প্রিয় পাঠক, বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় পর্যটন কেন্দ্র কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত। হয়তোবা আপনিও চাচ্ছেন কক্সবাজার ভ্রমণ এ যেতে। তবে ভ্রমণের পূর্বে কক্সবাজার ভ্রমণের উপযুক্ত সময় ও দর্শনীয় স্থান গুলো সম্পর্কে জানা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের সৌন্দর্য
নীল জলরাশি, সারি সারি ঝাউবন, গর্জনের মনোমুগ্ধকর সমুদ্র সৈকতের নাম কক্সবাজার। সমুদ্র সৈকত বাংলাদেশের একটি প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি। কক্সবাজারে অবস্থিত প্রায় ১২০ কিলোমিটার দীর্ঘ প্রসারিত বালুকাময় সৈকত এবং ফিরোজা-নীল রঙের পানির সৌন্দর্য আকর্ষিত করে সমুদ্র পৃথিবীর পর্যটক প্রেমীদের। শ্বাসরুদ্ধকর সূর্যাস্ত সাথে আছে পরিষ্কার নীল আকাশ এবং মৃদু সমুদ্রের বাতাস সহ সৈকতের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, যা এককথায় অতুলনীয়।
পর্যটকরা কক্সবাজার ভ্রমণ আসে প্রকৃতির অপার সৌন্দর্যে নিজেকে ভাসিয়ে দিতে। এছাড়াও সাঁতার কাটা, সার্ফিং, সানবাথিং এবং বিচকম্বিংয়ের মতো বিভিন্ন ধরনের বিনোদনমূলক কর্মকাণ্ডও উপভোগ করতে পারেন তারা।
বর্তমানে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় এবং আকর্ষণীয় পর্যটন কেন্দ্র। এখানে রয়েছে বেশ কিছু দর্শনীয় স্থান। তার পাশে গড়ে উঠেছে অনেকগুলো বাজার, দোকান ও রেস্তোরার আবাসস্থল। সব মিলিয়ে, ভ্রমণের কথা উঠলে সবার প্রথমেই মনে পড়ে যায় কক্সবাজার ভ্রমণ আর সমুদ্র সৈকতের কথা।
কক্সবাজার ভ্রমণের উপযুক্ত সময়
বছরের যেকোন সময়ই আকর্ষণীয় থাকে কক্সবাজার। কক্সবাজার ভ্রমণ এর জন্য বেশিরভাগ দর্শনার্থীই বেছে নেয় শীতকালের সময়টাকে। ঠান্ডা আবহাওয়া সমুদ্রের হালকা উষ্ণ লোনা পানি সত্যিই মনোমুগ্ধকর। সাথে থাকে প্রচন্ড বাতাস ও আবছা মায়াবী আকাশ। পরিবারের সাথে শীতকালীন এই সময়টাকে উপভোগ করে অনেকেই।
তবে পৃথিবীর সবচেয়ে বড় সমুদ্র সৈকতের সৌন্দর্যে গাঁ ভাসাতে যেকোনো সময়েই যেতে পারেন কক্সবাজার ভ্রমণ করতে। সময়ের সাথে প্রতিটি মৌসুমেই কক্সবাজারের রূপ সুভায় দেখা যায় পার্থক্য। ভিন্ন মৌসুমে রয়েছে ভিন্ন স্বাদ। তাই বর্ষায় মুষলধারে বৃষ্টির সাথে সমুদ্রের উত্তাল ঢেউয়ের শব্দ ও বৃষ্টির শেষে সমুদ্র সৈকতের স্নিগ্ধ অনুভূতি অতুলনীয়। অথবা হেমন্তের জোৎস্না রাতের লাবণ্যময়ী রূপের স্বাদ নিতে পারবেন সমুদ্র সৈকতে বসে।
তবে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো – নভেম্বর থেকে মার্চ পর্যন্ত কক্সবাজার ভ্রমণ এর খরচ অনেকটাই বেশি হয় এবং থাকে উপচে পড়া ভিড়।
কক্সবাজারের দর্শনীয় স্থান সমূহ
ভ্রমণের জন্য সেরা একটি স্থান হলো কক্সবাজার। বিভিন্ন প্রকার সমুদ্র সৈকত ছাড়াও কক্সবাজার রয়েছে বেশ কিছু দর্শনীয় স্থান। তার মধ্যে রয়েছে মেরিন ড্রাইভ, লাবনী বিচ, ইনানী বিচ, হিমছড়ি, সোনাদিয়া দ্বীপ, রামু ডুলা হাজারা সাফারি পার্ক টেকনাফ সেন্টমার্টিন সহ বিভিন্ন দ্বীপ।
এছাড়াও রয়েছে কুদুম গুহা, রেডিয়েন্ট ফিস ওয়ার্ল্ড, শামলাপুর সমুদ্র সৈকত, রাবার বাগান, মারমেড ইকো রিসোর্ট, শাহপরীর দ্বীপ, কুতুবদিয়া দ্বীপ, ছেঁড়া দ্বীপ ইত্যাদি। চলুন কক্সবাজার ভ্রমণ এর কয়েকটি দর্শনীয় স্থান সম্পর্কে জেনে নেই-
হিমছড়ি
পাহাড়ের কোল ঘেষা সমুদ্র সৈকত হিমছড়ি। কক্সবাজার ভ্রমণ এর মূল সমুদ্র সৈকত থেকে এই পাহাড় অনেকটাই বেশি নির্জন ও পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন। নিরব এই পরিবেশে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যও অনেক বেশি অনুভূত হয়। এটি কক্সবাজারের মূল সমুদ্র সৈকত থেকে মাত্র ১২ কিলোমিটার দক্ষিণে অবস্থিত। পাহাড়ে উঠলে চোখের সামনে ভেসে উঠে নীল দিগন্ত।
হিমছড়িতে রয়েছে হিমশীতল আকর্ষণীয় ঝর্ণাও। পাহাড়ের উপরেও রয়েছে একটি ছোট পর্যটন কেন্দ্র যেখানে সিঁড়ি মারিয়ে উপরে উড়তে হয়। হিমছড়ির সবচেয়ে আকর্ষণীয় বিষয় হলো- সমুদ্র সৈকত হতে হিমছড়িতে যাওয়ার পথে আকর্ষণীয় মেরিন ড্রাইভ।
ইনানী বিচ
কক্সবাজারের হিমছড়ি থেকে ৫ কিলোমিটার ভেতরে রয়েছে ইনানী বিচ নামে প্রবাল পাথরের আকর্ষণীয় সমুদ্র সৈকত। অনেকটা শান্ত প্রকৃতির এই বিচের বেলাভূমিতে আছড়ে পড়ে সাগরের বড় বড় ঢেউ। জোয়ারের সময় এলে দেখা পাওয়া যায় প্রবল পাথরের। সবার পাথরে গা জুড়ে লেগে থাকে ধারালো শামুক ঝিনুক, তাই হাঁটাচলা এবং লাফালাফির ক্ষেত্রে সাবধানতা অবলম্বন করতে হয়।
প্রবাল পাথরের প্রতিটির আকৃতি ভিন্ন এবং বেশ প্রাচীন সেই পাথর। কক্সবাজার ভ্রমণ এ ইনানীবিচের দুপাশের পাহাড় ও সমুদ্রের ঢেউ দেয় মন মাতানো আনন্দ।
সেন্ট মার্টিন দ্বীপ
কক্সবাজার জেলার টেকনাফ উপজেলা হতে প্রায় নয় কিলোমিটার দক্ষিণে অবস্থিত সেন্টমার্টিন দ্বীপ। এটি বাংলাদেশের এবং বিশ্বের সবচেয়ে বড় প্রবাল দ্বীপ। নাফ আপনাদের মোহনায় এই আকর্ষণীয় দ্বীপের অবস্থান। বর্তমানে একে দারুচিনি দ্বীপ নামেও বলে থাকেন স্থানীয়রা।
সেন্ট মার্টিনের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের সাথে রয়েছে স্নোরকেলিং, স্কুবা ডাইভিং এর মতো অ্যাডভেঞ্চারের সুযোগ। রাতে সেন্ট মার্টিনের দ্বীপে চলাফেরা করা আপনাকে পৃথিবীর আসল সৌন্দর্য উপভোগ করতে সাহায্য করবে। কক্সবাজার ভ্রমণ করতে গেলে অবশ্যই সেন্ট মার্টিনের স্বাদ নেওয়া উচিত।
কুদুম গুহা
এটি কক্সবাজার ভ্রমণ এর একটি প্রাচীন গুহা। এটি কক্সবাজার জেলার টেকনাফ উপজেলায় অবস্থিত। বাংলাদেশের একমাত্র বালু-মাটির গুহা হলো এই কুদুম গুহা। এটি কক্সবাজার থেকে টেকনাফ আসার পথে হোয়াইক্যং পাহাড়ে অবস্থিত। পাহাড় ঘেরা পরিবেশের সাথে বন্যপ্রাণীর চরণভূমি ও পাখির ডাকে গুহাটি অত্যন্ত মনোরম হয়ে আছে।
এই গুহার দৈর্ঘ্য প্রায় ৫০০ ফুট এবং প্রবেশপথের মুখ প্রায় ১২ ফুট। গুহার ভিতরে দেখা যায় বিভিন্ন প্রকার শামুক, জোক, মাকড়সা, বাদুর ইত্যাদি প্রাণীর। গুহার ভিতরে রয়েছে ঠান্ডা হিমশীতল পানি। কোথাও অল্প পানি কোথাও কোমর পানি আবার কোথাও গলার সমান প্রাণীও রয়েছে এ গুহায়। পানি গুলো আসে মূলত গুহার দেয়ালের গা বেয়ে উপর থেকে। ভিতরটা খুবই অন্ধকার এবং অনেক ধরনের মাছ পাওয়া যায় এ গুহায়। তবে দর্শনীয় স্থান হিসেবে এটি অন্যতম।
শামলাপুর সমুদ্র সৈকত
এখানে দেখা যায় সারি সারি মাছ ধরার নৌকা ও জেলেদের। সমুদ্রের পাশ ঘিরে রঙিন নৌকা পিছনে থাকে ঝাউবনে ঘেরা সবুজের মায়া। উপরের নীল পরিষ্কার আকাশ ও কিছুটা নির্জন নীরব এলাকায় ভ্রমণের স্বাদ নেওয়া যায় সম্পূর্ণই। কক্সবাজারের টেকনাফ উপজেলার বাহারছড়া ইউনিয়নের পাশে সামলাপুর সমুদ্র সৈকত অবস্থিত।
কক্সবাজার ভ্রমণ এর অন্যান্য সমুদ্র সৈকতগুলোর থেকে অনেকটাই কম ভিড় থাকে এই স্থানে। কক্সবাজারের ভ্রমণের সময় দীর্ঘ হলে অবশ্যই এই স্থানে ভ্রমণ করতে পারেন।
রেডিয়েন্ট ফিস ওয়ার্ল্ড
এটি কক্সবাজারের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য না হলেও মানুষের তৈরি একটি আকর্ষণীয় ফিস মিউজিয়াম ও একুরিয়াম। এটি কক্সবাজারের মূল শহরের ঝাউতলায় অবস্থিত। এখানে রয়েছে সাগর ও মিঠা পানির মাছ সহ প্রায় ১০০ প্রজাতির মাছ। কিছু ভিন্ন ধর্মী মাছ ও এখানে পাওয়া যায়। যেমন- পিরানহা, শাপলাপাতা, কাছিম, সামুদ্রিক শৈল, পিতম্বরি, সাগর কুচিয়া, জেলিফিশ, হাঙ্গর ইত্যাদি মাছ।
কক্সবাজার ভ্রমণ করতে ভ্রমণকারীদের জন্য এই স্থানটি অবশ্যই দর্শনীয়। বাংলাদেশের মাঝেই ভিন্নধর্মী অনুভূতির জন্য অনেক পর্যটকই এখানে ঘুরতে যায়। ভেতরে প্রবেশের জন্য পূর্বে সংগ্রহ করতে হয় টিকেট।
মহেশখালী দ্বীপ
কক্সবাজার শহর থেকে ১২ কিলোমিটার পশ্চিমে অবস্থিত সাগরের বুকে একটি পাহাড়ি দ্বীপ হলো মহেশখালী দ্বীপ। মহেশখালী উপজেলায় রয়েছে তিনটি বড় বড় দ্বীপ। সোনাদিয়া দ্বীপ, মাতারবাড়ি দ্বীপ ও ধলঘাটা দ্বীপ। মহেশখালী দ্বীপের মূল আকর্ষণ মিষ্টি পান, সারা দেশ জুড়েই রয়েছে এর ক্ষেতি। কক্সবাজারের প্রায় ৩৬২ কিলোমিটার এলাকার এই দীপ্তিতে রয়েছে বেশ কিছু দর্শনীয় স্থান।
মহেশখালীর অদিনাথ মন্দির, অদিনাথ মেলা, বৌদ্ধ মন্দির, রাখাইনপাড়া, স্বর্ণমন্দির ও মৈনাক পর্বত সহ আরো বেশ কিছু আকর্ষণীয় স্থান রয়েছে। তাই আপনার কক্সবাজার ভ্রমণ এ এই অংশটি অবশ্যই রাখতে পারেন।
রামু রাবার বাগান
১৯৬০ সালে দেশে অনবাদের জমি জরিপ করে রামুতে রাবার চাষাবাদ শুরু করা হয়, যা বর্তমানে রামুর ঐতিহ্যবাহী রাবার বাগান হিসেবে দেশের অন্যতম পর্যটন কেন্দ্র হয়ে দাঁড়িয়েছে। বাগানের বিস্তৃতি প্রায় ২ হাজার ৬৮২ একর জমি। এখানে প্রায় এক হাজার ১৩০ একর এলাকার গাছ থেকে রাবার লিকুইড সংগ্রহ করা হয়।
প্রতিবছর এখান থেকে প্রায় আড়াই লাখ কেজি রাবার উৎপাদন করা হয়। পাহাড় ও সমতলের অপূর্ব সৌন্দর্যের স্থান হিসেবে ও সারি সারি গাছের মেলায় অত্যন্ত দৃষ্টিনন্দর রামুর রাবার বাগান। হাজার হাজার গাছ থাকায় চারদিকে হয়ে উঠেছে অন্ধকার ও বাগানের চারপাশে তাকালেও দেখা যায় অপরূপ প্রাকৃতিক সৌন্দর্য। আপনার কক্সবাজার ভ্রমণ এ এই অংশটি রাখতে পারেন।
মারমেইড ইকো রিসোর্ট
কক্সবাজারের ইনানী বিচারের কাছে পেঁচারদিয়া গ্রামে ভ্রমণকারীদের জন্য গড়ে উঠেছে আকর্ষণীয় পেঁচার দ্বীপ। এই দ্বীপের পাশে রয়েছে ঝাউবন সমৃদ্ধ সমুদ্র সৈকত ও অন্য পাশে উঁচু পাহাড়, মাঝখান থেকে চলে গেছে প্রায় ৮৪ কিমি. মেরিন ড্রাইভ সড়ক। এটি একটি নির্জন দ্বীপ এবং ভ্রমণ পিপাসুদের জন্য অত্যন্ত আকর্ষণীয় স্থান।
সেখানে গড়ে উঠেছে আকর্ষণীয় বহু রিসোর্ট। তার মধ্যে অন্যতম একটি হলো মারমেইড ইকো রিসোর্ট। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের সাথে মূল আকর্ষণ হিসেবে রয়েছে ছোট-বড় কুটির পাশেই জলাধার। ভ্রমণকারীদের স্বাগত জানাতে রংবেরঙের বনফুলের গুচ্ছ তুলে দেন এবং ওয়েলকাম ড্রিঙ্কস হিসেবে গাছ থেকে সদ্য পেড়ে আনা হয় ডাব। এখানে কক্সবাজার ভ্রমণ এর দর্শনার্থীদের আপ্যায়নের সকল ক্ষেত্রেই ব্যবহার করা হয় প্রাকৃতিক উপাদান। যেমন গোসলের জন্য শ্যাম্পুর ক্ষেত্র প্রদান করা হয় ভেষজ উপায় বানানো শ্যাম্পু।
আরো পড়ুন: শ্রীমঙ্গল দর্শনীয় স্থান, হোটেল ও রিসোর্ট
উপরোক্ত স্থানগুলো ছাড়াও আরো বেশ কিছু দর্শনীয় স্থান রয়েছে কক্সবাজারে। তাই ভ্রমণ পিপাসুদের জন্য এই কক্সবাজার ভ্রমণ বাংলাদেশের সেরা।
কক্সবাজার কিভাবে যাবেন
যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতির কারণে বাংলাদেশের যে কোন স্থান থেকে সড়ক, রেলপথ বা আকাশ পথে যেতে পারবেন কক্সবাজার। আপনার এলাকার স্থানীয় বাসস্ট্যান্ড থেকেই পেয়ে যাবেন কক্সবাজার যাওয়ার বাস ও টিকেট।
সড়ক পথে কক্সবাজার যাওয়ার জন্য সেরা বাসগুলো হলো- গ্রীন লাইন, হানিফ এন্টারপ্রাইজ, সৌদিয়া, শ্যামলী পরিবহন, সোহাগ পরিবহন, এস.আলম পরিবহন, মডার্ন লাইন, এস আলম মার্সিডিজ বেঞ্জ ইত্যাদি। বাসগুলো সার্ভিস কোয়ালিটি অনুযায়ী প্রতি সিটের জন্য ৯০০ থেকে ২০০০ টাকা পর্যন্ত ভাড়া হতে পারে।
রেলপথে কক্সবাজার ভ্রমণ এ যেতে স্থানীয় রেলস্টেশনে জানতে পারেন। তবে ঢাকা থেকে রেলপথে সরাসরি কক্সবাজার যাওয়া যায় না। সেজন্য প্রথমেই ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম রেলপথে গিয়ে তারপর বাসের মাধ্যমে কক্সবাজার যেতে পারেন। ঢাকা কমলাপুর রেলওয়ে কিংবা বিমানবন্দর রেলওয়ে স্টেশন থেকে চট্টলা মেইল, সুবর্ণ এক্সপ্রেস, সোনার বাংলা, মহানগর গোধূলি, তূর্ণা-নিশিথা ট্রেইনে চট্টগ্রাম যেতে পারেন। তারপর সেখানে চট্টগ্রামের দামপাড়া বাসস্ট্যান্ড থেকে হানিফ, ইউনিক,এস আলম ইত্যাদি বাসে কক্সবাজার যেতে পারবেন। বাসভেদে ৩০০-৮০০ পর্যন্ত ভাড়া হতে পারে। এছাড়াও রয়েছে রিজার্ভ মাইক্রো বাসে কক্সবাজার যাওয়ার সুযোগ।
এছাড়াও আকাশ পথে কক্সবাজার যাওয়ার জন্য রয়েছে বাংলাদেশ বিমান, ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্স, নভোএয়ার, তা ঢাকা থেকে সরাসরি কক্সবাজারে ফ্লাইট পরিচালনা করে। ঢাকা থেকে কক্সবাজারের বিমান ভাড়া ৪৫০০ থেকে ১২ হাজার পর্যন্ত হতে পারে।
কক্সবাজারে থাকার ব্যবস্থা
পর্যটনকেন্দ্র হওয়ায় কক্সবাজারে রয়েছে প্রায় সাড়ে চার শতাধিক আবাসিক হোটেল এবং বিভিন্ন ছোট বড় হোটেল। কক্সবাজারের হোটেল গুলোতে রয়েছে প্রায় ১,৫০,০০০ জন মানুষের ধারণক্ষমতা। ভাড়া অনুসারে কক্সবাজারের হোটেল/ রিসোর্ট গুলোকে তিন ভাগে ভাগ করা যায়।
৮০০-৩০০০ টাকা- ইকরা বিচ রিসোর্ট, কল্লোল, মিডিয়া ইন, হানিমুন রিসোর্ট, সেন্টমার্টিন রিসোর্ট, কোরাল রীফ, অভিসার, নীলিমা রিসোর্ট ইত্যাদি।
৩০০০-৬০০০ টাকা- আইল্যান্ডিয়া, সি গাল, সি প্যালেস, নিটোল রিসোর্ট, বিচ ভিউ, হোটেল সি ক্রাউন, ইউনি রিসোর্ট ইত্যাদি।
৬০০০-১০০০০ টাকা- সায়মন বিচ রিসোর্ট, ওশেন প্যারাডাইস, লং বিচ, মারমেইড বিচ রিসোর্ট, হেরিটেজ, কক্স টুডে ইত্যাদি।
এছাড়াও কম মূল্যে হোটেল পেতে কক্সবাজার ভ্রমণ এর সমুদ্র সৈকত ও মেইন রোড থেকে ভেতরের গলি গুলোতে সরাসরি হোটেলে যোগাযোগ করতে পারেন।
পরিবারের সাথে কক্সবাজার যেতে চাইলে দুই থেকে তিন বেডরুম সহ ফ্লাট ভাড়া নিতে পারবেন কোয়ালিটি অনুযায়ী প্রতিদিনের ২,০০০ থেকে ১০,০০০ টাকার মধ্যে।
সি ভিউ/ বিচ ভিউ হোটেল
কক্সবাজার ভ্রমণ এর ক্ষেত্রে বেশ কিছু হোটেল ও রিসোর্ট রয়েছে যা থেকে সরাসরি সুন্দর সমুদ্র সৈকত দেখা যায়। ঘরের বেলকনিতে বসেই সমুদ্রের উত্তাল ঢেউ ও তীব্র বাতাসের সাদ নিতে চায় অনেকেই। সেখানে সাইমন, হোটেল সি ক্রাউন, প্যারাডাইস, নিলিমা বিচ রিসোর্ট ইত্যাদি হোটেল ও রিসোর্ট গুলোতে এই আনন্দ নিতে পারবেন। তবে স্বাভাবিকভাবেই সেখানে খরচ হবে অনেক বেশি।
কক্সবাজারে খাবারের ব্যবস্থা
কক্সবাজার ভ্রমণ এ খাবারের জন্য বিভিন্ন ধরনের ও মানের রেস্টুরেন্ট রয়েছে। রোদেলা, ধানসিঁড়ি, পৌষী, নিরিবিলি,ঝাউবন ইত্যাদি হোটেল উল্লেখযোগ্য। হোটেল ভেদে ও সিজন অনুসারে খাবারের দাম কমবেশি হতে পারে। সাধারণত-
ভাত | ২০-৪০ ৳ |
মিক্সড ভর্তা | ৭৫-৩০০ ৳ |
হায়দ্রাবাদি বিরিয়ানি | ২৫০-৩০০ ৳ |
লইট্যা ফ্রাই | ১২০-১৫০ ৳ |
ভেটকি মাছ | ১৫০ ৳ |
গরু | ১৫০-২০০ ৳ |
রূপচাঁদা ফ্রাই | ৩০০-৪০০ ৳ |
ডাল | ৩০-৫০ ৳ |
এছাড়াও অন্যান্য খাবার সেখানের হোটেল গুলোতে পাওয়া যায়।
কক্সবাজারের সর্তকতা ও ভ্রমণ টিপস
কক্সবাজারে ভ্রমণ এর ক্ষেত্রে বিভিন্ন ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হয় অনেকেই। তাই ভ্রমণের সময় নিম্নোক্ত টিপস গুলো মানতে পারেন-
- অফ সিজনে কক্সবাজার ভ্রমণ। এতে খরচ কম হয় ও সৌন্দর্য বেশি উপভোগ করা যায়।
- যাতায়াতের ভাড়ার ক্ষেত্রে পূর্বেই দরদাম করে নিন।
- টুরেন্টের খাবারগুলোর দাম পূর্বেই জিজ্ঞেস করে নিন।
- কক্সবাজারে হোটেল ঠিক করার পূর্বে হোটেল সম্পর্কে ভালোভাবে জেনে নিন।
- জোয়ার ভাটার সময় সাগরে নামার ক্ষেত্রে সতর্ক থাকুন।
- যে কোন সমস্যায় কক্সবাজার টুরিস্ট পুলিশের সহযোগিতা নিতে পারেন।
- কক্সবাজার ট্যুরিস্ট পুলিশ হটলাইন- +88017 6969 0740.
সর্বশেষ
কক্সবাজার বাংলাদেশের দর্শনীয় স্থানগুলোর মধ্যে সেরা। আপনিও কক্সবাজার ভ্রমণে যেতে চাইলে পূর্বেই জেনে নিন কক্সবাজার ভ্রমণের উপযুক্ত সময় ও দর্শনীয় স্থান সম্পর্কে বিস্তারিত। আজকের কক্সবাজার ভ্রমণের উপযুক্ত সময় ও দর্শনীয় স্থান এর আলোচনা সম্পর্কিত কোন তথ্য জানতে চাইলে কমেন্ট করে জানান, ধন্যবাদ।