শরীরের জন্য উপকারী খাবার কি কি জেনে নিন এই আর্টিকেল থেকে

দৈনন্দিন জীবন যাপনে আমাদেরকে শরীরের জন্য উপকারী খাবার গ্রহন করতে হয়। একটা সময় পর আমাদের প্রতিনিয়ত শরীরের হাড় ও গঠন ক্ষয় হতে থাকে। খাবারের মাধ্যমে আমাদের এসব ক্ষয়পূরণ করতে হয়। তা না হলে আমাদের শরীরের নানান রোগের বাসা বাধঁতে পারে। আমাদের আজকের আলোচনাির বিষয় শরীরের জন্য উপকারী কিছু খাবার ও ব্যায়াম নিয়ে।

শরীরের জন্য উপকারী খাবার সমূহ

গ্রিন টি: শরীরচর্চার আগে গ্রিন টি-র কাপে চুমুক দিলে তফাতটা বুঝতে পারবেন ৷ অ্যান্টি-অক্সিড্যান্টে সমৃদ্ধ গ্রিন টি শরীর চাঙ্গা রাখতে অত্যন্ত কার্যকরী। তা ছাড়া, এই চায়ে ক্যাফিনের পরিমাণও অনেক কম ৷ তবে শরীরচর্চার ঘণ্টাখানেক আগে খেতে হবে গ্রিন টি। এই চায়ে শরীরে বাড়তি এনার্জি জোগাবে ৷

লালশাক: লালশাকে ক্যালসিয়ামের পরিমাণ অন্য শাকের তুলনায় সবচেয়ে বেশি। ক্যালসিয়াম দেহের জন্য অত্যন্ত দরকারি উপাদান বিশেষ করে দাঁত এবং হাঁড় গঠনে। তাই দাঁতের সুস্থতা, হাঁড় গঠন, গর্ভবতী এবং প্রসূতি মায়েদের দৈনিক ক্যালসিয়ামের চাহিদা পূরণে এই শাক উপকারী।

এক দিনে অন্তত্য ৫ হাজার স্টেপ হাঁটুন ৷ স্বাস্থ্যের পক্ষে খাবার যতটা জরুরি, ততটাই জরুরি রোজ হাঁটাচলা করা। খাবার খাওয়ার পর কিছুক্ষণ হাঁটা উচিত ৷

দিনে অন্তত্য ৫ হাজার স্টেপ হাঁটুন ৷
দিনে অন্তত্য ৫ হাজার স্টেপ হাঁটুন ৷

চিচিঙ্গা: দেহের তরল উৎপাদন বৃদ্ধি করে এবং শুষ্কতা দূর করতে সাহায্য করে চিচিঙ্গা।  হৃদরোগীদের জন্যও অনেক উপকারী চিচিঙ্গা।

আমলকি: আমলকি চুলের টনিক হিসেবে কাজ করে এবং চুলের পরিচর্যার ক্ষেত্রে এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। এটি কেবল চুলের গোঁড়া মজবুত করে তা নয়, এটি চুলের বৃদ্ধিতেও সহায্য করে। এটি চুলের খুসকির সমস্যা দূর করে ও পাকা চুল প্রতিরোধ করে।

ফুলকপি: ফুলকপিতে রয়েছে ভিটামিন সি, কে, বি৬ এবং নানা ধরনের খনিজ উপাদান। পরিপাকতন্ত্রের জন্য এটিই খুবই উপকারী হাড়ের সুস্থতায় রয়েছে ফুলকপির বিশেষ ভূমিকা ৷

সর্দি বা ঠান্ডার একটি সাধারণ উপসর্গ গলা ব্যাথা । লবণ পানি দিয়ে গার্গল করা অথবা লেবু এবং মধু দিয়ে হালকা গরম পানীয় তৈরি করে পান করলে গলা ব্যাথা দ্রুত উপশম হতে পারে।

যখন স্বাস্থ্য এবং সুস্থতার কথা আসে,
নিয়মিত ব্যয়াম একটি জাদুকরী ঔষধ

পালং শাক: যদি কম ক্যালরি যুক্ত খাবার বাছাই করতে চান সেক্ষেত্রে আপনি পালং শাককে বেছে নিতে পারেন। কারণ প্রতি ১০০ গ্রাম পালং শাকে ক্যালোরি রয়েছে মাত্র ৭ কিলোক্যালরি যা আপনার শরীরের ওজন কমাতে সাহায্য করবে।

নখের স্বাস্থ্যও বলে দেবে আপনার হাড় মজবুত আছে কি না !
বারবার নখ ভেঙে গেলে বুঝতে হবে শরীর দুর্বল হাঁড়ের ইঙ্গিত দিচ্ছে।

মিষ্টি কুমড়া: মিষ্টি কুমড়াতে ক্যালরির পরিমাণ অনেক কম। এতে প্রচুর পরিমানে ফাইবার ও পটাশিয়াম আছে। কুমড়ার ফাইবার দেহের ক্ষুধা নিয়ন্ত্রণ করে। পটাশিয়াম দেহ থেকে অপ্রয়োজনীয় পানি ও লবণ বের করে ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে।

কলমি শাক: আঁশে ভরপুর একটি খাবার কলমি শাক। এটি খাদ্য হজম, খাদ্য পরিপাক ও বিপাক ক্রিয়ায় সাহায্য করে। নিয়মিত কলমি শাক খেলে কোষ্ঠকাঠিন্য সমস্যা দূর হয়।

কলমি শাক
কলমি শাক

ডাটা শাক: কিডনির ফাংশন ভালো রাখতে এবং কিডনি পরিষ্কার রাখতে ডাটা শাক খুব ভালো গবেষণায় দেখা গেছে নিয়মিত ডাটা শাক খেলে একদিকে যেমন কিডনির কর্মক্ষমতা বাড়বে অন্যদিকে রক্তে উপস্থিত একাধিক ক্ষতিকর উপাদান শরীর থেকে বেরিয়ে যায়।

কমলালেবু: কমলালেবুতে থাকে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি, পটাশিয়াম, ডায়েটারি ফাইবার থাকে। যা স্ট্রোক, এবং হার্ট অ্যাটাকের সম্ভবনা কমিয়ে দেয় ৷

আদা: আদা ছোট টুকরা করে তার সাঙ্গে লবণ মিশিয়ে কিছুক্ষণ পরপর খেতে পারেন। এ পদ্ধতি কাশি দূর করতে বেশ কার্যকরী। তা ছাড়া আদা চা ও কাশি উপশমে বেশ সহায়ক।

পেটের সমস্যা থেকে দূরে থাকতে দুধের খাবার এড়িয়ে চলেন অনেকেই ৷ অথচ পেটের ক্যানসারের আশঙ্কা কমাতে দুধ, দইয়ের মতো কিছু দুগ্ধজাতীয় খাবার রোজ খাবারে রাখার কথা বলে থাকেন চিকিৎসকেরা ৷

খেজুর: খালি পেটে ভেজানো খেজুর খেলে কী হয়? খেজুর ভিজিয়ে রাখাল তাতে উপস্থিত ট্যানিন বা ফাইটিক অ্যাসিড দূর হয়, যা এর পুষ্টিগুণাক সহাজ শোষণ করে। ভিজিয়ে রাখাল এই ফল সহাজ হজম হয়।

কলা: অনেকেই মনে করেন, কলা খেলে ওজন বাড়ে তাই ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে খাদ্য তালিকা থেকে অনেকেই কলা বাদ দিয়ে দেন। কিন্তু কলা খুবই পুষ্টিকর একটি ফল। রক্তচাপ ঠিক রাখা থেকে শুরু করে হৃদরোগের সমস্যা সবই দূরে রাখে কলা। এছাড়াও পাকা হলুদ কলায় প্রচুর পরিমাণ অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকায় এটি শরীরের নানা উপকার করে ।

কিসমিস: কিসমিসে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম, যা হাড় মজবুত করতে বেশ কার্যকর ভূমিকা পালন করে। কিসমিসে আরো রয়েছে বোরন নামক মাইক্রোনিউট্রিয়েন্টস, যা হাড়ের ক্যালসিয়াম শোষণে সাহায্য করে।

লেবু: বাতাবি লেবুতে অ্যান্টি-অক্সিডেন্টের পরিমাণ বেশি থাকে, যা ত্বকের যত্ন নেয়। এই ফলে প্রচুর পরিমাণে ফাইবারও থাকে। গরমকালে যাদের হজমের গোলমাল লেগে থাকে, তাদের জন্যও বেশ কার্যকর এই ফল।

রোজ লেবুর পানি খান। আপনার হজমশক্তি ধীরে ধীরে বাড়বে। গ্যাস-অম্বল দূরে হবে। কারণ, লেবুর পানি পরিপাক নালির মধ্যে থাকা টক্সিন শরীর থেকে বের করে দেয়।

যারা দীর্ঘসময় বসে কাজ করে, তাদের পায়ে ব্যথা হওয়া স্বাভাবিক তাই প্রতিদিন নিয়মিত এক্সারসাইজ করুন। এক্সারসাইজ ব্যথা কমায় ৷

আমড়া: গ্যাস, কোষ্ঠকাঠিন্য ইত্যাদি সমস্যা দূর করতেও অনেক উপকারী ভূমিকা রাখে আমড়া। আর নিয়মিত খাবারের পর আমড়া খেলে তা ডায়াবেটিস ও হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে পারে অনেকটাই।

কাঁঠাল: কাঁঠাল আপনার বয়স ধরে রাখতে সাহায্য করবে।  মুখে বলিরেখা পড়তে বাধা দেয় ৷ এটি ত্বকের জন্য ভালো।

“রোজ আধ কাপ করে টমেটোর রস খেতে
পারলে কোলেস্টরল নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব।”

মাংস: অতিরিক্ত মাংস খাওয়া শরীরের জন্য এমনিতেই ক্ষতিকর। প্রতিদিন মাংস গ্রহণ শরীরে জন্ম দেয় নানা রোগের। আমাদের শরীরের বেশিরভাগ রোগের অন্যতম কারণ প্রতিদিন মাংস খাওয়া। তাই প্রচন্ড গরমে সুস্থতা বজায় রাখতে নিজের এবং পরিবারের মাংস খাওয়া পরিহার করুন।

তেতুল: তেতুল খেলে রক্ত পানি হয়ে যায়। এ কথাটা ঠিক নয়। বরং তেতুল রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা কমায়।

লাউ: লাউয়ে প্রচুর পরিমানে পানি আছে যা প্রসাবের জ্বালা পোড়ার সমস্যা এবং হলদে ভাব দূর করে তাই যাদের এইসব সমস্যা আছে তাদের নিয়মিত লাউ খাওয়া উচিত।

ঝিংগা: ঝিংগা – ওজন নিয়ন্ত্রণে মহৌষধ, ডায়াবেটিসে উপকারী, জন্ডিস নিরাময়কারী, পাকস্থলী ভালো রাখে, অ্যান্টিবায়োটিকের চমৎকার গুন রয়েছে।

আম: আমকে বলা হয় ফলের রাজা। গ্রীষ্মের এই সময়ে রসালো আম থাকে বাজারজুড়ে। ভিটামিন এ, বি, সি, ই সমৃদ্ধ পাকা আম শরীরের জন্য ভীষণ উপকারী। ২০ ধরনের ভিটামিন ও মিনারেল রয়েছে এই ফলে।

আনারস: আনারসের শরবত খুব পুষ্টিকর একটি পানীয়। অত্যাধিক পরিমাণে ভিটামিন সি ও ফাইবার থাকায় এটি ত্বকের জন্য খুব উপকারী। ইফতারিতে অনায়াসে খেতে পারেন এ শরবত, কারণ খালি পেটে এ শরবত কৃমি নিবারনে সাহায্যকারী। আনারসে আছে উচ্চ মাত্রায় পানিতে দ্রবনীয় অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, ভিটামিন-সি এবং পানিতে দ্রবণীয় অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা দেহকে ফ্রি-রেডিকেল থেকে সুরক্ষা প্রদান করে। ফলে ক্যানসার এবং হৃদরোগের মত মারাত্মক রোগ শরীরে বাসা বাঁধতে পারে না ।

সজিনা: পৃথিবীর সবচেয়ে পুষ্টিকর হার্ব সজিনা বা সাজনা । এই গাছের পাতাকে বলা হয় অলৌকিক পাতা । গবেষকরা সজিনা পাতাকে নিউট্রিশন্স সুপার ফুড বলেছেন। শাক হিসেবে ব্যবহৃত সজিনা পাতায় রয়েছে ভিটামিন-এ’র এক বিশাল উৎস। সজিনা পাতা এবং ফল উভয়ের মধ্যেই বিপুল পরিমাণে পুষ্টি থাকে ।

কাঁচাকলা: টোটকা বাঙালিদের খুব চেনা। একটু পেট খারাপ হলেও কাঁচাকলা দিয়ে শিং মাছের ঝোল খাওয়ার রীতি রয়েছে। কাঁচাকলা সিদ্ধ করে খেলেও তা পেটে ব্যথা এবং পেটের প্রদাহ কমতে সাহায্য করে। কাঁচাকলায় রয়েছে ভিটামিন বি৬, ফোলেট এবং পটাশিয়াম। শরীরে কোনও পেশিতে টান লাগলে, ব্যথা হলে বা ক্র্যাম্প হলে তা কমাতে সাহায্য করে এই মিনারেলগুলো।

বরবটি: শরীরের ক্ষতিকর কলেস্টেরলের পরিমাণ কমিয়ে দেয় বরবটি। ফলে হার্টের সুরক্ষা নিশ্চিত হয় ৷ এছাড়া এটি উচ্চ রক্তচাপ, বুক জ্বালাপোড়া প্রভৃতি সমস্যা দূর করতেও ভূমিকা রাখে । তাই পরিমাণ মতো বরবটি খাওয়া মোটেই মন্দ নয় ৷

আরও পড়ুন: সজনে পাতার উপকারিতা ও ঔষধি গুণাগুন

শসার: মধ্যে যে পানি থাকে তা আমাদের দেহের বর্জ্য ও বিষাক্ত পদার্থ অপসারণে অনেকটা অদৃশ্য ঝাটার মতো কাজ করে। নিয়মিত শসা খাওয়ায় কিডনিতে সৃষ্ট পাথরও গলে যায় ।

ব্রকলি: পটাসিয়াম এবং ম্যাগনেশিয়াম সমৃদ্ধ। সুস্থ স্নায়ু তন্ত্রে যা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এতে ক্যালসিয়ামের আধিক্য থাকায় হাড়ের জন্য এটি বেশ উপকারী।

লেটুস: লেটুসে প্রচুর পরিমাণে আয়রন আছে । ফলে হিমোগ্লোবিন বাড়ানোর ক্ষেত্রে লেটুস পাতা একটি উপকারী সবজি। তাই যারা অ্যানিমিয়া বা রক্তশূন্যতায় ভুগছেন তাদের জন্য লেটুস পাতা হতে পারে একটি আদর্শ খাবার ।

বাঁধাকপি: বাঁধাকপিতে প্রচুর পরিমাণে খাদ্যআঁশ বা ফাইবার আছে যা কোন ক্যালরি ছাড়াই পেট ভরাতে সাহায্য করে। ওজন কমাতে প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় বাঁধাকপি রাখুন। বাঁধাকপিতে অল্প পরিমাণে কোলেস্টেরল ও চর্বি রয়েছে। যাহা আমাদের শরীরের জন্য ভালো।

মুলা: মুলা এবং তার পাতায় উপস্থিত আয়রন এবং ফসফরাস শরীরে প্রবেশ করার পর দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে এতটাই শক্তিশালী করে তোলে, যে কোনও রোগই ধারে কাছে আসতে পারে না। সেই সঙ্গে শারীরিক ক্লান্তি দূরে পালায়।

ক্যান্সার রোগকে দূরে রাখে: শুনতে আজব লাগলেও একাধিক গবেষণায় একথা প্রমাণিত হয়ে গেছে যে- রান্নায় গরম মসলার ব্যবহার বাড়ালে শরীরে ক্যান্সার সেলের জন্ম নেওয়ার আশঙ্কা একেবারে কমে যায়। আসলে এই মসলাটিতে প্রচুর মাত্রায় উপস্থিত রয়েছে অ্যান্টি-ক্যান্সার উপাদান, যাে এতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে।

মোচা: মোচায় ক্যালসিয়াম ও ফসফরাস থাকায় এটি শিশুদের দাঁত ও হাড়ের গঠন মজবুত করে। তা ছাড়া বয়স্ক নারী পুরুষ শারীরিক পরিশ্রমকারী ব্যক্তিদের জন্য মোচা দারুন উপকারী।

শেষ কথা:

প্রিয় পাঠক আশা করি আমাদের দৈনন্দিন জীবন যাপনে শরীরের জন্য উপকারী খাবার এই আর্টিকেল থেকে আপনার শরীরের জন্য উপকারী খাবার কি তা জেনে নিতে পারেন। সকলের সুস্থ্যতা কামনায় vromontips.com । ধন্যবাদ