কথায় আছে, খালি পেটে জল, আর ভরা পেটে ফল। কিন্তু ভরা পেটে ফল খাওয়া যায় আর খালি পেটে ফল খাওয়া যায় না, এই প্রচলিত তথ্যটি সঠিক নয়। আপনি জানেন কি? ভাল ফলাফল পেতে হলে খালি পেটে যেসব ফল খেতে হবে । কিছু কিছু ফল খাওয়ার সবচেয়ে ভালো সময় সকালে ঘুম থেকে ওঠে খালি পেটে। তবে এর আগে অন্তত্য এক গ্লাস পানি খেয়ে নিতে হবে।
সকালে খালি পেটে ফল খাওয়া আপনার দিন শুরু করার একটি স্বাস্থ্যকর উপায় হতে পারে। কারণ এগুলি সাধারণত হজম শক্তিতে সাহায্য করে এবং শরীরের প্রয়োজনীয় ভিটামিন, খনিজ এবং ফাইবার সহ দ্রুত শক্তি বৃদ্ধি করে।
সকালে খালি পেটে ফল খেলে আমাদের ডাইজেস্টিভ সিস্টেম জাগ্রত হয়ে যায়। কেননা রাতের অনেকটা সময় পেট খালি থাকে। তাই সকালে ঘুম থেকে উঠার পর প্রথমে পানি খেয়ে শরীরের আদ্রতার পরিমাণ বাড়িয়ে এরপর ফল খেতে পারেন। এতে দিনের শুরুতে শরীর চাঙ্গা হবে। এ ছাড়া চা-কফির প্রয়োজন হবে না। সকালে খালি পেটে খেতে পারেন নিম্নের উল্লেখিত এই ফলগুলো- আপেল, কমলালেবু, পেঁপে, কলা, নাশপাতি, কিউই ইত্যাদি।
১. আপেল
খালি পেটে যেসব ফল খেতে হবে তার মধ্যে আপেল একটি। আপেল মূলত তার মিষ্টি স্বাদের জন্য জনপ্রিয়। আপেলে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার থাকে এবং রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। আপেলের দ্রবণীয় ফাইবার হজম শক্তিতে সাহায্য করতে পারে এবং পূর্ণতা অনুভব করতে পারে।
আপেলের পুষ্টিগুণ
উইকিপিডিয়ার তথ্যমতে, আপেলে প্রায় ৮০% পানি থাকে যা শরীরের জন্য অতীব প্রয়োজনী। খোসাসহ আপেলের খাদ্যযোগ্য প্রতি ১০০ গ্রাম অংশে রয়েছে –
- খাদ্যশক্তি—– ৫২ কিলোক্যালরি
- চর্বি—– ০.১৭ গ্রাম
- শর্করা—– ১৩.৮১ গ্রাম
- চিনি—– ১০.৩৯ গ্রাম
- খাদ্যআঁশ—– ২.৪ গ্রাম
- আমিষ—– ০.২৬ গ্রাম
- ক্যারোটিন—– ২৭ আইইউ
- জলীয় অংশ—– ৮৫.৫৬ গ্রাম
- ভিটামিন এ—– ৩ আইইউবিটা
- লুটেইন—– ২৯ আইইউ
- থায়ামিন—– ০.০১৭ মিলিগ্রাম
- রিবোফ্লেভিন—– ০.০২৬ মিলিগ্রাম
- নিয়াসিন—– ০.০৯১ মিলিগ্রাম
- প্যানটোথেনিক অ্যাসিড—– ০.০৬১ মিলিগ্রাম
- ফোলেট—– ৩ আইইউ
- পটাশিয়াম—– ১০৭ মিলিগ্রাম
- ভিটামিন সি—– ৪.৬ মিলিগ্রাম
- ভিটামিন ই—– ০.১৮ মিলিগ্রাম
- ভিটামিন কে—– ২.২ আইইউ
- ক্যালসিয়াম—– ৬ মিলিগ্রাম
- আয়রন—– ০.১২ মিলিগ্রাম
- ফ্লোরাইড—– ৩.৩ আইইউ
- ম্যাগনেসিয়াম—– ৫ মিলিগ্রাম
- ম্যাংগানিজ—– ০.০৩৫ মিলিগ্রাম
- ফসফরাস—– ১১ মিলিগ্রাম
- সোডিয়াম—– ১ মিলিগ্রাম
- জিংক—– ০.০৪ মিলিগ্রাম
২. পেঁপে
পেঁপে এমন একটি ফল যা মানুষ কাঁচা তথা সবুজ অবস্থায় সব্জি হিসেবে এবং পাকা অবস্থায় ফল হিসাবে খেয়ে থাকে। এর অনেক ভেষজ গুণও রয়েছে। এর ইউনানী নাম পাপিতা এবং আয়ুর্বেদিক নাম অমৃততুম্বী।
পেঁপেতে রয়েছে প্যাপেইন নামক এনজাইম, যা হজমে সাহায্য করে। এটি মানব দেহের ভিটামিন সি এবং অন্যান্য পুষ্টির একটি ভাল উৎস হিসাবে কাজ করে।
১০০ গ্রাম পাকা পেঁপের পুষ্টিগুণ
উইকিপিডিয়ার তথ্যমতে, প্রতি ১০০ গ্রাম পাকা পেঁপেতে যে পরিমান পুষ্টিগুন থাকে তা নিম্নরূপ:
- স্নেহ ০.১ গ্রাম
- আমিষ ০.৬ গ্রাম
- খনিজ পদার্থ ০.৫ গ্রাম
- শর্করা ৭.২ গ্রাম
- ফাইবার ০.৮ গ্রাম
- ভিটামিন সি ৫৭ মিলিগ্রাম
- সোডিয়াম ৬.০ মিলিগ্রাম
- আয়রন ০.৫ মিলিগ্রাম
- খাদ্যশক্তি ৩২ কিলোক্যালরি
- পটাসিয়াম ৬৯ মিলিগ্রাম
৩. নাশপাতি
খালি পেটে যেসব ফল খেতে হবে তার মধ্যে নাশপাতি আদর্শ ফল। ঠাণ্ডা অবস্থায় পাকা নাশপাতিতে চমৎকার সুগন্ধ রয়েছে। নাশপাতি রসালো ফল, তবে গাছে থাকা অবস্থায় ভালভাবে পাকে না। ফলের ৮৩% পানিতে পরিপূর্ণ। নাশপাতির আবরণ অংশটি সবুজ অথবা লালচে প্রকৃতির হয়ে থাকে। ফলের কেন্দ্রস্থলটি বেশ নরম। জ্যাম, জেলি অথবা রসালো অবস্থায় বাজারজাতকরণ করা হয়ে থাকে। শক্ত মাটিতে নাশপাতি গাছ ভাল জন্মে।
নাশপাতি (Pear) হল ফাইবার সমৃদ্ধ চমৎকার একটি ফল, যা দেহের হজমে সাহায্য করতে পারে এবং পূর্ণতা অনুভব করতে পারে। নাশপাতিতে রয়েছে ভিটামিন, মিনারেল, ভিটামিন কে এবং পটাসিয়াম। সকালের খাবারে নাশপাতি রাখতে পারেন।
৪. তরমুজ
তরমুজে ( Watermelon) প্রচুর পরিমাণে পানি রয়েছে এবং এটি আপনাকে হাইড্রেটেড রাখতে সাহায্য করে। এছাড়াও তরমুজ একটি শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট।
তরমুজের পুষ্টিবিধান
তরমুজ খুব জনপ্রিয় একটি ফল। তরমুজে ক্যালরির পরিমান খুব কম থাকে। তাই তরমুজ খেলে ওজন বৃদ্ধি পাওয়ার কোনো আশঙ্কা নাই। তরমুজের ৯২% পানি। শরীরে পানির অভাব পূরণে তরমুজই হলো আদর্শ ফল। তরমুজে আছে পর্যাপ্ত ভিটামিন A,C, পটাশিয়াম ও আঁশ। মৌসুমী এই ফলটির রয়েছে নানান রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা। তরমুজ হলো ভিটামিন ‘বি৬’-এর চমৎকার উৎস, যা মস্তিষ্ক সচল রাখতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
এই ফলটি নিয়মিত খেলে প্রোস্টেট ক্যান্সার, কোলন ক্যান্সার, ফুসফুসের ক্যান্সার ও ব্রেস্ট ক্যান্সারের ঝুঁকি কমে যায়। তরমুজের আরো একটি ভালো গুণ হলো এটি চোঁখের দৃষ্টিশক্তি ভালো রাখতে কাজ করে। একইসঙ্গে তরমুজ চোখের নানা সমস্যার প্রতিষেধক হিসেবেও কাজ করে । তরমুজে প্রচুর পানি এবং কম ক্যালরি থাকায় পেট পুরে তরমুজ খেলেও ওজন বাড়ার কোনো সম্ভাবনা থাকে না।
আরও পড়ুন: অনলাইনে ইনকাম করার উপায়
৫. কলা
কলা বিশ্বব্যাপী একটি জনপ্রিয় ফল। কলা বিভিন্ন পুষ্টি গুণাগুণে ভরপুর একটি ফল। এতে রয়েছে দৃঢ় টিস্যু গঠনকারী উপদান- যথা আমিষ, ভিটামিন এবং খনিজ। কলা ক্যালরির একটি ভাল উৎস। কলাতে পানি জাতীয় উপাদান সমন্বয় যে কোন তাজা ফলের চাইতে বেশি। একটি বড় মাপের কলা খেলে ১০০ ক্যালরির বেশি শক্তি পাওয়া যায়। কলাতে রয়েছে সহজে হজমযোগ্য শর্করা। এই শর্করা পরিপাকতন্ত্রকে সহজে হজম করতে সাহায্য করে। কলার মধ্যে থাকা আয়রন রক্তে হিমোগ্লোবিন উত্পাদনে সাহায্য করে।
কলার খাদ্যগুণ
প্রতি ১০০ গ্রাম পরিমাণ কলায় যে খাদ্যগুণ আছে তা নিম্নরূপঃ
- প্রতি ১০০ গ্রাম পরিমাণ কলায়
- জল ৭০.১%
- আমিষ ১.২%
- খনিজ লবণ ০.৮%
- ফ্যাট (চর্বি) ০.৩%
- আঁশ ০.৪%
- শর্করা ৭.২%
মোট ১০০.০%
৬. কিউই
কিউই ফলের আদি নিবাস মধ্য ও পূর্ব চীনে। কিউই ভিটামিন সি এবং ভিটামিন কে সহ ভিটামিনে ভরপুর। এতে এনজাইমও রয়েছে যা হজমে সাহায্য করতে পারে।
কিউই ফল কাঁচা খাওয়া যেতে পারে, জুস তৈরি করে খাওয়া যায়। বেকড পণ্যে ব্যবহার করা যেতে পারে, মাংসের সাথে প্রস্তুত বা গার্নিশ হিসাবে ব্যবহার করা যেতে পারে। খোশা সহ পুরো ফল মানুষের খাওয়ার উপযোগী। সকালে খালিপেঠে কিউই খেতে পারেন।
শেষকথা
ফলমূল মানব দেহের জন্য অত্যান্ত গুরুত্বপূর্ণ। প্রতিদিন আমাদের শরীর ও মানুষিক বিকাশের জন্য মৌসুমী ও বিভিন্ন প্রজাতির ফলমূল খাওয়া প্রয়োজন। ফলমূল থেকে আমরা শরীরের জন্য বিভিন্ন ধরনের ভিটামিন ও শর্করা পেয়ে থাকি। তবে নিয়ম মেনে ফল খেলে বেশি উপকার পাওয়া যায়। আমাদের আলোচনার খালি পেটে যেসব ফল খেতে হবে এই আর্টিকেল পড়ে আপনি কিছুটা হলেও ফল খাওয়ার উপকারিতা পাবেন।