আঠারবাড়ী জমিদার বাড়ি: ময়মনসিংহের প্রসিদ্ধ ঐতিহাসিক অঞ্চল অবস্থিত । এটা ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলায় অবস্থিত। এই আঠারবাড়ি গ্রামেই অবস্থিত প্রায় আড়াই শত বৎসর পুরানো আঠারবাড়ী জমিদার বাড়ি (Atharabari Zamidar Bari) । ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলা থেকে প্রায় ১৪ কিলোমিটার দূরে এই জমিদার বাড়ির অবস্থিত।
আঠারবাড়ি জমিদার বাড়ির নামকরণ
লোকমুখে শোনা যায় আঠারবাড়ি গ্রাম পূর্বে শিবগঞ্জ বা গোবিন্দ বাজার নামে পরিচিত ছিল। জমিদার দীপ রায় চৌধুরী তার ছেলের নামে এই জমিদারি ক্রয় করেন। এরপর এলাকার নাম পরিবর্তন করে রায় বাজার রাখেন।
জানা যায় এই রায় বাবু এখানে রাজবাড়ী, পুকুর ও পরিখা তৈরী করে। অতঃপর তাদের আদি নিবাস যশোর থেকে রাজ পরিবারের কাজর্কম দেখাশুনার জন্য আঠারটি হিন্দু পরিবার এখানে নিয়ে আসেন এবং তাদের বসবাসের জন্য বাড়ী তৈরী করে দেন। তখন থেকেই এই স্থানটি আঠারবাড়ী নামে পরিচিত হয়ে উঠে।
কেন এত তাৎপর্যপূর্ণ আঠারবাড়ী জমিদার বাড়ি
কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ১৯২৬ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারী আঠারবাড়ীর তৎকালীন জমিদার প্রমোদ চন্দ্র রায় চৌধুরীর আমন্ত্রণে আঠারবাড়ি জমিদারবাড়ি ভ্রমণ করেছিলেন। সে সময় কবিগুরুর সম্মানে মধ্যাহ্নভোজ, বাউল, জারি গানের আয়োজন করা হয়েছিল। আরো জানা যায় আঠারবাড়ির জমিদার প্রমোদ চন্দ্র রায় চৌধুরী শান্তিনিকেতনের শিক্ষার্থী ছিলেন এবং কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তার শিক্ষক ছিলেন।
এছাড়া নন্দিত কথা সাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদ ২০০৩ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘চন্দ্রকথা’ মুভির শুটিং এই জমিদার বাড়িতেই করেছিলেন।
বর্তমান অবস্থা
১৯৬৮ সালে আঠারবাড়ী জমিদার বাড়িতে আঠারবাড়ী ডিগ্রি কলেজ প্রতিষ্ঠা করা হয়। কলেজের প্রধান ফটক দিয়ে ভিতরে ঢুকলেই আছে বিশাল খেলার মাঠ ও জমিদার বাড়ির অন্দরমহল। অন্দরমহল থেকে আর একটু সামনে অগ্রসর হয়ে কলেজের ভিতরের দিকে আছে দরবার হল ও কাছারি বাড়ি। কাছারি বাড়ি ভবনের নিকটেই ঐতিহ্যবাহী রাণীপুকুরের অবস্থান।
প্রতিনিয়ত দর্শনার্থী সংখ্যা দেখতে পাচ্ছেন। যাতায়াত ব্যবস্থার উন্নতি হওয়ায় এখন অনেকেই এখানে জমিদার বাড়ি দেখার জন্য আসেন। কিন্তু আগের সেই জৌলুস নেই। তবে আছে কবিগুরুর হাতের স্পর্শের স্মৃতিচিহ্ন।
কীভাবে যাবেন?
ঢাকা থেকে রেল বা বাসযোগে খুব সহজেই আঠারোবাড়ি যাওয়া যায়। ময়মনসিংহ শহর থেকে সিএনজি অথবা বাসে করে আপনি আঠারোবাড়ি যেতে পারেন। ময়মনসিংহ শহর থেকে এক ঘন্টার পথ।
আরও পড়ুন:
প্রয়াস সেনা বিনোদন পার্ক, রংপুর
ফ্যান্টাসি কিংডম | সাভার – ঢাকা
তাজহাট জমিদার বাড়ি
শ্রীমঙ্গলের সেরা হোটেল ও রিসোর্ট- ভ্রমন টিপস্
বরিশালের ঐতিহাসিক লাকুটিয়া জমিদার বাড়ী
কোথায় থাকবেন?
ময়মনসিংহ শহরে অনেক ভালো ভালো হোটেল রয়েছে। হোটেল আমির ইন্টারন্যাশনাল, সিলভার ক্যাসেল, হোটেল হেরা ইত্যাদি ভালো ভালো হোটেল রয়েছে।
এছাড়া ময়মনসিংহ শহরে অনেক ভালো ভালো রেস্তোরাঁ রয়েছে। যেমন ধানসিঁড়ি, রসনা বিলাস, সারিন্দা।
ময়মনসিংহ জেলার বিখ্যাত দর্শনীয় স্থান সমূহ
রামগোপালপুর জমিদার বাড়ি, ব্রহ্মপুত্র নদ, বিপিন পার্ক, বোটানিক্যাল গার্ডেন, শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদীন সংগ্রহশালা, ময়না দ্বীপ, আলেকজান্ডার ক্যাসেল, মেঘমাটি ভিলেজ রিসোর্ট, শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন পার্ক, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, সন্তোষপুর রাবার বাগান, শশী লজ, মুক্তাগাছা জমিদার বাড়ি।
Faq’s
ময়মনসিংহ বিভাগের প্রত্নতাত্ত্বিক স্থাপনাগুলো কি কি?
আলেকজান্ডার ক্যাসল, শশী লজ, ময়মনসিংহ জাদুঘর, ভুঁইয়া বাড়ী জামে মসজিদ, আট-আনী জমিদার বাড়ি, হর রামেশ্বর মন্দির, পাথরের শিব মন্দির, জোড় মন্দির, তিন শিব মন্দির, শশী কান্তের প্রাসাদ, এন এন পাইলট উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়, গৌরীপুর লজ।
ময়মনসিংহ বিভাগ কত সালে প্রতিষ্ঠিত হয়?
২০১৫ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর ৪টি জেলা নিয়ে ময়মনসিংহ বিভাগ গঠিত হয়।
ময়মনসিংহ বিভাগের জেলাগুলো কী কী?
বাংলাদেশের ৮ম প্রশাসনিক বিভাগ। ময়মনসিংহ, জামালপুর, নেত্রকোণা ও শেরপুর এই ৪টি জেলা নিয়ে ময়মনসিংহ বিভাগ গঠিত।
ময়মনসিংহ জেলার আয়তন কত বর্গ কিলোমিটার?
ময়মনসিংহ জেলার মোট আয়তন ৭১৬.০৮ বর্গ কিলোমিটার।
শেষকথা:
বাংলাদেশের প্রতিটি বিভাগে রয়েছে প্রাচীন সব জমিদারদের পুরোন বাড়ী। ঐতিহাসিক এসব বাড়ী ও বাড়ীর স্থাপনাগুলো এখন মানুষের প্রদান আকর্ষন হয়ে আছে। এমনি একটি ঐতিহাসি বাড়ী হলো আঠারবাড়ী জমিদার বাড়ি।