বাসর রাতের আমল – দোয়া ও বিশেষ নামাজ।

বাসর রাতের আমল: মহান আল্লাহ তাআলা মানুষের সুখ-শান্তি ও বরকতম জীবন যাপনের জন্য পবিত্র বিয়ের বিধান করেছেন। মুসলিম উম্মাহর জীবনে অন্যতম একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হচ্ছে বিয়ের প্রথম রাত বা বাসর রাত। সেই কল্পনাময় এই রাতের আমল ও সুন্নত সমূহ এখানে তুলে ধরা হলো-

বিয়ে শুধু জৈবিক চাহিদা পূরণের উপায় নয়। এটি আত্মিক প্রশান্তি লাভের উপকরণও। দাম্পত্য জীবনকে বরকতময় করতে বিয়ের প্রথম রাত থেকেই আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করতে হবে।

আল্লাহর কিতাব ও রাসুলুল্লাহ (সাঃ) এর হাদিসে এই গুরুত্বপূর্ণ বাসর রাতের আমল ও সুন্নত এবং বাসর রাতের দোয়া ও নামাজ সম্পর্কে বলা হয়েছে। সেই আমল,সুন্নত, দোয়া, নামাজ ও নিয়ম-কানুন থাকছে এই আলোচনায়।

বাসর রাতের আমল ও সুন্নত। বাসর রাতের নিয়ম কানুন 

বিয়ের প্রথম রাত নিয়ে আমাদের সকলের মনেই অনেক কল্পনা জল্পনা সৃষ্টি হয়। রাসুলুল্লাহ (সাঃ) এর সুন্নত অনুসারে বাসর রাতের কার্যক্রম গুলোকে নেকিতে পরিণত করা যায়। বাসর রাতে আমল ও সুন্নত সমূহ হলো:

  • বাসর ঘরে স্ত্রীর সঙ্গে কোমলতাময় আচরণ করা।
  • সম্ভব হলে প্রথম রাতেই স্ত্রীর মোহরানা আদায় করা।
  • স্বামী ও স্ত্রী একসঙ্গে দুই রাকাত নফল নামাজ আদায় করা।
  • নফল সালাতের পর নিজেদের ভবিষ্যৎ জীবনের জন্য বরকতময় দোয়া করা।
  • স্ত্রীর মাথায় হাত রেখে তার জন্য দোয়া করা।
  • সম্ভব হলে একে অপরকে দুধ বা মিষ্টি জাতীয় খাবার খাওয়ানো।
  • একে অপরের সঙ্গে ভালোবাসা পূর্ণ ভাব বিনিময় করা।
  • দাম্পত্য জীবনে সৎভাবে সংসার করার নিয়ত করা ও আল্লাহকে ভয় করা।
  • সহবাস করতে চাইলে সহবাসের দোয়া পড়া।

আরও পড়ুন: দ্রুত বিবাহের দোয়া ও আমল। তাড়াতাড়ি বিয়ে হওয়ার আমল

বাসর রাতের দোয়া ও নামাজ

বিয়ের পর প্রথম সাক্ষাতে স্বামী-স্ত্রী একত্রে দুই রাকাআত নফল সালাত দাঁড়িয়ে আদায় করবে। বাসর রাতের আমল ও সুন্নত সম্পর্কে প্রখ্যাত সাহাবি হযরত আব্দুল্লাহ ইবনু মাসউদ (রাঃ) বলেন-

“স্ত্রী স্বামীর কাছে গেলে স্বামী দাঁড়িয়ে যাবে এবং স্ত্রী তার পেছনে দাঁড়িয়ে যাবে। অতঃপর তারা একসঙ্গে দুই রাকাআত সালাত আদায় করবে। রাতের বেলা সালাত আদায় করলে কেরাত উচ্চস্বরে পড়বে আর যদি দিনের বেলা সালাত আদায় করে তবে নিম্নস্বরে পড়বে।

হযরত আব্দুল্লাহ ইবনু মাসউদ (রাঃ)- আরো বলেন-

“ভালবাসা ও সুসম্পর্ক আল্লাহর পক্ষ থেকে আসে। আর ঘৃণা বা রাগ-গোস্বা আসে শয়তানের পক্ষ থেকে। কারণ আল্লাহর হালাল করা বিষয়ে সে (শয়তান) তোমাদের মাঝে ঘৃণা সৃষ্টি করতে চায়। সুতরাং তোমার স্ত্রী তোমার নিকটে আসলে তাকে বল, সে যেন তোমার পেছনে দাঁড়িয়ে দুই রাকাআত সালাত আদায় করে।” (তাবারানি, মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বা, মুসান্নাফে আব্দুর রাজ্জাক)

বাসর রাতের দোয়া সমূহ । বাসর রাতে নামাজের পর দোয়া 

বাসর রাতের আমল ও সুন্নত সমূহের মধ্যে অন্যতম হচ্ছে নামাজের পর দোয়া। উভয়ে একসাথে বা নিজ নিজ ভাবে দোয়া করবে। এক্ষেত্রে মহান আল্লাহর কাছে হাত উঠিয়ে উভয়ে নিম্নোক্ত দোয়াটি পাঠ করা সুন্নত-

আরবি: اَللّهُمَّ بَارِكْ لِىْ فِىْ أَهْلِىْ وَبَارِكْ لَهُمْ فِىَّ، اَللّهُمَّ اجْمَعْ بَيْنَنَا مَا جَمَعْتَ بِخَيْرٍ و فَرِّقْ بَيْنَنَا إِذَا فَرَّقْتَ إِلَى خَيْرٍ

বাংলা উচ্চারণ: “আল্লা-হুম্মা বারিকলি ফী আহলি, ওয়া বারিক লাহুম ফিই’য়্যা। আল্লা-হুম্মাজমা বাইনানা মা জামা’তা বিখাইরিন, ওয়া ফাররিক বাইনানা ইযা ফাররাক্বতা ইলা খাইরিন।”

বাংলা অর্থ: “হে আল্লাহ! আপনি আমার জন্য আমার পরিবারে বরকত দিন এবং আমার ভিতরেও বরকত দিন আমার পরিবারের জন্য। হে আল্লাহ! আপনি তাদের থেকে আমাকে রিজিক দিন আর আমার থেকেও তাদেরকে রিজিক দিন।

হে আল্লাহ! আপনি আমাদের যতদিন একত্রে রাখেন কল্যাণের সাথেই একত্রে রাখুন। আর আমাদের মাঝে বিচ্ছেদ ঘটালে কল্যাণের পথেই বিচ্ছেদ ঘটান।” (তাবারানি)

এছাড়াও স্বামী স্ত্রী তাদের নিজ নিজ মনোবাসনা উল্লেখ করে আল্লাহর কাছে দোয়া করতে পারে।

বাসর রাতে স্ত্রীর কপালে হাত রেখে দোয়া

বাসর রাতের আমল ও সুন্নত সমূহের অন্যতম হলো স্ত্রীর কপালে হাত রেখে দোয়া করা। নামাজ ও মোনাজাতের পর স্ত্রীর কপালে হাত রেখে নিম্নোক্ত দোয়াটি পড়বে-

আরবি: اللَّهُمَّ إِنِّي أَسْأَلُكَ خَيْرَهَا، وَخَيْرَ مَا جَبَلْتَهَا عَلَيْهِ، وَأَعُوذُ بِكَ مِنْ شَرِّهَا، وَشَرِّ مَا جَبَلْتَهَا عَلَيْهِ،

বাংলা উচ্চারণ: “আল্লা-হুম্মা ইন্নি আসআলুকা খাইরাহা, ওয়া খাইরা মা জাবালতাহা আলাইহি, ওয়া আ’উযুবিকা মিন শাররিহা, ওয়া শাররি মা জাবালতাহা আলাইহি।”(আবু দাউদ)

বাংলা অর্থ: “হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে তার (স্ত্রীর) কল্যাণ ও যে কল্যাণের ওপর তাকে সৃষ্টি করেছেন, তার জন্য প্রার্থনা করছি। আর আমি তার (স্ত্রীর) অমঙ্গল ও যে অমঙ্গলের ওপর তাকে সৃষ্টি করেছেন, তা থেকে আপনার কাছে আশ্রয় চাইছি।”

বাসর রাতে মোহরানা আদায়। দেনমোহর দেওয়ার উত্তম সময়

বাসর রাতেই স্ত্রীর জন্য ধার্যকৃত মোহরানা দিয়ে দেওয়া সুন্নত। তবে সামর্থ্য না থাকলে পরে আদায় করা যাবে। এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কোরআনে বলেন-

আরবি: وَآتُوا النِّسَاءَ صَدُقَاتِهِنَّ نِحْلَةً ۚ فَإِن طِبْنَ لَكُمْ عَن شَيْءٍ مِّنْهُ نَفْسًا فَكُلُوهُ هَنِيئًا مَّرِيئًا

বাংলা অর্থ: “আর তোমরা স্ত্রীদের প্রাপ্য মোহরানা আদায় করে দাও; খুশী হয়ে ও তাদের প্রাপ্য অধিকার মনে করে। তারা যদি খুশী হয়ে তা থেকে অংশ ছেড়ে দেয়, তবে তোমরা তা স্বাচ্ছন্দ্যে ভোগ কর।” (সূরা নিসা, আয়াত-৪)

তাই বাসর রাতের আমল ও সুন্নত অনুযায়ী সাধ্যমতো নির্ধারিত মোহরানা আদায় করুন।

সহবাসের দোয়া। বাসর রাতের দোয়া সমূহ আরবি

বিয়ের পর থেকেই স্বামী-স্ত্রী একে অপরের জন্য হালাল হয়ে যায়। বাসর রাতে সহবাস করার ক্ষেত্রে কোন বিধিনিষেধ নেই। তবে পরস্পরের মনের ভয়-ভীতি, সংকোচ, হতাশা দূর করার জন্য ভালোবাসা পূর্ণ কথাবার্তা বিনিময় করতে হবে। 

সহবাসের জন্য মন স্থির করলে শয়তানের প্ররোচনা থেকে আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাইবে। এক্ষেত্রে নিম্নোক্ত দোয়াটি পাঠ করা সুন্নত-

আরবি: ﺑِﺴْﻢِ ﺍﻟﻠَّﻪِ ، ﺍﻟﻠَّﻬُﻢَّ ﺟَﻨِّﺒْﻨَﺎ ﺍﻟﺸَّﻴْﻄَﺎﻥَ ، ﻭَﺟَﻨِّﺐْ ﺍﻟﺸَّﻴْﻄَﺎﻥَ ﻣَﺎ ﺭَﺯَﻗْﺘَﻨَﺎ

বাংলা উচ্চারণ: “বিসমিল্লাহি আল্লা-হুম্মা জান্নিবনাশ্ শায়ত্বানা, ওয়া জান্নিবিশ শায়ত্বানা মা রাযাক্ব-তানা।” (বুখারি ও মুসলিম)

বাংলা অর্থ: “আল্লাহর নামে শুরু করছি। হে আল্লাহ! আমাদের উভয়কে শয়তানের হাত (কুনজর-আক্রমণ) থেকে রক্ষা করুন। আর আমাদের (এই মিলনে)  যদি কোনো সন্তান দান করেন, তাকেও শয়তানের আক্রমণ থেকে রক্ষা করুন।”

নেক সন্তান লাভের দোয়া। বাসর রাতের দোয়া সমূহ

বাসর রাতের আমল ও সুন্নত হিসেবে অথবা যেকোনো সময় নেক সন্তান লাভের জন্য মহান আল্লাহর কাছে দোয়া করতে হবে। এক্ষেত্রে নিম্নোক্ত আয়াতটি পাঠ করতে হয়-

আরবি: رَبِّ هَبْ لِي مِن لَّدُنْكَ ذُرِّيَّةً طَيِّبَةً إِنَّكَ سَمِيعُ الدُّعَاء

বাংলা উচ্চারণ: “রাব্বি হাব-লি’ মিল্লাদুনকা যুররিয়্যা-তান্ ত্বাইয়্যিবাহ, ইন্নাকা সামিউদ দু’আ।”

বাংলা অর্থ: “হে আমাদের রব! তোমার পক্ষ থেকে আমাকে পূত-পবিত্র সন্তান দান করো। নিশ্চয়ই তুমি দোয়া কবুলকারী।” (সুরা: আলে ইমরান, আয়াত-৩৮)।

এছাড়াও নেক সন্তান লাভের জন্য বেশি বেশি নেক আমল করে আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করুন।

শেষকথা

মুসলিম নারী পুরুষের জীবনে বাসর রাত খুবই বরকতময় রাত। এ রাতের সাধারণ কাজগুলো সুন্নত পালন এবং আল্লাহর খুশির নিয়তে করলে অনেক নেকি পাবেন।

মহান আল্লাহ মুসলিম উম্মাহকে বাসর রাতের আমল ও সুন্নত এবং বাসর রাতের দোয়া ও নামাজ সঠিকভাবে পালন করে বরকতময় জীবন শুরু করার তৌফিক দান করুন। (আমীন)