গুঠিয়া মসজিদ বরিশাল: প্রিয় পাঠক, আনন্দ, ভালোলাগা আর প্রকৃতির অপরুপে ভরপুর সোনালী পৃথিবীতে ক্ষণিকের জন্য কোনো সৌন্দর্যের হাতছানি-পাহাড়, নদী, সাগর ও গহীন অরণ্যে মন ছুটে চলে অজানায় । মন চায় কোনো এক শিল্পীর শিল্পের কারুকার্যে মন রাঙাতে। আর সে মনের খোরাক/আনন্দ জোগাতেই অজানায় ছুটে চলা। সে চলার পথের আকর্ষনীয় একটি জায়গা বরিশাল জেলার বায়তুল আমান জামে মসজিদ, শিল্পের আপন মনের ছোঁয়ায় তৈরি হয়েছে বায়তুল আমান জামে মসজিদ ও ঈদগাহ কমপ্লেক্স। স্থানীয় বাসিন্দাদের কাছে এটি গুঠিয়া মসজিদ নামে পরিচিত। ব্যবসায়ী এস. সরফুদ্দিন আহমেদ সান্টু তার নিজস্ব অর্থায়নে এই মসজিদটি নির্মাণ করেন।
অবস্থান | উজিরপুর উপজেলা, বরিশাল |
ধারণক্ষমতা | আনুমানিক ২০,০০০ |
প্রতিষ্ঠার তারিখ | ১৬ ডিসেম্বর, ২০০৩ |
নির্মাণ ব্যয় | ২১ কোটি টাকা |
ভ্রমনে গুটিয়া মসজিদের অভিজ্ঞতা নিন
বাইতুল আমান জামে মসজিদ (এছাড়াও গুঠিয়া মসজিদ নামেও পরিচিত) বরিশাল মহানগরী থেকে ২২ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে বানারীপাড়া সড়ক সংলগ্ন উজিরপুর উপজেলায় এই গুঠিয়া গ্রামের অবস্থান। যেটি এখন দক্ষিণাঞ্চল তথা সমগ্র বাংলাদেশের অন্যতম পর্যটন এলাকা হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। মসজিদের পাশেই রয়েছে ২০ হাজার অধিক ধারণ ক্ষমতা সম্পন্ন ঈদগাহ্ ময়দান। গুটিয়া ইউনিয়নের চাংগুরিয়া গ্রামের বিশিষ্ট ব্যবসায়ী এস সরফুদ্দিন আহমেদ এটির নির্মাণ ব্যয় বহন করেন।
কমপ্লেক্সের মূল প্রবেশপথের ডানে বড় পুকুর। পুকুরটির চারপাশ নানান রঙের ফুল ও গাছ দিয়ে সাজানো হয়েছে। মসজিদ দর্শনার্থীদের চলাচলের জন্য পুকুর পাড়ের রাস্তা পাকা করে দেয়া হয়েছে। মোজাইক দিয়ে তৈরি শান বাঁধানো ঘাটের বাদাম গাছের নিচে বসে বাতাসের শীতল ছায়ায় শরীর জুড়িয়ে নিতে পারেন মুসল্লিরাসহ ভ্রমনকারীরা। ঘাটের ঠিক অপরদিকে মসজিদের প্রবেশ পথে বসানো হয়েছে দুটি আকর্ষনীয় ফোয়ারা।
রাতে অন্ধকারে আলোর ঝলকানিতে ফোয়ারা গুলো আরো নয়নাভিরাম হয়ে ওঠে। মসজিদের ভেতর-বাইরে এমনভাবে আলোকসজ্জা করা হয়েছে, যা দর্শকদের নিয়ে যায় অপার্থিব জগতে। যা দেখে মনে পড়বে মহান স্রষ্টা আল্লাহ তায়ালার কথা, তিনি মানুষকে এমন স্থাপত্যশৈলী তৈরি করার জ্ঞান দান করেছেন। এসব চিন্তা করলেই আপনা থেকেই মাথা নুয়ে আসতে চাইবে মহান প্রভুর দিকে। মসজিদটির তিন দিকে কৃত্রিম খাল খনন করা হয়েছে । মসজিদটি নির্মাণ করা হয়েছে মধ্যপ্রাচ্যের ৩/৪ টি মসজিদের নকশা অনুযায়ী, তবে হুবহু নয়। পুকুরের পশ্চিম দিকে মসজিদ অবস্থিত এবং একটি মিনার রয়েছে যার উচ্চতা প্রায় ১৯৩ ফুট উঁচু।
মসজিদের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস
ব্যবসায়ী এস. সরফুদ্দিন আহম্মেদ গুঠিয়া বাইতুল আমান জামে মসজিদ-এর নির্মাণ কার্যক্রম শুরু করেন ১৬ ডিসেম্বর ২০০৩ সালে। মসজিদটি নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হয় ২০০৬ সালে এবং গুঠিয়া এলাকার নামেই ৮ গম্বুজ বিশিষ্ট এই মসজিদটি বেশি পরিচিতি লাভ করে। মসজিদটির নির্মান ব্যয় প্রায় ২১ কোটি টাকা।
স্থাপত্যশৈলী
১৪ একর ভূমির উপর স্থাপিত এই মসজিদটিতে ব্যবহার করা হয়েছে উন্নমানের কাঁচ, ফ্রেম, বোস স্পিকার। মসজিদের নির্মানশৈলীতে বিশ্বের উন্নত দেশের নামকরা মসজিদসমূহের ছাপ লক্ষ করা যায়। মসজিদে মহিলাদের নামাযের জন্য আলাদা স্থান রয়েছে। মসজিদের তত্ত্বাবধানে ৩০ জন কর্মকর্তা কর্মচারী নিয়োজিত আছেন। এছাড়া মসজিদটির সীমানার মধ্যে এতিমখানা, দিঘি, ডাক বাংলো, গাড়ি পার্কিং ব্যবস্থাসহ বিভিন্ন প্রজাতির ফুলের বাগান রয়েছে। একটি হ্যালিপেড ও রয়েছে।
গুঠিয়া মসজিদ কিভাবে যাবেন
বরিশাল থেকে বায়তুল আমান জামে মসজিদের দূরত্ব ১১ কি.মি। বায়তুল আমান দেখতে চাইলে সর্বপ্রথম আপনাকে বরিশাল শহরে আসতে হবে। বরিশাল শহের থেকে সি.এন.জি অথবা অটো যোগে গুঠিয়া মসজিদ যেথে পারেন। ভাড়া পূর্বে জেনে নেওয়া ভালো
সড়ক পথে ঢাকা থেকে বরিশাল
ঢাকা থেকে বরিশাল রুটে চলাচলকারী বাসগুলোর মধ্যে আছে
হানিফ পরিবহন, মোবাইল- ০১৭১৩-০৪৯৫৫৯
ঈগল পরিবহন, ফোন-০২-৯০০৬৭০০
শাকুরা পরিবহন, মোবাইল ০১৭২৯৫৫৬৬৭৭
এসব বাসের ভাড়া:
বরিশাল যেতে এসি এবং নন-এসি বাসের ভাড়া ৬০০ থেকে ১৩০০ টাকা। এই রুটে বেশ কিছু লোকাল বাস চলাচল করে। লোকাল বাসের ভাড়া ২৫০-৩০০ টাকা। তবে সময় বাঁচাতে এসব লোকাল বাস ভ্রমন না করাই ভালো।
সড়ক পথে ঢাকা থেকে বরিশাল যেতে প্রায় ৬ থেকে ৮ ঘণ্টা সময় লাগে। প্রতিদিন ভোর ৬ টা থেকে রাত ১০ টা পর্যন্ত ঢাকার গাবতলি বাস টার্মিনাল থেকে প্রতিনিয়ত বাস বরিশালের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়। বাসগুলো সাধারণত পাটুরিয়া ঘাট দিয়ে যায়, তবে কিছু বাস মাওয়া ঘাট পাড় হয়ে বরিশাল যায়। ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা বাসগুলো বরিশাল শহরের নতুল্লাবাদ বাস টার্মিনালে এসে দাঁড়ায়।
নৌ-পথে বা লঞ্চে ঢাকা থেকে বরিশাল
ঢাকার সদরঘাট থেকে বেশিরভাগ লঞ্চগুলো রাত ৮ – ৯ টার মধ্যে বরিশাল শহরের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়। এবং রাতে ছেড়ে যাওয়া লঞ্চগুলো ভোর ৫.০০ টার দিকে বরিশাল গিয়ে পৌঁছায়। ৯-১০ ঘন্টা সময় লাগে বরিশাল গিয়ে পৌছাতে।
লঞ্চের ভাড়া
প্রতিটি ডেকের ভাড়া ২০০-২৫০ টাকা, সিঙ্গেল কেবিন ভাড়া ১২০০-১৪০০ টাকা, ডাবল কেবিনের ভাড়া ২২০০-২৫০০ টাকা এবং ভিআইপি কেবিন ৪৫০০-৮০০০ টাকা।
ঢাকা থেকে বরিশাল উদ্দেশ্যে ছেড়ে যাওয়া লঞ্চগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো; কুয়াকাটা ২, এডভেঞ্চার ১, এম ভি মানামী, কীর্তনখোলা ২ ও ১০, এডভেঞ্চার ৯, সুন্দরবন ৯, সুন্দরবন ১০, সুরভী ৮, সুরভী ৭, পারাবত ১১, পারাবত ৯, গ্রিন লাইন সহ আরও কিছু লঞ্চ ঢাকা-বরিশাল রুটে চলাচল করে।
কোথায় থাকবেন
বরিশাল শহরে অনেক ভালো মানের আবাসিক হোটেল রয়েছে, যেখানে আপনি চাইলে থাকতে পারেন। । বরিশালে থাকার জন্য আবাসিক হোটেলগুলো মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো:
হোটেল প্যারাডাইজ টু ইন্টারন্যাশনাল, ফোনঃ +৮৮-০১৭১৭০৭২৬৮৬
হোটেল হক ইন্টারন্যাশনাল, ফোনঃ +৮৮-০১৭১৮৫৮৭৬৯৮
হোটেল গ্র্যান্ড প্লাজা, ফোনঃ +৮৮-০১৭১১৩৫৭৩১৮
হোটেল এথেনা ইন্টারন্যাশনাল, ফোনঃ +৮৮-০৪৩১-৬৫১০৯
রিচমার্ট রেস্ট হাউজ: মোবাইল-
খাবার কোথায় খাবেন
গুটিয়ায় স্থানীয় হোটেলগুলোতে নানা আইটেমের ভালো মানের খাবার পাওয়া যায়। বরিশালে হোটেলের লুচি সবজি ও রসমালাই জনপ্রিয়। মিষ্টি পছন্দ হলে গুটিয়ার বিখ্যাত সন্দেশ খেতে ভুলবেন না।
জেনে রাখা ভালো
- আপনি কোথায় যাচ্ছেন পরিবারের অন্যদের বলতে ভুলবেন না।
- অপরিচিত কাউকে কোন কিছু শেয়ার করা থেকে বিরত থাকুন।
- মসজিদের পবিত্রতা রক্ষা করুন।
- মসজিদের পরিবেশ নষ্ট হয় এমন কোন কাজ করবেন না।
- নিজের সাথে থাকা টাকার ব্যাগ, কাপড়ের ব্যাগ ও অন্যান্য মালামাল সযত্নে রাখুন।
আশ-পাশের দর্শনীয় স্থান
- দূর্গাসাগর দিঘী।
- মাধবশাপা জমিধার বাড়ি
- লাকুটিয়া জমিধার বাড়ি
- শেরে বাংলা স্মৃতি জাদুঘর।
FAQ’s
গুঠিয়া মসজিদ কোথায় অবস্থিত?
রবিশালের উজিরপুর উপজেলায় অবস্থিত।
মসজিদটির আয়তন কত?
মসজিদের আয়তন ১১ একর।
বায়তুল আমান জামে মসজিদ বরিশাল এর প্রতিষ্ঠাতা কে?
ব্যবসায়ী এস. সরফুদ্দিন আহম্মেদ।