ঢাকার দর্শনীয় মসজিদ সমূহ: বিশ্বের চতুর্থ বৃহত্তম মুসলিম দেশ হচ্ছে বাংলাদেশ। বাংলাদেশের প্রতিটি জেলার অঞ্চলে অঞ্চলে ও প্রতিটি শহরের মহল্লায় মহল্লায় অনেক মসজিদ গড়ে উঠেছে এবং এখনো আরো নতুন করে অনেক মসজিদ তৈরি হচ্ছে। সবচেয়ে বেশি মসজিদের পরিমাণ বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকাতে। ঢাকাকে মসজিদের শহর বলা হয়। তাই অনেকেই ঘুরে দেখতে চান ঢাকার দর্শনীয় মসজিদ সমূহ।
ঢাকা মসজিদের শহরে পরিণত হয়েছে মুঘল আমল থেকেই। ঢাকা শহরে এখনো অনেক প্রাচীন আমলের ঐতিহাসিক মসজিদ বিদ্যমান রয়েছে নতুন মসজিদের পাশাপাশি। তেমনি কিছু প্রাচীন ঐতিহাসিক ঢাকার দর্শনীয় মসজিদ সমূহ নিয়ে বিস্তারিত তথ্য নিয়েই আজকের আলোচনা-
বাইতুল মোকাররম জাতীয় মসজিদ
বাইতুল মোকাররম মসজিদ বাংলাদেশের জাতীয় মসজিদ হিসেবে পরিচিত। এটি বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকার পল্টনে অবস্থিত এবং এটি ঢাকার দর্শনীয় মসজিদ সমূহ এর মধ্যে অন্যতম। বাইতুল মোকাররম মসজিদ প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল ১৯৬৮ সালে। বাইতুল মোকাররম মসজিদে একসাথে ৪০ হাজার মানুষ নামাজ পড়তে পারে।
এই মসজিদটি আট তলা বিশিষ্ট এবং এর অভ্যন্তরে অনেক জায়গা রয়েছে। এই মসজিদটিকে পবিত্র কাবা শরীফের মত নির্মাণ করা হয়েছে। এই মসজিদের নকশা অন্যান্য মসজিদ থেকে অনেক আলাদা। ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ ১৯৭৫ সালের ৮ই মার্চ থেকে এই মসজিদের রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব পালন করে আসছে। বিশ্বের দশম বৃহত্তম মসজিদ হচ্ছে বাইতুল মোকাররম জাতীয় মসজিদ।
প্রতি শুক্রবার এখানে দূর-দূরান্ত থেকে অনেক মুসল্লীরা নামাজ পড়তে আসে এবং বিভিন্ন দেশের পর্যটকরা ঘুরতেও নামাজ পড়তে আসেন। বাইতুল মোকাররমের নিচতলায় রয়েছে বিপনিবিতান ও একটি বৃহত্তম অত্যাধুনিক সুসজ্জিত মার্কেট কমপ্লেক্স। মসজিদের দোতলা থেকে ছয়তলা পর্যন্ত প্রতি তলায় নামাজ পড়ানো হয়। এই মসজিদ থেকে আরো সম্প্রসারিত করা হয় ২০০৮ সালের সৌদি সরকারের অর্থায়নে। ২৫ শে জানুয়ারি ১৯৬৩ সালে এখানে প্রথমবারের মত নামাজ পড়ানো হয়।
মসজিদ কমপ্লেক্সটির নকশার জন্য সিন্ধর বিশিষ্ট স্থপতি আবদুল হোসেন থারিয়ানিকে নিযুক্ত করা হয়। মসজিদটি খুব উঁচু এবং এর প্রধান ভবনটি আট তলা আর মাটি থেকে ৩০.১৮ মিটার উঁচু। মসজিদটির প্রধান ভবনের রং সাদা। এই মসজিদটিতে বিশাল এলাকা জুড়ে রয়েছে বাগান যা মোগল শৈলিতে স্থাপন করা। এই মসজিদে মহিলাদের জন্য ওযুর ব্যবস্থা সহ নামাজ ক্ক্ষ ও পাঠাগার রয়েছে। ঢাকার দর্শনীয় মসজিদ সমূহ এর মধ্যে বাইতুল মোকাররম জাতীয় মসজিদ দর্শন করতে এখানে প্রতিদিন সবচেয়ে বেশি দেশি-বিদেশি পর্যটকরা আসেন।
তারা মসজিদ
বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকাতে আকর্ষণীয় সুন্দর আরো একটি মসজিদ রয়েছে তারা মসজিদ। পুরান ঢাকার আরমানিটলায় আবুল খয়রাত সড়কে তারা মসজিদটি অবস্থিত। ১৮ শতকে এক ধনাঢ্য ব্যক্তি মির্জা সাহেব মসজিদ টি নির্মাণ করেন। তখন মসজিদ টি মির্জা সাহেব মসজিদ নামে পরিচিত পায়। তবে তিনি পুরো মসজিদের সংস্কারের কাজ করার আগেই মৃত্যুবরণ করেন। ১৯২৬ সালে আলী জান বেপারী মসজিদটির সংস্কারের নির্মাণ কাজ সম্পূর্ণ করেন। ঢাকার দর্শনীয় মসজিদ সমূহ এর তালিকার এই মসজিদে মোঘল স্থাপত্য এর প্রভাব রয়েছে। মসজিদটি দেখতে অনেক সুন্দর। সাদা মার্বেলের গম্বুজের উপর নীল রঙের তারার কাজ রয়েছে তারা মসজিদটিতে।
মসজিদে প্রবেশের জন্য পূর্ব দিকে তিনটি উত্তর দিকে একটি এবং দক্ষিণ দিকে একটি দরজা ছিল। মসজিদটি প্রথম থেকেই অনেক আয়তাকার ছিল। মসজিদটি তৈরীর আদি পরিমাপ ছিল দৈর্ঘ্যে ৩৩ ফুটএবং প্রস্থে ১২ ফুট। গম্বুজ ছিল তিনটি এবং মাঝখানের গম্বুজটি আকারে ছিল অনেক বড়। ১৯৮৭ খ্রিস্টাব্দে মসজিদটির পুনরায় সংস্কার করা হয়। পুরনো একটি মেহরাব ভেঙ্গে দুটি গম্বুজ ও তিনটি মেহরাব বানানো হয়। বর্তমানে মসজিদের গম্বুজের সংখ্যা পাঁচটি। তারা মসজিদটির বর্তমান দৈর্ঘ্য ৭০ ফুট ও প্রস্থ ২৬ ফুট। এই মসজিদের দেয়াল গুলো চাঁদ, তারা, ফুল ও আরবি লিপি দ্বারা নকশা করা হয়েছে।
আল্লাকুরি মসজিদ
রাজধানী ঢাকার মোহাম্মদপুরের কাটাসুরে অবস্থিত মোঘল আমলের ঢাকার দর্শনীয় মসজিদ সমূহ এর একটি স্থাপত্য নির্দেশনা হচ্ছে আল্লাকুরি মসজিদ। ১৬৮০ সালে এই মসজিদটি প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। এই মসজিদটি এক গম্বুজ বিশিষ্ট বর্গাকার মোগল মসজিদ । এই মসজিদটির চার কোনায় অষ্টভুজ মিনার রয়েছে। তিনটি আধা অষ্টভুজাকৃতি খিলান যুক্ত মিহরাব রয়েছে পশ্চিম দিকের প্রাচীর টিতে। এই মসজিদটি অনেক ঘন হওয়ার ফলে অনেক গরমেও শীতল থাকে ।এই মসজিদের পূর্ব দিকের প্রবেশ পথের উপরে একটি পাথরের শিলালিপি ছিল। কথিত আছে যে ভাওয়ালের রাজা গত শতাব্দীতে এই পাথরটিকে নিয়ে গিয়েছিলেন। এই মসজিদটিতে একটি গম্বুজ রয়েছে যা অষ্টভুজাকার ড্রামে বহন করা হয়। এই মসজিদের গম্বুজটি আগে কলসফাইনাল মুকুটযুক্ত ছিল।
বিনত বিবির মসজিদ
বাংলাদেশের রাজধানী সবচেয়ে পুরাতন এবং ঢাকার দর্শনীয় মসজিদ সমূহ এর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে বিনত বিবির মসজিদ। এই মসজিদটি হচ্ছে মধ্যযুগের মসজিদ। এটি পুরান ঢাকার নারিন্দা এলাকায় অবস্থিত । ১৪৫৭ খ্রিস্টাব্দে এই মসজিদটিকে নির্মাণ করা হয়েছিল। সুলতান নাসির উদ্দিন মাহমুদ শাহের শাসন আমলে মারহাতামের কন্যা মোসাম্মাত বখত বিনত বিবি এই মসজিদটি নির্মাণ করেন। তার পরিপ্রেক্ষিতে এই মসজিদটি বিনত বিবির মসজিদ নামে পরিচিত। মসজিদটি কালের বিবর্তনে তার সৌন্দর্য হারালেও এটি ঢাকার প্রথম মসজিদ হিসেবে এর ঐতিহ্য মোটেও কমেনি। বিনত বিবি ও তার বাবার মাজার বিনত বিবি মসজিদের ১০ গজ দূরে অবস্থিত। দেশ-বিদেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে এখনো পর্যটকরা আসে এই মসজিদটিকে এক বার দেখার জন্য।
চকবাজার শাহী মসজিদ
এই মসজিদের মূল আকর্ষণ হচ্ছে তিন গম্বুজ আর বিশাল মিনার । এই মসজিদটি মোঘল আমলের মসজিদ এবং ঢাকার দর্শনীয় মসজিদ সমূহ এর একটি। এই মসজিদটি পুরান ঢাকার চকবাজারে অবস্থিত। ১৬৭৬ খ্রিস্টাব্দে মুঘল সুবেধার শায়েস্তা খান এই মসজিদটি কে নির্মাণ করেন। এই মসজিদের ধারণ ক্ষমতা প্রায় ১০ হাজার। এই মসজিদটিতে দুইটি বড় এবং আটটি ছোট মিনার রয়েছে। চকবাজার শাহী মসজিদ টিতে অনেক দূর-দূরান্ত থেকেও মানুষ আসে নামাজ পড়তে ও মসজিদের সৌন্দর্য দেখতে। সেখানকার স্থানীয় বাসিন্দারা এই মসজিদকে চক মসজিদ নামেও ডাকে। এই মসজিদটি ৪০০ বছরের পুরনো। ধাপে ধাপে কয়েক দফা সংস্কারের ফলে মসজিদটিকে নতুন মনে হয়। চকবাজারের পশ্চিম দিকে মসজিদটিকে নির্মাণ করা হয়। চকবাজারের শাহী মসজিদ কে কেন্দ্র করে চকবাজার উদ্বোধন করা হয় ও সম্প্রসারণ করা হয।
লালবাগ শাহী মসজিদ
মোঘল আমলের আরো একটি অন্যতম নিদর্শন হচ্ছে লালবাগ শাহী মসজিদ। ঢাকার অন্যান্য পুরনো মসজিদ গুলোর মধ্যে সবচেয়ে বড় হচ্ছে লালবাগ শাহী মসজিদ। এই মসজিদটি লালবাগ কেল্লার দক্ষিণ পূর্বদিকে অবস্থিত। ১৭০৩ সালে তৎকালীন ঢাকার উপ-শাসক সম্রাট আওরঙ্গজেবের প্রপৌত্র ফররুখ সিয়া এই মসজিদটি নির্মাণ করেন। তারপর ১৮৭০ সালে প্রথম লালবাগ শাহী মসজিদের নির্মাণ কাজ শুরু করা হয় খাজা আব্দুল গনির উদ্যোগে। ধাপে ধাপে কয়েক দফা সংস্কারের ফলে এটি যে পুরনো মসজিদ তা দেখলে কখনোই বুঝা যাবে না। এই মসজিদের ধারণক্ষমতা হচ্ছে প্রায় আট হাজার। একটি কমিটির মাধ্যমে মসজিদটি পরিচালিত হচ্ছে। ঢাকার দর্শনীয় মসজিদ সমূহ এর তালিকার এই মসজিদটি লালবাগে অবস্থিত হওয়ায় লালবাগ কেল্লা ঘুরতে এসে হাজার হাজার পর্যটক লালবাগ কেল্লা দেখার পরে এই মসজিদে ঘুরতে আসে ও নামাজ পড়তে আসে।
করতলব খান মসজিদ
পুরান ঢাকার বেগম বাজার এলাকায় এই মসজিদটি অবস্থিত। এই মসজিদটি ‘বেগম বাজার মসজিদ’ নামেও পরিচিত। ১৭০১-১৭০৪ খ্রিস্টাব্দে দেওয়ান মুর্শিদকুলি খান ওরফে করতলব খান এই মসজিদটি নির্মাণ করেন এবং উনার নামেই মসজিদটির নাম পরিচিত পায় করতলব খান মসজিদ হিসেবে।পাচঁ গম্বুজ বিশিষ্ট এই মসজিদটি একটি উচ্চ ভিত্তির উপর নির্মাণ করা হয় । এটি একটি প্রাচীন মসজিদ এবং ঢাকার দর্শনীয় মসজিদ সমূহ এর একটি। মসজিদটি আধুনিক কারাগরের পাশে অবস্থিত। স্থানীয়রা মসজিদটিকে বেগম বাজার মসজিদ নামে চিনেন। এই মসজিদটি মোঘল স্থাপত্যের আরো একটি নিদর্শন।
মুসা খান মসজিদ
মোঘল স্থাপত্যের অনুকরণে নির্মিত মুসা খান মসজিদটি বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকায় অবস্থিত। এই মসজিদটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এর শহীদুল্লাহ হল ছাত্রাবাসের নিকটে ও কার্জন হলের পিছনে অবস্থিত। ঢাকার মধ্যে বিনত বিবির মসজিদের পাশাপাশি প্রাক মোগলদের স্থাপত্যের আরো একটি নিদর্শন । আনুমানিক ১৬৭৯ সালে মুসা খান মসজিদটি নির্মিত হয়। এই মসজিদে রয়েছে তিনটি গম্বুজ। ধারণা করা হয় যে, ঈশা খার পুত্র মুসা খান এ মসজিদ টি নির্মাণ করেন। মসজিদটির খোপ নকশাকৃত সম্মুখ ভাগ, গম্বুজের নিচে উন্মুক্ত প্রবেশপথ, অষ্টকোণাকার পিপার উপর স্কন্দাকৃতির গম্বুজ এবং অতিরিক্ত মিনারসহ কোণার বুরুজগুলি তথাকথিত মুসা খান মসজিদটিকে নিকটবর্তী খাজা শাহবাজ খান মসজিদ এর (১৬৭৯ খ্রি) সাথে প্রায় সাদৃশ্যপূর্ণ বলে প্রতীয়মান করে। একারণে মসজিদটির নির্মাণকাল ঐ একই সময়ের ধরা যেতে পারে। এটি একটি প্রাচীন মসজিদ এবং ঢাকার দর্শনীয় মসজিদ সমূহ এর একটি।
হাজী শাহবাজ মসজিদ
হাজী শাহবাজ মসজিদ বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকার রমনা এলাকায় অবস্থিত ঢাকার দর্শনীয় মসজিদ সমূহ এর একটি প্রাচীন মসজিদ। এই মসজিদ টিকে ১৬৭৯ খ্রিস্টাব্দে নির্মাণ করেন হাজী শাহবাজ। হাজী শাহবাজ ছিলেন একজন অভিজাত ধনী ব্যবসায়ী। ওনার নামেই নামকরন করা হয় এই মসজিদের নাম হাজী শাহবাজ। এই মসজিদটির দৈর্ঘ্য ৬৮ ফুট ও প্রস্থে ২৬ ফুট। এই মসজিদটিতে তিনটি গম্বুজ রয়েছে। ১৯৭৯ সালে হাজী শাহবাজ জীবিত থাকাকালেই এই মসজিদটিকে ও নিজের মাজার নির্মাণ করে যান। উত্তর ভারতীয় মোগল রীতি লক্ষ্য করা যায় মসজিদ ভবনটির স্থাপত্যে।এই মসজিদের দেয়ালের পুরুত্ব প্রায় ১.২২ মিটার । আড়াআড়িভাবে স্থাপিত খিলানগুলোর ভার-বহনকারী জোড়া-স্তম্ভ ও মিহরাব খিলানের খিলান গর্ভের বর্শা ফলক নকশা এ মসজিদকে বিশেষ বৈশিষ্ট্য দিতে সক্ষম হয়েছে। কেননা, জোড়া-স্তম্ভ ও বহু-খাঁজ সংবলিত খিলান উত্তর-ভারতীয় মোগল স্থাপত্যরীতিতে দৃশ্যমান। আর এখানে তাদের কেই অনুকরণ করা হয়েছে সেটা বলার আর প্রয়োজন পড়ে না।
কসাইটুলি জামে মসজিদ
রাজধানীর পুরান ঢাকার কসাইটুলির পিকে ঘোষ রোডে শতবর্ষী কসাইটুলি জামে মসজিদটি অবস্থিত। ১৯০৭ সালে আব্দুল বারী নামে এক ব্যবসায়ী মসজিদ টিকে নির্মাণ করেন। এই মসজিদ টি ৫ কাঠা জায়গার মধ্যে অবস্থিত। এই মসজিদে ছয়টি ছোট ও দুটি জোড়া পিলারের গম্বুজ রয়েছে। গম্বুজ গুলোর উচ্চতা হচ্ছে 5 থেকে 12 ফুট। কসাইটুলি জামে মসজিদের মূল বৈশিষ্ট্য হল ‘চিনিটিকরির কারুকাজ’। এই মসজিদটি স্থানীয়ভাবে ‘চিনির টুকরো’ মসজিদ নামে পরিচিত।স্থানীয় বাসিন্দারা মসজিদ টিকে ‘চিনির টুকরো’ মসজিদ নামে ডাকে। এর কারণ হলো এই মসজিদের গায়ে চিনামাটির সাদা টুকরো গুলো চিনির দানার মত দেখতে। কসাইটুলি এলাকায় গেলে সালাত আদায় করতে ভূলবেন না ঢাকার দর্শনীয় মসজিদ সমূহ এর মধ্যে অন্যতম এই মসজিদটিতে।
খান মোহাম্মদ মৃধা মসজিদ
খান মোহাম্মদ মৃধা মসজিদ বাংলাদেশের রাজধানীর পুরান ঢাকার লালবাগের আতসখানায় অবস্থিত প্রাচীন একটি মসজিদ। এই মসজিদটি প্রায় ৩০০ বছর আগের। ১৭০৫ সালে এই মসজিদটি প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল। ইতিহাসবিদ মুনতাসির মামুনের তথ্য মতে, নায়েবে নাজিম ফররুখ শিয়রের আমলে ঢাকার কাজী খান এবাদউল্লাহর নির্দেশে খান মোহাম্মদ মৃধা এই মসজিদ টি নির্মাণ করেন। এই মসজিদটি দোতলা বিশিষ্ট অন্যান্য মসজিদ থেকে ভিন্ন। এই মসজিদে তিনটি বড় গম্বুজ ও অল্প কিছু লম্বা মিনার রয়েছে। এই মসজিদের উত্তর থেকে দক্ষিনে দৈর্ঘ্য ৩৮.১০ পূর্ব থেকে পশ্চিমের দৈর্ঘ্য ২৮.১৬ মিটার। বর্তমানে ঢাকার দর্শনীয় মসজিদ সমূহ এর মধ্যে অন্যতম আকর্ষন এই মসজিদটি।
সাত গম্বুজ মসজিদ
সাত গম্বুজ মসজিদ টি ঢাকার মোহাম্মদপুরে অবস্থিত। এটি মোঘল আমলের নির্মাণকৃত ঢাকার দর্শনীয় মসজিদ সমূহ এর অন্যতম একটি নিদর্শন। ১৬৮০ সালে এই মসজিদটি নির্মাণ করেন মোগল সুবাদার শায়েস্তা খাঁর আমলে তার পুত্র উমিদ খাঁ। এই মসজিদটিতে রয়েছে চারটি মিনার সহ সাতটি গম্বুজ। এজন্য এই মসজিদের নাম দেওয়া হয়েছে সাত গম্বুজ মসজিদ। এই মসজিদের ভিতরে একসাথে ৯০ জন নামাজ পরার মত স্থান রয়েছে। মসজিদের আয়তাকার নামাজ কোঠার বাইরের দিকে পরিমাণ দৈর্ঘ্যে ১৭.৬৮ এবং প্রস্থে ৮.২৩ মিটার । দূর থেকে মসজিদ টিকে দেখতে অনেক সুন্দর দেখায়।
কাকরাইল মসজিদ
রাজধানী ঢাকার কাকরাইল এলাকায় রামনা পার্কের পাশে অবস্থিত এই মসজিদটি। এটি বাংলাদেশের তাবলীগ জামাতের প্রধান কেন্দ্র। জামাতের কেন্দ্র হিসেবে ১৯৫২ সালে মসজিদটি নির্ধারিত হয়। কাকরাইল মসজিদের আদি নাম ছিল মালওয়ালি মসজিদ। অনেকের ধারনামতে এই মসজিদটি ৩০০ বছর আগে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। আবার কেউ কেউ বলে রমনা পার্কের মালিগন ৪০ এর দশকের ছোট একটি মসজিদ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন।বর্তমানে মসজিদটি যে স্থানে অবস্থিত সেই স্থানে পূর্বে নবাব পরিবারের একটি মসজিদ ছিল। নবাব পরিবারের মসজিদের এখন আর কোন চিহ্ন নেই। বর্তমানে হাজী আব্দুল মুকিতের নকশায় এই মসজিদ টিকে নির্মাণ করা হয়েছে। ত্রিভুজ আকৃতিতে কারুকাজ হয়েছে কাকরাইল মসজিদে। ঢাকার দর্শনীয় মসজিদ সমূহ এর মধ্যে এই মসজিদটিও একটি বিশেষ আকর্ষন।
FAQ’s
ঢাকাকে মসজিদের শহর বলা হয় কেন?
মুঘল আমল থেকেই ঢাকায় নান্দনিক মসজিদের সংখ্যাধিক্য ছিলো। উনিশ শতকে মসজিদ নির্মান কম হলেও, পাকিস্তানি আমল থেকে পূনরায় মসজিদের নির্মানের সংখ্যা বেড়ে যায়। এখানে বাংলাদেশের সকল জেলা থেকে বেশি মসজিদ তাই ঢাকাকে মসজিদের শহর বলা হয়।
ঢাকায় কতগুলো মসজিদ আছে?
বর্তমানে ঢাকার মসজিদের সংখ্যা প্র্যায় ৫,৭৭৬ টি এবং এ সংখ্যা প্রতিনিয়তই বাড়ছে।
ঢাকার সবচেয়ে পুরাতন মসজিদ কোনটি?
ঢাকা শহরের পুরান ঢাকা এলাকায় অবস্থিত বিনত বিবির মসজিদ বাংলাদেশের একটি মধ্যযুগীয় মসজিদ। ১৪৫৭ খ্রিষ্টাব্দে সুলতান নাসিরুদ্দিন মাহমুদ শাহের শাসন আমলে তার মেয়ে মোছাম্মৎ বখত বিনত বিবি এটি নির্মাণ করান।