দুধ আল্লাহ তায়ালার একটি নেয়ামত। যা আমরা গরু, ছাগল, মহিষ, মেষ, দুম্বা, উট ইত্যাদি প্রাণী থেকে প্রাপ্ত হই। দুধের রয়েছে নানাবিধ উপকারিতা যা ছোট বড় সব বয়সের মানুষের জন্য প্রয়োজন। আমাদের আজকের আলোচনার বিষয় দুধ খাওয়ার উপকারিতা নিয়ে।
দুধকে বলা হয় সুপার ফুড। দুধ সবদিক দিয়ে পুষ্টিগুণে ভরপুর। শিশু, পূর্ণবয়স্ক ও বৃদ্ধ–সবারই প্রতিদিন ০১ গ্লাস দুধ পান করা উচিত। দুধ হলো ভিটামিন ডি ও ক্যালসিয়ামের প্রধান উৎস। দুধে আছে প্রোটিন, কার্বোহাইড্রেট, ওমেগা থ্রি, চর্বি, ওমেগা সিক্সসহ অনেক গুরুত্বপূর্ণ উপাদান।
দুধে আছে প্রয়োজনীয় ভিটামিন ও খনিজ পদার্থ, যা শরীরের জন্য একান্ত জরুরি। দুধে প্রচুর ভিটামিন বি-১২ আছে, যা মস্তিষ্কের জন্য প্রয়োজন। দুধ শরীরের কর্মক্ষমতা ধরে রাখতে সাহায্য করে। এ ছাড়া দেহের টিস্যু ও কোষ মেরামতের জন্য দারুণ উপকারী।
সকল বয়সে দুধ পান করা জরুরি কেন?
দুধ এমন একটি পানীয়, পুষ্টি বিজ্ঞানে দুধের কোনো বিকল্প নাই। মানব শরীরের প্রয়োজনীয় সব কটি উপাদান দুধেই পাওয়া যায়। দুধে দেহ গঠনের সব কটি প্রয়োজনীয় প্রোটিন থাকায় শিশু, প্রাপ্ত বয়সী, অন্তঃসত্ত্বা ও স্তন্যদায়ী মায়েদের জন্য খুবই অপরিহার্য। লন্ডন-আমেরিকায় প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় ক্যালসিয়ামের ঘাটতি পূরণে দুধকে প্রাধান্য দিয়ে থাকে। দুধে সন্তোষজনক মাত্রায় ফসফরাস থাকে। হাড়, দাঁতের গঠন ও মজবুতের জন্য এবং বয়স্ক ব্যক্তিদের হাড়ের ভঙ্গুরতা রোধ করার জন্য দুধ প্রয়োজন। এককথায় সব বয়সী মানুষের দুধ খাওয়া একান্ত জরুরি।
দুধের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পুষ্টি উপাদান কী?
পৃথিবীর সব পানীয়র সেরা পানীয় দুধ। সর্বোচ্চ পুষ্টিমানের জন্যই দুধের শ্রেষ্ঠত্ব। দুধের অপরিহার্য উপাদান ল্যাকটোজ, যা দৈহিক গঠন, বিকাশ ও মেধা বৃদ্ধিতে সহায়ক। মানুষের স্বাস্থ্য রক্ষার মূল উপাদান দুধ।
দুধের প্রধান উপাদান কিন্তু পানি!(৮৭.৪৩%)। তাতে চর্বি থাকে (৩.৭৫%)। প্রোটিন থাকে (১.৬৩%)। ল্যাকটোজ থাকে(৬.৯৮%)। খনিজ লবণ থাকে (.২১%)।
গরুর দুধে আছে অত্যাবশ্যকীয় অ্যামাইনো অ্যাসিড, বিভিন্ন ধরনের ভিটামিন, খনিজ পদার্থ যেমন ক্রোমিয়াম, আয়রন, ম্যাঙ্গানিজ, কোবাল্ট, কপার, জিংক, আয়োডিন ও সেলিনিয়াম।
গরুর দুধের কম্পজিশনে পানি ৮৬.৫ শতাংশ, ল্যাকটোজ ৪.৮ শতাংশ, ফ্যাট ৪.৫ শতাংশ, প্রোটিন ৩.৫ শতাংশ এবং ভিটামিন ও খনিজ পদার্থ ০.৭ শতাংশ।
সব পুষ্টির আধার ও শক্তির উৎস গরুর দুধ। বৈজ্ঞানিক গবেষণায় ক্যানসার ও হূদেরাগ প্রতিরোধে দুধের শক্তিশালী ভূমিকা প্রমাণিত হয়েছে।
দিনে নাকি রাতে দুধ খাওয়া বেশি উপকারী?
আয়ুর্বেদ শাস্ত্র মতে, সকাল বেলা দুধ পান না করা ভালো। তাবে পাঁচ বছরের বেশি বয়সীদের সকালে দুধ পান করা এড়িয়ে চলা উচিত। কারণ, সকালে দুধ পান করলে হজমের সমস্যা দেখা দিতে পারে। কিন্তু রাতে দুধ পান করলে হজমের সমস্যা কম হয় এবং দুধে থাকা ট্রিপটোফান নামক উপাদান রাতের ঘুম ভালো করতে ও স্মৃতিশক্তি উন্নত করতে সাহায্য করে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, যদি আপনি নিজের দেহ ও পেশীগুলো সুগঠিত করতে চান, তবে সকালে বা বিকেলে এক্সারসাইজ করার পর গরম দুধ পান করতে পারেন।
রাতে দুধ খাওয়ার স্বাস্থ্য উপকারিতা
১। ঘুম ভালো হয়
যারা ঘুমের সমস্যা জনিত রোগে ভুগে থাকেন তাদের প্রতি রাতে ঘুমানোর আগে এক গ্লাস গরম দুধ পান করা উচিত। কারণ দুধে থাকা বায়োঅ্যাক্টিভ প্রপার্টিজ শরীরের স্ট্রেস কমিয়ে ভালো ঘুম পেতে সাহায্য করে।
২। হার্ট ভালো রাখে
রাতে ঘুমানোর আগে লো ফ্যাট যুক্ত দুধ প্রতিদিন পান করলে কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে থাকে। দুধে থাকা প্রোটিন উপাদান খারাপ কোলেস্টেরল কমিয়ে ভালো কোলেস্টেরলের মাত্রা বৃদ্ধি করে, ফলে হার্ট সুস্থ থাকে।
৩। হাড় মজবুত করে
দুধের মধ্যে থাকা ভিটামিন-ডি ও ক্যালসিয়াম শরীরের হাড় মজবুত রাখতে সাহায্য করে। বিশেষ করে মহিলারা অস্টিওআর্থ্রাইটিসের সমস্যা দূর করতে প্রতিদিন রাতে এক গ্লাস গরম দুধ পান করতে পারেন।
৪। ত্বক ভালো রাখে
কম বয়সেই অনেকের ত্বকে বয়সের ছাপ দেখা দেয় এবং ত্বক ঝুলে যায়, খসখসে হয়ে যায়। দুধের মধ্যে থাকা ভিটামিন বি ১২ ও অন্যান্য উপাদান ত্বককে উজ্জল, স্বাস্থ্যকর, নরম ও তরতাজা রাখতে সহায়তা করে। তাই প্রতিদিন রাতে ঘুমানোর আগে এক গ্লাস দুধ পান করাই ভালো।
আরও পড়ুন: যৌনস্বাস্থ্যে উপকারী খাবার
ঠান্ডা না গরম, কোন অবস্থায় দুধ খাওয়া ভালো?
আপনি দুধ ঠান্ডা না গরম করে পান করবেন, সেটা সম্পূর্ণ শারীরিক অবস্থার উপর নির্ভর করে। যেমন পেপটিক আলসারের ক্ষেত্রে ঠান্ডা দুধ এবং মেলিনার (ব্ল্যাক স্টুল) ক্ষেত্রে বরফঠান্ডা দুধ খেলে ভালো হয়। তবে স্বাভাবিক অবস্থায় কুসুমগরম দুধই ভালো।
গরম দুধের উপকারীতা/Hot Milk Benefits
প্রতিদিন দুধ পান করা স্বাস্থ্যের জন্য খুবই উপকারী। দুধ পান করলে শরীরে শক্তি পাওয়া যায়। এই বিষয়টি আমরা সকলেই জানি, কিন্তু আপনি কি জানেন! যে ধরনের দুধ পান করলে শরীরে সতেজতা আসে এবং শক্তি পাওয়া যায়। ঠাণ্ডা দুধ পান করা স্বাস্থ্যকর নাকি গরম তা অধিকাংশ মানুষই বুঝতে পারে না। অনেকে মনে করেন যে, গরম দুধ পান করা ঠান্ডা বা সাধারণ দুধ পানের মতো স্বাস্থ্যকর নয়।
কিন্তু এমনটা ভাবা একদমই ভুল। শরীরের জন্য প্রয়োজনীয় প্রায় সব ধরনের উপাদানই দুধে থাকে। এটি ভিটামিন, প্রোটিন, ক্যালসিয়াম, নিয়াসিন, ফসফরাস এবং পটাসিয়ামের ভান্ডার। সাম্প্রতিক এক গবেষণায় দেখা গেছে, প্রতিদিন এক গ্লাস গরম দুধ পান করা স্বাস্থ্যের জন্য ভালো। আমাদের দাঁত ও হাড়ের ক্যালসিয়াম প্রয়োজন। প্রতিদিন গরম দুধ পান করলে আমাদের দাঁত ও হাড় মজবুত হয়। দুধে পর্যাপ্ত পরিমাণে প্রোটিন ও পাওয়া যায়।
গরুর দুধের উপকারিতা
- কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে রাখে।
- রাতে ঘুম ভালো হয়।
- দেহের হাড় মজবুত করে।
- সারাদিনের পরিশ্রমের পর পুনরায় শক্তি অর্জিত হয়।
- মহিলাদের ত্বক সুন্দর করে।
ছাগলের দুধের উপকারিতা
- ছাগলের দুধের পুষ্টিগুণ মায়ের বুকের দুধের কাছাকাছি।
- হার্ট ভালো রাখে।
- এলার্জি জনিত সমস্যা কম হয়।
- ছাগলের দুধ উচ্চ ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ।
- ত্বকের যত্নে বেশ উপকারী।
- ছাগেণের দুধ হজম করা যায় সহজেই।
- বাড়ন্ত শিশুর জন্য উপকারী ছাগলের দুধ।
জেনে নিন উপকারী কয়েকটি খাবার সম্পর্কে
শর্করা জাতীয় খাবার কি কি – শরীরের জন্য কতটুকু শর্করা প্রয়োজন।
অশ্বগন্ধার উপকারিতা ও অপকারিতা
রসুনের উপকারিতা ও রোগ প্রতিরোধে রসুন
খালি পেটে যেসব ফল খেতে হবে, শরীরের জন্য খুবই উপকারি।
শেষকথা:
দুধ আমাদের জন্য একটি সুপার ফুড বা পুষ্ঠিসমৃদ্ধ পানীয়। দুধে সবধরনের পুষ্ঠি উপাদান রয়েছে যা আমাদের দেহের জন্য অত্যান্ত উপকারী। দুধ খাওয়ার উপকারিতা জেনে নিয়ম মাফিক দুধ পান করতে হবে।