬৬১১৭৬

সিতেশ বাবুর চিড়িয়াখানায় যাবার উপায়

শ্রীমঙ্গল সিতেশ বাবুর চিগিয়াখানায় যাতায়োতের জন্য ঢাকাসহ সারাদেশের সাথে শ্রীমঙ্গলের যোগাযোগ ব্যবস্থা খুবই ভালো। আপনি আন্তনগর ট্রেন, বাস, কিংবা প্রাইভেট গাড়ী করে খুব সহজে অল্প সময়ে পরিবার-পরিজন নিয়ে শ্রীমঙ্গলের সিতেশ বাবুর চিড়িয়াখানা দর্শন করতে পারেন।
ঢাকা কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন থেকে আন্তনগর ট্রেন সকাল ৬.২০ মিনিটে পারাবত এক্সপ্রেস, প্রতিদিন দুপুর ১১.১৫ মিনিটে জয়ন্তিকা এক্সপ্রেস, প্রতিদিন বিকাল ৩.০০ টায় কালনী এক্সপ্রেস, প্রতিদিন রাত ৮.৩০ মিনিটে উপবন এক্সপ্রেস যাওয়া আসা করে। শ্রীমঙ্গল রেলওয়ে স্টেশনে সবগুলো ট্রেন থামানো হয়। ঢাকা থেকে শ্রীমঙ্গল আসতে প্রায় ৫ ঘন্টার মতো সময় ব্যয় হবে।

তাছাড়া ঢাকা ফকিরাপুল ও সায়দাবাদ থেকে, হানিফ এন্টারপ্রাইজ, শ্যামলী পরিবহন, এনা ট্রান্সপোর্ট, সিলেট এক্সপ্রেস, মামুন সহ ভালো মানের বাস চলাচল করে। আপনি চাইলে বাসে করে শ্রীমঙ্গল আসতে পারেন।

চট্রগ্রাম থেকেও ট্রেনে করে শ্রীমঙ্গল দর্শনীয় স্থান, হোটেল ও রিসোর্ট এ আসা যায়। সকাল ৭.২০ মিনিটে পাহাড়িকা এক্সপ্রেস, রাত ৯.৪৫ মিনিটে উদয়ন এক্সপ্রেস চলাচল করে। চট্রগ্রাম থেকে শ্রীমঙ্গল আসতে প্রায় ৭ ঘন্টার মতো সময় ব্যয় হতে পারে।
বাসের টিকিট এপস থেকে কাটার পরামর্শ রইল, বিভিন্ন সময় ভাড়ার উপর ডিসকাউন্ট পাওয়া যায়।

শ্রীমঙ্গল আসার পর সি এন জি, ট্যাক্সি, অটোরিক্সায় চড়ে চিড়িয়াখানায় যাওয়া যায়। ভাড়া নেবে জনপ্রতি ৪০ টাকা। গাড়ীতে উটার আগে দরদাম করে ভাড়া কনফার্ম করে নিন।

কোথায় থাকবেন

শ্রীমঙ্গলে অনেক ছেটো বড় হোটেল ও রিসোর্ট রয়েছে। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য:

  • গ্র্যান্ড সুলতান টি রিসোর্ট এন্ড গলফ, ফোন: +৮৮০২৯৯৭৭৩৮৫০১-৩
  • নভেম ইকো রিসোর্ট, লেমন গার্ডেন রিসোর্ট, মোবাইল- +৮৮০১৭০৯৮৮২০০২১
  • লেমন গার্ডেন রিসোর্ট: মোবাইল নম্বর: +৮৮০১৭৯৬-২৬৩৩৩০
  • দুসাই রিসোর্ট এন্ড স্পা: ফোন নম্বর +৮৮০৮৬১৬৪১০০
  • টি হেভেন রিসোর্ট: মোবাইল নম্বর : +৮৮০১৭০৮-০৩৩৫৪৪
  • নিসর্গ ইকো-রিসোর্ট: মোবাইল নম্বর: +৮৮০১৭৬৬৫৫৭৭৮০
  • শান্তি বাড়ি ইকো রিসোর্ট: মোবাইল নম্বর: +৮৮০১৭১৬-১৮৯২৮৮
  • গ্র্যান্ড সেলিম রিসোর্ট: মোবাইল নম্বর: +৮৮০১৭০৯-৮৮৩৩৩৩

আরও পড়ুন: শ্রীমঙ্গল দর্শনীয় স্থান, হোটেল ও রিসোর্ট

শ্রীমঙ্গলে রয়েছে বেশ কিছু আবাসিক হোটেল

হোটেল মহসিন প্লাজা মোবাইল নাম্বার: +৮৮০১৭১২-৩১৭৫১৫
টি টাউন রেস্ট হাউস: মোবাইল নাম্বার  মোবাইল নাম্বার: +৮৮০১৭১৮-৩১৬২০২
হোটেল ইউনাইটেড রেসিডেন্সিয়াল মোবাইল নাম্বার: +৮৮০১৭২৩-০৩৩৬৯৫
হোটেল আল-রহমান মোবাইল নাম্বার: +৮৮০১৭১২-৩১৭৫১৫
হোটেল মেরিনা: মোবাইল নাম্বার  মোবাইল নাম্বার: +৮৮০১৭৮৭-৩৩৩৫৪৪

কোথায় খাবেন

শ্রীমঙ্গল সিতেশ বাবুর চিড়িয়াখানা ভ্রমনে আসলে আপনি যদি রিসোর্টে না থাকেন তাহলে বাইরে খাবারের প্রয়োজন হবে। এর জন্য শ্রীমঙ্গলে অবস্থিত পানসী রেস্টুরেন্টের বেশ সুনাম রয়েছে এই রেস্টুরেন্টে আপনি অনেক কম দামে ভালো মানের খাবার পাবেন।

তাছাড়া কুটুম বাড়ী, হোটেল সাতকড়া, গ্র্যান্ড তাজ সহ ভালো মানের আরো হোটেল রয়েছে যেগুলোতে ভালো খাবার পাওয়া যায়, এছাড়া শ্রমঙ্গলের বিখ্যাত নীল কন্ঠ কেবিনের বিখ্যাত সাত রঙের চা-এর স্বাদ নিতে ভুলবেন না।

সতর্কতা

  • চিড়িয়াখানার প্রাণীদের বিরক্ত করা যাবে না।
  • প্রাণীদের খুব কাছে যাওয়া যাবে না, তাহলে আহত হওয়ার আশংখা থাকে।
  • প্রাণীদের জন্য কর্তৃপক্ষের নিষেধকৃত কোন খাবার দেওয়া যাবে না।
  • বাচ্ছাদের সাবধানে রাখুন।
  • সেবাশ্রমের ভিতরে হৈচৈ করিবেন না।

FAQ

সিতেশ বাবুর চিড়িয়াখানাুট কোথায় অবস্থিত?
মৌলভীবাজার জেলার শ্রীমঙ্গলে অবস্থিত।

সিতেশ বাবুর চিড়িয়াখানার আয়তন কত?
সিতেশ বাবুর চিড়িয়াখানার আয়তন ১.৮০ একর।

শ্রীমঙ্গল কিসের জন্য বিখ্যাত
শ্রীমঙ্গল চা -এর জন্য বিখ্যাত।

ঢাকা থেকে শ্রীমঙ্গলের দূরত্ব কত কি.মি?
ঢাকা থেকে শ্রীমঙ্গলের দূরত্ব প্রায় ১৮০ কি.মি।

শ্রীমঙ্গল থেকে সিতেশ বাবুর চিড়িয়াখানার দূরত্ব কত কি.মি?
শ্রীমঙ্গল থেকে সিতেশ বাবুর চিড়িয়াখানার দূরত্ব প্রায় ১ কি.মি।

শেষকথা: শিক্ষা সফর হোক বা পারিবারিক সফর হোক প্রাণীদের সাথে সময় কাটাতে সিতেশ বাবুর চিড়িয়াখানা এর বিকল্প নেই।