আমাদের আজকের আলোচনা সেন্টমার্টিন ভ্রমন: সেন্টমার্টিন বাংলাদেশের একমাত্র প্রবাল দ্বীপ। এ দ্বীপটি নারিকেল জিন্জিরা দ্বীপ নামে ও পরিচিত। এই দ্বীপটি বাংলাদেশের মূল ভূখণ্ডের সর্ব দক্ষিন দিকে অবস্থিত।
এই দ্বীপটি কক্সবাজার জেলা শহর থেকে ১২০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। ১৭ বর্গ কিলোমিটারের ক্ষুদ্র দ্বীপটি হলো সেন্ট মার্টিন দ্বীপ। বিশাল নীল আকাশের সাথে সমুদ্রের নীল রংয়ের পানি ও সারি সারি নারিকেল গাছ এই সেন্টমার্টিন ভ্রমন এর জন্য করেছে আকর্ষণীয় ও সুন্দর। যা ভ্রমন পিয়াসি মানুষদেরকে কাছে টানে। কক্সবাজারের অসচ্ছ বালুময় পানি দেখে অনেকেই নীল পানির খোঁজে চলে আসে সেন্টমার্টিন ভ্রমন করতে।
সেন্টমার্টিন যাওয়ার উপায়
সেন্টমার্টিন ভ্রমন করতে বিভিন্ন ভাবে যাওয়া যায়। সেন্টমার্টিনে যাওয়ার যে শীপগুলো রয়েছে তার বেশিরভাগই টেকনাফ থেকে ছেড়ে যায়। তাই সেন্টমার্টিন যেতে হলে আগে কক্সবাজার জেলার টেকনাফে যেতে হবে তারপর টেকনাফ থেকে জাহাজে অথবা ট্রলারে করে সেন্ট মার্টিনে যাওয়া যায়। ঢাকা থেকে যেতে চাইলে আগে টেকনাফ যাওয়া সুবিধাজনক। ভ্রমন পরিকল্পনায় যদি কক্সবাজার থাকে তাহলে ঢাকা থেকে কক্সবাজার হয়ে তারপর টেকনাফ এবং পরে সেন্ট মার্টিনে যাওয়া যাবে। বর্তমানে কক্সবাজার থেকে সরাসরি সেন্ট মার্টিনে যেতে পারবেন এম ভি কর্ণফুলী এক্সপ্রেস শীপের মাধ্যমে। সেন্টমার্টিন ভ্রমন করতে যাওয়ার উপায় গুলো বিস্তারিত নিচে দেওয়া হল।
ঢাকা থেকে টেকনাফ যাওয়ার উপায়
রাজধানী ঢাকা থেকে সরাসরি টেকনাফে যাওয়া যায় বাসে করে। বাস ভেধে বাসের ভাড়া বিভিন্ন রকম হয়ে থাকে। বাসের ভাড়া ১০৫০ থেকে শুরু করে ২২০০ টাকা পর্যন্ত হয়ে থাকে। ঢাকার সায়েদাবাদ, গাবতলী, কলাবাগান, আব্দুল্লাহপুর ফকিরাপুল থেকে রয়েল কোচ, এস আলম, সেন্ট মার্টিন হুন্দাই, শ্যামলী, সেন্ট মার্টিন পরিবহন, গ্রীন লাইন, তুবা লাইন ইত্যাদি বাসগুলো সরাসরি টেকনাফে যায়। রাত ৮টা থেকে ১০টার মধ্যে বাসে করে রওনা দিলে সকাল ৮টার মধ্যে টেকনাফে পৌঁছে যায়। শুধুমাত্র সেন্ট মার্টিন যেতে চাইলে তাহলে বাসে করে সরাসরি টেকনাফে চলে যাওয়াটাই সবচেয়ে সুবিধা জনক। কারণ টেকনাফ থেকেই ট্রলার বা জাহাজে করে সেন্টমার্টিন ভ্রমন করতে যাওয়া যাবে।
কক্সবাজার থেকে টেকনাফ যাবার উপায়
কক্সবাজার থেকে অনেক উপায়ে যাওয়া যায় টেকনাফে। কক্সবাজার থেকে সিএনজি, লোকাল বাস, মাইক্রো ও জিপ ভাড়া করে টেকনাফে যাওয়া যায় । কক্সবাজার থেকে টেকনাফ যেতে প্রায় দুই ঘণ্টা সময় লাগে। কক্সবাজার থেকে টেকনাফ যাওয়ার সিএনজি ভাড়া জনপ্রতি ২৫০ টাকা ও বাস ভাড়া ১৫০ টাকা। টেকনাফ থেকে সেন্টমার্টিনে সকালের জাহাজে যেতে চাইলে কক্সবাজার থেকে টেকনাফের উদ্দেশ্যে ভোর ৬টার মধ্যে রওনা হতে হবে।
চট্টগ্রাম থেকে টেকনাফ যাবার উপায়
চট্টগ্রাম থেকে বাসের মাধ্যমে টেকনাফ যেতে ভাড়া বাবদ ৫৫০ থেকে ১২০০ টাকা লাগবে। চট্টগ্রাম থেকে টেকনাফ রোডে জিএসই গরীবুল্লাহ শাহ মাজার ও দামপাড়া থেকে কিছু পরিমাণ বাস এই রোডে চলাচল করে। এছাড়াও চট্টগ্রাম সিনেমা প্যালেস থেকে সৌদিয়া ও এস আলম বাস চট্টগ্রাম থেকে রাত ১২ঃ০০ টায় টেকনাফের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়। তারপর পরবর্তী গন্তব্য সেন্টমার্টিন ভ্রমন করতে যেতে পারবেন।
ঢাকা থেকে কক্সবাজার হয়ে টেকনাফ যাবার উপায়
রাজধানী ঢাকা থেকে প্রতিদিন কক্সবাজারের উদ্দেশ্যে অনেক বাস যায়। ঢাকা থেকে কক্সবাজারের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যাওয়া বাস গুলো হলো হানিফ, সিল্কলাইন, সেন্টমার্টিন, টিআর ট্রাভেলস,সৌদিয়া, এস আলম, গ্রিন লাইন, শ্যামলী, সোহাগ, ঈগল ইত্যাদি আরো অনেক বাস যায়। বিভিন্ন বাসের ভাড়া বিভিন্ন রকম। বাস ভেদে ভারা ৯০০ থেকে ২৫০০ টাকা পর্যন্ত। কক্সবাজারে সরাসরি যাওয়া যাবে বিমানের মাধ্যমেও। এভাবে ঢাকা থেকে প্রথমে কক্সবাজার আসতে হবে। তারপর কক্সবাজার থেকে সিএনজি, লোকাল বা, মাইক্রো এগুলোর মাধ্যমেও যাওয়া যাবে । বাস ভাড়া ১৫০ টাকা ও সিএনজি ভাড়া জনপ্রতি ২৫০টাকা। কক্সবাজার থেকে সহজেই এভাবে টেকনাফে সেন্টমার্টিন ভ্রমন করতে যাওয়া যাবে।
টেকনাফ থেকে সেন্টমার্টিন ভ্রমন এ যাবার উপায়
নভেম্বর থেকে মার্চ বা এপ্রিল পর্যন্ত টেকনাফ থেকে সেন্ট মার্টিনে প্রতিদিন বেশ কয়েকটি জাহাজ বা শীপ আসা যাওয়া করে। এই সময়গুলোর মধ্যে গেলে জাহাজে করে সেন্ট মার্টিনে যাওয়া যায়। বছরের অন্যান্য সময় গুলোতে সেন্ট মার্টিনে গেলে ট্রলারে বা স্পিড বোটে করে যেতে হয়। টেকনাফ সেন্ট মার্টিন রোডে যে জাহাজগুলো চলাচল করে সেগুলো হল এমবি ফারহান, কেয়ারী সিন্দাবাদ, আটলান্টিক ইত্যাদি। টেকনাফ থেকে সেন্ট মার্টিনে জাহাজে করে যেতে সময় লাগে প্রায় দুই থেকে আড়াই ঘন্টা।
সেন্ট মার্টিনে যাবার টিকেটগুলো সাধারণত আসা যাওয়ার হয়ে থাকে। টিকিট কাটার সময় সেন্ট মার্টিন থেকে আবার কবে ফিরবে তা উল্লেখ করতে হয়। বিভিন্ন জাহাজের বিভিন্ন রকম মান হওয়ার কারণে সেন্ট মার্টিনে আসা-যাওয়ার টিকেট ভাড়া ৮৫০ থেকে ১৬০০ টাকা পর্যন্ত হয়ে থাকে। টেকনাফ থেকে সেন্টমার্টিন ভ্রমন এর উদ্দেশ্যে জাহাজগুলো প্রতিদিন সকাল ৯:০০টা থেকে ৯:৩০ মিনিটে ছেড়ে যায় এবং সেন্ট মার্টিন থেকে ফেরত আসে বিকেল ৩:০০টা থেকে ৩:৩০ মিনিটে।
টেকনাফ থেকে সেন্ট মার্টিনে যাওয়ার উত্তম সময় হচ্ছে নভেম্বর থেকে এপ্রিল পর্যন্ত। এই পাঁচ মাস শীতের সময় সাগর শান্ত থাকে এবং বছরের অন্যান্য সময়গুলোতে সাগর অনেক উত্তাল থাকে। নভেম্বর থেকে এপ্রিল পর্যন্ত এই রুটে জাহাজ চলে বছরের অন্যান্য সময় গুলোতে স্পিডবোট বা ট্রলার চলে। যা যাত্রীদের জন্য দুর্ভোগের কারণ হয়ে থাকে। ট্রলারে বা স্পিডবোটে গেলে অনেক রোলিং হয় তাই শিপে যাওয়াই ভালো। টেকনাফের জেটি ঘাট থেকে ট্রলার স্পিডবোট ও মালবাহী ট্রলার ছাড়ে। টেকনাফ থেকে সেন্টমার্টিন ভ্রমন এ ট্রলারে যাবার ভাড়া ২৫০-৩৫০ টাকা পর্যন্ত হয়ে থাকে। ট্রলারে যেতে সময় লাগে প্রায় ৩ ঘন্টা। ট্রলারের ভাড়া বিভিন্ন সময়ে কম-বেশি হয়ে থাকে।
কক্সবাজার থেকে সরাসরি সেন্টমার্টিন যাবার উপায়
বর্তমানে কক্সবাজার থেকে সেন্টমার্টিন দ্বীপের শীপ বা জাহাজ চালু হয়েছে। বর্তমানে এমভি বার আউলিয়া জাহাজ ও কর্ণফুলী এক্সপ্রেস জাহাজ নিয়মিত কক্সবাজার থেকে জেটি ঘাট চলাচল করছে । তাই টেকনাফ থেকে জাহাজে না উঠে সরাসরি কক্সবাজার থেকে জাহাজে উঠতে পারবেন।
চট্টগ্রাম থেকে সরাসরি সেন্ট মার্টিন
বর্তমানে চট্টগ্রাম থেকে সেন্টমার্টিন দ্বীপের শীপ বা জাহাজ চালু হয়েছে। বর্তমানে বে-ওয়ান জাহাজে করে সরাসরি চট্টগ্রাম থেকে সেন্টমার্টিন যাওয়া যায়। সেজন্য আপনি চাইলে টেকনাফ থেকে না উঠে চট্টগ্রাম থেকে ও সরাসরি জাহাজে করে সেন্টমার্টিন ভ্রমন করতে চলে যেতে পারবেন।
সেন্ট মার্টিনে যাবার জাহাজ ভাড়া
সেন্টমার্টিন ভ্রমন করতে যাবার জাহাজের ভাড়া গুলো বিভিন্ন জাহাজের বিভিন্ন রকম হয়ে থাকে। জাহাজের ভাড়া সম্পর্কে নিচে তথ্য দেয়া হলো
★ কেয়ারি সিন্দাবাদ :- জাহাজের দোতলার ভাড়া ১২৫০ টাকা, নিচতলার ভাড়া ১১০০ টাকা ও বিজনেস ক্লাস ১৩৫০ টাকা।
★ এমভি রাজহংস :- দোতলার ভাড়া ১৫০০ টাকা ও বিজনেস ক্লাস ১৭০০ টাকা।
★ কেয়ারি ক্রুজ অ্যান্ড ডাইন:- নিচতলা ভাড়া ১৪০০ টাকা, দোতলা ১৬০০ টাকা ও বিজনেস ক্লাস ২০০০ টাকা।
★ সুকান্ত বাবু :- দোতলা ১১০০ টাকা ও নিচতলা ১০০০ টাকা।
★ আটলান্টিক ক্রজ :-নিচতলা ১৩০০ টাকা, দোতলা ১৪০০, ১৬০০ ও ১৮০০ এবং বিজনেস ক্লাস ২ হাজার টাকা।
★ এমভি পরিজাত :-নিচতলা ১২০০ টাকা, দোতলা ১৫০০ বিজনেস ক্লাস ১৭০০ টাকা।
★ এম ভি বে ক্রুজার:- নিচ তলা ১৪০০ টাকা দোতলা ১৫০০ টাকা ও বিজনেস ক্লাস ১৮০০ টাকা।
★ এমবি বার আউলিয়া :- এ জাহাজের ভাড়া ৩২০০ টাকা থেকে ২২০০০ টাকা পর্যন্ত।
★ কর্ণফুলী এক্সপ্রেস :-এই জাহাজের ভাড়া ৩০০০ টাকা থেকে ২৮০০০ টাকা পর্যন্ত।
★ বে-ওয়ান:- এই জাহাজের ৭,৫০০ টাকা থেকে ৫০,০০০ টাকা।
সেন্টমার্টিনের হোটেল ও রিসোর্ট
সেন্টমার্টিন ভ্রমন করতে গেলে দেখতে পাবেন হোটেল ও রিসোর্ট এর পরিমাণ অনেক বেশি। রাতে থাকার জন্য বিভিন্ন মানের হোটেল, রিসোর্ট ও কটেজ রয়েছে সেন্ট মার্টিন দ্বীপে। এগুলো আগে থেকেই বুকিং করে যাওয়া সুবিধাজনক। অথবা সেন্ট মার্টিন দ্বীপে গিয়েও নিজের পছন্দমত হোটেল, রিসোর্ট ও কটেজ বুকিং করা যাবে। সেন্ট মার্টিন দ্বীপের জনপ্রিয় কিছু রিসোর্ট রয়েছে সেগুলো নিম্নে দেয়া হলো:-
সায়রী ইকো রিসোর্ট (Sayari Eco Resort )
দক্ষিণ বিচে নজরুলপাড়ায় সায়রী ইকো রিসোর্ট অবস্থিত। সায়রী ইকো রিসোর্টে রয়েছে ১৮টি বিভিন্ন ক্যাটাগরির রুম। রুম গুলোর ভাড়া হচ্ছে ১৫০০ টাকা থেকে ৩০০০ টাকা পর্যন্ত।
যোগাযোগ:- 01610 555 500
ব্লু মেরিন রিসোর্ট (Blue Marine Resrot)
ব্লু মেরিন রিসোর্টটি সেন্ট মার্টিন দ্বীপ এর ফেরিঘাটের পাশেই অবস্থিত। ব্লু মেরিন রিসোর্টে ননএসি ও এসি বিভিন্ন পর্যায়ের রুম রয়েছে। এসিযুক্ত ডাবল বেডরুমের ভাড়া ১৫০০০ টাকা এবং নন এসি ৫০০০ টাকা। ছয় জনের বেডরুমের ভাড়া ৪ হাজার, ১০ জনের বেডরুমের ভাড়া ৫ হাজার ও ট্রিপল বেডরুমের ভাড়া ৩০০০ টাকা।
যোগাযোগ:- 01817 060 065
ড্রিম নাইট রিসোর্ট (Dream Night Resort)
ড্রিম নাইট রিসোর্টটি পশ্চিম বীচের শেষ প্রান্তে অবস্থিত। এই রিসোর্ট এর প্রতিটি কক্ষে ২ থেকে ৪ জনের রাত্রিযাপনের সুযোগ রয়েছে। রিসোর্ট এর প্রতিটি রুমের ভাড়া ১৫০০ থেকে ৩৫০০ টাকা পর্যন্ত।
যোগাযোগ :-01730 235 002
নীল দিগন্তে রিসোর্ট (Neel Digante Resort)
নীল দিগন্তে রিসোর্টটি সেন্ট মার্টিন দ্বীপের দক্ষিণ বীচের কোনাপাড়ায় জেটি ঘাট থেকে বেশ খানিকটা দূরে অবস্থিত। নীল দিগন্তে রিসোর্টে রয়েছে বিভিন্ন ধাপের কটেজ টাইপের রুম। রুমগুলোর ভাড়া ১৫০০ টাকা থেকে ৫০০০ টাকা পর্যন্ত। যোগাযোগ:-01730 051 004
লাবিবা বিলাস রিসোর্ট (Labiba Bilas Resort)
সেন্টমার্টিন ভ্রমন এর অন্যতম আকর্ষন লাবিবা বিলাস রিসোর্টটি পশ্চিম বীচে অবস্থিত। রিসোর্টটির বর্তমান নাম দি আটলান্টিক রিসোর্ট । এই রিসোর্টে ৪৩ টি বিভিন্ন ধরনের রুম রয়েছে। প্রতিটি রুমের ভাড়া ৩৫০০ টাকা থেকে শুরু করে ১২০০০ টাকা পর্যন্ত।
যোগাযোগ:-01834 267 922
প্রাসাদ প্যারাডাইস রিসোর্ট (Praasad Paradise Resort)
প্রাসাদ প্যারাডাইস রিসোর্ট টি সেন্ট মার্টিন দ্বীপের বাজারের ভিতর দিয়ে ব্লুম মেরিন রিসোর্ট এর কিছুটা দূরে উত্তর পাশে অবস্থিত। এই রিসোর্টে ১৬ টি রুম রয়েছে যেগুলো ভাড়া নিতে খরচ পড়বে ২০০০ থেকে ৫০০০ টাকা পর্যন্ত। যোগাযোগ :-01995 539 248
প্রিন্স হেভেন রিসোর্ট (Prince Heaven Resort)
প্রিন্স হেভেন রিসোর্টটি উত্তর বীচের প্রাসাদ প্যারাডাইস রিসোর্ট এর সংলগ্নে অবস্থিত। প্রিন্স হেভেন রিসোর্ট এ একটি রেস্টুরেন্ট ও ২৪ টি রুম রয়েছে। এই রিসোর্টের প্রতিটা রুমের ভাড়া ১৫০০ থেকে ৩৫০০ টাকা পর্যন্ত।
যোগাযোগ :-01995 539 246, 01883 626 002
এছাড়াও আরও রয়েছে- হোটেল সাগর পার, হোটেল স্বপ্ন প্রবাল, সানসেট ভিউ, কোরাল ব্লু, সি প্রবাল, মারমেইড, শ্রাবণ বিলাস ইত্যাদি।
সেন্টমার্টিন দ্বীপের দর্শনীয় স্থান
সেন্টমার্টিন ভ্রমন এর পুরো দ্বীপটি হলো একটি দর্শনীয় স্থান। সেন্ট মার্টিন দ্বীপে সব কিছুই দেখার মতো ও ভালো লাগার মত। অফুরন্ত প্রাণের ভান্ডার এই দ্বীপে। বিশেষভাবে আকর্ষণীয় ও সৌন্দর্যে ভরপুর যেগুলো দেখার মতো আছে সেগুলোর একটি লিস্ট দেয়া হলো –
- সেন্টমার্টিন দ্বীপের পশ্চিম পাশে কোরাল দ্বীপ।
- গলাচিপা (দ্বীপের সবচেয়ে সরু অংশ)।
- দ্বীপের উত্তর পাশে নারিকেল জিনজিরা (জেটিঘাট থেকে বাম পাশের বীচ ধরে হাঁটলেই পাওয়া যাবে)।
- জেটি ঘাট (সকালে সমুদ্রের নীল রংয়ের পানি দেখে অবাক হয়ে যাবেন আর রাতে জেটি ঘাটের সিঁড়িতে বসে সমুদ্রের গর্জনের শুনে অবাক হবেন।
- পশ্চিম বীচে বসে সূর্যাস্ত দেখা যাবে।
- জেটি ঘাটে বসে সূর্যোদয় দেখা যাবে।
- ছেঁড়া দ্বীপ (বাংলাদেশের সর্ব দক্ষিণে শেষ স্থলভাগ)।
- বিকালে জেটির বাম পাশে বীচে জেলেদের সাথে জাল টেনে মাছ ধরা।
- বাজার থেকে পাকা রাস্তা ধরে অবকাশ হোটেল পর্যন্ত হেঁটে স্থানীয়দের জীবনধারা ও বাসস্থান দেখা।
- সন্ধ্যা বা রাতের বাজার দেখাও অনেক আকর্ষনীয় সেন্টমার্টিন ভ্রমন এ।
সেন্টমার্টিন দ্বীপে যা যা করা যায়
সেন্টমার্টিন দ্বীপে মানুষ আনন্দ উপভোগ করার জন্য যায়। একটু খোলামেলা পরিবেশে সময় কাটাতে চায়। আর কি কি করা যায় নিচে দেয়া হলো-
- নানা ধরনের মাছের বারবিকিউ খাওয়া।
- সাইকেল চালানো।
- স্কুবা ড্রাইভিং করা।
- ভোরে উঠে জেলেদের কাছ থেকে মাছ কেনা।
- ক্যাম্প ফায়ার।
- হেটে, মাছ ধরার ট্রলারে, স্পিডবোটে, লাইফ বোটে ছেঁড়া দ্বীপ যাওয়া।
সেন্টমার্টিন ভ্রমন করতে গেলে দ্বীপে সাইকেল নিয়ে ঘুরলে সারা দ্বীপ মনের মতো করে ঘুরতে পারবেন। দ্বীপের কয়েক জায়গা থেকে সাইকেল ভাড়ায় পাওয়া যায়। বিশেষ করে পশ্চিম বীচ থেকে সাইকেল ভাড়া নেয়া যায় প্রতি ঘন্টায় ৬০ থেকে ৮০ টাকায়।
সেন্ট মার্টিন দ্বীপের বিদ্যুৎ সংযোগ
সেন্টমার্টিন ভ্রমন এর একটি নেতিবাচক দিক হলো পল্লী বিদ্যুতের সংযোগ নেই সেন্টমার্টিন দ্বীপে। সেন্ট মার্টিন দ্বীপের পুরোটাই জেনারেটরের উপর নির্ভর করে চলে। রিসোর্ট ও হোটেল গুলোতে দিনের বেলায় পানির পাম্প ছাড়ার জন্য কিছুক্ষণ জেনারেটর ছেড়ে রাখে এবং রাতের বেলায় ১০টা থেকে ১১টা পর্যন্ত জেনারেটর ছাড়া থাকে। শীতকালে এই দ্বীপে ফ্যান ছাড়ার প্রয়োজন পড়ে না বলে কারেন্টের অভাব টের পাওয়া যায় না।
সেখানে মোবাইল, ক্যামেরা ও ল্যাপটপ চার্জ করা নিয়ে কিছুটা সমস্যায় পড়তে হয়। সেন্ট মার্টিন দ্বীপে রাতের বেলায় জেটি ঘাটে সারি সারি রেস্টুরেন্ট, হোটেল ও জাহাজগুলোর আলো দেখলে সেখানের পরিবেশে মনেই হবে না যে দ্বীপে দ্বিদ্যুৎ সংযোগ নেই। দ্বীপের হোটেল ও রিসোর্ট গুলো অনেক রাত অব্দি জেনারেটর চালু রাখে সেজন্য সেখানের পরিবেশেটা আলোময় হয়ে থাকে।
সেন্টমার্টিনে কোথায় খাবেন
সেন্টমার্টিন ভ্রমন করতে গেলে অনেক পরিমাণ হোটেল, রিসোর্ট ও কটেজ রয়েছে। আপনি যে রিসোর্টে উঠবেন সে রিসোর্টে খাবার ব্যবস্থা আছে কিনা তা রিসোর্ট বুকিং করার আগে জেনে নিন। বিভিন্ন রিসোর্ট গুলোতে বারবিকিউ এর ব্যবস্থা করা থাকে। সেন্ট মার্টিন বীচের প্রায় সব জায়গাতেই নানা ধরনের সামুদ্রিক মাছের বিভিন্ন টাইপের বাংলা আইটেম করা হয়ে থাকে। আপনি চাইলে হোটেলে অথবা রিসোর্টে খেতে পারবেন। দিনে গিয়ে দিনে ফিরে আসতে চাইলে হোটেলে দুপুরের খাবার খেতে পারবেন।
সেন্ট মার্টিন বীচের ভালো মানের কিছু হোটেল ও রেস্টুরেন্টের নাম দেয়া হলো – বীচ পয়েন্ট, সি বীচ, হাজী সেলিম পার্ক, কুমিল্লা রেস্টুরেন্ট, রিয়েল রেস্তোরা, হোটেল সাদেক, সেন্টমার্টিন ট্যুরিস্ট পার্ক, কেয়ারি মারজান রেস্তোরাঁ , আল্লাহর দান ইত্যাদি হোটেল ও রেস্টুরেন্ট রয়েছে। ছুটির দিনগুলোতে সবকিছুর দাম একটু বেশিই থাকে। তাই সেখানে গেলে খাবার ও দাম একটু যাচাই-বাছাই করে অবশ্যই আগে দেখতে হবে।
সেন্টমার্টিন দ্বীপে সারি সারি অসংখ্য ডাব গাছ রয়েছে। সেখানের সবচেয়ে প্রসিদ্ধ খাবার হল ডাব। সেখানকার ডাব অনেক মিষ্টি ও সুস্বাদু হয়। তাই সেন্ট মার্টিনে গেলে অবশ্যই একটা ডাব টেস্ট করা উচিত। সেন্ট মার্টিনে বিভিন্ন ধরনের সামুদ্রিক মাছ পাওয়া যায়। যারা মাছ খেতে পছন্দ করেন তারা সেন্ট মার্টিনে গেলে অবশ্যই লবস্টার, ইলিশ,রূপচাঁদা, কোরাল, সুন্দরী পোয়া ইত্যাদি নানা ধরনের মাছ খেয়ে দেখতে পারেন।
সেন্টমার্টিন ভ্রমন করতে গেলে দ্বীপে অনেক পরিমাণের শুটকি পাওয়া যায় জানা-অজানা অনেক মাছের যেমন কাচকি,ছুরি,পোয়া,কোরাল, লইট্টা, রূপচাঁদা ইত্যাদি আরো নানা ধরনের শুটকি পাওয়া যায়। আপনারা চাইলে সেগুলো খেতে পারেন ও নিয়েও আসতে পারেন। সেন্ট মার্টিন দ্বীপে দেশী মুরগিকে কুড়া বলে ডাকা হয়। আপনারা চাইলে কুড়া খেয়েও দেখতে পারেন। সেন্টমার্টিন দ্বীপে আরো অনেক কিছু খাবারের পাওয়া যায়।
ছেঁড়া দ্বীপ
ছেঁড়া দ্বীপটি বাংলাদেশের সর্ব দক্ষিণে অবস্থিত। ছেঁড়া দ্বীপের অপর নাম সিরাদিয়া বা ছেঁড়াদিয়া। সেন্ট মার্টিন দ্বীপ থেকে প্রায় ৮ কিলোমিটার দূরে দক্ষিণে ছেঁড়া দ্বীপ অবস্থিত। ছেঁড়া দ্বীপের পরে বাংলাদেশের আর কোন ভূখণ্ড নেই।
সেন্টমার্টিন ভ্রমন এর মূল ভূখণ্ড থেকে জোয়ার ভাটার সময় এ দ্বীপটি আলাদা হয়ে যায় বলেই এর নাম ছেঁড়া দ্বীপ। ছেঁড়া দ্বীপটি ১০০ থেকে ৫০০ বর্গমিটার আয়তন বিশিষ্ট কয়েকটি দ্বীপ নিয়ে গঠিত। সেন্ট মার্টিন থেকে পায়ে হেঁটে ও সাইকেলে করে ও ছেঁড়া দ্বীপে যাওয়া যায়।
ছেঁড়া দ্বীপ যাওয়ার উপায়
- জেটি ঘাট থেকে প্যাকেজে ছেঁড়া দ্বীপ যাওয়া যায়। আসতে ৩০ মিনিট যেতে ৩০ মিনিট ও ঘোরার সময় ১ ঘন্টা।
- ভাটার সময় হেঁটে বা সাইকেলে করে ও ছেঁড়া দ্বীপ যাওয়া যায়।
- অটো রিজার্ভ করে নিয়েও ছেঁড়া দ্বীপে যাওয়া যায়।
- মাছ ধরার ট্রলার রিজার্ভ করেও যাওয়া যাবে ছেঁড়া দ্বীপে।
পায়ে হেঁটে ছেঁড়া দ্বীপ ভ্রমণ
★ ছেঁড়া দ্বীপ পায়ে হেঁটে যাওয়ার সময় পশ্চিম বীচ দিয়ে যাবেন এবং আসার সময় পূর্ব বীচ দিয়ে আসবেন তাহলে সবকিছু ভালোভাবে করে দেখতে পাবেন।
★ ছেঁড়া দ্বীপে পশ্চিম বীচ ধরে হেঁটে যেতে সময় লাগে দেড় থেকে দুই ঘন্টা। এই দিক দিয়ে যাওয়াটা কষ্টকর হলেও বৃথা হবে না।
★ পূর্ব বীচ দিয়ে গেলে আরামে ও দ্রুত যাওয়া যাবে।
★ ছেঁড়া দ্বীপে ট্রলার রিজার্ভ নিয়ে যেতে হয়। নয়তো আসার সময় ট্রলার পাওয়া যায় না ।
★ জোয়ার ও ভাটার সময় পরিবর্তন হয়। তাই যেদিন যাবেন সেদিন স্থানীয় লোকদের কাছ থেকে অথবা রিসোর্ট এর ম্যানেজার থেকে জিজ্ঞাসা করে জেনে নিবেন। সেন্টমার্টিন ভ্রমন করতে গেলে এই স্থানটি একটি অন্যতম আকর্ষন।
সেন্টমার্টিন দ্বীপে ভ্রমণ খরচ
যেকোনো ভ্রমণের খরচ আগে থেকে বাজেট করে তারপর ভ্রমণে যাওয়া উচিত। যে কোন ভ্রমণের খরচ, কি খাবেন, কিভাবে যাবেন , কোথায় থাকবেন ও কি করবেন সেটা সম্পূর্ণ নির্ভর করবে আপনার উপর। সেন্ট মার্টিন দ্বীপে বছরের কোন সময় যাবেন সেটার উপরও নির্ভর করে খরচ কম বেশি হওয়া। ডিসেম্বর থেকে মার্চ বা এপ্রিল মাস পর্যন্ত তুলনামূলক ভাবে বছরের অন্যান্য সময় গুলো থেকে একটু বেশি ভিড় থাকে। তাই সে সময় গুলোতে সব কিছুর দাম একটু বেশিই থাকে। বছরের অন্যান্য সময় গুলোতে গেলে সবকিছুর দাম কিছুটা স্বাভাবিক থাকে। ঢাকা থেকে সেন্টমার্টিন ভ্রমন করতে মিডিয়াম মানের হোটেলে একরাত থাকা ও খাওয়াসহ কত খরচ হবে সেটার ধারণা দেয়ার জন্য নিচে কিছু তথ্য দেয়া হলো –
খাবার খরচ
সেন্টমার্টিনে যাত্রার দিন -যাত্রা বিরতিতে রাতের খাবার ১০০ – ২০০ টাকা।
১ম দিন – নাস্তা ৬০ – ১০০ টাকা, দুপুরের খাবার ১২০ – ২২০ টাকা ও রাতের খাবার বা বারবিকিউ ২০০-৩০০ টাকা।
২য় দিন- নাস্তা ৬০-১০০ টাকা, দুপুরের খাবার ১২০-২০০ টাকা
ফিরে আসার দিন – যাত্রা বিরতিতে রাতের খাবার ১০০ থেকে ২০০ টাকা।
চেষ্টা করলে আরো অনেক কম খরচ হবে। বাজারের ভেতরের দিকের হোটেল গুলোতে যদি কম খরচের সাধারণ খাবার খাওয়া হয় তাহলে খরচ কম হবে।
যাতায়াত খরচ
বাসের টিকেট – যাওয়া ও আসা সহ ননএসি ২২০০ টাকা ও এসিযুক্ত হচ্ছে ২৮০০ – ৪৪০০ টাকা।
জাহাজ বা শীপ ভারা- যাওয়া ও আসা সহ ওপেন ডেক ৮৫০ টাকা আর এসিযুক্ত হলো ১১০০- ১৬০০ টাকা।
লোকাল যাতায়াত- সেন্টমার্টিন ভ্রমন এ বাজারে অথবা আশেপাশে যাতায়াতের ভ্যান ভাড়া ১৫০-২০০ টাকা।
ছেঁড়া দ্বীপ – ট্রলার ভাড়া আসা- যাওয়াসহ ২০০ টাকা।
অন্যান্য খরচ – ২০০ টাকা।
থাকার খরচ
স্ট্যান্ডার্ড বিভিন্ন হোটেল ও রিসোর্টে ডাবল বেড ১৫০০ – ৩০০০ টাকা। বাজারের দিকের মিডিয়াম মানের হোটেল গুলো ৮০০-১২০০ টাকা। সেন্ট মার্টিনে সিজন আর সরকারি ছুটির দিনগুলোতে ভাড়া একটু বেড়ে যায়। পিক সিজন আর সরকারি ছুটির দিনগুলো ছাড়া বছরের অন্য সময় গুলোতে গেলে খরচ কম হবে। কয়েকজনে মিলে একসাথে রুম শেয়ার করে থাকলে ও খরচ কমে যাবে। এর থেকেও যদি কম খরচে থাকতে চান তাহলে স্থানীয়দের বাসায় অল্প টাকায় থাকতে পারবেন, সেজন্য দেখেশুনে অবশ্যই যাচাইবাচাই করে নিবেন।
সেন্টমার্টিন ভ্রমণ প্যাকেজ
দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে সিজনের সময় বেশ কিছু ট্রাভেল এজেন্সি সেন্টমার্টিন ভ্রমন প্যাকেজ অফার করে। ভ্রমণ প্যাকেজটি নির্ভর করে সেন্ট মার্টিনে কেমন মানের জাহাজের মাধ্যমে আসা যাওয়া হবে, কেমন মানের হোটেল বা রিসোর্টে রাখা হবে খাওয়া দাওয়া সহ অন্যান্য সুযোগ-সুবিধার উপর। সেন্ট মার্টিন ভ্রমণ প্যাকেজ গুলো সাধারণত ২ রাত থাকা, আসা ও যাওয়ার খরচ,খাবার খরচসহ অন্তর্ভুক্ত থাকে। সেন্ট মার্টিন ট্যুর প্যাকেজ প্রাইস গুলো ঢাকা থেকে আসা যাওয়াসহ ৫,৫০০- ১০,০০০ টাকার মধ্যে হয়ে থাকে।
যাদের কাছে আসা যাওয়ার বাস টিকিট, শীপ বা জাহাজের টিকেট কাটা ও রিসোর্ট বুকিং করা ঝামেলার লাগে তারা ভালো একটি ট্যুর এজেন্সির মাধ্যমে প্যাকেজে সেন্টমার্টিন ভ্রমণ করে আসতে পারেন।
একদিনের জন্য ঘুরতে যাওয়া
সেন্টমার্টিন ভ্রমন করতে একদিনের জন্য ঘুরতে গেলে সবকিছু ঠিকঠাক ভাবে দেখতে পাওয়া ও ঘুরা যায় না। দিনে গিয়ে দিনে ফেরত আসতে চাইলে প্রথমে টেকনাফ থেকে সেন্ট মার্টিনে জাহাজে করে যাবেন। জাহাজ থেকে নামবেন আনুমানিক ১২:০০ টা থেকে ১২:৩০ টার সময়। আপনাকে যেহেতু বিকেলের মধ্যে ফেরত যেতে হবে সেহেতু সময় নষ্ট না করে জেটি ঘাট থেকে নেমে ডান পাশের বীচে হাঁটুন অথবা অটো নিয়ে বীচের সাথে যে হোটেলগুলো রয়েছে সেগুলোর যেকোনো একটিতে চলে যান। বীচের সাথে হোটেল গুলোতে তুলনামূলকভাবে ঢেউ একটু বেশি আসে তাই সেখানে গোসল করেও দেখতে পারেন ভালো লাগবে ও আনন্দ পাবেন। তারপর ভ্যানে করে পুরো দ্বীপ ঘুরতে যাবেন।
মনে রাখতে হবে ঘুরাঘুরি ও খাওয়া দাওয়া করে জাহাজে ঠিক ২ টার মধ্যে উঠে যেতে হবে। কারণ দেরি করলে আপনি সেন্টমার্টিন ভ্রমন এর জন্য জাহাজ পাবেন না। জাহাজ ঠিক ৩ টার সময় ছেড়ে দেয়। সেক্ষেত্রে অবশ্যই সতর্ক থাকতে হবে সময় মতো পৌঁছানোর জন্য।
এক বা অধিক দিন থাকা
সেন্টমার্টিন ভ্রমন এ আপনি যেহেতু এক বা অধিক দিন বা রাত থাকবেন অথবা এক রাত দুই দিন সেহেতু আপনার কোন তাড়াহুড়া নেই। টেকনাফ থেকে জাহাজে করে সেন্ট মার্টিন দ্বীপে এসে প্রথমে হোটেলে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে সমুদ্রে গোসলের জন্য যেতে পারেন।
সূর্যাস্ত দেখার জন্য বিকেলে ছেঁড়া দ্বীপ যেতে পারেন। সে ক্ষেত্রে রাতের আগেই বিকেল ৪ টা অথবা ৫ টার মধ্যে রওনা দেয়ার চেষ্টা করবেন। রাতে সমুদ্রের গর্জন শুনুন সমুদ্র পাড়ে অথবা জেটি ঘাটে বসে।
পরদিন সকালে ভোরে বের হয়ে বীচে হাঁটতে অথবা সাইকেল নিয়ে ঘুরতে পারেন। যতদূর যাবেন ততই সেন্ট মার্টিন দ্বীপের সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারবেন। রোদ বাড়ার আগে আগে ছেঁড়া দ্বীপ ঘুরতে যেতে পারেন কারণ অনেক রোদে ঘুড়ার মজাটাই আর পাওয়া যায় না । আপনারা চাইলে দারুচিনি দ্বীপ ও ঘুরে আসতে পারেন।
তারপর দুপুরের খাওয়া দাওয়া করে ৩ টার আগে জাহাজে উঠে পড়ুন। নয়তো জাহাজে উঠতে অনেক লম্বা লাইনে পড়তে হবে।
আরও পড়ুন : কক্সবাজার ভ্রমণের উপযুক্ত সময় ও দর্শনীয় স্থান
ভ্রমণ টিপস ও সতর্কতা
- সেন্টমার্টিন ভ্রমন এ কম খরচে থাকা খাওয়ার জন্য ছুটির দিনগুলো ছাড়া বছরের অন্যান্য দিনগুলোতে যেতে পারেন।
- সেন্ট মার্টিন দ্বীপ আমাদের দেশের সম্পদ, তাই প্রকৃতির ক্ষতি হয় এমন কোন কাজ সেখানে করা যাবে না।
- সেন্ট মার্টিন দ্বীপে বর্তমানে নিয়মিতভাবে বিজিবি টহল দেয়।
- অধিকাংশ সময় রাত ১২ টার পর থেকে পর্যটকদের বীজ বা জেটি ঘাট এলাকায় থাকতে নিষেধ করে বিজিবি। তাই বারোটার মধ্যেই রুমে যাওয়ার চেষ্টা করবেন।
- পর্যটন এলাকায় সবকিছুই দরদাম করে কেনাকাটা করবেন।
- নিজেই সবকিছু করবেন, দালালদের খপ্পরে পড়বেন না। তাহলে অনেক সমস্যায় পড়তে পারেন।
- সেন্টমার্টিন ভ্রমন এর ক্ষেত্রে দ্বীপে মোবাইল ফ্রিকোয়েন্সি কম থাকার কারণে কথা বলতে সমস্যা হতে পারে। তবে সেখানে টেলিটক সিম তুলনামূলকভাবে ভালো কাজ কর।
- প্লাস্টিক ও পলিথিন টাইপের কোন কিছু সমুদ্রে ফেলে আসবেন না । সঠিক জায়গায় ময়লা আবর্জনা ফেলবেন।
- মানুষ বেশি হলে আগে থেকে শীপের টিকেট কেটে রাখুন।
- সেন্ট মার্টিন দ্বীপের প্যাকেজ কিনে নিতে পারবেন কক্সবাজারের বিভিন্ন এজেন্ট থেকে।
- সেন্টমার্টিন দ্বীপে আসা যাওয়ার সময় জাহাজের ডেক থেকে সমুদ্রের সুন্দর ভিউ দেখতে পাবেন।
- সেন্টমার্টিন ভ্রমন এর ক্ষেত্রে সমুদ্রে নামার সময় সতর্ক থাকুন, কারণ অসতর্কতার ফলে নিমিষেই অনেক প্রাণ ঝরে যায়।
সেন্ট মার্টিন দ্বীপ সম্পর্কিত প্রয়োজনীয় কিছু প্রশ্নোত্তর (FAQ’s)
টেকনাফ থেকে সেন্টমার্টিন কত কিলোমিটার?
টেকনাফ থেকে সেন্টমার্টিন ভ্রমন এর মূল স্থানের দূরত্ব প্রায় ৪২ কিলোমিটার। ১৭ কিলোমিটার বঙ্গোপসাগর ও ২৫ কিলোমিটার নাফ নদী।
চট্টগ্রাম থেকে সেন্টমার্টিন যেতে কত সময় লাগে?
চট্টগ্রাম থেকে সেন্টমার্টিনে যেতে বেওয়ান জাহাজে করে যেতে সময় লাগে প্রায় ১০ ঘন্টা।
কক্সবাজার থেকে সেন্টমার্টিন কত কিলোমিটার?
কক্সবাজার থেকে ১২০ কিলোমিটার দূরত্বে রয়েছে সেন্টমার্টিন দ্বীপ। সমুদ্র পথে হচ্ছে ৯৫ কিলোমিটার। কক্সবাজার থেকে সেন্ট মার্টিন দ্বীপে জাহাজে করে যেতে ৫-৬ ঘন্টা সময় লাগে।
ছেঁড়া দ্বীপ কোথায় অবস্থিত?
ছেঁড়া দ্বীপ হচ্ছে বাংলাদেশের দক্ষিণের সর্বশেষ ভূখণ্ড। ছেঁড়া দীপটি জোয়ার-ভাটার সময় বিচ্ছিন্ন ও মিলিত হয়ে সেন্ট মার্টিন এর মূল দ্বীপের সাথে।
আপনার ভ্রমন হোক নিরাপদ।