ই ক্যাপ এর উপকারিতা ও অপকারিতা এবং খাওয়ার নিয়ম

ভিটামিন ই একটি শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা চুল, ত্বক এবং সামগ্রিক সুস্থতা ও দেহের রক্ষা করতে সাহায্য করে। ই ক্যাপ হলো ভিটামিন ই তে সমৃদ্ধ একটি ক্যাপসুল। ই ক্যাপ এর উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কিত বিস্তারিত তথ্য জেনে নিন এই আর্টিকেলে।

ভিটামিন ই আপনার ত্বককে UV এর ক্ষতি থেকে রক্ষা করে। অন্যান্য পুষ্টি উপাদানের মতোই ভিটামিন ই মানুষের বিকাশ এবং কার্যকারিতার জন্য অপরিহার্য। এই ভিটামিনের ঘাটতিতে মানবদেহে নানান ক্ষতিসাধন হয়। খাবারে পর্যাপ্ত ভিটামিন ই না পেলে ই ক্যাপ এর মাধ্যমে এর অভাব পূরন করতে পারেন। তাই ই ক্যাপ এর উপকারিতা ও অপকারিতা কি কি রয়েছে সে সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে সেবং করা উচিত।

ই ক্যাপ কি?

ই ক্যাপ হল ভিটামিন ই সাপ্লিমেন্ট যা শরীরের ভিটামিন ই এর ঘাটতি পূরণে সহায়তা করে। ই ক্যাপ মূলত ভিটামিন ই জাতীয় ক্যাপসুল যা আপনি মুখে খেতে পারবেন অথবা বাহ্যিকভাবেও ব্যবহার করতে পারবেন। সাধারণত যাদের শরীরের ভিটামিন ই এর অভাব দেখা দেয় তাদেরকে চিকিৎসক ভিটামিন ই ক্যাপ ট্যাবলেট খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন।

ভিটামিন ই তে আটটি যোগ্য রয়েছে তবে এর মধ্যে আলফা টোকোফেরল শুধু মানবদেহে ব্যবহৃত হয়।

ই ক্যাপ এর উপকারিতা

চিকিৎসা বিজ্ঞানের মতে ই ক্যাপের অনেক উপকারিতা রয়েছে। ই ক্যাপ আমাদের শরীরের জন্য কতটা উপকারী নিম্নে সেগুলো নিয়ে আলোচনা করা হলোঃ

১. চুলের যত্নে ই ক্যাপ

যাদের নিয়মিত চুল পড়ে তারা একে ব্যবহার করতে পারেন কারণ ই ক্যাপ চুলের জন্য চমৎকার একটি উপাদান। ই ক্যাপ ক্যাপসুল চুল পড়া বন্ধ করতে ও নতুন চুল গজাতে অনেক কার্যকরী।

ই ক্যাপ প্রতিদিন খাওয়ার পাশাপাশি তেলের সাথে মিশিয়ে চুলে ব্যবহারও করতে পারবেন। চুলে ভালোভাবে দেয়ার পর দুই থেকে তিন ঘণ্টা পর শ্যাম্পু করে নিতে হবে। এভাবে সপ্তাহে দুই থেকে তিন দিন ব্যবহার করতে হবে। এতে আপনি ১-২ মাসের মধ্যে ভালো ফলাফল পাবেন।

২. ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি

রোদের মধ্যে চলাচলের কারণে আমাদের ত্বকের উজ্জ্বলতা কমে যায়। সেক্ষেত্রে ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধির জন্য এটি খেতে পারেন। অথবা বাহ্যিকভাবে ব্যবহার করেও ই ক্যাপ এর উপকারিতা পেতে পারেন। ই-ক্যাপে রয়েছে এক ধরনের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উপাদান যা আমাদের ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

৩. ত্বকের হোয়াইটনিং ক্রিম হিসেবে ব্যবহার

ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধির জন্য নিয়মিত ক্রিম অথবা বডি লোশন এর সাথে ই ক্যাপ ক্যাপসুলের তরলটা মিশিয়ে ত্বকে ব্যবহার করলে ত্বক উজ্জ্বল হয়। ভিটামিন ই ময়শ্চারাইজিং হিসেবে ত্বকের জন্য অনেক উপকারী।

৪. বয়সের ছাপ দূর করতে

মানুষের শরীরে ও মুখের ত্বক বয়স বাড়ার সাথে সাথে কুঁচকে যেতে থাকে। এছাড়াও বিভিন্ন রকমের বলিরেখা দেখা দিতে শুরু করে। কুঁচকে যাওয়া ও ঝুলে যাওয়া ত্বকে নিয়মিত ভিটামিন ই ক্যাপ ক্যাপসুল তেলের সাথে মিশিয়ে মালিশ করুন। এতে করে ই ক্যাপ এর উপকারিতার প্রভাবে উজ্জ্বলতার বৃদ্ধির পাশাপাশি বলিরেখা গুলোও দূর হয়। দূর করতে ভিটামিন ই ক্যাপসুল এন্টি এজিং ক্রিম হিসেবে কাজ করে।

৫. ক্ষত সারাতে

নিয়মিত ই ক্যাপসুল সেবন করলে শরীরের যেকোনো ক্ষতস্থান খুব দ্রুত সেরে যায়। শরীরের ক্ষত নিরাময় করতে ভিটামিন ই ক্যাপসুল খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি উপাদান।

৬. নখের ভঙ্গুরতা রুখতে

আমরা সারাদিন বাসা বাড়িতে অথবা বাহিরে বিভিন্ন ধরনের কাজ করে থাকি। যার ফলে অনেকের নখের ভঙ্গুরতা দেখা দেয়। যারা এই সমস্যায় ভুগতেছেন তারা নিয়মিত ই ক্যাপ ক্যাপসুল এর তেল নখে মালিশ করুন। এতে অল্প দিনেই এ সমস্যা দূর হয়ে যাবে। নখের জন্য কার্যকরী ওষুধ হিসেবে ভিটামিন ই ক্যাপ এর উপকারিতা অনেক।

আরও পড়ুন: সজনে পাতার উপকারিতা ও ঔষধি গুণাগুন

৭. রোদের ক্রিম

বিভিন্ন কাজের জন্য বাইরে আসা-যাওয়ার ফলে রোদের তাপে ত্বক পুড়ে কালো হয়ে যায়। সে ক্ষেত্রে তাদের জন্য ময়েশ্চারাইজিং হিসেবে ভিটামিন ই ভালো কাজ করে। কুলিং ক্রিমের সাথে কয়েক ফোঁটা ভিটামিন ই যুক্ত ই ক্যাপ ক্যাপসুল ব্যবহার করলে খুব সহজেই কালো হওয়া ও বিভিন্ন মুখের দাগ থেকে বাঁচা যায়।

৮. ভিটামিন ই এর অভাব পূরণে

আমাদের শরীরে অনেক সময় ভিটামিন ই এর অভাব দেখা দেয়। সেক্ষেত্রে বিভিন্ন রকম অসুখও হয়ে থাকে। ভিটামিন ই এর অভাবে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়। ফলে শরীরের নানা ধরনের সমস্যা দেখা দেয় প্রতিনিয়তই। ই ক্যাপ ক্যাপসুল ভিটামিন ই এর অভাব পূরণ করে ও শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। নিয়মিত পুষ্টিকর খাবারের পাশাপাশি এই ক্যাপসুল টি সেবন করলে ই ক্যাপ এর উপকারিতা পাবেন অনেক।

৯. যৌনশক্তি বৃদ্ধিতে ই ক্যাপ

ই ক্যাপ ট্যাবলেট একটি ভিটামিন জাতীয় ঔষধ তাই এটি খেলে ভিটামিন ই এর অভাব পূরণ করে শারীরিক সক্ষমতা বৃদ্ধি করে। ই ক্যাপ ট্যাবলেট প্রতিদিন ১ থেকে ২ টা খেতে পারবেন। নিয়মিত ই ক্যাপ টেবলেট খেলে শারীরিক শক্তি বৃদ্ধির পাশাপাশি যৌনশক্তি ও বৃদ্ধি পায়।

১০. হার্ট সুস্থ রাখতে ই ক্যাপ

হার্টের বিভিন্ন রোগের জন্য ই ক্যাপ অনেক উপকারী। নিয়মিত 400 IU থেকে 800 IU চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ই ক্যাপ সেবন করলে হার্ট সুস্থ থাকে।

ই ক্যাপ এর অপকারিতা বা পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া

 

ই ক্যাপ এর উপকারিতা
ই ক্যাপ এর উপকারিতা

অন্যান্য সকল ওষুধের মতোই, এই ভিটামিন ই ক্যাপ এর উপকারিতার পাশাপশি কিছু ক্ষতিকর দিক রয়েছে। কিছু মানুষের শরীরে এর প্রতি গ্রহনযোগ্যতা কম থাকে। তাছাড়া অতিরিক্ত ব্যবহার করলে সকলের জন্যই ভালোর চেয়ে ক্ষতিকর দিকটাই বেশি প্রকাশ পাবে। ই ক্যাপ এর অপকারিতা বা কিছু ক্ষতিকর দিক নিচে তুলে ধরা হলোঃ

  • ১ গ্রামের বেশি সেবন করলে শরীরের উচ্চ রক্তচাপ ও ক্লান্তি ভাব দেখা দিতে পারে।
  • মাত্রাতিরিক্ত সেবন করলে ডায়রিয়া হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
  • ই ক্যাপ অতিরিক্ত সেবন করলে মাথা ব্যাথার সৃষ্টি হতে পারে।
  • ই ক্যাপ খেলে শরীরে বমি বমি ভাব হতে পারে।
  • ই ক্যাপ বেশি মাত্রায় সেবনের ফলে শরীরের এলার্জিও দেখা দিতে পারে।
  • গর্ভবতী মেয়েরা ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী সেবন করা উচিত।
  • যাদের ডায়াবেটিস, কিডনি, লিভার ও হাই কোলেস্টেরল রয়েছে তাদের জন্য ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী ই ক্যাপ সেবন করা প্রয়োজন। অন্যথায়, বিরূপ প্রভাব পড়তে পারে।

ই ক্যাপ ট্যাবলেট খাওয়ার নিয়ম

ই ক্যাপ হল ভিটামিন ই ক্যাপসুল যা শরীরের ভিটামিন ই অভাব পূরণের জন্য খাওয়া হয়। ই ক্যাপ ট্যাবলেট অন্যান্য ট্যাবলেট এর মত পানি দিয়ে গিলে খেতে হয় এটার কোন আলাদা নিয়ম নেই।

তবে আপনি চাইলে ই ক্যাপ এর ভিতরের শুধু তরল টা খেতে পারেন তখন আর পানির প্রয়োজন নেই। ই ক্যাপ ট্যাবলেট খেলে শরীরের দুর্বলতা দূর হয়, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায় ও শরীর সুস্থ থাকে।

ভিটামিন ই ক্যাপসুল খেলে কি মোটা হওয়া যায়?

ভিটামিন ই ক্যাপসুল আমাদের শরীরের জন্য খুবই উপকারী। তাই অনেকেই মনে করে ভিটামিন ই ক্যাপসুল খেলে শরীর মোটা হয়ে যায় কিন্তু শরীর মোটা হয়ে যায় না বা মোটা হওয়ার সম্ভাবনা ও নেই। যেহেতু এটি একটি ভিটামিন ট্যাবলেট সেহেতু এটি সেবন এর ফলে শারীরিক শক্তি বৃদ্ধি পায় ও ভিটামিন ই জনিত সবরকম সমস্যা দূর হয়।

শেষকথা

কোন ঔষধই অতিরিক্ত সেবন করা মানে বেশি উপকার পাওয়া নয়। বরং অতিরিক্ত ওষুধ সেবন করার ফলে উপকারের চেয়ে ক্ষতিই বেশি হয়। ই ক্যাপ ভিটামিন ই এর অভাব পূরণের পাশাপাশি ত্বক মসৃণ করা, যৌন সমস্যা সমাধান ও চুল পড়া কমানোর জন্য খুবই কার্যকরী ও বিশেষ ভূমিকা রাখে। তাই এসকল উপকারিতা পেতে ই ক্যাপ এর উপকারিতা ও অপকারিতা জেনে সঠিক মাত্রায় ব্যবহার করুন।