ড্রাগন ফল খাওয়ার ১২ টি স্বাস্থ্য উপকারিতা: ড্রাগন ফল বর্তমানে অনেক বেশি কৌতূহল সৃষ্টিকারী একটি ফল। এর অদ্ভুত নামের কারণেই ড্রাগন ফলের উপকারিতা ও অপকারিতা এবং এর বিস্তারিত তথ্য সম্পর্কে জানার আগ্রহ কম-বেশি আমাদের সকলেরই রয়েছে।
ড্রাগন ফলটি সুস্বাদু ও স্বাস্থ্যকর। মানবদেহের জন্য এই ফলের উপকারিতা অনেক বেশি। অস্বাস্থ্যকর জীবনধারা এবং খাদ্যাভ্যাসের কারণে আমাদের শরীরে ও ত্বকে বিভিন্ন রকম সমস্যা হয়ে থাকে। এর থেকে রক্ষা ছাড়াও স্বাস্থ্য রক্ষায় আরও বহু উপকারি এই ফল। বর্তমানে বাংলাদেশেও এই ফলের চাষ হয়। প্রায় সকল বাজারেই এখন এটি পাওয়া যায় এবং এর চাহিদা বৃদ্ধি পাচ্ছে প্রতিনিয়তই।
তাই বহুল চাহিদা সম্পন্ন ড্রাগন ফলের উপকারিতা ও ক্ষতিকর দিক সম্পর্কে জেনে নিন এখানে।
ড্রাগন ফল কি?
ড্রাগন (Dragon Fruit) একটি গ্রীষ্মকালীন ফল এবং প্রতিবছরই আগের তুলনায় এই ফলটি আমাদের দেশে অনেক বেশি উৎপাদিত হয় এবং জনপ্রিয়ও হয়ে উঠছে। ড্রাগন ফল দুই ধরনের হয় – ভেতরের অংশ লাল ও সাদা রংয়ের হয়ে থাকে। এই ফলের গাছ হলো ক্যাকটাস (Cactus) জাতীয় গাছের ফল।
এই ফলের বৈজ্ঞানিক নাম হলো Hylocereus Undatus। এটি দেখতে সাধারণত ডিম্বাকৃতির হয়। এই গাছের ফুল রাতে ফোটে। এই ফলের গাছ হনলুলু কুইন বা রাতের কুইন হিসেবে ও পরিচিত।
ড্রাগন ফলের পুষ্টিগুণ ও পরিমাণ
ড্রাগন নামের ফলটি পুষ্টি গুণে ভরপুর। আমাদের স্বাস্থ্য রক্ষায় ড্রাগন ফলের উপকারিতা অনেক এবং সুস্থ্যতার জন্য এটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
প্রতি১০০ গ্রাম ড্রাগন ফলে যে পরিমাণ উপাদান থাকে তা নিম্নে দেয়া হলো :
- প্রোটিন – ১.১ গ্রাম
- আয়রন – ১.৯ মিলিগ্রাম
- ক্যালসিয়াম – ৮.৫ মিলিগ্রাম
- ফসফরাস – ২২.৫ মিলিগ্রাম
- ভিটামিন সি – ২১ মিলিগ্রাম
- পানি – ৮৭ গ্রাম
- ফ্যাট – ৪ গ্রাম
- কার্বোহাইড্রেট – ১১.০ গ্রাম
- ক্যারোটিন – অল্প
- ভিটামিন বি ১ – ০.০৫ মিলিগ্রাম
- ভিটামিন বি ২ – ০.০১৬ মিলিগ্রাম
- ভিটামিন এ – অল্প
এছাড়াও প্রতি ১০০ গ্রাম ফলে ৩ গ্রাম আশ থাকে যা দৈনিক চাহিদার ১২ শতাংশ। এতে আরো বিভিন্ন ভিটামিন ও খনিজ উপাদান রয়েছে যা আমাদের জন্য খুবই উপকারী
ড্রাগন ফল খাওয়ার ১২ টি স্বাস্থ্য উপকারিতা
ড্রাগন আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য অনেক উপকারী ফল, সে সম্পর্কে আমরা সকলেই জানি। এই ফলের উপকারী দিকগুলো নিচে তুলে ধরা হলোঃ
১. ড্রাগন ফল ওজন কমায়
ড্রাগন নামের এই ফলে ফ্যাটের পরিমাণ প্রায় ০ শতাংশ। তাই ডায়েটের জন্য এই ফল নির্দ্বিধায় খাওয়া যাবে। অধিক স্বাস্থ্যবান ব্যক্তিদের ডায়েটের জন্য এটি একটি আদর্শ খাবার। নিয়মিত পরিমান মতো এটি খেলে আপনার শরীরের ওজনকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করবে।
২. ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে ড্রাগন ফল
ড্রাগন ফলে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার। যা ডায়াবেটিসে আক্রান্ত ব্যক্তিদের জন্য অনেক প্রয়োজনীয় একটি উপাদান। ড্রাগনে ফাইবার ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে। এছাড়াও এই ফল রক্তে শর্করার মাত্রা কমাতে এবং চিনির মাত্রা স্থিতিশীল করতে সাহায্য করে। চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ডায়াবেটিসে আক্রান্ত ব্যক্তিদের নিয়মিত ও পরিমাণ মতো ড্রাগন ফল খাওয়া উচিত।
৩. কিডনিকে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে
প্রচুর পরিমাণে পটাশিয়াম থাকার কারণে ড্রাগন ফলের উপকারিতা অনেক। আর পটাশিয়াম কিডনিকে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে। এছাড়াও কিডনিতে পাথর জমতে বাধা দেয়। সুতরাং আমাদের কিডনিকে সুস্থ রাখতে হলে এই ফল নিয়মিত খাওয়া প্রয়োজন।
৪. হাড় শক্ত রাখতে সাহায্য করে
ড্রাগন ফলের মধ্যে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ম্যাগনেসিয়াম। ম্যাগনেসিয়াম আমাদের হাড়কে শক্ত রাখতে সাহায্য করে। তাই হাড়কে শক্ত রাখার জন্য নিয়মিত ড্রাগন ফল খেতে পারেন। বিশেষ করে ৩০ বছরের বেশি বয়সী মহিলাদের হাড়ের ক্ষয় রোধে এই ফল খেতে পারেন।
৫. ক্যান্সার প্রতিশোধক
ড্রাগন ফলের মধ্যে রয়েছে ৯০% অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ক্যান্সার উৎপাদনকারী কোষ গুলোকে ধ্বংস করতে সাহায্য করে। এই ফলের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট গুলো আপনার ক্যান্সার নিরাময়ে সাহায্য করে। তাই চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী এই ফল গ্রহণ করুন।
৬.হার্টকে সুস্থ রাখতে
হার্টকে সুস্থ রাখতে ড্রাগন ফল বিশেষ ভূমিকা রাখে। কারণ এই ফলটির মধ্যে রয়েছে বিশেষ উপাদান মনোস্যাচুয়েটেড যা আপনার হার্ট কে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে। মনোস্যাচুয়েটেড ভালো কোলেস্টেরলের মাত্রা বৃদ্ধি করতে ও খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা কমাতে সাহায্য করে। এই ফলের মধ্যে সবচেয়ে বেশি মনোস্যাচুয়েটেড উপাদানটি পাওয়া যায়। তাই হার্টকে সুস্থ রাখতে হলে এই ফল খাওয়া প্রয়োজন।
৭. হজম শক্তি বৃদ্ধি করে
ড্রাগন ফলের মধ্যে রয়েছে প্রচুর ফাইবার। আর ফাইবার আপনার হজম শক্তি বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে এবং কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে। পাকস্থলী কার্যপ্রক্রিয়া পরিস্কার করতেও ড্রাগন ফলের উপকারিতা রয়েছে। তাই যাদের কোষ্টকাঠিন্য সমস্যা ও হজমে সমস্যা আছে তারা এই ফলটি খেতে পারেন।
৮. চোখের দৃষ্টি শক্তি বাড়ায়
আমাদের চোখের দৃষ্টি শক্তি বাড়াতে বেগুনি রঙের ড্রাগন ফল বিশেষ ভূমিকা রাখে। বেগুনি রংয়ের ড্রাগনে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে বিটা ক্যারোটিন। আর বিটা ক্যারোটিন আমাদের দৃষ্টি শক্তি বাড়াতে সাহায্য করে। তাই চোখের দৃষ্টি বাড়াতে বেগুনি রংয়ের এই ফল খেতে পারেন।
৯. চুল পড়া রোধ করতে সাহায্য করে
চুল পড়া রোধ করে এই ড্রাগন ফল। আয়রনের অভাবে চুল পড়া এবং চুলের বিভিন্ন সমস্যা হয়ে থাকে। এতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে আয়রন। যা আপনার চুল পড়া দূর করতে এবং আপনার চুলকে বৃদ্ধি করতে সাহায্য করবে । এছাড়াও আপনার শরীররে আয়রনের যে সকল ঘাটতি রয়েছে সেগুলো পুরণ করতে ও সাহায্য করবে।
আরও পড়ুন: ড্রাগন ফলের উপকারিতা – Dragon fruit benefits
১০. মুখে ব্রণের দাগ দূর করতে সাহায্য করে
ড্রাগন ফল আমাদের ত্বকের সৌন্দর্য্যের জন্য একটি কার্যকরী উপাদান। কারণ এতে রয়েছে ভিটামিন সি। আর ভিটামিন সি ত্বকের জন্য অনেক উপকারী। যাদের মুখে ব্রনের দাগ রয়েছে তারা টপিকাল ক্রিম হিসেবে ব্যবহার করে ড্রাগন ফলের উপকারিতা পেতে পারেন।
১১. রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে
পুষ্টিবিধ ও বিভিন্ন চিকিৎসকরা ইমিনিউ সিস্টেমকে বৃদ্ধি করতে ভিটামিন সি খাওয়ার জন্য বলে থাকেন। ড্রাগন ফলে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি রয়েছে। শেতো রক্ত কণিকাকে ভিটামিন সি সুরক্ষা করে। আর শ্বেত রক্ত কণিকার কাজই হলো জীবাণু ভক্ষণ করা। আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য প্রতিদিনের রুটিনে এই ফলটি রাখা প্রয়োজন।
১২. ম্যাগনেসিয়ামের ভালো উৎস
অন্যান্য ফলের তুলনায় ড্রাগন ফলে সবচেয়ে বেশি ম্যাগনেসিয়ামের যোগান দেয়। এক কাপ ড্রাগন নামক ফলের রসে ম্যাগনেসিয়ামের মাত্রা থাকে RDI এর 18%। প্রতিটি মানুষের শরীরে গড়ে ২৪ গ্রাম বা এক আউন্স ম্যাগনেসিয়াম রয়েছে। আপাতদৃষ্টিতে এটি অল্প পরিমাণে হলেও আপনার শরীরের প্রতিটি কোষে উপস্থিতি থাকে। এটি আপনার শরীরের ৬০০ টির ও বেশি গুরুত্বপূর্ণ বিক্রিয়া অংশ নেয়। সুতরাং আমাদের স্বাভাবিক সমস্ত কার্যকর্মের জন্য ম্যাগনেসিয়ামের গুরুত্ব অপরিসীম। ম্যাগনেসিয়ামের অভাব পূরণ করতে ড্রাগন ফল গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
ড্রাগন ফলের অপকারিতা/ পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া
ড্রাগন ফলের উপকারিতা যেমন রয়েছে তেমনি এর কিছু ক্ষতিকর দিকও রয়েছে। এই ফল অতিরিক্ত মাত্রায় গ্রহণ করলে এর পার্শ প্রতিক্রিয়া দেখা দেবে। তাই এটি অতিরিক্ত মাত্রায় গ্রহণ করার পূর্বে এর প্রতিক্রিয়া সম্পর্কে জেনে নেয়া উচিত। ড্রাগন ফলের নেতিবাচক দিকগুলো হলোঃ
- বেশি পরিমাণে খেলে ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য এই ফলটি ঝুঁকিপূর্ণ।
- বেশি পরিমানে খেলে এলার্জির সমস্যা হতে পারে। যাদের এলার্জির সমস্যা রয়েছে তারা এটি না খাওয়াই ভালো।
- শ্বাসকষ্ট হতে পারে।
- গর্ভাবস্থায় অতিরিক্ত পরিমাণে ড্রাগন ফল খেলে সমস্যা হতে পারে।
- ড্রাগন নামক ফলে আয়রন, ফাইবার ও প্রাকৃতিক সুগার থাকার কারণে নিয়মিত এই ফল বেশি মাত্রায় খেলে ওজন বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
- অতিরিক্ত গ্রহণে ব্লাড প্রেসার বেড়ে যেতে পারে।
- এলার্জির কারণে বমি হতে পারে।
- এটি বেশি পরিমানে গ্রহণের ফলে ডাইড়িয়া, আমাশয়, পেটে গ্যাস ও হজমে সমস্যা হতে পারে।
শেষকথা
আমাদের দেশে ড্রাগন (Dragon Fruit) ফল প্রচলন নতুন। শুরুতে যখন বিদেশ থেকে এই ফল আমদানি করা হতো তখন এর দাম ছিল আকাশচুম্বি। যা অনেকেরই সামর্থ্যের বাহিরে ছিল। কিন্তু বর্তমানে বাংলাদেশে এই ফল চাষ হয় যার কারনে কিছুটা দাম কমেছে। উপরোক্ত আলোচনা থেকে আমরা ড্রাগন ফল খাওয়ার ১২ টি স্বাস্থ্য উপকারিতা সম্পর্কে জানতে পারলাম। তাই এর থেকে পুষ্টি ও উপকারিতা পেতে এই ফল নিয়মিত খেতে পারেন।