নতুন ই পাসপোর্ট করতে চাচ্ছেন? তাহলে জেনে নিন অনলাইনে ই পাসপোর্ট করার নিয়ম ও কি কি লাগে, কত টাকা লাগে ও পুলিশ ভেরিফিকেশন করা উপায়।
সাধারণত আমরা যখন নতুন পাসপোর্ট করতে চাই, তখন পাসপোর্টের আবেদন প্রক্রিয়া সম্পর্কে আমাদের পরিপূর্ণ ধারণা থাকে না। আমাদের এই অজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে বিভিন্ন দালালরা বেশি খরচে পাসপোর্ট করে দেওয়ার কথা বলে। তবে নিজে নিজে ই-পাসপোর্ট করার নিয়মে আবেদন করলে প্রায় অর্ধেক খরচেই আপনার পাসপোর্ট হাতে পেতে পারেন।
তাই আপনাদের সুবিধার্থে, অনলাইনে ই পাসপোর্ট আবেদন করার নিয়ম, পাসপোর্ট করতে যা যা লাগে, খরচ, এ সংক্রান্ত যাবতীয় সকল তথ্য তুলে ধরা হয়েছে এই লেখাতে।
ই পাসপোর্ট করার নিয়ম ২০২৪
ই পাসপোর্ট করার নিয়ম হলো, সর্বপ্রথম epassport.gov.bd ওয়েবসাইটে ভিজিট করে পাসপোর্ট অফিস ও থানা সিলেক্ট করুন। তারপর একাউন্ট রেজিস্টার করে সাইন ইন করে ‘Apply for a new passport’ লেখাতে ক্লিক করুন। এবার ব্যক্তিগত তথ্য,পিতা-মাতার তথ্য ও পাসপোর্ট সম্পর্কিত অন্যান্য তথ্য দিয়ে আবেদন সাবমিট করুন। আবেদনের কপি ডাউনলোড করে ও এ-চালানের পাসপোর্ট ফি পরিশোধ করুন। সর্বশেষে, প্রয়োজনীয় কাগজপত্রসহ আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসে বায়োমেট্রিক জমা দিন।
ব্যাস, কিছুদিন পর আপনার সাথে পুলিশ ভেরিফিকেশনের জন্য যোগাযোগ করা হবে। ভেরিফিকেশন সম্পন্ন হলে পাসপোর্ট প্রিন্ট করে আঞ্চলিক অফিসে রাখা হবে। সেখান থেকে পাসপোর্ট ডেলিভারি স্লিপ ও ফিঙ্গারপ্রিন্ট দিয়ে আপনার পাসপোর্টটি হাতে পাবেন।
ই পাসপোর্ট করার প্রয়োজনীয় কাগজপত্র
- NID Card/ অনলাইন জন্ম নিবন্ধন সনদ।
- Application Summary এর প্রিন্টেড কপি।
- ই পাসপোর্ট অনলাইন আবেদনের কপি।
- পাসপোর্ট ফি পরিশোধের চালান কপি।
- পূর্ববর্তী কোন পাসপোর্ট থাকলে তার ফটোকপি।
- পেশাজীবী হলে পেশাগত সনদের ফটোকপি।
এছাড়াও অনলাইনে আবেদনের সময় আবেদনকারীর পিতা/ মাতার NID Card প্রয়োজন হয়। আবার পাসপোর্ট আবেদনের পর পুলিশ ভেরিফিকেশন করতে ইউটিলিটি বিলের কপি/ চেয়ারম্যান সার্টিফিকেটের দরকার হয়।
অনলাইনে ই পাসপোর্ট আবেদন করার নিয়ম
ই পাসপোর্ট অনলাইন রেজিস্ট্রেশন পোর্টালে ই পাসপোর্টের জন্য অনলাইনে আবেদন করতে পারবেন। আপনি বাংলাদেশের নাগরিক হলে এবং আপনার জাতীয় পরিচয়পত্র ও জন্ম নিবন্ধন থাকলে নিজে নিজেই অনলাইনে আবেদন করতে পারবেন।
অনলাইনে ই পাসপোর্টের আবেদন ফরম পূরণ করার বিস্তারিত প্রক্রিয়াটি নিচে ছবিসহ ধাপে ধাপে দেখানো হলোঃ
ধাপ ১: e-Passport.gov.bd পোর্টালে প্রবেশ
ই পাসপোর্ট আবেদন করার জন্য, প্রথমেই ভিজিট করুন এই লিংকে- https://www.epassport.gov.bd/। এখান থেকে Apply Online অপশনে ক্লিক করে পরবর্তী পেজে যান।
ধাপ ২: আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিস ও থানা সিলেক্ট করুন
এই ধাপে, আপনি বাংলাদেশ থেকে ই পাসপোর্টের জন্য আবেদন করতে চাইলে, ‘Are you applying from Bangladesh’ অপশনে ‘Yes’ সিলেক্ট করুন। তারপর ১ম ঘরে আপনার জেলা ও ২য় ঘরে নিকটস্থ পুলিশ স্টেশন সিলেক্ট করে Continue লেখাতে ক্লিক করুন।
ধাপ ৩: ইমেইল এড্রেস লিখুন
ই পাসপোর্ট আবেদনের জন্য এই অনলাইন পোর্টালে আপনার একটি একাউন্ট খুলতে হবে। একাউন্ট খোলার জন্য আপনার একটি ইমেইল এড্রেস দিন। তারপর ক্যাপচা পূরণ করে Continue লেখাতে ক্লিক করুন।
ধাপ ৪: একাউন্ট রেজিস্টার করুন
এই ধাপে, আপনার ইমেইল এড্রেসটি দেখাবে। এর নিচের ঘরে, একটি পাসওয়ার্ড লিখুন এবং তা পূনরায় লিখে কনফার্ম করুন। তারপর আবেদনকারীর Given name ও Surname লিখুন। এবার বাংলাদেশের কান্ট্রি কোড সিলেক্ট করে আপনার মোবাইল নাম্বার লিখুন।
সর্বশেষে, ক্যাপচা পূরণ করে ‘Create Account’ লেখাতে ক্লিক করুন। তারপর আপনার ইমেইলে একটি লিংক পাঠানো হবে। সেটিতে ক্লিক করে একাউন্ট খোলা সম্পন্ন করুন।
ধাপ ৫: একাউন্টে লগইন করুন
এবার, আপনার একাউন্টে লগইন করতে, লগইন পেইজে গিয়ে ইমেইল এড্রেস ও পাসওয়ার্ড দিয়ে সাইন ইন করুন। তারপর Apply Online অপশন থেকে ‘Apply for a new passport’ লেখাতে ক্লিক করে দিন।
ধাপ ৬: পাসপোর্ট টাইপ সিলেক্ট করুন
এই ধাপে, আপনি কি ধরনের পাসপোর্ট চাচ্ছেন, সেই পাসপোর্ট টাইপ সিলেক্ট করুন। এখানে Ordinary Passport ও Official Passport অপশন থাকবে। সাধারণ পাসপোর্ট করতে Ordinary পাসস্পরত নির্বাচন করে Save and Continue লেখাতে ক্লিক করুন।
ধাপ ৭: ব্যক্তিগত তথ্য দিন
এই ধাপে, আবেদনকারীর ব্যক্তিগত তথ্য দিতে হবে। নিজের জন্য আবেদন করলে উপরের ‘I apply for myself’ -লেখার পাশের বক্সে ক্লিক করুন। এখানে আবেদনকারীর নাম, ধর্ম, পেশা, লিঙ্গ ও মোবাইল নাম্বার লিখুন। তারপর Birth Data অপশনে জন্মস্থান/ দেশের নাম, জেলা ও জন্ম তারিখ সিলেক্ট করুন।
জন্মসূত্রে বাংলাদেশী হলে Citizenship Information এর ঘরে ‘By Birth’ সিলেক্ট করে Save and Continue ক্লিক করুন।
ধাপ ৮: ঠিকানার তথ্য দিন
এই ধাপে, প্রথমে আবেদনকারীর জাতীয় পরিচয়পত্র অনুযায়ী স্থায়ী ঠিকানার তথ্য লিখুন। তারপর আপনার নিকটস্থ Police Station সিলেক্ট করুন। স্থায়ী ঠিকানা ও বর্তমান ঠিকানা একই হলে নিচের বক্সে টিক দিয়ে Save and Continue ক্লিক করুন।
ধাপ ৯: ID Documents
এখানে আপনার পূর্ববর্তী কোন MRP/ ePP পাসপোর্ট থাকলে, তার তথ্য দিতে হবে। আগে কোন পাসপোর্ট না করে থাকলে, ৩য় অপশনটি সিলেক্ট করুন। তারপর নিচের Identification Information অপশনে আপনার জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর/ অনলাইন জন্ম নিবন্ধন নম্বর দিয়ে save and continue তে ক্লিক করুন।
ধাপ ১০: পিতা-মাতার তথ্য দিন
এখানে আবেদনকারীর পিতা-মাতার তথ্য পূরণ করতে হবে। যেমন- আবেদনকারীর পিতা-মাতার সম্পূর্ণ নাম, পেশা, জাতীয়তা ও জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর লিখুন। পিতা-মাতা মৃত্যুবরণ করলে Father Information/ Mother Information লেখার পাশে Unknown বক্সে টিক দিতে হবে। তারপর অভিভাবকের তথ্য দিয়ে Save and Continue লেখাতে ক্লিক করুন।
ধাপ ১১: বৈবাহিক অবস্থার তথ্য দিন
এই ধাপে, বৈবাহিক অবস্থার ঘরে Single, Married, Divorced, Windower, Widow এই অপশন গুলো থেকে আপনার বৈবাহিক অবস্থা অনুসারে একটি বাছাই করুন।
ধাপ ১২: জরুরী যোগাযোগের তথ্য দিন
এখানে পাসপোর্ট সম্পর্কিত জরুরি প্রয়োজনে যোগাযোগের জন্য আপনার নিকটস্থ একজনের তথ্য দিতে হবে। যেমন- বাবা/ মা বা ভাইয়ের ঠিকানা ও মোবাইল নাম্বার।
ধাপ ১২: Passport Option সিলেক্ট করুন
এই ধাপে আপনার পাসপোর্টের পৃষ্ঠা সংখ্যা ও মেয়াদ বাছাই করুন। এখানে পাসপোর্টের পৃষ্ঠা সংখ্যা ৪৮ নাকি ৬৪ পৃষ্ঠার হবে, তা সিলেক্ট করে Save and Continue ক্লিক করুন। তারপর পাসপোর্টের মেয়াদকাল ৫ বছর নাকি ১০ বছর মেয়াদী হবে, তা সিলেক্ট করুন। এগুলোর উপর ভিত্তি করেই আপনার পাসপোর্ট ফি এর পরিমাণ দেখতে পাবেন। তারপর Save and Continue লেখাতে ক্লিক করুন।
ধাপ ১৩: Passport Delivery Option সিলেক্ট করুন
এই ধাপে, পাসপোর্ট ডেলিভারির ২টি অপশন দেখাবে। যথা: Regular Delivery ও Express Delivery। রেগুলার ডেলিভারির ক্ষেত্রে ২১ কার্যদিবস সময় নেওয়া হয়। এক্সপ্রেস ডেলিভারির ক্ষেত্রে ৭-১০ কার্যদিবস সময় নেওয়া হয়। যাদের অল্প সময়ের মধ্যে পাসপোর্ট প্রয়োজন, তারা এই অপশনটি সিলেক্ট করতে পারেন।
এছাড়াও সরাসরি পাসপোর্ট অফিস থেকে Super Express Delivery -এর জন্য আবেদন করতে পারবেন। সেক্ষেত্রে ৭ দিনের কম সময়ে, ক্ষেত্রবিশেষে ৩-৪ দিনেই পাসপোর্ট সংগ্রহ করতে পারবেন।
ধাপ ১৪: আবেদন সাবমিট করুন
এবার, আপনার আবেদনের সকল তথ্য রিভিউ এর জন্য দেখানো হবে। এখান থেকে সকক তথ্য ঠিক আছে কিনা যাচাই করে নিবেন। কারন পরবর্তীতে তা সংশোধন করা জটিল। সকক তথ্য ঠিক থাকলে আবেদন পত্রটি Submit করুন।
পরবর্তী অপশনে পেমেন্টের পদ্ধতি আসবে। এক্ষেত্রে আপনি চাইলে অফলাইনে বা অনলাইনে ই পাসপোর্ট আবেদন ফি জমা দিতে পারবেন। অনলাইনে ই পাসপোর্ট আবেদন ফি দিতে পেমেন্ট অপশন থেকে যেকোন মোবাইল ব্যাংকিং, ই-ওয়ালেট, ইন্টারনেট ব্যাংকিং অথবা কার্ডের মাধ্যমে পেমেন্ট করতে পারবেন। অনলাইন পেমেন্ট পরিশোধের পেমেন্ট স্লিপটি ডাউনলোড করে প্রিন্ট করে নিন।
আরও পড়ুন: এনা বাস কাউন্টার নাম্বার ও ভাড়ার তালিকা
অনলাইনে পাসপোর্ট ফি জমা দিতে না চাইলে এখান থেকে আবেদনটি সাবমিটের পর Print Summary অপশন থেকে আবেদন পত্রের সংক্ষিপ্ত পৃষ্ঠাটি এবং A Chalan এর মাধ্যমে ফি পরিশোধ করার জন্য একটি পেমেন্ট ফরম প্রিন্ট করে নিন।
ধাপ ১৫: পাসপোর্ট আবেদন ফরম ডাউনলোড করুন
পাসপোর্ট আবেদন করতে আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসে অনলাইনে আবেদনের কপি জমা দিতে হয়। তাই আবেদন সাবমিট করার পর আবেদন ফরম ডাউনলোড এর অপশন আসলে Ctrl + P একসাথে চেপে প্রিন্ট বা ডাউনলোড করে নিন।
আঞ্চলিক নির্বাচন অফিসে ডকুমেন্টস ও বায়োমেট্রিক প্রদান
অনলাইনে ই পাসপোর্ট করার নিয়মে আবেদন করার পর আপনার আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসে গিয়ে বায়োমেট্রিক দিতে হয়। অনলাইনে আবেদনের পরে আবেদনের প্রিন্ট কপি, Application Summary, চালানের কপি, NID card এর কপি, পেশা সনদ ইত্যাদি সাথে নিয়ে আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসে যান।
সেখানে আপনার তথ্যাদি যাচাই করার পর বায়োমেট্রিকের জন্য ছবি, ফিঙ্গারপ্রিন্ট ও চোখের রেটিনা স্ক্যান করে রাখা হবে। তারপর একটি অ্যাপ্লিকেশন স্লিপ দিবে।
ই পাসপোর্টের পুলিশ ভেরিফিকেশন
অনলাইনে ই পাসপোর্ট করার নিয়মে বায়োমেট্রিক সম্পন্ন করার কিছুদিন পর পুলিশ ভেরিফিকেশন করতে হয়। পুলিশ ভেরিফিকেশনের জন্য আপনার দেওয়া মোবাইল নাম্বারে যোগাযোগ করা হবে। তারপর আপনার নির্ধারিত পুলিশ স্টেশনে বাংলাদেশ গোয়েন্দা বিভাগের সদস্য আসবে। সেখানে নাগরিকত্ব সনদ, এন আইডি কার্ডের কপি ও বিদ্যুৎ বিলের কপি জমা দিতে হবে।
তারপর অনলাইনে ই পাসপোর্ট স্ট্যাটাস চেক করে আপনার পাসপোর্টটি হয়েছে কিনা জেনে নিবেন। এবং পাসপোর্ট তৈরি হয়ে গেলে তা সংগ্রহ করতে পারবেন।
ই পাসপোর্ট করতে কত টাকা লাগে
ই পাসপোর্ট ফি এর পরিমাণ নির্ভর করে পাসপোর্টের মেয়াদকাল, পৃষ্ঠা সংখ্যা ও পাসপোর্ট ডেলিভারির ধরনের উপর। এক্ষেত্রে নির্ধারিত পাসপোর্ট ফি হলো:
পাসপোর্টের মেয়াদ | পাসপোর্টের পাতার সংখ্যা | পাসপোর্ট ডেলিভারির ধরন | ||
সাধারণ (Regular) | জরুরি (Express) | অতি জরুরী (Super Express) | ||
৫ বছর | ৪৮ পাতা | ৪,০২৫ | ৬,৩২৫ | ৮,৬২৫ |
৬৪ পাতা | ৬,৩২৫ | ৮,৬২৫ | ১২,০৭৫ | |
১০ বছর | ৪৮ পাতা | ৫৭৫০ | ৮০৫০ | ১০৩৫০ |
৬৪ পাতা | ৮০৫০ | ১০৩৫০ | ১৩৮০০ |
শেষকথা
অনলাইনে ই পাসপোর্ট করার নিয়ম টি অনুসরণ করে আপনার পাসপোর্টের আবেদন নিজেই সম্পন্ন করতে পারবেন। তারপর অনলাইনে পাসপোর্ট স্ট্যাটাস চেক করে, আপনার পাসপোর্টটি সম্পন্ন হলে সরাসরি পাসপোর্ট অফিসে উপস্থিত হয়ে, ডেলিভারি স্লিপ ও ফিঙ্গারপ্রিন্ট দিয়ে সংগ্রহ করতে পারবেন।