বিয়ে হলো আল্লাহর পক্ষ থেকে নির্ধারিত একটি বিধান। তবে বর্তমানে সামাজিক মূল্যবোধ বিচার বিবেচনা, প্রতিষ্ঠিত হওয়া ইত্যাদিকে কেন্দ্র করে যুবক-যুবতীদের সঠিক সময় বিয়ে হয় না। যার কারণে সমাজের অশ্লীলতা ছড়িয়ে পড়েছে, এবং অনেকেই একাকিত্বে ভোগে। তাই দ্রুত বিবাহের দোয়া ও আমল করে আল্লাহর কাছে সাহায্য চাইতে হবে।
পবিত্র কোরআনে বর্ণিত রয়েছে- “আর তাঁর (আল্লাহ) নিদর্শনাবলির মধ্যে রয়েছে যে তিনি তোমাদের জন্য তোমাদের থেকেই স্ত্রীগন সৃষ্টি করেছেন, যাতে তোমরা তাদের কাছ থেকে প্রশান্তি পাও। আর তিনি তোমাদের মধ্যে ভালোবাসা ও মায়া সৃষ্টি করেছেন।” (সুরা রুম, আয়াত-২১)
অনেকে পছন্দ মত পাতার/পাত্রী পাচ্ছেনা। আবার কারো সামর্থ্য না থাকায় বিয়ে হচ্ছে না। কিন্তু বিয়ে করা ক্ষেত্রভেদে ব্যক্তির জন্য ফরজ কখনো বা সুন্নত। তাই দ্রুত বিবাহের দোয়া ও আমল বা তাড়াতাড়ি বিয়ে হওয়ার আমল এগুলো নিচে তুলে ধরা হলো-
দ্রুত বিবাহের দোয়া
আল্লাহর প্রিয় বান্দাদের অন্যতম একটি গুণাবলী হলো- তারা পূর্ণবান স্ত্রী ও সন্তানের জন্য দোয়া করেন। পবিত্র কোরআনে দ্রুত বিবাহের দোয়া ও আমলের শিক্ষা দেওয়া হয়েছে। তাড়াতাড়ি বিয়ে হওয়ার দোয়াটি বেশি বেশি পাঠ করতে হবে। পাশাপাশি ফরজ সালাতের পর ও সালাতুল হাজত আদায় করে কোরআনে বর্ণিত এই দোয়াটি পড়তে পারেন। দোয়ার আয়াতটি হলো-
আরবি: ﺭَﺑَّﻨَﺎ ﻫَﺐْ ﻟَﻨَﺎ ﻣِﻦْ ﺃَﺯْﻭَﺍﺟِﻨَﺎ ﻭَﺫُﺭِّﻳَّﺎﺗِﻦَﺍ ﻗُﺮَّﺓَ ﺃَﻋْﻴُﻦٍ ﻭَﺍﺟْﻌَﻠْﻨَﺎ ﻟِﻠْﻤُﺘَّﻘِﻴﻦَ ﺇِﻣَﺎﻣًﺎ
বাংলা উচ্চারণ: “রাব্বানা হাব-লানা মিন আজওয়া-জিনা ওয়া যুররিয়্যা-তিনা, কুররাতা আ‘ইয়্যুনিওঁ, ওয়াজ’ আলনা-লিল মুত্তাকিনা ইমা-মা।”
বাংলা অর্থ: “হে আমাদের রব, আমাদেরকে চক্ষু শীতলকারী স্ত্রী ও সন্তান দান কর এবং আমাদের আল্লাহভীরুদের জন্য আদর্শস্বরূপ করো।” (সুরা ফুরকান, আয়াত- ৭৪)
পবিত্র কোরআনে বর্ণিত হযরত মুসা (আঃ) এর দোয়া। দ্রুত বিবাহের দোয়া
পবিত্র কোরআনে হযরত মুসা (আঃ) – এর সম্পর্কে বহু আয়াত নাযিল হয়েছে। সেখানে মুসা (আঃ) – এর একটি দোয়া বর্ণিত রয়েছে। যে দোয়া পাঠ করার কারণে আল্লাহ তায়ালা মুসা (আঃ) – এর রিজিক ও আশ্রয়ের ব্যবস্থার পাশাপাশি উত্তম জীবনসঙ্গিনীরও ব্যবস্থা করে দিয়েছেন। কোরআনে বর্ণিত সেই দোয়াটি হলো-
আরবি: ﺭَﺏِّ ﺇِﻧِّﻲ ﻟِﻤَﺎ ﺃَﻧْﺰَﻟْﺖَ ﺇِﻟَﻲَّ ﻣِﻦْ ﺧَﻴْﺮٍ ﻓَﻘِﻴﺮٌ
বাংলা উচ্চারণ: “রাব্বি ইন্নি’ লিমা আনজাল্-তা ইলাইয়া মিন খাইরিন ফাকি’র।”
বাংলা অর্থ: “হে আমার রব! তুমি আমার প্রতি যে অনুগ্রহ পাঠাবে, আমি তার মুখাপেক্ষী।” (সুরা আল-কাসাস, আয়াত-২৪)
আরও পড়ুন: কুরআনে রোগ মুক্তির দোয়া
সুরা তাওবার শেষ আয়াত তেলাওয়াত করা
দ্রুত বিবাহের দোয়া ও আমলসহ আল্লাহর যেকোন সাহায্য পাওয়ার জন্য সূরা তাওবার শেষ আয়াতটি অনেক বেশি ফজিলতপূর্ণ। আয়াতটি হলো-
আরবি: فَإِن تَوَلَّوْاْ فَقُلْ حَسْبِيَ اللّهُ لا إِلَـهَ إِلاَّ هُوَ عَلَيْهِ تَوَكَّلْتُ وَهُوَ رَبُّ الْعَرْشِ الْعَظِيمِ
বাংলা উচ্চারণ: “ফাইং তা-ওয়াল্লাও ফাকুল হাসবি-য়াল্লাহু লা ইলাহা ইল্লা-হুয়া, আলাইহি তাওয়া-ক্কালতু ওয়া হুয়া রাব্বুল আরশিল আজিম।” (সূরা আত-তাওবাহ, আয়াত- ১২৯)
বাংলা অর্থ: “অতঃপর তারা যদি মুখ ফিরিয়ে নেয় তবে তুমি বলিও, আমার জন্য আল্লাহ্ই যথেষ্ট, তিনি ব্যতীত অন্য কোন ইলাহ্ নেই। আমি তারই উপর নির্ভর করি এবং তিনি মহার্আশের অধিপতি।”
এই আয়াতটি তেলাওয়াতের মাধ্যমে আল্লাহর কাছে সাহায্য চাইতে হবে।
আল্লাহর গুণবাচক নাম পাঠের মাধ্যমে দ্রুত বিবাহের দোয়া ও আমল
আল্লাহর গুণবাচক নামসমূহের মাধ্যমে আল্লাহর কাছে সাহায্য চাইতে হবে। এক্ষেত্রে আল্লাহর ৯৯ টি গুণবাচক নাম মুখস্ত করে নিন। এবং বেশি বেশি সেই নাম গুলো পাঠ করুন। বিশেষ করে ইয়া সামিয়্যু ও ইয়া ফাত্তাহু নামগুলো বেশি বেশি পাঠ করে দোয়া করুন।
তাড়াতাড়ি বিয়ে হওয়ার আমল
নিয়মিত নামাজের পর তাসবিহে ফাতেমি পাঠ করলে দ্রুত বিয়ে হতে পারে। আর তাসবিহে ফাতেমি পাঠ করার পূর্বে কুরআন তেলাওয়াত ও দুরুদ পড়া উত্তম।
আরবি: اَلْحَمْدُ لِلّه
বাংলা উচ্চারণ: “আল-হামদুলিল্লাহ।”
বাংলা অর্থ: “সকল প্রশংসা মহান আল্লাহ তায়ালার জন্য।”
এটি বেশি বেশি পাঠ করে আল্লাহর কাছে দ্রুত বিবাহের দোয়া ও আমল করে সাহায্য চাইতে হবে।
বেশি বেশি ইস্তিগফার পাঠ করা
মহান আল্লাহ তায়ালা তওবাকারীকে ভালোবাসেন। যে ব্যক্তি বেশি বেশি তওবা করেন তার দুনিয়া ও আখিরাত সুন্দর হয়। অধিক ইস্তিগফার পাঠকারীকে আল্লাহ তায়ালা মুস্তাজাবুত দাওয়াহ বানিয়ে দেন এবং তার সকল দোয়া কবুল করেন। তাই দ্রুত বিয়ের জন্য নিম্নোক্ত ইস্তিগফার গুলো সর্বদা পাঠ করতে পারেন-
(১)
আরবি: أَسْتَغْفِرُاللهَ
বাংলা উচ্চারণ: “আস্তাগ-ফিরুল্লা-হ।”
বাংলা অর্থ: “আমি আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করছি।”
(২) তাড়াতাড়ি বিয়ে হওয়ার আমল হিসেবে ইস্তিগফার অনেক বেশি কার্যকর। আরেকটি ইস্তিগফার হলো-
আরবি: أَسْتَغْفِرُ اللهَ وَأَتُوْبُ إِلَيْهِ
বাংলা উচ্চারণ: “আস্তাগ-ফিরুল্লাহা ওয়া আতূ’বু ইলাই’হি।”
বাংলা অর্থ: “আমি আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করছি ও তাঁর দিকেই ফিরে আসছি।”
(৩)
আরবি: رَبِّ اغْفِرْ لِيْ وَتُبْ عَلَيَّ إِنَّكَ أنْتَ التَّوَّابُ الرَّحِيْمُ
বাংলা উচ্চারণ: “রাব্বিগ ফির্-লী, ওয়া তুব আলাইয়্যা, ইন্নাকা আনতাত্ তাওয়্যাবুর রাহীম।”
বাংলা অর্থ: “হে আমার রব! আপনি আমাকে ক্ষমা করুন এবং আমার তাওবাকে কবুল করুন। নিশ্চয় আপনি মহান তাওবা কবুলকারী, করুণাময়।”
(৪)
সাইয়্যেদুল ইস্তিগফার
দ্রুত বিবাহের দোয়া ও আমল হিসেবে সাইয়্যেদুল ইস্তিগফার অনেক বেশি ফজিলতপূর্ণ।
আরবি: اللَّهُمَّ أَنْتَ رَبِّي لَا إِلَهَ إِلَّا أَنْتَ خَلَقْتَنِي وَأَنَا عَبْدُكَ وَأَنَا عَلَى عَهْدِكَ وَوَعْدِكَ مَا اسْتَطَعْتُ أَعُوذُ بِكَ مِنْ شَرِّ مَا صَنَعْتُ أَبُوءُ لَكَ بِنِعْمَتِكَ عَلَيَّ وَأَبُوءُ لَكَ بِذَنْبِي فَاغْفِرْ لِي فَإِنَّهُ لَا يَغْفِرُ الذُّنُوبَ إِلَّا أَنْتَ
বাংলা উচ্চারন: “আল্লা-হুম্মা আনতা রাব্বি। লা-ইলাহা ইল্লা আনতা। খালাক্বতানি ওয়া আনা আব-দুকা। ওয়া আনা আলা আহ-দিকা। ওয়া ওয়া’দিকা মাস-তাত্বা’তু। আ’উযু বিকা মিন শাররি মা সানা’তু। আবুয়ু লাকা বিনি’মাতিকা আলাইয়্যা। ওয়া আবুয়ু লাকা বি জাম্বি। ফাগ-ফিরলী ফা ইন্নাহু লা ইয়াগফিরুজ জুনুবা ইল্লা আনতা।”
বাংলা অর্থ: “হে আল্লাহ! শুধুমাত্র আপনিই আমাদের প্রতিপালক। আপনি ব্যতীত আর কোনো ইলাহ্ নেই। আপনিই আমার সৃষ্টিকর্তা এবং আমি আপনারই দাস। আমি আপনার সঙ্গে কৃত ওয়াদা ও অঙ্গীকারের ওপর সাধ্যানুযায়ী অটল ও অবিচল রয়েছি।
আমি আমার কৃতকর্মের সব অনিষ্ট হতে আপানার কাছে আশ্রয় প্রার্থনা চাইছি। আমার উপর আপনার দানকৃত সব নেয়ামতের স্বীকার করছি। আমি আমার সব গুনাহ স্বীকার করছি। অতএব, আপনি আমাকে মাফ করে দিন। কেননা, আপনি ছাড়া আর কেউ গুনাহ মাফ করতে পারবে না।”
(৫)
আরবি: أَسْتَغْفِرُ اللهَ (الْعَظِيْمَ) الَّذِيْ لَا إِلٰهَ إِلَّا هُوَ الحَيُّ الْقَيُّوْمُ وَأَتُوْبُ إِلَيْهِ
বাংলা উচ্চারণ: “আস্তাগ-ফিরুল্লা-হাল (আযীমাল্) লাযী, লা ইলাহা ইল্লা হুআল হাইয়্যুল কাইয়্যুমু ওয়া আতূবু ইলাই-হি।”
বাংলা অর্থ: “আমি মহান আল্লাহ তায়ালার ক্ষমা প্রার্থনা করছি, যিনি ছাড়া কোনো মাবুদ নেই। তিনি চিরঞ্জীব ও সর্ব সংরক্ষক এবং তাঁর কাছে তাওবা করছি।”
এসকল ইস্তিগফার পাঠ করে তাড়াতাড়ি বিয়ে হওয়ার আমল করার পাশাপাশি অন্যান্য দ্রুত বিবাহের দোয়া ও আমল করে যেতে হবে।
নিজে সৎকর্মশীল হওয়া ও হালাল পন্থায় পাত্র/পাত্রী খোঁজা
সৎকর্মশীল ব্যক্তির জন্য আল্লাহ তায়ালা সৎকর্মশীল জীবনসঙ্গী রেখেছেন। তাই নিজে উত্তম চরিত্রের অধিকারী হওয়ার পাশাপাশি হালাল পন্থায় পাত্র/পাত্রী খুঁজতে হবে। পাত্র/পাত্রী দ্বীনধারীকে প্রাধান্য দিতে হবে। পাত্র/পাত্রীদের অভিভাবকদের উদ্দেশ্যে রাসুলুল্লাহ (সাঃ) এর নির্দেশ করেছেন।
হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, “যদি তোমাদের কাছে এমন কোনো ব্যক্তি বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে আসে, যার ধর্মানুরাগ ও চরিত্র সম্পর্কে তোমরা সন্তুষ্ট, তার সঙ্গে (তোমাদের মেয়েদের) বিয়ে দাও। যদি তোমরা তা না করো, তাহলে পৃথিবীতে বিপর্যয় ও ব্যাপক বিশৃঙ্খলা ছড়িয়ে পড়বে।” (ইবনে মাজাহ, হাদিস-১৯৬৭)
একই সাথে নিজের সমকক্ষ বা সমমর্যাদার জীবনসঙ্গী খুঁজতে হবে, যাতে সহজেই বিয়ে করা যায়।
গুরুত্বপূর্ণ কিছু দোয়া
দোয়া কুনুত- আরবি উচ্চারণ ও বাংলা অর্থসহ
আয়াতুল কুরসি- আরবী উচ্চারণ ও বাংলা অর্থসহ
দৈনন্দিন জীবনের দোয়া ও সুন্নাতসমূহ
নামাজের সকল দোয়া সমূহ। নামাজের তাসবীহ ও দোয়া সমূহের অর্থ
ইফতারের দোয়া- তারাবির নামাযের দোয়া ও নিয়ত
শেষকথা
বিয়ে সম্পর্কে অনেকেই আর্থিক অবস্থা বিবেচনা করে। কিন্তু রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন- আল্লাহ তায়ালা তিন শ্রেণীর মানুষকে সাহায্য করা নিজের কর্তব্য হিসেবে নির্ধারণ করেছেন। তন্মধ্যে এক ব্যক্তি সে, যে বিয়ের মাধ্যমে পবিত্র জীবন যাপন করতে চায়। তাই দ্রুত বিবাহের দোয়া ও আমল (তাড়াতাড়ি বিয়ে হওয়ার আমল) করে আল্লাহর কাছে বেশি বেশি সাহায্য চাইতে হবে।