নিয়মিত আমরা সকলেই কমবেশি কাঠবাদাম খেয়ে থাকি। তবে এর পুষ্টি উপাদান, উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে অনেকেই জানিনা। তাই এখানে জানতে পারবেন কাঠ বাদাম এর উপকারিতা সম্পর্কে।
বাদাম আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য অনেক উপকারী। বাদাম দেখতে অনেক ছোট আকারের হলেও পুষ্টিগুনে অনেক ভরপুর। বাদাম বিভিন্ন রান্নার স্বাদ বাড়াতে, কেক পেস্ট্রি তৈরিতে এবং রূপচর্চার জন্য ও অন্যতম একটি উপাদান। বাদাম স্ন্যাকস হিসেবে খাওয়ার জন্য উপযোগী। বাদাম বিভিন্ন প্রকারের হয়ে থাকে। বিশ্বের জনপ্রিয় বাদাম গুলোর মধ্যে একটি হলো কাঠবাদাম। কাঠ বাদামের মাধ্যমে ওজন বাড়ানো ও ওজন কমানো দুটোই সম্ভব। এছাড়াও আরও বিভিন্ন উপকারিতা রয়েছে। কাঠ বাদামের উপকারিতা সম্পর্কে চলুন জেনে নেওয়া যাক।
কাঠ বাদাম কি
কাঠ বাদাম (Almond) হলো এক প্রকারের বীজ যা গাছের ফল এবং কাঠের মতো শক্ত খোলসের আবরণ দিয়ে আবৃত। বাদামের খোলসের ভিতরে থাকা অংশটি হলো খাওয়ার উপযুক্ত অংশ। কাঠ বাদাম হলো একটি পুষ্টি সমৃদ্ধ ও বহুমুখী উপাদান। এই বাদামটি প্রচুর স্বাস্থ্য সুরক্ষার সঙ্গে সংযুক্ত।
এই বাদামে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ফলিক এসিড ও এমাইনো এসিড। এছাড়াও অনেক উপাদান রয়েছে যা আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ করতে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
কাঠ বাদামের পুষ্টিগুণ ও পরিমাণ
কাঠ বাদাম প্রচুর পুষ্টিগুণে সমৃদ্ধ। তাই মানবদেহের জন্য কাঠ বাদামের উপকারিতা রয়েছে অনেক। পুষ্টিবিদদের মতে প্রতিদিন একমুঠো করে বাদাম খেলে তা আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় ও স্বাস্থ্য ভালো রাখে।
প্রতি ১০০ গ্রাম কাঠ বাদামে যা রয়েছে তা নিম্নে দেয়া হলো:
- আয়রন – ৩.৮৬ মিলিগ্রাম।
- ক্যালসিয়াম – ২৮৬ মিলিগ্রাম।
- ফাইবার – ১০.৭ গ্রাম।
- এনার্জি – ৫৭১ ক্যালোরি।
- ফ্যাট – ৫০ গ্রাম।
- পটাশিয়াম – ৭১৪ মিলিগ্রাম।
- ম্যাগনেসিয়াম – ২৮৬ মিলিগ্রাম।
- ম্যাঙ্গানিজ – ২ মিলিগ্রাম।
- কার্বোহাইড্রেট – ২১.৪৩ গ্রাম।
- ভিটামিন বি২ – ০.৯১১ মিলিগ্রাম।
- প্রোটিন – ২১.৪৩ গ্রাম।
- কপার – ১.০৭ মিলিগ্রাম।
কাঠ বাদাম এর উপকারিতা
কাঠ বাদামে থাকা ভিটামিন ও মিনারেল আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে আরো বৃদ্ধি করে। তাই সুস্থ থাকতে হলে আমাদের অবশ্যই নিয়মিত কাঠ বাদাম খাওয়া প্রয়োজন। কাঠ বাদামের কিছু গুরুত্বপূর্ণ স্বাস্থ্য উপকারিতা সম্পর্কে নিচে বিস্তারিত তুলে ধরা হলোঃ
১. শক্তি বাড়ায়
কাঠ বাদামে থাকা কপার, ম্যাঙ্গানিজ ও রিবোফ্লাবিন শরীরে শক্তি যোগায়। কাঠবাদাম বিপাক প্রক্রিয়া ভালোভাবে হতেও সাহায্য করে। প্রতিদিন একমুঠো কাঠ বাদাম খেলে শরীরের শক্তি বাড়তে সাহায্য করবে।
২. উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করেন
কাঠ বাদামে থাকা সোডিয়াম রক্তচাপের ওঠা নামা নিয়ন্ত্রণ করে। কাঠ বাদামে থাকা ফসফরাস উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে।
৩. হার্টের সুস্থতায় কাঠ বাদাম
কাঠ বাদামে থাকা ভিটামিন ই হৃদরোগের ঝুঁকি কমায় ও ম্যাগনেসিয়াম হার্ট অ্যাটাক প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে। এটি আর্টারিকি ক্ষতিকর প্রদাহ থেকে সুরক্ষা রাখে। নিয়মিত ভিজানো বাদাম খেলে হার্ট ভালো থাকে এবং ৫০% হার্ট এটাকের ঝুঁকি কমে যায় । কারণ এতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে পটাশিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম ও প্রোটিনের মত আরো অনেক উপাদান, যা আমাদের হার্টের কর্ম ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে।
৪. ওজন নিয়ন্ত্রণের সহায়ক
ওজন নিয়ন্ত্রণের জন্য কাঠ বাদাম এর উপকারিতা অনেক। প্রতিদিন ১০ থেকে ১৩ টি বাদাম খেলে ওজন নিয়ন্ত্রণ রাখা সম্ভব। কিন্তু এর থেকে বেশি পরিমাণে খেলে ওজন কমার পরিবর্তে বেড়ে যাবে। যারা ওজন নিয়ন্ত্রণ করতে চায় তারা দৈনিক বাদাম পরিমাণ মতো খেলে ওজন নিয়ন্ত্রণ থাকবে ও যথেষ্ট পরিমাণ পুষ্টি ও পাবে।
কাঠ বাদামের উপকারিতা সমূহ
কারণ এতে রয়েছে প্রোটিন, ফাইবার ও ফ্যাট যা আপনার খিদে সন্তুষ্ট করতে সক্ষম। এছাড়াও বাদামের রয়েছে ম্যাগনেসিয়াম যা অতিরিক্ত ক্ষুধাকে হ্রাস করে এবং সুগারের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে।
৫. কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে
কোষ্ঠকাঠিন্য এমন একটি স্বাস্থ্য সমস্যা যা নানাবিধ রোগের সৃষ্টির কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে। কাঠ বাদামের মধ্যে এক ধরনের আঁশ রয়েছে যা কোষ্ঠকাঠিন্য রোধ করতে সাহায্য করে। বাদামে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার যা শরীরের জন্য অনেক উপকারী। ফাইবার যুক্ত খাবার খেলে কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা দূর হয়।
৬. মস্তিত্বের কর্ম ক্ষমতা বৃদ্ধি
কাঠবাদামে থাকা পুষ্টিগুণ মস্তিষ্কের স্বাস্থ্যকে ভালো রাখতে সাহায্য করে। প্রতিদিন ৪-৬ টি বাদাম ভিজিয়ে খেলে মস্তিষ্ক সচল থাকে ও মস্তিষ্কের উন্নতি ঘটে। এই বাদামের মধ্যে দুটি পুষ্টিগুণ রিবোফ্লাভিন ও এল ক্যারনিটিন নামে উপাদান থাকে যা মস্তিষ্কের জন্য প্রয়োজনীয়। এই উপাদান দুটি মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি করে এবং স্মৃতি ভ্রম রোগ প্রতিরোধে সাহায্য করে।
কাঠ বাদাম খাওয়ার ফায়দা
৭. ডায়াবেটিসে কাঠ বাদাম
কাঠবাদাম খাবারের পর খাওয়া হলে ইনসুলিনের মাত্রা কমাতে সাহায্য করে। বাদামে কার্বোহাইড্রেট খুব কম পরিমাণে থাকে। কাঠবাদাম উচ্চ স্বাস্থ্যকর ফ্যাট, প্রোটিন ও ফাইবার সমৃদ্ধ একটি খাবার। বাদাম ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য একটি প্রয়োজনীয় খাবার। এছাড়াও বাদামে রয়েছে ম্যাগনেসিয়াম যা ডায়াবেটিস রোগীদের ম্যাগনেসিয়ামের ঘাটতি পূরণ করে এবং রক্তের সুগারের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ রাখে।
৮. কাঠ বাদাম ভিটামিন ই এর ভালো উৎস
কাঠ বাদামে রয়েছে প্রোটিন ও পর্যাপ্ত পরিমাণ ভিটামিন ই যা আমাদের শরীরকে সুস্থ রাখতে সক্ষম। আর কাঠ বাদাম হচ্ছে ভিটামিন ই এর একটি ভালো উৎস। এর মাধ্যমে এন্টিঅক্সিডেন্ট গুলো আপনার শরীরের কোষের ঝিল্লিতে তৈরি হতে থাকে, যা আপনার শরীরের কোষগুলোকে অক্সিডেটিভ ক্ষতি থেকে রক্ষা করে।
৯. রক্তের কোলেস্টেরল উন্নত করে
আমাদের শরীরের রক্তে দুই ধরনের কোলেস্টেরল রয়েছে। এর মধ্যে খারাপ হচ্ছে এলডিএল কোলেস্টেরল। এই কোলেস্টেরলে হৃদরোগের ঝুঁকি রয়েছে। কাঠ বাদাম রক্তের এই খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা কমিয়ে আনে। কাঠ বাদামের যথেষ্ট প্রভাব রয়েছে রক্তের কোলেস্টেরলের উপরে। যেটা আমাদের শরীরের জন্য খুবই উপকারী। তাই নিয়মিত আমাদের সবারই পরিমাণ মত বাদাম খাওয়া প্রয়োজন।
অন্যান্য উপকারিতা
১০. ত্বকের সমস্যা সমাধানে কাঠবাদাম
কাঠবাদামের তেলে রয়েছে ভিটামিন ই যা আমাদের ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়ায় ও রোদে পোড়া ত্বককে ক্ষতি থেকে রক্ষা করে। এছাড়াও এটি ময়েশ্চারাইজার হিসেবে কাজ করে যা মুখের ব্রণের দাগ, কালো দাগ ও ব্ল্যাকহেডস দূর করতে সাহায্য করে। এটি একটি এন্টি এজিং উপাদান যা আমাদের ত্বকের সৌন্দর্য ধরে রাখে ও ত্বকের রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধিতেও সাহায্য করে।
১১. চুলের যত্নে কাঠ বাদামের ব্যবহার
ম্যাগনেসিয়াম এর অভাবে আমাদের চুলের অনেক সমস্যা হয়। কাঠ বাদামে প্রচুর পরিমাণে ম্যাগনেসিয়াম ও ভিটামিন ডি রয়েছে। বাদাম তেল আমাদের চুলের জন্য খুবই প্রয়োজনীয় কারণ চুল পড়া কমায়, চুলের রুক্ষতা দূর করে, চুল লম্বা করে, চুল মসৃণ ও মজবুত করে এবং মাথার ত্বকের সুস্বাস্থ্য বজায় রাখে।
১২.রোগ প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে
কাঠ বাদামে রয়েছে ফাইটো কেমিক্যালস ও এন্টিঅক্সিডেন্ট। যা আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। আর মানবদেহে যদি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বেশি থাকে তাহলে শরীরের কোন রোগ সহজে সংক্রমণ করতে পারে না। তাই রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে কাঠ বাদাম এর উপকারিতা পেতে পারেন।
কাঠ বাদামের অপকারিতা / পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া
সব কিছুই পরিমাণমতো খাওয়া বা ব্যবহার করা প্রয়োজন। অতিরিক্ত কোন কিছুই ভালো নয়। নির্দিষ্ট পরিমাণ কাঠ বাদাম খেলে যেমন উপকার পাওয়া যায় তেমনি অতিরিক্ত পরিমাণে গ্রহণ করলেও এর ক্ষতিকর দিক রয়েছে। নিচে কাঠ বাদামের কিছু নেতিবাচক দিক তুলে ধরা হলো
- কাঠ বাদাম অনেক বেশি পরিমানে খেলে এলার্জির সমস্যা হতে পারে।
- অতিরিক্ত খেলে ওজন বাড়তে পারে।
- অনেক বেশি কাঠ বাদাম খেলে কোষ্ঠকাঠিন্য সমস্যা হতে পারে।
আরও পড়ুন: ড্রাগন ফলের উপকারিতা – Dragon fruit benefits
কাঠ বাদাম খাওয়ার নিয়ম
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কৃষি বিভাগের গবেষণা মতে প্রতিদিন ১০ থেকে ১৩ টি কাঠ বাদাম খাওয়া যেতে পারে। কাঠ বাদাম কাঁচা খাওয়া যায় আবার পানিতে ভিজিয়েও খেতে পারেন। পুষ্টিবিদদের মতে কাঠ বাদাম সারারাত পানিতে ভিজিয়ে রেখে খেলে বেশি উপকারিতা পাওয়া যায়।
শেষকথা
কাঠ বাদাম এর উপকারিতা অনেক বেশি তা আমরা জানি। তবে এর মূল্য তুলনামূলক বেশি হতে পারে। যা সকলের জন্য নিয়মিত খাওয়া সম্ভব হয়না। তাছাড়া এর কিছু নেতিবাচক দিকও রয়েছে। তাই আপনার সামর্থ্য থাকলে স্বাস্থ্যের উন্নয়নের জন্য নিয়মিত সঠিক পরিমানে কাঠ বাদাম খেতে পারেন।