মুসলিম সন্তানদের ছোট বেলা থেকে তাদের পিতা-মাতা দোয়া মাসুরা সহ ইসলামে বিভিন্ন রুকন-আহকাম শিখাতে ব্যস্থ থাকেন। পাশাপাশি নামায শিক্ষা, কুরআন শিক্ষা, ইসলামী নিয়ন-নীতি, রমযানের রোযা কিভাবে রাখতে হয়, যানাযার নামায, পর্দা করা, শালীনতা শিক্ষা, আদব-কায়দা, ভদ্রতার পাশাপাশি দৈন্দন্দিন জীবনের সকল দোয়া-দুরুদ শিক্ষা দিয়ে থাকেন।
এসব শিক্ষার জন্য পারিবারিক শিক্ষা অথবা মক্তবে পাটিয়ে শিক্ষা, আবার কেউ কেউ হুজুর নিয়োগ করে এসব শিক্ষা দিয়ে থাকেন। মুসলমান ছেলে মেয়ে, ছোট বড় সকলের ইসলামী জ্ঞান অর্জন করা ফরয। আমাদের নবী করিম (সা:) বলেছেন জ্ঞান অর্জনের জন্য সুদূর চিন দেশে গিয়ে হলেও শিক্ষা অর্জন করতে হবে। (আল হাদিস)
আমাদের আজকের আলোচনার বিষয় হলো মাসনুন দোয়া সমূহের একটি দোয়া, দোয়ায়ে মাসুরা নিয়ে।
প্রসিদ্ধ দোয়া মাসুরা
আমরা সাধারণত যে দোয়া পড়ি, তা সবচেয়ে প্রসিদ্ধ। হযরত আবু বকর (রা.)- এর আবেদনের প্রেক্ষিতে হযরত নবী করিম (সা.) হযরত আবু বকর (রা:) কে এই দোয়া শিখিয়ে ছিলেন। হাদিস শরিফে এসেছে, আবু বকর (রা.) রাসুল (সা.) কাছে আবেদন করলেন হে আল্লাহর রাসূল (সা:)- আমাকে একটি দোয়া শিখিয়ে দিন, যা আমি নামাজে পড়ব। আল্লাহর রাসুল (সা.) বললেন, এই দোয়া পড়ো-
দোয়া মাসুরা- আরবি ও বাংলা অনুবাদ সহ
আরবি
اللهم إني ظلمت نفسي ظلما كثيرا ولا يغفر الذنوب إلا أنت فاغفرلي مغفرة من عندك وارحمني إنك أنت الغفور الرحيم
বাংলা উচ্চারণ : আল্লাহুম্মা ইন্নি জালামতু নাফসি জুলমান কাসিরা । ওয়ালা ইয়াগ ফিরুজ জুনুবা ইল্লা আনতা। ফাগফির লি, মাগফিরাতাম মিন ইনদিকা; ওয়ার হামনি, ইন্নাকা আনতাল গাফুরুর রাহিম।
বাংলা অর্থ : হে আল্লাহ! আমি নিজের উপর অনেক জুলুম করেছি। আর আপনি ছাড়া গুনাহ ক্ষমাকারী আর কেউ নেই। আপনি নিজ অনুগ্রহে আমাকে ক্ষমা করুন এবং আমার প্রতি রহম করুন। নিঃসন্দেহে আপনিই ক্ষমাকারী, করুণাময়। (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৮৩৪; সহিহ মুসলিম, হাদিস : ২৭০৫)
দোয়া পড়ার নিয়ম
দোয়া মাসুরাটি আমরা নামাযের শেষবৈঠকে বসে আত্তাহিয়াত, দুরুদে ইব্রাহিম পড়ার পর দোয়াটি পড়তে হয় । নামাযের সকল কার্যক্রম শেষ করে যেমন নামাযের নিয়ত করে হাত বাঁধার পর সানা (সুবাহাকাল্লাহুম্মা) পড়ে সূরা ফাতিহার সাথে অন্য যেকোন সূরা মিলিয়ে পড়তে হয় ।
এরপর রুকুতে গিয়ে রুকুর তাসবিহ “সুবহা-না রব্বিয়াল আ`যিম” ৩/৫/৭ পড়ে তারপর রুকু থেকে ছামিআল্লাহ হুলিমান হামিদাহ বলে উঠে সোজা হয়ে দাড়িয়ে “রাব্বানা লাকাল হামদ” পড়তে হয়। তারপর সিজদায় যেতে হয়, সেজদা র তাসবিহ “সুবহা-না রব্বিয়াল আ‘লা” পড়তে হয় । এভাবে দুই সেজদার পর শেষ বৈঠকে বসে আত্তাহিয়াত, দুরুদে ইব্রাহিম পড়ার পর দোয়া মাসুরাটি পড়ে উভয় দিকে সালাম ফিরিয়ে নামায শেষ করতে হয়।
নামাযের ক্ষেত্রে নিম্নোক্ত দোয়া মাসুরারটি বেশি প্রসিদ্ধ – ‘আল্লাহুম্মা ইন্নি জালামতু নাফসি……………….’ এই দোয়াটি। ফলে আমাদের মধ্যে অনেকেই মনে করেন দোয়া মাসুরা বলতে শুধু এটিই। এটি ছাড়া অন্য কোনো দোয়া পড়লে নামায হবে না। আসলে বিষয়টি এমন নয়; বরং এক্ষেত্রে কোরআন ও হাদিসে বর্ণিত যেকোনো দোয়া-ই পড়া যায়। এতে সুন্নত আদায় হয়ে যাবে।
দোয়া মাসুরা পাঠের ফজিলত
মাসুরা দোয়া পাঠের অকেন ফজিলত রয়েছে। অনেকে মোনাজাতে এই দোয়া পাঠ করে আমরা আল্লাহর সাহায্য চেয়ে থাকি। আল্লাহ নিকট তাওবা করার সময় এই দোয়া পাঠের মাধ্যেমে তাওবা করলে আল্লাহ আমাদের ক্ষমা করে দিবেন। তাই মুসলিম সমাজের সকলের এই দোয়া মুখস্ত করা একান্ত কর্তব্য।
প্রয়োজনীয় কয়েকটি দোয়া
খাবার খাওয়ার দোয়া ও সুন্নত। খাবারের আগে ও পরে দোয়া
দ্রুত বিবাহের দোয়া ও আমল। তাড়াতাড়ি বিয়ে হওয়ার আমল
আয়াতুল কুরসি- আরবী উচ্চারণ ও বাংলা অর্থসহ
ইফতারের দোয়া- তারাবির নামাযের দোয়া ও নিয়ত
দৈনন্দিন জীবনের দোয়া ও সুন্নাতসমূহ
দোয়া কুনুত – আরবি উচ্চারণ ও বাংলা অর্থসহ
আল্লাহ তা’য়ালা সকলকে ইসলামের পরিপূর্ণ জ্ঞান দান করার মধ্যে দিয়ে ইসলামের রুকন- আহকাম সহ সকল কার্যাবলী মেনে চলার তৌফিক দান করুন। দোয়া মাসুরা পাঠে কেউ উপকৃত হলে আমাদের লিখনি স্বার্থকতা পাবে। আমিন