চিয়া সিড এর উপকারিতা ও অপকারিতা এবং খাওয়ার নিময়

চিয়া সিডকে বলা হয় সুপার ফুড। মানবদেহের জন্য প্রয়োজনীয় অনেক পুষ্টিগুণ সম্পন্ন এই চিয়া সিড এর উপকারিতা অনেক বেশি। চিয়া সিড এর উপকারিতা ও অপকারিতা, পুষ্টিগুণ, উৎপাদন, চিয়া সিড খাওয়ার নিয়ম, ওজন কমাতে চিয়া সিড খাওয়ার নিয়ম, চিয়া সিড  কোথায় পাবেন ইত্যাদি সকল তথ্য থাকছে  আমাদের এই আলোচনায়।

চিয়া সিড কি ?

অনেক পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ একটি বীজ হলো চিয়া সিড (Chia Seeds) । এটি মরুভূমিতে জন্মানো সালভিয়া উদ্ভিদের বীজ। এই বীজ দেখতে তিলের মতো। চিয়া সিড সাদা এবং কালো উভয় রংয়ের হয়। এটি তোকমার মতো বর্ণের হলেও আকারে তুলনামূলক ছোট হয়।

চিয়া সিড এর উৎপত্তি | চিয়া সিড এর উৎপাদন

এই সিড এর আদি জন্মস্থান মধ্য আমেরিকা। মূলত এটি মেক্সিকো ও দক্ষিণ আমেরিকাতে জন্মায় এবং বেশি উৎপাদিত হয়। তবে বর্তমানে বাংলাদেশেও চিয়া সিড উৎপাদিত হচ্ছে। দেশের কৃষি বিষয়ক গবেষকরা বাংলাদেশে এই বীজ এনেছেন। গবেষণার মাধ্যমে এই বীজের অভিযোজন ক্ষমতা বৃদ্ধি করে বাংলাদেশের আবহাওয়ায় অধিক উৎপাদন উপযোগী করতে কাজ করছেন।

চিয়া সিড এর পুষ্টিগুণ

চিয়া সিড এর উপকারিতা বেশি হওয়ার কারন এতে থাকা গুরুত্বপূর্ণ পুষ্টি উপাদান। United States Department of Agriculture বা USDA – এর ন্যাশনাল নিউট্রিয়েন্ট ডাটাবেজ হতে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, প্রতি ১০০ গ্রাম চিয়া বীজে রয়েছেঃ

  • ৪৮৬ ক্যালোরি,
  • ৪২.১ গ্রাম কার্বোহাইড্রেট,
  • ৬% পানি,
  • ৩৪.৪ গ্রাম খাদ্যআঁশ বা ফাইবার,
  • ১৬.৫ গ্রাম প্রোটিন,
  • ৩০.৭ গ্রাম ফ্যাট,

তবে এতে চিনি ০ গ্রাম, এবং গ্লুটেন ০%, তা মানবদেহের জন্য উপযুক্ত।

গবেষণা অনুযায়ী, বিভিন্ন পুষ্টিকর খাদ্যের সাথে এর তুলনা করলে জানা যায়, এতে রয়েছেঃ

  • কমলার চেয়ে ৭ গুণ বেশি ভিটামিন সি।
  • পালং শাকের চেয়ে ৩ গুণ বেশি আয়রন।
  • কলার দ্বিগুণ পটাশিয়াম।
  • ওমেগা-৩ এর রাজা, স্যামন মাছের থেকেও ৮ গুণ বেশি ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিড।

এছাড়াও ক্লোরোজেনিক অ্যাসিড ও ক্যাফিক এসিড নামক অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, কোয়েরসেটিন, কেম্পফেরল, পটাশিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম ইত্যাদি। এত সকল পুষ্টি গুণাগুন আছে বলেই চিয়া সিডকে সুপার ফুড বলা হয়।

চিয়া সিড এর উপকারিতা

মানবদেহে চিয়া সিড এর উপকারিতা অনেক বেশি। এবার চিয়া সিড খাওয়ার উপকারিতা গুলো তালিকা আকারে জেনে নিন:

(১) চিয়া সিডে অনেক বেশি ওমেগা-৩ রয়েছে, যা হৃদরোগের ঝুঁকি ও LDL কোলেস্টেরল কমাতে সাহায্য করে।

(২) প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট থাকায় চিয়া সিড দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।

(৩) চিয়া সিড ব্লাড সুগার স্বাভাবিক রাখে, যার ফলে ডায়াবেটিসের ঝুঁকি হ্রাস পায়।

(৪) চিয়া সিডে প্রচুর পরিমাণ ক্যালসিয়াম থাকায়, হাড়ের স্বাস্থ্য রক্ষায় বিশেষ উপকারী।

(৫) চিয়া বীজ কোলন‌ বা মলাশয় পরিষ্কার রাখে, ফলে কোলন ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায়। এছাড়াও সকল প্রকার ক্যান্সার প্রতিরোধে চিয়া সিড এর উপকারিতা রয়েছে।

(৬) এটি মানবদেহ থেকে টক্সিন বা বিষাক্ত বর্জ্য পদার্থ বের করে দিতে সাহায্য করে।

(৭) চিয়া বীজ দেহের শক্তি ও কর্মক্ষমতা বাড়ায়।

(৮) মেটাবলিক সিস্টেমকে উন্নত করার মাধ্যমে চিয়া সিড দেহের ওজন কমাতে সাহায্য করে।

(৯) পেটের প্রদাহজনিত সমস্যা দূর করে।

(১০) চিয়া সিড হজমশক্তি বৃদ্ধি করে।

(১১) চিয়া বীজ হাঁটু ও জয়েন্টের ব্যথা দূর করে।

(১২) চিয়া সিড অ্যাটেনশান ডেফিসিট হাইপার-অ্যাক্টিভিটি ডিসঅর্ডার জনিত সমস্যা দূর করে।

(১৩) নিয়মিত এই বীজ খেলে ত্বক, চুল ও নখ সুন্দর রাখে।

(১৪) ঘুম ভালো করতেও চিয়া সিড উপকারি।

(১৫) এটি দেহের প্রোটিনের চাহিদা পূরণ করে।

(১৬) চিয়া সিড পেটের গ্যাসের সমস্যা দূর করে।

চিয়া সিড খাওয়ার নিয়ম

চিয়া সিড এর উপকারিতা ও অপকারিতা
চিয়া সিড

চিয়া সিড স্বাদ ও গন্ধহীন একটি খাবার। চিয়া সিড এর উপকারিতা থাকলেও এর নিজস্ব কোন স্বাদ নেই। তাই এটি সালাদ, স্মুদি, কাস্টার্ড ইত্যাদি যেকোন খাবারের সাথে মিশিয়ে খাওয়া যায়।

চিয়া বীজ খাওয়ার জন্য রান্না করার প্রয়োজন হয় না। পুডিং, জুস, ওটস, স্মুথি ইত্যাদি অন্যান্য সকল খাবারের সঙ্গে খুব সহজে এটি মিশ্রণ তৈরি করা যায়। এছাড়াও টকদই, সিরিয়াল, রান্না করা সবজি বা সালাদ, ফ্রুট সালাদের ওপরে ছড়িয়েও খেতে পারেন। অন্যান্য খাবারের সাথে মিশ্রণ খাবারের স্বাদকে আরো বৃদ্ধি করে।

এছাড়াও পানিতে ভিজিয়ে খুব সহজেই খেয়ে নিতে পারেন চিয়া সিড। তার জন্য প্রথমে কুসুম গরম পানিতে ২০ থেকে ৩০ মিনিট ভিজিয়ে রাখুন। বিশেষ করে সকালে খালি পেটে বাড়াতে ঘুমানোর আগে চিয়া সিড ভেজানো পানি খেলে অধিক উপকারিতা পাওয়া যায়।

ওজন কমাতে চিয়া সিড খাওয়ার নিয়ম

ওজন কমাতে চিয়া সিড এর উপকারিতা অনেক বেশি। এতে বিদ্যমান উচ্চমাত্রার ফাইবার বা খাদ্যআঁশ সহজেই দ্রবণীয়। তাই কিছুক্ষণ ভিজিয়ে রাখলে এটি পানি শোষণ করে জেলির ন্যায় থকথকে আঠালো বর্ণের হয়ে যায়। এই জেলি আমাদের পাকস্থলীতে গিয়ে বিপাক প্রক্রিয়া ধীর গতিসম্পন্ন করে। ফলে পেট দীর্ঘক্ষণ ভরা অনুভূত হয় এবং বারবার ক্ষুধার প্রবণতা দূর হয়।

গবেষণা থেকে জানা যায়, প্রতি ২৮ গ্রাম চিয়া সিডে ১০ গ্রাম ডায়েটারি ফাইবার থাকে। যা আমাদের দেহের দৈনন্দিন ডায়েটারি ফাইবারের চাহিদার প্রায় ৩৫%। তাছাড়া চিয়া সিডে থাকা প্রোটিন আমাদের ক্ষুধা নিবারণ করে। একইসাথে অতিরিক্ত খাদ্য গ্রহণের প্রবণতা দূর করে।

দ্রুত ওজন কমাতে খালি পেটে সকালে এবং রাতে ঘুমানোর পূর্বে ১ গ্লাস পানির মধ্যে ২ চা চামচ চিয়া সিড ও ২ চামচ লেবুর রস মিশিয়ে ২০-৩০ মিনিট রেখে দিন। তারপর তা খেলে ভালো ফলাফল পাওয়া যায়।

চিয়া সিড খাওয়ার অপকারিতা | চিয়া সিড এর ক্ষতিকর দিক

সুপার ফুড চিয়া সিড এর উপকারিতার পাশাপাশি কিছু ক্ষতিকর দিকও রয়েছে। বিশেষ করে অতিরিক্ত মাত্রায় চিয়া সিড খেলে নানারকম স্বাস্থ্য ঝুঁকির সৃষ্টি হতে পারে। চিয়া বীজ এর ক্ষতিকর দিকগুলো হলো:

(১) গবেষণা থেকে জানা যায়, চিয়া বীজ সকল ক্যান্সারের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ ব্যবস্থা গড়ে তুললেও এর অতিরিক্ত সেবন প্রোটেস্ট ক্যান্সার এবং স্তন ক্যান্সারকে বাড়িয়ে তুলতে পারে।

(২) বেশি মাত্রায় খেলে বদহজম, এসিডিটি ও অন্যান্য সমস্যা দেখা দেয়।

(৩) চিয়া সিড কারো কারো দেখে এলার্জি জনিত সমস্যার সৃষ্টি করে।

(৪) অত্যাধিক মাত্রায় চিয়া বীজ খেলে শরীরের ওজন অস্বাভাবিকভাবে কমে যেতে পারে।

(৫) এটি দেখার শর্করা নিয়ন্ত্রণ করে রক্তচাপ কমায়। তবে অতিরিক্ত সেবনের ফলে রক্তচাপ একদম কমে যেতে পারে, যা মারাত্মক হুমকিস্বরূপ।

সঠিক ও অল্প পরিমাণ চিয়া বীজ খেলে এ ধরনের স্বাস্থ্যঝুঁকি দূর হয়। প্রতিদিন ৩-৪ চা চামচ এর বেশি চা বীজ খাওয়া অনুচিত।

চিয়া সিড কোথায় পাবেন

সাধারণত বাংলাদেশে চিয়া সিড এর প্রচলন কম। তবে দেশের বিভিন্ন সুপার সব বা বড় দোকানগুলোতে চিয়া বীজ পাওয়া যায়। এছাড়া অনলাইনে বিভিন্ন ই-কমার্স ওয়েবসাইট থেকে অর্ডার করে এই উপকারী বীজটি সংগ্রহ করতে পারবেন।

শেষকথা

চিয়া সিড এর উপকারিতা ও অপকারিতা দুটোই রয়েছে তবে উপকারিতা বেশি, চিয়া বীজ পুষ্টি গুনাগুন অনেক বেশি সমৃদ্ধ। মানবদেহের জন্য চিয়া সিড এর উপকারিতা অনেক বেশি। তবে এর ক্ষতিকর দিক এড়াতে পরিমিত মাত্রায় চিয়া সিড সেবন করুন।