খেজুরের উপকারিতা ও অপকারিতা

পৃথিবীতে কোটি কোটি মানুষের অত্যন্ত পছন্দের একটি ফল হলো খেজুর। কারন প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে আমাদের দেহের জন্য খেজুরের উপকারিতা অনেক। আমাদের আলোচনার বিষয় খেজুরের উপকারিতা ও অপকারিতা নিয়ে।

মানবদেহের জন্য যে সকল পুষ্টি উপাদান গুলো অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ, তার বহু উপাদানই রয়েছে খেজুরে। তাই বিশ্বব্যাপী খেজুর একটি জনপ্রিয় খাবার। পৃথিবীতে প্রায় ৩ হাজার প্রজাতির খেজুর রয়েছে। বাংলাদেশের বাজারেও ১০০ টিরও বেশি প্রজাতির খেজুর পাওয়া যায়। রমজান মাসে আমাদের অন্যতম পছন্দের খাবার এই খেজুর। এছাড়াও বিভিন্ন উপকারিতা পেতে সারা বছরব্যাপী খেজুর খাওয়া ভালো। তাই খেজুরের উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য জেনে নিন পারেন এই লেখা থাকে।

খেজুরে কি কি পুষ্টি উপাদান থাকে | খেজুরের পুষ্টিগুণ

দারুন স্বাদের সাথে বহু পুষ্টি উপাদানের সামষ্টিক ভাণ্ডার হলেও খেজুর। এটি স্বাদ এবং পুষ্টিগুনের জন্য বিশ্বব্যাপী বিশেষভাবে পরিচিত। বৈজ্ঞানিক তথ্যমতে, প্রতি ৩০ গ্রাম বা‌ প্রায় ৪টি খেজুরে রয়েছে:

  • ৯০ ক্যালোরি,
  • ১ গ্রাম প্রোটিন,
  • ১৩ মি.লি. গ্রাম ক্যালসিয়াম,
  • ২ দশমিক ৮ গ্রাম ফাইবার।

এছাড়াও খেজুরের মধ্যে আরো পাওয়া যায়-

  • প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন বি,
  • এটি ফ্রুকটোজ এবং গ্লাইসেমিক সমৃদ্ধ,
  • ভিটামিন বিসিক্স,
  • ভেষজ অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট পলিফেনল ও অন্যান্য বিভিন্ন প্রকার অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট,
  • পাকা খেজুরে প্রায় ৮০% চিনিজাতীয় উপাদান থাকে,
  • ভিটামিন এ এবং বি,
  • পটাশিয়াম,
  • ম্যাগনেশিয়াম,
  • ম্যাঙ্গানিজ,
  • সালফার,
  • প্রোটিন,
  • কপার,
  • আয়রন,
  • জিঙ্ক, ও 
  • কপারের মতো প্রায় ১৫ টি খনিজ উপাদান।

অন্য একটি তথ্যমতে খেজুরে রয়েছে, ২৭৭ গ্রাম ক্যালোরি, ১.৮১ গ্রাম প্রোটিন, মোট চর্বি ০.১৫ গ্রাম, কার্বোহাইড্রেট ৭৫ মিলিগ্রাম, ফাইবার ৬.৭ গ্রাম, খেজুরে ৩% ভিটামিন এ। এছাড়াও রয়েছে ভিটামিন বি রয়েছে ৬০.২৫ মিলিগ্রাম, ম্যাঙ্গানিজ ০.৩ মিলিগ্রাম, তামা ০.৩৬ মিলিগ্রাম, ম্যাগনেসিয়াম ৫৪ মিলিগ্রাম, পটাসিয়াম ৬৯৬ মিলিগ্রাম।

খেজুরে স্যাচারেইটেড ফ্যাট ও ট্র্যান্স ফ্যাট নেই। তাই এটি স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী। প্রতি ১০০ গ্রাম পরিষ্কার ও তাজা খেজুর ফলে ভিটামিন সি রয়েছে। যা কিনা প্রায় ২৩০ ক্যালরি শক্তি উৎপাদন করে।

খেজুরের উপকারিতা | খেজুর খাওয়ার উপকারিতা

প্রাকৃতিক পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ খাদ্য উপাদানের মধ্যে খেজুর অন্যতম। পুষ্টিবিদরা নানাবিদ খেজুরের উপকারিতা বিশ্লেষণ করে থাকেন। বিশেষজ্ঞদের তথ্যের ভিত্তিতে কয়েকটি খেজুর খাওয়ার উপকারিতা নিচে তুলে ধরা হলো:

(১) শরীরের কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি করে

খেজুরে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ও মিনারেল বিদ্যমান থাকে। খেজুরের রয়েছে প্রচুর পরিমাণে প্রাকৃতিক চিনি। ফলে এটি খেলে খুব দ্রুত শারীরিক শক্তি বৃদ্ধি পায়। অধিকাংশ ক্ষেত্রে বয়স বৃদ্ধির কারণে আমাদের দেশের জীবনে ভাব দেখা দেয়। এর জন্য প্রতিদিন ৩-৪ টি খেজুর খেলে সকল প্রকার অবসাদ ও ক্লান্তি দূরে থাকবে।

(২) রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে

খেজুরে বিভিন্ন প্রকার রোগ নিরাময় করার ক্ষমতা রয়েছে। নিয়মিত খেজুর খাওয়ার অভ্যাসে বৃদ্ধি পায় শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও। নিরাময়ের পূর্বেই এটি শরীরের প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়তেও সহায়তা করে। খেজুরে রয়েছে প্রচুর ভিটামিন, খনিজ, ক্যালসিয়াম ও পটাশিয়াম। খেজুরে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট শরীরে রোগ প্রতিরোধের ক্ষমতা বাড়ায়। 

ভেজানো খেজুর খেলে শরীরের টক্সিন জাতীয় সমস্যা কিংবা বিষক্রিয়া থেকে খুব দ্রুত মুক্তি পাওয়া যায়। এটি অ্যালকোহলজনিত বিষক্রিয়া প্রতিরোধে বেশ উপকারী। যকৃতের সংক্রমণ রোধেও খেজুর উপকারী। গলাব্যথা, বিভিন্ন ধরনের জ্বর, সর্দি এবং ঠান্ডায় খেজুরের উপকারিতা রয়েছে অনেক। সুস্থ সকল দেখার জন্য ৩০ বছর বয়স পার হলেই নিয়মিত খেজুর খাওয়ার অভ্যাস করা উচিত।

(৩) মজবুত পেশি গঠনে সহায়তা করে

বয়স বৃদ্ধির সাথে সাথে আমাদের দেহের পেশীগুলোতে নানান জটিলতা দেখা দেয়। বেশি জটিলতা এড়াতে সবচেয়ে উপকারী প্রভাব ফেলে প্রোটিন। পাশাপাশি ক্যালসিয়াম হাড় গঠনে সহায়তা করে। খেজুর প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন এবং ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ খাবার। তাই এটি খেলে পুষ্টি উপাদানের সাহায্যেই আমাদের বেশি ভালো থাকে এবং হাড় মজবুত হয়।

একইসাথে, আমাদের দাঁতের মাড়িও সুরক্ষিত ও মজবুত হয়। খেজুরে রয়েছে ভিটামিন কে, যা কাটা-ছেড়ায় রক্তক্ষরণ রোধ করতে অর্থাৎ রক্ত জমাট বাঁধাতে সাহায্য করে।

(৪) মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা বাড়ায়

আমাদের স্নায়ুতন্ত্রের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধিতে খেজুরের ব্যাপক উপকারিতা রয়েছে। খেজুর বিভিন্ন প্রকার ভিটামিন ও অন্যান্য পুষ্টিগুলো সমৃদ্ধ একটি সুস্বাদু ফল। এ সকল পুষ্টি উপাদানের সাহায্যে খেজুর আমাদের মস্তিষ্ককে প্রাণবন্ত রাখে। পাশাপাশি এটি আমাদের মস্তিষ্কের চিন্তাভাবনার গতি ও ধারণক্ষমতা বৃদ্ধি করে এবং সমগ্র দেহের স্নায়ুতন্ত্রের কর্মক্ষমতা বাড়ায়।

একটি পরিসংখ্যানে জানা যায় যে, যে সকল ছাত্র-ছাত্রী নিয়মিত খেজুর খায় তাদের দক্ষতা অন্যদের তুলনায় ভালো। তাছাড়া বার্ধক্যকালীন সময়ে স্মৃতিশক্তি লোক পাওয়া থেকে মুক্তি পেতে, নিয়মিত খেজুর খাওয়া উপকারী।

(৫) দৃষ্টিশক্তি প্রখর করে

খেজুর হলো ভিটামিনের পাওয়ার হাউসের মতো। এতে ভিটামিন এ, বি১, বি২, বি৩ এবং বি৫ সহ বিভিন্ন প্রকার ভিটামিন থাকে, যা আমাদের শরীরের জন্য অত্যাবশ্যকীয়। খেজুরে থাকা ভিটামিন ‘এ’ – আমাদের চোখের দৃষ্টিশক্তি বাড়াতে সাহায্য করে। তাছাড়া রাতকানা রোখের ঝুঁকিও কমিয়ে দেয় এই ভিটামিন এ। খেজুরের লিউটেন ও জিক্সাথিন থাকায়, তা রেটিনা ভালো রাখে। খেজুরের জিয়াজানথিন উপাদান বার্ধক্য জনিত কারণে দৃষ্টিশক্তি কমে যাওয়ার ঝুঁকি অনেকাংশে কমিয়ে দেয়।

(৬) রক্তে হিমোগ্লোবিনের পরিমান বাড়ায়

আমাদের শরীরে হিমোগ্লোবিন বাড়াতে অধিক হারে প্রয়োজন হয় আয়রনের। একজন সুস্থ মানুষের শরীরে যতটুকু আয়রন প্রয়োজন, তার প্রায় ১১ ভাগ পূরণ করতে সক্ষম খেজুর। খালি পেটে খেজুর খেলে শরীরে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা বেড়ে যায়। হিমোগ্লোবিনের মাত্রা স্বাভাবিক হলে রক্তের নতুন কোষও উৎপন্ন হয়। অন্যদিকে, খেজুরে থাকা কপার লহিত রক্ত কণিকা গঠনে সাহায্য করে। রক্তস্বল্পতায় ভোগা রোগীরা প্রতিদিন খেজুর খেতে পারেন।  

(৭) খেজুর হার্টের সমস্যা দূর করে

হার্টের সমস্যা দূর করতে খেজুরের উপকারিতা অনেক। দুর্বল হার্টের মানুষদের হৃদপিন্ডের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি করতে প্রতিদিন সকালে খালি পেটে খেজুর খাওয়া অনেক উপকারী প্রভাব ফেলে। যারা ইতিমধ্যেই হৃদরোগে আক্রান্ত, তাদের স্বাস্থ্যঝুঁকি ও স্ট্রোকের ঝুঁকি কমাতেও খেজুর কার্যকর ভূমিকা রাখে। 

বয়স বাড়ার সাথে সাথেই আমাদের হৃদরোগ ও স্ট্রোকের ঝুঁকি বৃদ্ধি পায়। তাই খেজুর খেলে খেজুরে থাকা পটাশিয়াম এসকল ঝুঁকি কমাতে সহায়তা করে।

(৮) খেজুর রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে

খেজুরে থাকা নানা খনিজ পদার্থগুলো হৃদস্পন্দনের হার ঠিক রাখে। বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, খেজুর আমাদের দেহের ক্ষতিকর কোলেস্টেরল (LDL) কমায় এবং উপকারী কোলেস্টেরল (HDL) বৃদ্ধি করে। তাছাড়া প্রতিটি খেজুরে ২০-২৫ মিলিগ্রাম ম্যাগনেসিয়াম থাকে, যা উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে। খেজুরে স্যাচারেইটেড ফ্যাট ও ট্র্যান্স ফ্যাট নেই, তাই এর উপকারিতাই বেশি।

(৯) ক্যান্সার প্রতিরোধে সহায়তা করে

মানবদেহের বিভিন্ন প্রকার ক্যান্সারের বিরুদ্ধে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে প্রভাব ফেলে খেজুরের পুষ্টিগুণ। মুখগহ্বরের ক্যান্সার রোধেও এটি বেশ কার্যকরী। খেজুরে থাকা ভেষজ অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট পলিফেনল শরীরের টক্সিন দূর করে। এতে থাকা ফাইবার অ্যাবডমিনাল ক্যান্সার প্রতিরোধে সাহায্য করে।

(১০) ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে

চিনির বিকল্প হিসেবে খেজুর ব্যবহার করা যায়। খেজুর আমাদের রক্তে শর্করার পরিমাণ বাড়ায় এবং শরীরে আয়রনের ঘাটতি মেটায়। ডায়াবেটিস রোগীদেরকে সরাসরি কোন মিষ্টি বা চিনি জাতীয় খাবার খাওয়া থেকে বিরত থাকা উচিত। বরং এর বিপরীতে খেজুর খেয়ে স্বাস্থ্য সুরক্ষার পাশাপাশি মিষ্টি স্বাদ নিতে পারেন।

(১১) কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে

কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে বহুকাল আগে থেকে খেজুরের উপকারিতা স্পষ্ট। খেজুরে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার থাকে। ফলে এটি কোষ্ঠকাঠিন্য ও বদহজমের সমস্যা দূর করতে পারে। 

সকালে খালি পেটে পানিতে ভিজানো খেজুর খেলে কোষ্ঠকাঠিন্য খুব দ্রুত দূর হয়। তাছাড়া আমাদের অন্ত্রের কৃমি ও ক্ষতিকারক পরজীবী প্রতিরোধে খেজুর বেশ সহায়ক। বিপরীতে, এটি পরিপাকতন্ত্রে উপকারী ব্যাক্টেরিয়া উৎপাদনেও সাহায্য করে।

(১২) ওজন নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে

ওজন কমাতে এবং ওজন বাড়াতে উভয় ক্ষেত্রেই খেজুর খুবই কার্যকরী। খেজুরে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার থাকায় এটি ক্ষুধা হ্রাস করে। ফলে অতিরিক্ত খাওয়া এড়িয়েও আমরা সঠিক পুষ্টি পেতে পারি। কিন্তু ভিন্নভাবে খেজুরে প্রচুর পরিমাণে খাদ্য উপাদান ও জেনে থাকায়, এটি অধিক পরিমাণে খেলে ওজন বৃদ্ধি পায়।

(১৩) খেজুর গর্ভবতী নারীদের সুস্বাস্থ্যে সহায়ক

গর্ভবতী নারীদের অধিক পুষ্টি উপাদানের প্রয়োজন হয়। খেজুর একটি বহু পুষ্টিগুণ এবং ভিটামিন এবং খনিজ সমৃদ্ধ ফল। তাই গর্ভবতী নারীরা বিভিন্ন প্রকার স্বাস্থ্যঝুঁকি কমিয়ে পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া মুক্ত উপকারী সকল প্রকার পুষ্টিগুণ পেতে নিয়মিত খেজুর খেতে পারে।

(১৪) খেজুর যৌনস্বাস্থ্য ভালো রাখতে সহায়ক

খেজুর নারী ও পুরুষ উভয়েরই যৌন শক্তি বাড়ায়। সুস্বাস্থ্য রক্ষার পাশাপাশি এটি পর্যাপ্ত শক্তি সঞ্চার করে। পুরুষের যৌন ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে এবং নারীর গর্ভধারণ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে খেজুর খাওয়ার উপকারিতা ব্যাপক।

(১৫) ত্বককে টানটান করতে সহায়তা করে

বয়স বাড়ার সাথে সাথে মুখের চামড়া কুচকে যায় এবং বিভিন্ন দাগ দেখা যায়। খেজুরে প্রচুর ভিটামিন বি রয়েছে যা ত্বকের জন্য উপকারী। নিয়মিত খেজুর খেলে আস্তে আস্তে ত্বকের দাগগুলো মিলিয়ে যায়, ত্বকের শুষ্কতা দূর হয়, ত্বকের বলি রেখা দূর হয়। এছাড়া ত্বকের ফ্যাকাশে ভাব ও হরমোনের সমস্যা কমাতে খেজুরের উপকারিতা রয়েছে।

(১৬) খেজুর খুসখুসে কাশি দূর করে

যাদের খুসখুসে কাশি হয় তারা নিয়মিত খেজুর খেতে পারেন। প্রতিদিন ১-২টি খেজুর ১ গ্লাস পানিতে সারারাত ভিজিয়ে রাখুন। সকালে খালিপেটে সেই খেজুরসহ পানিটুকু পান করুন। ১-২ সপ্তাহের মধ্যেই খেজুর খাওয়ার উপকারিতা পাবেন। 

(১৭) চুলের গোড়া মজবুত করে

বিভিন্ন সময়ে আমাদের চুলের উজ্জ্বলতা হারিয়ে যায় এবং চুলের রুক্ষ ও শুষ্ক ভাব দেখা যায়। খেজুরে থাকা পুষ্টিগুণ ও তৈলাক্ত উপাদান চুলের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করে এবং চুল পড়ার সমস্যা দূর করে।

(১৮) শিশুদের স্বাস্থ্যরক্ষায় খেজুর

শিশুদের স্বাস্থ্য উন্নয়ন ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে খেজুর সবচেয়ে ভালো। যেসকল শিশুর দেহ কম ওজন, কম হিমোগ্লোবিন এবং কম রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা সম্পন্ন, তাদের প্রতিদিন একটি মিষ্টি খেজুর খাওয়া উচিত। এটি ২-৩ মাস ধারাবাহিকভাবে অনুসরণ করলেই ভালো ফলাফল পাওয়া যাবে।

এছাড়াও আরও বহুভাবে আমরা খেজুরের উপকারিতা পেতে পারি।

খেজুর খাওয়ার নিয়ম | খেজুর খাওয়ার সেরা সময় কখন

ব্যক্তিগত প্রয়োজনীয়তার ভিত্তিতে আপনি বিভিন্ন নিয়মে এবং বিভিন্ন সময়ে খেজুর খেতে পারেন। খেজুর খাওয়ার কয়েকটি উপযোগী সময় হলো:

  • সকালে খালি পেটে ভেজানো খেজুর খাওয়া।
  • দুপুরের খাবারের পূর্বে খেজুর খাওয়া।
  • রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে খেজুর খাওয়া।
  • ব্যায়াম করার ৩০ মিনিট পূর্বে খেজুর খাওয়া।
  • এছাড়াও মিষ্টি জাতীয় খাদ্য খাওয়ার ইচ্ছা পোষণ করলেই আপনি যেকোনো সময় খেজুর খেতে পারেন।

গর্ভাবস্থায় খেজুরের উপকারিতা ও অপকারিতা 

খেজুরের উপকারিতা ও অপকারিতা 
খেজুরের উপকারিতা ও অপকারিতা

খেজুরে আমাদের দেহের জন্য অত্যাবশ্যকীয় পুষ্টি উপাদানগুলো রয়েছে। যেমন: আঁশ, পটাসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, লৌহ, ভিটামিন এ, ভিটামিন কে এবং ভিটামিন বি৬, ফোলেইট ইত্যাদি। গর্ভবতী মা ও শিশুর স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী। এটি কার্বোহাইড্রেটের প্রাকৃতিক উৎস। যা গর্ভাবস্থায় দ্রুত শক্তি যোগায়, দুর্বলতা কমায় এবং দেহকে সক্রিয় রাখে।  

অন্তঃসত্ত্বা মায়েরা সন্তান জন্মের সময় আজওয়া খেজুর খেলে জরায়ুর মাংসপেশির দ্রুত সংকোচন ও প্রসারণ ঘটিয়ে প্রসব হতে সাহায্য করে। তাই গর্ভবতী মায়েদের শক্তি এবং সহনশীলতা বাড়াতে নিয়মিত খেজুর খাওয়া উচিত।

আজওয়া খেজুরের উপকারিতা | খুরমা খেজুরের উপকারিতা

বিশ্বের সবচেয়ে দামি খেজুর হলো আজওয়া। এর মধ্যেও অনেক পদ আছে। সৌদি আরবে এই আজওয়া খেজুরের ফলন হয়। এর দাম প্রতি কেজি ৮০০-২৫০০ টাকা পর্যন্ত হয়। আজওয়া খেজুর কালো, নরম, সুস্বাদু ও আকারে ছোট হয়। এর উপরে সাদা রেখা দেখা যায়।

আজওয়া খেজুর সম্পর্কে বিখ্যাত একটি হাদিস রয়েছে। নবী করিম (সাঃ) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি প্রতিদিন সকালে কয়েকটি আজওয়া খুরমা খাবে ওই দিন রাত পর্যন্ত কোনো বিষ ও জাদু তার কোনো ক্ষতি করবে না।’ (অন্যরা বলেছেন, ‘সাতটি খুরমা’।) (বুখারি)। প্রিয় নবী (সাঃ) আরো বলেন, ‘খোদ জান্নাত থেকে আজওয়া খেজুর এসেছে।’ (তিরমিজি)

বিজ্ঞানীদের মতে,

উচ্চমাত্রার শর্করা, ক্যালরি ও ফ্যাট সম্পন্ন খেজুর জ্বর, মূত্রথলির ইনফেকশন, যৌনরোগ, গনোরিয়া, কণ্ঠনালির ব্যথা বা ঠাণ্ডাজনিত সমস্যা, শ্বাসকষ্ট প্রতিরোধে বেশ কার্যকরী। এটি পেটের গ্যাস, শ্লেষ্মা, কফ, শুষ্ক কাশি এবং এজমায় উপকারী। এছাড়াও নেশাগ্রস্তদের অঙ্গক্ষয় প্রতিরোধ করে আজওয়া খেজুর। এছাড়াও স্নায়বিক শক্তি বৃদ্ধিসহ উপরোক্ত অন্যান্য সকল খেজুর খাওয়ার উপকারিতাগুলো তো রয়েছেই।

পুরুষদের জন্য খেজুরের উপকারিতা

পুরুষের জন্য খেজুরের উপকারিতা ও অপকারিতা জেনে খেজুর খাওয়ার অনেক প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। নিয়মিত খেজুর খেলে পুরুষের শুক্রাণুর সংখ্যা বৃদ্ধি পায়। যাঁরা স্পার্ম কাউন্ট লো হওয়ার সমস্যা রয়েছে, তারা খেজুরের উপকারিতা নিতে পারেন। এটি সন্তান উৎপাদন ক্ষমতাও বাড়ায়। পুরুষের যৌবনকালীন সক্ষমতা ধরে রাখতে খেজুর মহৌষধের মতো কাজ করে। এটি অকাল বীর্যপাত রোধ করে, মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতি, রক্তপ্রবাহ বাড়ায় এবং রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রাও বজায় রাখে। 

দুধ ও খেজুর খাওয়ার উপকারিতা

আপনি যদি দুধ খেতে ভালোবসেন, তাহলে এর সাথে খেজুর মিশিয়ে খাওয়া আরো অনেক বেশি উপকারী হবে। এর জন্য একটি পাত্রে ১.৫ কাপ দুধ নিন। এর সাথে ২-৪ টি বীজ ছাড়ানো খেজুর নিন। এবার ৫-৬ মিনিট ভালোভাবে গরম করে ফুটিয়ে নিন। এর সাথে কিছু কিসমিস যুক্ত করতে পারেন। 

তারপর হালকা গরম অবস্থায় রেখে এই খাবারটি নিয়মিত খেতে পারেন। খেজুর ও দুধের পুষ্টি উপাদান গুলো একসাথে আপনার সামগ্রিক স্বাস্থ্যের জন্য অসংখ্য উপকারিতা বয়ে আনবে।

খালি পেটে খেজুর খেলে কি হয় | সকালে খেজুর খাওয়ার উপকারিতা

সকালে খালি পেটে ভেজানো খেজুর খাওয়া তুলনামূলক বেশি উপকারী। খেজুর ভিজিয়ে রাখলে তাতে উপস্থিত ট্যানিন বা ফাইটিক অ্যাসিড দূর হয়। ফলে এর পুষ্টিগুণকে সহজে হজম হয় এবং শোষণ করা যায়। যেসব খেজুর একটু শক্ত সেই খেজুর সারারাত পানিতে ভিজিয়ে সকালে খালি পেটে খেলে কোষ্ঠকাঠিন্য অনেকাংশে দূর হয়। দিনভর এনার্জি পেতে সকালে খেজুর খাওয়া ভালো। এতে সারাদিন সতেজ অনুভব করবেন। খেজুর দীর্ঘ সময় পেট ভরিয়ে রাখতেও কাজ করে।

জেনে নিন: মধুর উপকারিতা | মধু খাওয়ার সঠিক নিয়ম  

সকালে ব্যায়াম করার ৩০ মিনিট আগে খেজুর খেলে দ্রুত হাঁপিয়ে যাবেন না। এছাড়া এটি আমাদের পেটে থাকা দূষিত পদার্থও সহজে দূর হবে। বিশেষজ্ঞরা বলেন, ভিজিয়ে রাখা খেজুর সকালে খালি পেটে খেলে শরীরের অনেক রোগ থেকে মুক্তি মেলে। খেজুর ওজন নিয়ন্ত্রণ করে এবং এতে থাকা ফাইবার মলত্যাগের প্রক্রিয়াকে সহজ করে।

খেজুর খাওয়ার অপকারিতা

খেজুরের উপকারিতা ও অপকারিতা দুটো দিক রয়েছে, তবে খেজুরের উপকারিতাই বেশি, তবে এর কিছু ক্ষতিকর প্রভাবও আমাদের দেহে পড়তে পারে। যেমন:

  • খেজুরের মধ্যে আছে বিপুল পরিমাণে পটাশিয়াম। তাই যাদের দেহে পটাশিয়ামের পরিমাণ বেশি, তারা খেজুর খাওয়ার ক্ষেত্রে সতর্ক হতে হবে। কারণ অতিরিক্ত পটাশিয়ামের ফলে কিডনি ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
  • অতিত্ব মাত্রায় খেজুর খেলে খেজুরে থাকা চিনির ফলে ওজন বৃদ্ধি পায়।
  • অতিরিক্ত মাত্রায় খেজুর খেলে বদহজম ও পেটের বিভিন্ন সমস্যা হতে পারে।
  • ডায়াবেটিস রোগীদেরও খেজুর খাওয়ার ক্ষেত্রে ডাক্তারের পরামর্শ গ্রহণ করা উচিত।

তবে নিয়মিত ২-৪টি খেজুর খাওয়া তেমন ক্ষতিকর নয়।

শেষকথা

খেজুরের উপকারিতা সম্পর্কিত এই আলোচনা শুধুমাত্র তথ্যভিত্তিক সুবিধা দেওয়ার জন্য। এটি কোনভাবেই কোনও ওষুধ বা চিকিৎসার বিকল্প হতে পারে না। তাই খেজুরের উপকারিতা ও অপকারিতা এবং এর সঠিক সেবন প্রক্রিয়া সম্পর্কে জানতে ডাক্তারের পরামর্শ নিন।