ঢাকার দর্শনীয় পার্ক সমূহ: বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকা হলো অন্যতম একটি প্রাচীন শহর। খ্রিস্টীয় সপ্তম শতক থেকে এর গোড়াপত্তন হয়েছিল। ঢাকা বাংলাদেশের প্রাচীন শহর হওয়ার ফলে কালের বিবর্তনে বিভিন্ন শাসনামলে বিভিন্ন স্থাপনা ও বিনোদন কেন্দ্র গড়ে উঠেছে এই শহরে। ঢাকা হচ্ছে বাংলাদেশের বিনোদনের কেন্দ্রবিন্দু। বিনোদনের জন্য এখানে রয়েছে নানা আধুনিক পার্ক। যেমন- ফ্যান্টাসি কিংডম, আলাদিন পার্ক, নন্দন পার্ক, ওয়ান্ডারেলা গ্রীন পার্ক ইত্যাদি। চলুন জেনে নেই, আপনার বিনোদনের জন্য সেরা এবং দর্শনীয় পার্ক সমূহ সম্পর্কে-
ফ্যান্টাসি কিংডম পার্ক
ফ্যান্টাসি কিংডম থিম পার্কটি ঢাকার অদূরে আশুলিয়া থানার জামগড়া এলাকায় অবস্থিত। এই পার্কটি ২০ একর জায়গা জুড়ে অবস্থিত। ২০০২ সালে ১৯ শে ফেব্রুয়ারি ফ্যান্টাসি কিংডম পার্কটি প্রতিষ্ঠিত করা হয়। এই পার্কটির মধ্যে রয়েছে একটি থিম পার্ক, ওয়াটার পার্ক, শুষ্ক পার্ক ও হেরিটেজ কর্নার রয়েছে। এ পার্কটির রক্ষণাবেক্ষণের ও পরিচালনার দায়িত্বে রয়েছে কনকর্ড এন্টারটেইনমেন্ট কোম্পানি লিমিটেড, যা কনকর্ড গ্রুপের একটি সহযোগী প্রতিষ্ঠান।
ঢাকার দর্শনীয় পার্ক সমূহ এর মধ্যে বাংলাদেশের সর্বাধিক পরিদর্শিত ফ্যান্টাসি কিংডম থিম পার্ক যার গরে বার্ষিক উপস্থিতি হলো ছয় কোটি। বর্তমানে অনেক রাস্তা রয়েছে এই পার্কে যাওয়ার জন্য তবে ঢাকা থেকে সাভার যাওয়ার পথেই পরে বাংলাদেশের সর্বপ্রথম থিম পার্ক ফ্যান্টাসি কিংডম।
ফ্যান্টাসি কিংডম পার্কে প্রায় ২৪টি রাইড রয়েছে। রাইড গুলো হল – বাম্পার কার, ঘূর্ণি পাখি, বিহ স্প্ল্যাশ, ইজি ডিজি, জুজু ট্রেন, হাইওয়ে কনভয়, সূর্য ও চাঁদ, বুল ডোজার, হ্যাপি কাঙ্গারু , শান্তা মারিয়া, থ্রিডি সিনেমা, বাচ্চাদের বাম্পার গাড়ি, রোলার কোস্টার, জাদুর গালিচা, স্পিড ওয়ে, টনি অ্যাডভেঞ্চার, স্কাই হপা, জিপ প্রায় , ঘূর্ণি টানেল, বাম্পার বোট, মুভিং টাওয়ার, রিডিম্পসন গেম, ইগলু হাউস, ফেরিস হুইল, জুনিয়র ফেরিস হুইল, রক এন রোল এবং ৯ ডি সিনেমা হল নতুন রাইড হিসেবে ফ্যান্টাসি কিংডম কমপ্লেক্সে যুক্ত করা হয়েছে।
ঢাকার দর্শনীয় পার্ক সমূহ এর এই ফ্যান্টাসি কিংডম পার্কটি সারা বছরই খোলা থাকে সকাল ১১টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত এবং সরকারি ছুটির দিনগুলোতে সকাল ১০টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত খোলা থাকে। এই পার্কে প্রাপ্তবয়স্কদের প্রবেশের টিকেট মূল্য ৪০০ টাকা এবং বাচ্চাদের টিকেট মূল্য ৩০০ টাকা। ৮ধরনের রাইডসহ প্রাপ্তবয়স্কদের প্যাকেজ মূল্য ৮০০ টাকা
বাচ্চাদের প্যাকেজ মূল্য ৬০০ টাকা। এছাড়াও ৪ জনের ফ্যামিলি প্যাকেজর মূল্য ৪০০০ টাকা, কম্বো প্যাকেজ জনপ্রতি ১৫০০ টাকা এবং ওয়াটার কিংডমে প্রবেশ মূল্য সহ সকল রাইড এর প্যাকেজের মূল্য ৮০০ টাকা।
ওয়ান্ডারেলা গ্রীন পার্ক- ঢাকা
ঢাকার কর্মব্যস্ত নাগরিক জীবনে আমরা সবাই ব্যস্ত। তাই নগরের যান্ত্রিক কোলাহল থেকে কিছুটা স্বস্তির জন্য নিরিবিলি ছায়া ঘেরা পরিবেশ সবাই চায়। এই মনোরম পরিবেশে সময় কাটাতে চাইলে আপনারা ঘুরে আসতে পারেন ওয়ান্ডারেলা গ্রীন পার্ক থেকে। ঢাকা গুলিস্তান থেকে ৪৮ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত ওয়ান্ডারেলা গ্রীন পার্ক। এই পার্কটি অনেক গাছপালা ও সবুজ পরিবেশে ঘেরা ঢাকার দর্শনীয় পার্ক সমূহ এর একটি। ২০১৭ সালে পার্কটি প্রতিষ্ঠিত হয়। ঢাকা জেলার নবাবগঞ্জ থানার দোহার সড়ক সংলগ্ন ওয়ান্ডারেলা গ্রীন পার্ক অবস্থিত।
এই পার্কটি ৯০ বিঘা জমির উপর বিস্তৃত।এই পার্কে রয়েছে সারি সারি ফুল ও ফলের বাগান, জলাধার, হেঁটে চলার প্রশস্ত রাস্তা ও বসার ব্যবস্থা রয়েছে। এই পার্কে প্রাতিষ্ঠানিক বা ফ্যামিলি ট্যুর ও করা যায়। এই পার্কে ট্রেন, সুইংচেয়ার, সোনার তরী, প্যাডেল বোট সহ নানা রকমের বিনোদনের ব্যবস্থা রয়েছে।
এই পার্কে ঢোকার জন্য ৫০ টাকা করে টিকিট কাটতে হবে। অন্যান্য রাইডে চড়ার জন্য ৩০ থেকে ১০০ টাকার টিকেট কাটতে হবে। প্যাকেজে ১০০ টাকার টিকিট কাটলে তিনটি ফ্রী রাইড উপভোগ করা যাবে। ঢাকার দর্শনীয় পার্ক সমূহ এর ওয়ান্ডারেলা গ্রীন পার্কটিতে যাওয়া যাবে ঢাকা গুলিস্তান থেকে নবাবগঞ্জগামী যমুনা গিলাক্স,এন.মল্লিক ও বিআরটিসি বাসে করে যাওয়া যাবে।
নন্দন পার্ক
ঢাকার অধুরে সাভারের নবীনগর চন্দ্রা হাইওয়ের বারইপাড়া এলাকায় নন্দন পার্ক অবস্থিত। ২০০৩ সালে ঢাকার দর্শনীয় পার্ক সমূহ এর একটি এই নন্দন পার্কটিকে প্রতিষ্ঠিত করা হয়। প্রায় ৩৩ একর জমির উপর প্রতিষ্ঠিত এই পার্কটি।এই পার্ককে রয়েছে আন্তর্জাতিক মানের দেশি বিদেশি বিভিন্ন রাইড,রেস্টুরেন্ট, ওয়াটার ওয়ার্ল্ড, রিসোর্ট, ফাইভ ডি মুভি থিয়েটার ও কার পার্কিং এর সুবিধা। সারাবছর পার্কটি খোলা থাকে রবিবার থেকে বৃহস্পতিবার সকাল ১১ টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত এবং শুক্র ও শনিবার খোলা থাকে সকাল দশটা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত।
রাজধানীর বিভিন্ন স্থান থেকে হানিফ, সুপার ও আজমেরি বাস সহযোগে যাওয়া যাবে অথবা নিজস্ব পরিবহনের মাধ্যমে যাওয়া যাবে নন্দন পার্কে। নন্দন পার্কের টিকিটের মূল্য ২০ থেকে ৬০ টাকা পর্যন্ত এবং বিশেষ দিন গুলোতে টিকিটের মূল্যের উপরে ডিসকাউন্ট দেয়া হয়। এছাড়াও পার্কে প্রবেশের জন্য বিভিন্ন রকম প্যাকেজ চালু রয়েছে। পার্ককে প্রবেশসহ দুই রাইড এর টিকিটের মূল্য ২৯৫ টাকা, প্রবেশসহ ১০ রাইড এর টিকিটের মূল্য ৪২৫ টাকা এবং ওয়াটার ওয়ার্ল্ডে প্রবেশসহ সমস্ত রাইড এর টিকিটের মূল্য ৫২০ টাকা।
ঢাকার দর্শনীয় পার্ক সমূহ এর এই পার্কে বেশ কিছু আকর্ষণীয় রাইড রয়েছে। রাইডগুলো হলো -রোলার কোস্টার, ওয়াটার কোস্টার, ক্যাবল কার,চ্যালেঞ্জ কোর্স, জিপ রাইড, রক ক্লাইম্বিং, রেপ্লিং ইত্যাদি। ওয়াটার ওয়ার্ল্ডে রয়েছে ওয়েভ রানা, ডুম ন্সাইড, ওয়েভ পুল, মাল্টি প্লে জোন, স্যুট ও ফ্যামিলি কার্ভ টিউব স্লাইড এবং ওয়াটার ফল এন্ড মিস্ট।নন্দন পার্কটি ও ঢাকার মধ্যে অন্যতম অন্যতম একটি দর্শনীয় স্থান ।
ফ্যান্টাসি আইল্যান্ড পার্ক
রাজধানীর উত্তরায় ১৫ নম্বর সেক্টরে খালপাড়ের দিয়া বাড়িতে রয়েছে ঢাকার দর্শনীয় পার্ক সমূহ এর একটি অ্যামিউজমেন্ট পার্ক যার নাম ফ্যান্টাসি আইল্যান্ড পার্ক। এই পার্কটিকে ৩ একর জায়গার উপর নির্মাণ করা হয়েছে। রাজধানীর যে কোন প্রান্ত থেকে আসতে হলে প্রথমে উত্তরার হাউজ বিল্ডিং বা মাসকট প্লাজা আসতে হবে তারপর সেখান থেকে রিকশা বা টেম্পুতে চড়ে খালপাড় পর্যন্ত আসতে হবে । খালপাড় ব্রিজ পার হয়ে ৩০০ গজ দূরে গেলে হাতের বাম পাশে ফ্যান্টাসি আইল্যান্ড পার্ক পরবে। নিজস্ব পরিবহনে চড়েও আসা যাবে।
পার্কটিতে প্রবেশ মূল্য ২০০ টাকা এবং বিভিন্ন রাইড এর মূল্য ৩০ থেকে ১০০ টাকা পর্যন্ত। এই পার্কে রয়েছে প্রতিবন্ধী ও দুই বছরের শিশুদের জন্য বিনামূল্যে প্রবেশের সুযোগ। পার্কটিতে ২৩ টি রাইড রয়েছে। রাইডগুলোতে ছোট বড় সবাই চড়তে পারবে। রাইডগুলো হলো -ম্যারি গো রাউন্ড,সুইংকার,বানজি জাম্প, মিনিকার, পেন্ডুলাম, হুইলার স্কুটি, লেডি বাগ, বে পাইরেট শিপ,বাম্পার বোট,অক্টোপাস, বাম্পার কার, প্যারা ট্রুপার,স্কাইফল, চিলড্রেন ট্রেন, অ্যানিম্যাল কিডি রাইড, সেল্ফকন্ট্রোল প্লেন ইত্যাদি রাইড রয়েছে।
এই পার্কের ইনডোরে থাকছে ১-২ বছর বয়সী শিশুদের জন্য বিভিন্ন রাইড।এখানে থাকছে দেশ সেরা ম্যাজিসিয়ান আলী রাজের ম্যাজিক ও পাপেট শো। ফ্যান্টাসি আইল্যান্ড পার্কে রয়েছে অসাধারণ সুন্দর সুইমিং কমপ্লেক্স যা একে ঢাকার দর্শনীয় পার্ক সমূহ এর একটি করে তুলেছে।
আলাদিন পার্ক
ঢাকার দর্শনীয় পার্ক সমূহ এর অন্যতম আলাদিন পার্কটি রাজধানী ঢাকার ধামরাই উপজেলার সিতি এলাকায় অবস্থিত। ৪০ বিঘা জমির উপর আলাদিন’ স পার্কটিকে নির্মাণ করা হয়েছে। আলাদিন পার্কটি হলো জনপ্রিয় পারিবারিক বিনোদনের কেন্দ্রবিন্দু। ঢাকার ভিতরে স্বল্প সময়ের মধ্যে পরিবার-পরিজন নিয়ে ঘুরতে যাওয়া যাবে এ পার্ক কে। আলাদিন’স পার্কের আরেকটি শাখা চালু হয়েছে ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়ায়।
এই পার্কের রিসোর্টে থাকতে চাইলে প্রতি রাতে ৩৫০০ থেকে ৪৫০০ টাকা জন প্রতি খরচ পড়বে। ছাত্রদের জন্য এই পার্কে প্রবেশ মূল্যসহ ওয়াটার পার্ক ড্রাই পার্কের টিকেট মূল্য ৩৫০ টাকা আর অন্যান্যদের জন্য ৪০০ টাকা। আলাদিন’স পার্কের বিভিন্ন রাইডের মধ্যে রয়েছে- ডাবল ডেক কেরোসেল,বাম্পার কার, স্পিড স্পিনিং কার, বুল রাইড, হাইড্রলিক পেন্ডুলাম, টয় ট্রেন, সুপার সুইং,কিডি রাইডস জোন, ম্যাজিক শো, প্যাডেল বোট এবং ১২ ডি ডায়নামিক সিনেমা হল।
বাচ্চাদের জন্য তিনটি আলাদা পুল রয়েছে এবং এখানে লকার ব্যবস্থা ও নারী-পুরুষের জন্য আলাদা চেঞ্জিং রুম রয়েছে। এই পার্কে রয়েছে অনেক বড় পিকনিক স্পট। তাই পিকনিকের জন্য ঘুরে আসতে পারেন ঢাকার দর্শনীয় পার্ক সমূহ এর এই পার্কটিতে।
ঢাকা শিশু পার্ক
ঢাকা শিশু পার্ক টি শহীদ জিয়া শিশু পার্ক নামে পরিচিত ঢাকার দর্শনীয় পার্ক সমূহ এর একটি। ১৯৭৯ সালে এই পার্কটির আত্মপ্রকাশ ঘটে। শিশু পার্ক টি বাংলাদেশের সবচেয়ে প্রাচীনতম পার্ক। শিশু পার্ক টি ১৩ একর জমির উপর প্রতিষ্ঠিত। শিশু পার্কটি শাহবাগ মোড় থেকে পূর্ব দিকে রমনা পার্কের বিপরীত পার্শ্বে অবস্থিত। বাংলাদেশের জাতীয় পার্ক হলো শহীদ জিয়া শিশু পার্ক। ১৯৮৩ সালে সরকারিভাবে আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু করে শিশুদের বিনোদন নিশ্চিত করার লক্ষ্যে।
এই পার্কটিকে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের আওতাধীনে ঢাকা সিটি কর্পোরেশন পরিচালনা করে আসছে। শিশু পার্কটি রবিবার ও বুধবার সর্বসাধারণের জন্য বন্ধ থাকে।সুবিধাবঞ্চিত দরিদ্র শিশুদের জন্য বুধবার দুপুর ২ টা থেকে ৪:৩০ পর্যন্ত পার্কটি খোলা থাকে। অন্যান্য দিনগুলোতে দুপুর ১টা থেকে সন্ধ্যা ৭:৩০ পর্যন্ত পার্কটি খোলা থাকে। এই পার্কটি সর্বশ্রেণীর মানুষের জন্য অত্যন্ত জনপ্রিয় যার অন্যতম কারণ হলো স্বল্প খরচ ও আকর্ষণীয় বিভিন্ন রাইড। শিশু পার্কের মূল উদ্দেশ্য হলো শিশুদের আনন্দ বিনোদন নিশ্চিত করা ।
এই পার্কে ১২ টি রাইড রয়েছে এবং বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর পক্ষ থেকে ঢাকা শিশু পার্ককে একটি জেট বিমান উপহার দেওয়া হয়। রাইডগুলো হলো-ছোট মনিদের রেলগাড়ি, ঝুলন্ত চেয়ার, উড়ন্ত বিমান, আনন্দ ঘূর্ণি, উড়ন্ত নভোযান, এসো গাড়ি চড়ি, রোমাঞ্চচক্র, ফুলদানি আমেজ, বিস্ময় চক্র, লম্ফ ঝম্ফ,চাকা পায়ে চলা ও এফ-৬ জঙ্গি বিমান।
ঢাকা শিশু পার্কের প্রবেশের মূল্য ১৫ টাকা এবং প্রতিটি রাইডে চলার মূল্য ১০ টাকা। পার্কে প্রবেশের পথে কাউন্টার রয়েছে এবং প্রবেশের সময়ে প্রবেশের টিকেট ও রাইডের টিকেট কিনে নেওয়া উচিত। দেশের সবচেয়ে এই প্রাচীন পার্কটি শিশুদের শৈশব কালকে আরো আনন্দময় করে তোলে। তাই আপনার শিশুকে নিয়ে ঘুরে আসতে পারেন ঢাকার দর্শনীয় পার্ক সমূহ এর এই পার্কটিতে।
বুড়িগঙ্গা ইকো পার্ক
বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকার শ্যামপুরে বুড়িগঙ্গা নদীর তীরে ইকো পার্ক অবস্থিত। ২.৩ একর জায়গার উপর পার্কটিকে প্রতিষ্ঠিত করা হয়েছে ঢাকার দর্শনীয় পার্ক সমূহ এর একটি সেরা স্থান হিসেবে। বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষ ২০১২ সালের অক্টোবর মাসে পার্কটিকে নির্মাণ করেন। এই পার্কটি ‘শ্যামপুর ইকো পার্ক’ এবং ‘বিআইডব্লিউটিএ ইকো পার্ক’ নামে ও পরিচিত। ঢাকার ভিতরে অল্প সময়ের মধ্যে পরিবার-পরিজনদের সাথে নিয়ে ঘুরতে যাওয়ার জন্য আদর্শ জায়গা হল ইকো পার্ক।
বুড়িগঙ্গা ইকো পার্কটি সকাল ৮টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত খোলা থাকে। এই পার্কে সকালে যারা ব্যায়াম ও খেলাধুলা করতে আসে তাদের থেকে কোন প্রবেশ ফি নেয়া হয় না। এই পার্কে প্রবেশ টিকিটের মূল্য জন প্রতি ৩০ টাকা। রাইডের টিকিটের মূল্য ৩০ থেকে ১০০ টাকা পর্যন্ত।
ঢাকার যে কোন স্থান থেকে যাত্রাবাড়ী হয়ে শ্যামপুরে বুড়িগঙ্গা ইকো পার্কে যাওয়া যায়। গেন্ডারিয়া থানা থেকে পার্কটি মাত্র ৭০০ মিটার দূরে অবস্থিত।
বুড়িগঙ্গা ইকো পার্কের ২৪ টিরও বেশি আকর্ষণীয় রাইড রয়েছে। রাইডগুলো হল -ক্যাপসুল, স্ট্রাইকিং কার, মেরি গো রাউন্ড, ৯ডি সিনেমা ও বুল ফাইট ইত্যাদি রাইড রয়েছে। আরো রয়েছে বসার স্থান, ফুডকোর্ট, নৌঘাট ও নদীর তীরের আকর্ষণীয় দৃশ্য উপভোগ করার জন্য রয়েছে হাঁটার রাস্তা। যে দৃশ্য সবার মনকে প্রফুল্ল করে তোলে। তাই ঢাকার দর্শনীয় পার্ক সমূহ খুজে থাকলে কম খরচে ঘুরে আসতে পারেন এই পার্কে।
তামান্না ওয়ার্ল্ড ফ্যামিলি পার্ক
ঢাকার মধ্যে অনেক বিনোদন কেন্দ্র গড়ে উঠেছে তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো তামান্না ওয়ার্ল্ড ফ্যামিলি পার্ক। রাজধানী ঢাকার মিরপুর ১ এর চটবাড়ি এলাকায় আশুলিয়া বেরিবাধ সড়ক সংলগ্নে গড়ে উঠেছে এই পার্কটি। পার্কটিকে প্রায় ১ একর জায়গা নিয়ে নির্মাণ করা হয়েছে। তুরাগ নদীর তীরে অবস্থিত ঢাকার দর্শনীয় পার্ক সমূহ এর এই পার্কটিতে গেলে বিনোদনের পাশাপাশি প্রাকৃতিক পরিবেশ ও উপভোগ করা যায়। এখানে রয়েছে বসার জন্য ছাওনি যেগুলোকে বিভিন্ন নাম দেয়া হয়েছে।
তামান্না ওয়ার্ল্ড ফ্যামিলি পার্কে প্রবেশ টিকেটের মূল্য জন প্রতি ৬০ টাকা। বিভিন্ন রাইড এর মূল্য জনপ্রতি ৫০ থেকে ৮০ টাকা। কিডস জোন ও রোলার কোস্টারের টিকিটের মূল্য ১০০ টাকা। সুইমিং এন্ড ওয়াটার প্লেগ্রাউন্ড টিকিটের মূল্য ৪০০ টাকা।
বাংলাদেশের যে কোন প্রান্ত থেকে বাসে করে মিরপুর ১ নম্বর বাস স্ট্যান্ড অথবা মাজার রোড এসে রিক্সা নিয়ে যাওয়া যাবে।
তামান্না ওয়ার্ল্ড ফ্যামিলি পার্কে পিকনিক , জন্মদিন ও পার্টি সহ বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজন করা যাবে। এই পার্কে রয়েছে ওয়াটার প্লে গ্রাউন্ড, খাবারের রেস্টুরেন্ট ও সুইমিং পুল। এই পার্কে আকর্ষণীয় কিছু রাইড রয়েছে তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য রাইডগুলো হলো – বৈদ্যুতিক মিনি ট্রেন, রোলার কোস্টার, ওয়াটার প্লে গ্রাউন্ড, স্পেস শাটল, সোয়ান এডভেঞ্চার,মনোরেল, ওয়ান্ডার হুইল, কিডস রাইড,নাগরদোলা ইত্যাদি রাইড রয়েছে। আপনার পরিবার নিয়ে ঘুরে আসতে পারেন ঢাকার দর্শনীয় পার্ক সমূহ এর এই পার্কটিতে।
রমনা পার্ক
সুনিবিড় ছায়াঘেরা পরিবেশের একটি উদ্যান হলো রমনা পার্ক। বাংলাদেশের রাজধানীর প্রাণকেন্দ্র রমনা এলাকায় এই মনোরম উদ্যানটি অবস্থিত । ১৬১০ সালে রমনা পার্কটি প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল। এ পার্কের বর্তমান আয়তন ৬৮.৫০ একর। রমনা পার্কটি পুরনো হাইকোর্ট ভবন থেকে বর্তমান সড়ক পর্যন্ত বিস্তৃত। পার্কটি রাজধানী বাসীর প্রাতঃভ্রমণের মূল কেন্দ্র। প্রতিবছর রমনার বটমূলে পহেলা বৈশাখের বর্ষবরণ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয় ছায়ানটের উদ্যোগে। এখানে ঢাকার কোলাহলময় পরিবেশ থেকে মানুষরা একটু স্বস্তির জন্য এই সবুজে ঢাকা পার্কের মধ্যে ঘুরতে আসে। এই পার্কটি ‘ঢাকার ফুসফুস’ নামেও পরিচিত।
নিবিড় সময় কাটানোর জন্য ঢাকার দর্শনীয় পার্ক সমূহ এর সেরা এই পার্কটি। বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকার যে কোন প্রান্ত থেকে বাসে, টেক্সি অথবা সিএনজি সহযোগে শাহবাগ এসে শিশু পার্কের কিছুটা সামনে এগিয়ে গেলেই রমনা পার্কে প্রবেশপথ দেখা যাবে।
রমনা পার্কের সবচেয়ে আকর্ষণীয় দর্শনীয় স্থানটি হচ্ছে লেক। লেকটির দৈর্ঘ্য ৮১২ মিটার এবং প্রস্থ ৯ থেকে ৯৪ মিটার। লেকের পাড়ে বিভিন্ন স্থানে বসার জায়গা রয়েছে।
মোঘল আমল থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত বিভিন্ন ঘটনার সাক্ষী সবুজে ঢাকা এই মনোরম উদ্যানের ২১১ প্রজাতির উদ্ভিদ রয়েছে। এগুলোর মধ্যে রয়েছে অসংখ্য ছোট বড় প্রজাতির উদ্ভিদ ও লতা গুল্ম। আরো রয়েছে কৃষ্ণচূড়, কেয়া,পাদাউক সহ বিভিন্ন মৌসুমী ফুলের সমাহার। এই পার্কে সবসময় কোন না কোন গাছে ফুল থাকে। শীতকালে এই পার্কে বিভিন্ন দেশের বিভিন্ন প্রজাতির অসংখ্য পাখি এসে ভিড় জমায়। সে সময় অনেক দর্শনার্থী পাখি দেখার জন্য ও কিচিরমিচির শব্দ শোনার জন্য পার্কে ঘুরতে যায়।
এই পার্কটি সবার জন্য সারা বছর উন্মুক্ত থাকে। এ পার্কে ঢোকার জন্য প্রবেশ টিকেট লাগেনা। এই পার্কে প্রতিদিন কয়েক হাজার মানুষ আসে হাটতে ও ব্যায়াম করতে। স্থানীয় হলে নিয়মিত আপনিও যেতে পারেন ঢাকার দর্শনীয় পার্ক সমূহ এর এই পার্কটিতে।
বাহাদুর শাহ পার্ক
বাংলাদেশের রাজধানীর পুরান ঢাকার সদরঘাট এলাকার লক্ষীবাজারের ঐতিহ্যবাহী উদ্যানের নাম হলো বাহাদুর শাহ পার্কটি অবস্থিত। স্যার সলিমুল্লার পুত্র খাজা হাফিজুল্লাহর স্মরণে ১৮৮৫ সালে একটি স্মৃতিস্তম্ভ স্থাপন করা হয় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে। পরবর্তীতে নবাব খান বাহাদুর এই পার্কটির নাম পরিবর্তন করে ১৯৫৭ সালে বাহাদুর শাহ পার্ক রাখেন।
সবুজে ঢাকা মনোরম পরিবেশের জন্য এটি ঢাকার দর্শনীয় পার্ক সমূহ এর অন্যতম। পার্কটিতে রয়েছে সিটি কর্পোরেশন কর্তৃক নির্মিত ফোয়ারা এবং নবাব খাজা হাফিজুল্লাহর স্মরণে স্মৃতিস্তম্ভ। পার্কটি হলো ডিম্বাকৃতির এবং লোহার রেলিং দিয়ে পুরোটা ঘেরা। এই পার্কটিকে ঘিরে সাতটি রাস্তা একত্রিত হয়েছে। পার্কটির মধ্যে দুটি প্রধান ফটোক রয়েছে পূর্ব ও পশ্চিম পাশে এবং রেলিং এর পাশ দিয়ে পাকা রাস্তা করা হয়েছে।
বাহাদুর শাহ পার্কটি সারা বছরের সব সময় খোলা থাকে। এই পার্কে ঢুকতে প্রবেশ টিকেট লাগেনা। সবার জন্য উন্মুক্ত এই পার্কটি। ভোর ৫ টা থেকে রাত ১০ টা ৩০ মিনিট পর্যন্ত যেকোনো সময় এই পার্কে যাওয়া যাবে।
রাজধানী ঢাকার যে কোন প্রান্ত থেকেই জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন গণপরিবহন রয়েছে। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের গেটের সামনে আসলেই বাহাদুর শাহ পার্কের প্রবেশ পথটি দেখা যাবে। বিভিন্ন জায়গার বিভিন্ন গণপরিবহনের মাধ্যমে এই পার্কে এসে ঢাকার দর্শনীয় পার্ক সমূহ এর একটি সেরা স্থান ঘুরে আসতে পারেন।
FAQ’s
ঢাকার সবচেয়ে বড় পার্ক কোনটি?
ঢাকার সবচেয়ে বড় পার্ক হলো যমুনা ফিউচার পার্ক। মূলত এটি একটি মার্কেট বা বিপনি কেন্দ্র। এর আয়তন প্রায় ৪,১০০,০০০ বর্গফুট।
বাংলাদেশের সবচেয়ে আকর্ষনীয় পার্ক কোনটি?
বাংলাদেশের সবচেয়ে আকর্ষণীয় পার্ক হলো ফ্যান্টাসি কিংডম। দেশি ও বিদেশিভাবে এখানে বার্ষিক উপস্থিতি প্রায় ৬ কোটি।