দৈনন্দিন জীবনের দোয়া ও সুন্নাতসমূহ

আসসালামু আলাইকুম। আমাদের আজকের আলোচনা দৈনন্দিন জীবনের দোয়া ও সুন্নাতসমূহ নিয়ে। আমাদের জীবনের প্রতিটি পর্যায়, পদক্ষেপ, নেয়ামত সকল কিছুই মহান আল্লাহ তায়ালার রহমত। সেসকল নেয়ামতের শুক্রিয়া আদায় করতে এবং বিপদমুক্ত ও সুখময় জীবন পেতে মহান আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কোরআনে এবং রাসুলুল্লাহ (সাঃ) হাদিসে নানান দোয়া শিক্ষা দিয়েছেন। দৈনন্দিন জীবনের সকল প্রয়োজনীয় সকল দোয়া জানা সকলের জনই অতীব গুরুত্বপূর্ণ। নিম্নে  বিশদ আলোচনা কেরা হলো।

দৈনন্দিন জীবনের দোয়া ও সুন্নাতসমূহ

ঘুমানোর দোয়া বাংলায়

রাসুলুল্লাহ (সাঃ) রাতের বেলায় নিজ বিছানায় ঘুমাতে যাওয়ার পূর্বে, বিছানা ভালোভাবে ঝেড়ে নিতেন। তারপর, ডান কাত হয়ে শুয়ে নিজ হাত গালের নিচে রাখতেন। ঘুমানোর পূর্বে অন্যান্য দোয়া সমূহ পাঠ করতেন। সর্বশেষ নিম্নোক্ত ঘুমানোর দোয়া পাঠ করতেন:

আরবি: اَللَّهُمَّ بِاسْمِكَ أَمُوتُ وَأَحْيَا 

বাংলা উচ্চারণ: “আল্লা-হুম্মা বি’সমিকা আমুতু ওয়া আহইয়া।”

বাংলা অর্থ: “হে আল্লাহ! আপনারই নামে মরে যাই, আবার আপনারই নাআমে প্রান লাভ করি।”

 ঘুম থেকে উঠার দোয়া

রাসুলুল্লাহ (সাঃ) ঘুম থেকে যখন জেগে উঠতেন তখন এই দোয়া পাঠ করতেন:

আরবি: الْحَمْدُ لِلَّهِ الَّذِي أَحْيَانَا بَعْدَ مَا أَمَاتَنَا وَإِلَيْهِ النُّشُورُ

বাংলা উচ্চারণ: “আলহামদু-লিল্লা হিল্লাজি আহ-ইয়ানা বা’দা মা আমাতানা ওয়া ইলাইহিন নুশুর।”

বাংলা অর্থ: “সকল প্রশংসা সেই আল্লাহর জন্য, যিনি মৃত্যুর পর আমাদের জীবিট করেছেন এবং তার দিকেই আমাদের পুনরুত্থান।”

ঘরে প্রবেশের দোয়া

দৈনন্দিন জীবনের দোয়া সমূহের মধ্যে ঘরে প্রবেশ করার সময় সালাম দিয়ে প্রবেশ করা মহান আল্লাহ তায়ালার নির্দেশ। মহান আল্লাহ তায়ালা বলেন, “অতঃপর যখন তোমরা ঘরে প্রবেশ করো, তখন তোমাদের স্বজনদের প্রতি সালাম বলবে। এটি আল্লাহর পক্ষ থেকে কল্যাণময় ও পবিত্র দোয়া। এমনিভাবে আল্লাহ তোমাদের জন্যে আয়াতগুলো বিশদভাবে বর্ণনা করেন, যাতে তোমরা বুঝে নাও।” (সুরা নুর, আয়াত- ৬১)।

সালাম দিয়ে ঘরে প্রবেশ করার পূর্বে, নিম্নোক্ত দোয়াটি পড়া অত্যন্ত ফজিলতপূর্ণ:

আরবি: اللَّهُمَّ إِنِّي أَسْأَلُكَ خَيْرَ الْمَوْلِجِ وَخَيْرَ الْمَخْرَجِ بِسْمِ اللَّهِ وَلَجْنَا وَبِسْمِ اللَّهِ خَرَجْنَا وَعَلَى اللَّهِ رَبِّنَا تَوَكَّلْنَا

বাংলা উচ্চারণ: “আল্লা-হুম্মা ইন্নি আস-আলুকা খাইরাল মাউলিজি, ওয়া খাইরাল মাখরাজি, বিসমিল্লাহি ওয়া লাজনা, ওয়া বিসমিল্লাহি খারাজনা, ওয়া আলাল্লাহি রাব্বিনা তাওয়াক্কালনা।”

বাংলা অর্থ: “হে আল্লাহ! আমি আপনার নিকট আগমন ও প্রস্থান এর কল্যাণ চাই। আপনার নামেই আমি প্রবেশ করি ও বের হই এবং আমাদের রব আল্লাহর উপর ভরসা স্থাপন করি।”

ঘর থেকে বের হওয়ার দোয়া

ঘর থেকে বের হওয়ার সময় রাসুলুল্লাহ (সাঃ) একটি দোয়া পাঠ করতে বলেছেন। এই দুয়ার মাধ্যমে ঘরের বাইরে অবস্থানের সময় বান্দা আল্লাহর জিম্মাদারীতে থাকে। এবং সব ধরনের বিপদ-আপদ থেকে আল্লাহ তাআলা তাকে রক্ষা করেন। দোয়াটি হলো:-

আরবি: بِسْمِ اللهِ تَوَكَّلْتُ عَلَى اللهِ لَا حَوْلَ وَ لَا قُوَّةَ اِلَّا بِاللَّهِ

বাংলা উচ্চারণ: “বিসমিল্লাহি তাওয়া-ক্কালতু আলাল্লাহ্, লা-হাওলা ওয়ালা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ্।”

বাংলা অর্থ: “আল্লাহর নামে, আল্লাহ তাআলার ওপরই নির্ভর করছি, আল্লাহর সাহায্য ব্যতীত বিরত থাকা ও মঙ্গল লাভ করার ক্ষমতা কারো নেই।

মেসওয়াকের দোয়া

মেসওয়াক করা রাসুলুল্লাহ (সাঃ)- এর একটি বিশেষ সুন্নাহ। নিয়মিত মেসওয়াক করার অনেক ফজিলত রয়েছে। হযরত জিবরাঈল (আঃ) যখনই নবীজির কাছে আগমন করতেন, তখন মেসওয়াক সম্পর্কে বলতেন।

মেসওয়াক করার সময় বিসমিল্লাহ বলে শুরু করতে হয়। তারপর নিম্নোক্ত দোয়াটি পাঠ করতে হয়:

আরবি: ﺑِﺴْﻢِ ﺍﻟﻠﻪِ ﺍَﻟﻠّﻬُﻢَّ ﺍﺟْﻌَﻞْ ﺳِﻮَﺍﻛِﻲْ ﻫﺬَﺍ ﻣَﺤِﻴْﺼًﺎ ﻟِّﺬُﻧُﻮْﺑِﻲْ ﻭَﻣَﺮْﺿَﺎﺓً ﻟَّﻚَ ﻭَﺑَﻴِّﺾْ ﺑِﻪ ﻭَﺟْﻬِﻲْ ﻛَﻤَﺎ ﺑَﻴّﻀْﺖَ ﺃَﺳْﻨَﺎﻧِﻲْ

বাংলা উচ্চারণ: “বিসমিল্লাহি আল্লা-হুম্মাজ-আল সেওয়াকি, হাযা মাহিসান লি যুনুবী, ওয়া মারাদ তান লাকা, ওয়া বাইয়্যিজ বিহী ওয়াজ হি কামা বাইয়াজতা আসনানী।”

বাংলা অর্থ: “হে আল্লাহ! এই মেসওয়াক করাকে আমার পাপ মোচনকারী ও আপনার সন্তুষ্টির মাধ্যম বানান, আর আমার দাঁত গুলোকে যেমনি আপনি সুন্দর করেছেন, তেমনি আমার চেহারাকেও উজ্জ্বল (সুন্দর) করুন।”

কাপড় পরিধানের দোয়া

আমরা প্রতিদিন কাপড় পরিধান করি, দৈনন্দিন জীবনের দোয়া র মতই নতুন কাপড় পরিধান করার সময় নিম্নোক্ত দোয়া পাঠ করা অত্যন্ত ফজিলতপূর্ণ:

আরবি: اللَّهُمَّ لَكَ الْحَمْدُ أَنْتَ كَسَوْتَنِيهِ أَسْأَلُكَ مِنْ خَيْرِهِ وَخَيْرِ مَا صُنِعَ لَهُ، وَأَعُوذُ بِكَ مِنْ شَرِّهِ، وَشَرِّ مَا صُنِعَ لَهُ

বাংলা উচ্চারণ: “আল্লা-হুম্মা লাকাল হামদু আনতা কাসাউ-তানিহি আসআলুকা মিন খাইরিহি ওয়া খাইরি মা সুনি আ লাহু ওয়া আউজুবিকা মিন শাররিহি ওয়া শাররি মা সুনি আ লাহু।”

বাংলা অর্থ: “হে আল্লাহ! সমস্ত প্রশংসা আপনারই জন্য; এটা আপনি আমাকে পরিধান করিয়েছেন, আপনি আপনার কাছে এর মধ্যে নিহিত কল্যাণ এবং যে উদ্দেশ্যে এটা বানানো হয়েছে তার কল্যাণ কামনা করছি। আর এর মধ্যে নিহিত ক্ষতি এবং যে উদ্দেশ্যে এটা বানানো হয়েছে তার অনিষ্ট থেকে আপনার আশ্রয় চাই।”

এছাড়াও রাসুলুল্লাহ (সাঃ) কাপড় পরিধান সম্পর্কে অন্য একটি দোয়ার কথা বলেছেন। তিনি বলেন, যে ব্যক্তি কোনো কাপড় পরে এই দোয়া পড়বে, আল্লাহ তাআলা তার অতীতের সব গুনাহ ক্ষমা করে দেবেন। (বুখারি: ৩৬০-৩৬১/০১-০৪; আবু দাউদ: ৪০২৩; বায়হাকি: ৫৮৭২)। সেই দোয়াটি হলো:

আরবি: الْحَمْدُ لِلَّهِ الَّذِي كَسَانِي هَذَا وَرَزَقَنِيهِ مِنْ غَيْرِ حَوْلٍ مِنِّي وَلَا قُوَّةٍ

বাংলা উচ্চারণ: “আলহামদু লিল্লা হিল্লাজি কাসানি হাজা; ওয়া রাজা-কানি-হি মিন গায়রি হাওলিম্ মিন্নি ওয়ালা কুওয়াহ।”

বাংলা অর্থ: “সকল প্রশংসা আল্লাহ তাআলার, যিনি আমাকে এই কাপড় পরিধান করিয়েছেন এবং আমাকে এটি কোনো প্রচেষ্টা ও শক্তি ছাড়া দিয়েছেন।”

যে কোন ভালো কাজ শুরু করিতে পড়তে হবে

বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) – হাদিস অনুসারে, দৈনন্দিন জীবনের দোয়ার মধ্যে খাবার খাওয়া সহ সব ধরনের ভালো কাজ শুরু করার আগে বলতেন- “(بِسْمِ اللهِ) বিসমিল্লাহ। অর্থ: আল্লাহর নামে শুরু করছি।” (মুসলিম, বুখারি, মিশকাত)

এবং যেকোন ভালো কাজ শেষ করার পর বলতেন- “(اَلْحَمْدُ للهِ) ‘আলহামদুলিল্লাহ। অর্থ: সব প্রশংসা আল্লাহর জন্য।” (মুসলিম, বুখারি, মিশকাত)

 কাহাকেও বিদায় দিতে দোয়া

মেহমান, আত্মীয়-স্বজন বা অন্য কাউকে বিদায় দেওয়ার সময় রাসূলুল্লাহ (সাঃ)- এই দোয়া পাঠ করতেন:

আরবি: اَسْتَوْدِعُ اللهَ دِيْنَكَ وَ أَمَانَتَكَ وَ خَوَاتِيْمَ عَمَلِكَ زَوَّدَكَ اللهُ التَّقْوَى وَ غَفَرَ ذَنْبَكَ وَ يَسَّرَلَكَ الْخَيْرَ حَيْثُ مَا كُنْتَ

বাংলা উচ্চারণ: “আসতাও দিয়ুল্লাহা দিনাকা ওয়া আমানাতাকা ওয়া খাওয়াতিমা আমালিকা ঝাও’য়্যাদাকাল্লাহুত তাকওয়া ওয়া গাফারা জামবাকা ওয়া ইয়াস্ সারা লাকাল খাইরা হাইছু মা কুংতা।” (তিরিমিজি, মিশকাত, আবু দাউদ)

বাংলা অর্থ: “তোমার দ্বীন, তোমার আমানত, তোমার কাজের শেষ পরিনতি আল্লাহর ওপর সপর্দ করলাম। আল্লাহ যেন তোমার তাকওয়া বৃদ্ধি করেন, তোমার গুনাহ ক্ষমা করে দেন। আর তুমি যেখানেই থাক, যে কাজই কর, আল্লাহ তোমার জন্য কল্যাণকে সহজ করে দেন।” (আমিন)

এ সময় বিদায় নেওয়া ব্যক্তির জন্য বা ঘরে অবস্থানকারী ব্যক্তির জন্য নিম্নোক্ত দোয়াটিও পাঠ করা যায়:

আরবি: اَسْتَوْدِعُكُمُ اللهَ الَّذِىْ لَا تَضِيْعُ وَ دَائِعُهُ

বাংলা উচ্চারণ: “আসতাও দিয়ুকুমু-ল্লা হাল্লাজি লা তাদিয়ু ওয়া দায়িয়ুহু।”

বাংলা অর্থ: “আমি তোমাদেরকে সেই আল্লাহর কাছে গচ্ছিত রাখছি, যার কাছে গচ্ছিত সম্পদ নষ্ট হয় না।” (ইবনে মাজাহ)

মুসাফার দোয়া/ হাত মিলানোর দোয়া 

হজরত বারাআ রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সালাম বলেছেন, ‘দুই জন মুসলিম পরস্পর মিলিত হয়ে মুসাফাহা করলে, পরস্পর বিচ্ছিন্ন হওয়ার পূর্বেই তাদের ক্ষমা করে দোয়া হয়।’ (আবু দাউদ)

যখন দুই মুসলমান একত্রে মিলিত হবে তখন তারা পরস্পর মুসাফা করে আল্লাহর প্রশংসা করবে এবং ক্ষমা প্রার্থনা করে এই দোয়া পাঠ করবে-

আরবি: يَغْفِرُ اللهُ لَنَا وَلَكُمْ

বাংলা উচ্চারণ: ইয়াগফিরুল্লা হু লানা ওয়ালা-কুম।

বাংলা অর্থ: আল্লাহ তায়ালা আমাকে এবং আপনাকে ক্ষমা করুন।

মুয়ানাকার দোয়া/ কোলাকুলি করার দোয়া

দীর্ঘদিন পর প্রিয় বন্ধুদের সাথে সাক্ষাৎ হলে, আমরা একে অপরকে জড়িয়ে ধরে মুয়ানাকা করি। এ সময় নিম্নোক্ত দোয়া পড়া ফজিলতপূর্ণ:

আরবি:

اللهم زد محبتي لله ورسوله

বাংলা উচ্চারণ: “আল্লা-হুম্মা জিদ মুহাব্বাতি লিল্লাহি ওয়া রাসুলিহি।”

বাথরুমে প্রবেশ করার দোয়া। বাথরুমে যাওয়ার দোয়া। টয়লেটে যাওয়ার দোয়া

বাথরুমে প্রবেশকালে শয়তানের ধোঁকা ও ক্ষতি থেকে বাঁচতে নিম্নোক্ত দোয়া পাঠ করতে হয়:

আরবি: اللهُمَّ إِنّيْ أَعًوْذُ بِكَ مِنَ الْخُبْثِ وَ الْخَبَائِثِ

বাংলা উচ্চারণ: “আল্লা-হুম্মা ইন্নি আউ-জুবিকা মিনাল খুবছি ওয়াল খাবা-য়িছ।” 

বাংলা অর্থ: “হে আল্লাহ, নিশ্চয়ই আমি আপনার কাছে পুরুষ ও নারী শয়তানের অনিষ্ট/ ক্ষতি থেকে আশ্রয় চাই।” (বুখারি- ৬৩২২)

বাথরুম থেকে বের হওয়ার দোয়া

বাথরুম থেকে বের হয়ে প্রথমে ‘গুফ্রনাকা’ বলে তারপর নিম্নোক্ত দোয়া পড়া উত্তম:

আরবি: الْحَمْدُ لِلهِ الَّذِيْ اَذْهَبَ عَنِّيْ الْاَذَى وَعَافَانِيْ

বাংলা উচ্চারণ: “আল-হামদু লিল্লা হিল্লাজি আজহাবা আন্নিল আজা ওয়া আফানি।” 

বাংলা অর্থ: “সকল প্রশংসা আল্লাহ তায়ালার জন্য, যিনি আমার কাছ থেকে কষ্টদায়ক বস্তু বের করে দিয়েছেন এবং আমাকে নিরাপদ করেছেন।” (ইবনে মাজাহ- ২৯৭)

গাড়িতে উঠার দোয়া

গাড়িতে উঠার সময় প্রথমে ‘বিসমিল্লাহ’ বলে যানবাহনে উঠার দোয়া- বিসমিল্লাহি মাজরেহা ওয়া মুর-সাহা ইন্না রাব্বি লা গাফুরুর রাহিম। তারপর গাড়িতে উঠে ‘আলহামদুলিল্লাহ’ বলবে। তারপর আরোহনের সময় এই দোয়াটি পড়বে:

আরবি: سُبۡحَٰنَ ٱلَّذِي سَخَّرَ لَنَا هَٰذَا وَمَا كُنَّا لَهُۥ مُقۡرِنِينَ

বাংলা উচ্চারণ: সুব-হানাল্লাজি সাখ্খারা লানা হা-জা ওয়া-মা কুননা লাহু মুক্বরিনীন, ওয়া ইন্না ইলা রাব্বিনা লামুন-ক্বালিবুন। (সুরা যুখরূফ, আয়াত: ১৩-১৪)

বাংলা অর্থ:  “মহান পবিত্র তিনি, যিনি আমাদের জন্য এটাকে (যানবাহনকে) নিয়ন্ত্রিত বানিয়ে দিয়েছেন, নতুবা আমরা তো এটাকে বশ করতে সক্ষম ছিলাম না। একদিন আমাদেরকে আমাদের প্রভুর নিকট অবশ্যই ফিরে যেতে হবে।”

ঘরকে শয়তানের প্ররোচনা থেকে রক্ষা করার দোয়া

সারাদিন শয়তানের অনিষ্টতা ও কুমন্ত্রণা থেকে বাচতে দৈনন্দিন জীবনের দোয়ার মত একটি ছোট্ট ও ছন্দময় দোয়া রয়েছে।

আরবি: أَعُوذُ بِاللهِ الْعَظِيمِ وَبِوَجْهِهِ الْكَرِيمِ وَسُلْطَانِهِ الْقَدِيمِ مِنَ الشَّيْطَانِ الرَّجِيمِ

বাংলা উচ্চারণ: “আউজুবিল্লা হিল আজিম, ওয়া বি-ওয়াঝ হিহিল কারিম, ওয়া সুলত্বা-নিহিল কাদিমি মিনাশ শাইত্বানির রাঝিম।”

বাংলা অর্থ: “আমি মহান আল্লাহ তায়ালার কাছে; তাঁর মহানুভব চেহারার কাছে; তাঁর অনাদি-অনন্ত কর্তৃত্বের কাছে বিতাড়িত শয়তান থেকে আশ্রয় চাচ্ছি।”

আরও পড়ুন: নামাজের সকল দোয়া সমূহ। নামাজের তাসবীহ ও দোয়া সমূহের অর্থ

দরজা-জানালা বন্ধের সময় দোয়া

ঘরের দরজা-জানালা বন্দ করার সময় ‘বিসমিল্লাহ’ বলে বন্ধ করবে।

রাগ দমনের দোয়া

রাগ মানুষের জীবনকে ধ্বংস করে দেয়। এটি একটি শয়তানের ফাঁদ। তাই রেগে গেলে এই দোয়া পাঠ করতে হয়-

আরবি: أعُوْذُ بِاللهِ مِنَ الشَّيْطَانِ الرَّجِيْم

বাংলা উচ্চারণ: “আউজু-বিল্লাহি মিনাশ্ শাইত্বা’নির রাঝিম।”

বাংলা অর্থ: “আমি আল্লাহর কাছে বিতাড়িত শয়তান থেকে আশ্রয় চাই। (মুসলিম)

রাগ-ক্ষোভ ও সুখ-সন্তুষ্টির অতিরিক্ত আবেগে নিজেদের নিয়ন্ত্রণ করতে, রাসুলুল্লাহ (সাঃ) নিম্নোক্ত দোয়া শিক্ষা দিয়েছেন-

আরবি: اَللَّهُمَّ اِنِّى اَسْئَالُكَ الْعَدْلَ فِىْ الْغَضَبِ وَ الرِّضَا

বাংলা উচ্চারণ: “আল্লা-হুম্মা ইন্নি আস আলুকাল আদলা ফিল গাদা’বি ওয়ার রিদা।”

বাংলা অর্থ: “হে আল্লাহ, আমি তোমার কাছে ক্রোধ ও সন্তুষ্টি উভয় অবস্থাতেই মধ্যমপন্থা কামনা করি।”

আয়না দেখার দোয়া

হজরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ (সাঃ) আয়না দেখার সময় বলতেন-

আরবি: اَللَّهُمَّ حَسَّنْتَ خَلْقِيْ فَاَحْسِنْ خُلُقِيْ

বাংলা উচ্চারণ: “আল্লা-হুম্মা হাস্-সানতা খালকি, ফা আহসিন খুলুকি।”

বাংলা অর্থ: “হে আল্লাহ, তুমি আমাকে সুন্দর করে সৃষ্টি করেছো, এভাবেই আমার চরিত্রও সুন্দর করে দাও।” (মিশকাত)

চাঁদ দেখার দোয়া

নতুন চাঁদ দেখলে এই দোয়া পাঠ করা সুন্নত-

আরবি: اللَّهُمَّ أهِلَّهُ عَلَيْنَا بِالأمْنِ وَالإيمانِ، وَالسَّلاَمَةِ وَالإسْلاَمِ، رَبِّي وَرَبُّكَ اللهُ 

বাংলা উচ্চারণ: “আল্লা-হুম্মা আহিল্লাহু আলাইনা বিল আমনি ওয়াল ঈমানি, ওয়াস-সালা-মাতি ওয়াল ইসলামি, রাব্বি ওয়া রাব্বু-কাল্লাহ।”

বাংলা অর্থ: “হে আল্লাহ, তুমি ওই চাঁদকে আমাদের ওপর উদ্দীত কর নিরাপত্তা, ঈমান, শান্তি ও ইসলামের সাথে। (হে চাঁদ) আমার ও তোমার প্রতিপালক আল্লাহ। হেদায়াত ও কল্যাণের চাঁদ।” (সুনানে তিরমিজি- ১২২৮)

রিজিক বৃদ্ধির দোয়া

নিয়মিত বেশি বেশি ইস্তেগফার পড়লে রিজিকের দরজা উন্মুক্ত ও প্রশস্ত হয়। তাই রিজিক বৃদ্ধির জন্য বেশি বেশি (اَسْتَغْفِرُ اللهِ) `আসতাগফিরুল্লাহ’ ও অন্যান্য ইস্তেগফার পাঠ করা ফজিলতপূর্ন।

বৃষ্টির দোয়া

বৃষ্টির সময় রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এই দোয়া পাঠ করতেন-

আরবি: اللهم شيبان نافع

বাংলা উচ্চারণ: “আল্লা-হুম্মা সায়্যিবান্ নাফিয়া।”

বাংলা অর্থ: “হে আল্লাহ, আমাদের উপর কল্যানময় বৃষ্টি বর্ষন করুন।” (বুখারি- ১০৩২)

হাঁচি দিয়ে ও শুনে যে দোয়া পড়তে হয়

হাঁচি দিলে বা শুনে নিম্নোক্ত দোয়াগুলো পাঠ করা সুন্নত-

হাঁচি দিয়ে বলতে হয় (اَلْحَمْدُ لِله),‘আলহামদুলিল্লাহ’। অর্থ: “সকল প্রশংসা আল্লাহ তায়ালার জন্য।” 

অন্য কোন ব্যক্তি হাঁচি দাতার ‘আলহামদুল্লিাহ’ শুনলে বলবে (يَرْحَمُكَ اللهِ), ‘ইয়ার হামুকাল্লাহ’। অর্থ: “আল্লাহ আপনার উপর রহম করুন।” 

অতপর, হাঁচি দাতা পুনরায় বলবে (يَهْدِكُمُ اللهُ يُصْلِحُ بَالَكُمْ),

বাংলা উচ্চারণ: ইয়াহ-দি কুমুল্লাহু ইউসলিহু বালাকুম।”

বাংলা অর্থ: “আল্লাহ তোমাকে হিদায়াত দান করুক এবং তোমার অবস্থা সঠিক রাখুক।” (মিশকাত, বুখারি)

হাটে-বাজারে প্রবেশ করার দোয়া

হাটে-বাজারে প্রবেশ করে নিম্নোক্ত দোয়াটি পাঠ করলে ১০ লক্ষ নেকি লাভ হয় এবং গুনাহ মাফ হয়। দোয়াটি হলো-

আরবি: لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللّٰهُ وَحْدَهُ لاَ شَرِيْكَ لَهُ، لَهُ الْمُلْكُ، وَلَهُ الْحَمْدُ، يُحْيِيْ وَيُمِيْتُ، وَهُوَ حَيٌّ لاَ يَمُوْتُ، بِيَدِهِ الْخَيْرُ، وَهُوَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيْرٌ

বাংলা উচ্চারণ: “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহ-দাহু লা শারিকা লাহু, লাহুল মুলকু ওয়ালা হুল হামদু, ইউহয়ি ওয়া ইউ’মিতু ওয়া হুওয়া আলা কুল্লি শাই ইং ক্বাদির।”

বাংলা অর্থ: “আল্লাহ ছাড়া কোনো মাবুদ নেই; তিনি এক, তার কোনো অংশীদার নেই; সকল ক্ষমতা তারই, সমস্ত প্রশংসা তার জন্যই; তিনিই প্রাণ দান করেন ও মৃত্যু দেন; তিনি চিরঞ্জীব, তিনি কখনো মৃত্যুবরণ করবেন না; তাঁর হাতেই মঙ্গল এবং তিনিই সব সময় সকল বস্তুর ওপর সর্বশক্তিমান ।”

পড়া মনে রাখার দোয়া

পড়া মনে রাখা, মুখস্থ ও স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধির জন্য মহান আল্লাহ তায়ালা এই দোয়া শিক্ষা দিয়েছেন-

আরবি: رَبِّ زِدْنِي عِلْمًا

বাংলা উচ্চারণ: “রাব্বি যিদ’নি ইলমা।” (সুরা ত্বাহা,আয়াত- ১১৪)

বাংলা অর্থ: “হে আমার রব, আমার জ্ঞান (মুখস্ত,স্মরণ শক্তি) বাড়িয়ে দিন।”

আরও ‍কিছু প্রয়োজনীয় দোয়া

কুরআনে রোগ মুক্তির দোয়া

ঋণ পরিশোধের দোয়া, ঋণ মুক্তির দোয়া

ইফতারের দোয়া- তারাবির নামাযের দোয়া ও নিয়ত

দোয়া কুনুত- আরবি উচ্চারণ ও বাংলা অর্থসহ

শেষকথা

দৈনন্দিন জীবনের দোয়া ও সুন্নাতসমূহ জানা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এসকল দোয়ার মাধ্যমে মহান আল্লাহর প্রিয় বান্দা হওয়ার যায়। এছাড়াও শয়তানের প্ররোচনা ও নানা বিপদ থেকে রক্ষা, কাঙ্খিত আশা পূরন করা যায় এসকল দোয়ার মাধ্যমে।