ঈমানের শাখা কয়টি ও কি কি?

ঈমানের শাখা কয়টি: ইসলামের পাঁচটি মৌলিক স্তম্ভের মধ্যে প্রধান স্তম্ভ ঈমান। ঈমানের সর্ব প্রধান কাজ হলো মহান আল্লাহ তা’আলার প্রতি বিশ্বাস এবং সেই সাথে ঈমানের মৌলিক বিষয়গুলোর প্রতিও বিশ্বাস স্থাপন করা। পাশাপাশি ঈমানকে একটি বৃক্ষের ন্যায়ও তুলনা করা হয়। এবং সেই বৃক্ষের বহু শাখা প্রশাখা রয়েছে। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) -বলেছেন, “ঈমানের ৭০টিরও বেশি শাখা রয়েছে।” একজন পরিপূর্ণ মুমিন হতে হলে, ঈমানের সকল শাখা সম্পর্কে জানা এবং সেগুলো পরিপূর্ণভাবে পালন করা গুরুত্বপূর্ণ। তাই ঈমানের শাখা কয়টি ও কি কি, সে সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নিন এই লেখা থেকে।

ঈমানের শাখা কয়টি

ঈমানের জন্য প্রয়োজনীয় কাজ সমূহকে ব্যাখ্যা করে শাফিঈ ইমাম আল-বায়হাকি তাঁর রচনা ”শু’আব আল-ইমান” সংকলিত করেছেন। এখানে তিনি পবিত্র কুরআনের আয়াত এবং রাসূলুল্লাহ (সাঃ) -এর হাদিস সমূহের মাধ্যমে সত্য ঈমানকে প্রতিফলিত করতে চেয়েছেন। এক্ষেত্রে তিনি ঈমানের ৭৭ টি শাখার কথা ব্যাখ্যা করেছেন। মূলত এটি রাসূলুল্লাহ (সাঃ) -এর হাদিসের উপর ভিত্তি করেই বিশ্লেষণ করা হয়েছে। বিখ্যাত সেই হাদীসটি হলো:

হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) -থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন- “ঈমানের ৭০টিরও বেশি শাখা রয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে উত্তম হলো- ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ বলা এবং সবচেয়ে ছোট শাখা হলো পথের দিক থেকে বাধা দূর করা; এবং ‘লজ্জা’ হলো ঈমানের একটি গুরুত্বপূর্ণ শাখা।” (মুসলিম)

ঈমানের শাখা সমূহের তালিকা

ঈমানের ৭০টির অধিক বা ৭৭টি শাখাকে তিনটি ভাগে ভাগ করা যায়। যথা:

  • অন্তরের সাথে সম্পৃক্ত কাজ।

  • জিহ্বার সাথে সম্পৃক্ত কাজ।

  • সমগ্র দেহের বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের সাথে সম্পৃক্ত কাজ।

 নিচে এসকল শাখা সমূহ তালিকাভুক্ত করা হলো:

অন্তরের সাথে সম্পৃক্ত ঈমানের শাখা

অন্তরের সাথে যুক্ত ৩০টি কাজকে ঈমানের শাখা হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। এগুলো হলো:

 আল্লাহর প্রতি ঈমান আনা। অর্থাৎ, ‘আল্লাহ ছাড়া কোন সত্য উপাস্য নেই’ -এই মর্মে সাক্ষ্য দেওয়া।

  1. আরও স্বাক্ষ্য দেওয়া যে, আল্লাহ ব্যতীত অন্য কোন কিছুর অস্তিত্ব ছিল না। তিনিই পৃথিবী এবং এর অভ্যন্তরীণ জিনিসগুলো সৃষ্টি করেছেন।

  2. আল্লাহর প্রতি ভালোবাসা থাকা।

  3. রাসূলুল্লাহ (সাঃ) -এর প্রতি ভালোবাসা থাকা।

  4. ফেরেশতাদের অস্তিত্বের উপর বিশ্বাস স্থাপন করা।

  5. সকল নবী-রাসূলগণ সত্য করে স্বীকার করা। তবে বর্তমানে শুধুমাত্র হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) -কে অনুসরণ করতে হবে।

  6. পৃথিবীতে আগত বিভিন্ন নবীদের কাছে প্রেরিত সকল আসমানী কিতাব সত্য বলে স্বীকার করা। তবে বর্তমানে আল কুরআন ব্যতীত অন্য সকল আসমান কিতাব বৈধ নয় বলেও স্বীকৃতি দেওয়া।

  7. আল্লাহ আগে থেকেই সবকিছু জানেন বলে বিশ্বাস করা।

  8. কিয়ামতের দিন সম্পর্কে বিশ্বাস স্থাপন।

  9. জান্নাত সম্পর্কে বিশ্বাস স্থাপন।

  10. জাহান্নাম সম্পর্কে বিশেষ স্থাপন।

  11. শুধুমাত্র আল্লাহর জন্য কাউকে ভালবাসা বা ঘৃণা করা।

  12. আল্লাহর খুশির জন্য সমস্ত ভালো কাজ করা।

  13. মহান আল্লাহ তায়ালাকে ভয় করা।

  14. কোন পাপে লিপ্ত হলে অনুশোচনা করা।

  15. আল্লাহর রহমত পাওয়ার আশা করা।

  16. নম্র, ভদ্র ও বিনয়ী হওয়া।

  17. কারো প্রতি বিদ্বেষ বা ঘৃণা না করা।

  18. কারো প্রতি ঈর্ষান্বিত না হওয়া।

  19. কারো ক্ষতি কামনা না করা।

  20. আল্লাহর অনুগ্রহের উপর শুকরিয়া জ্ঞাপন করা।

  21. আল্লাহর সৃষ্টির প্রতি দয়া করা।

  22. প্রতিশ্রুতি পূরণ করা।

  23. ধৈর্য্য ধারণ করা।

  24. রাগ না করা।

  25. নিজেকে সাধারন, অন্যদের চেয়ে নিচু এবং পৃথিবীতে তুচ্ছ বলে মনে করা।

  26. আল্লাহ থেকে নির্ধারিত আদেশে সন্তুষ্ট থাকা।

  27. হতাশ না হয়ে আল্লাহর উপর ভরসা করা।

  28. নিজের গুনাগুন নিয়ে গর্ব, অহংকার বা বড়াই না করা।

  29. পৃথিবীর চাকচিক্য বা মোহের প্রতি ভালোবাসা না থাকা।

আরও পড়ুন: যাকাতের হিসাব ও সম্পদের কতটুকু যাকাত দিতে হবে

জিহ্বার সাথে সম্পৃক্ত ঈমানের শাখা

জিহ্বার সাথে সম্পৃক্ত ৭টি কাজকে ঈমানের শাখা হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। এগুলো হলো:

 জিহ্বা বা জবান দিয়ে ইসলামের কালেমা পাঠ করা।

  1. কুরআন তেলাওয়াত করা।

  2. আল্লাহর জিকির করা।

  3. দুআ করা।

  4. জ্ঞানার্জন করা।

  5. জ্ঞান দান করা।

  6. মিথ্যা, গীবত, অশ্লীল কথা, অভিশাপ, শরিয়তের পরিপন্থী অশ্লীল গান গাওয়া থেকে বিরত থাকা।

সমগ্র দেহের বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের সাথে সম্পৃক্ত ঈমানের শাখা

ঈমানের শাখা কয়টি
ঈমানের শাখা

সমগ্র দেহের সাথে সম্পৃক্ত ৪০টি কাজকে ঈমানের শাখা হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। এগুলো হলো:

 ওজু করা, গোসল করা, পরিধেয় পোশাক পরিষ্কার রাখার মাধ্যমে পবিত্র থাকা।

  1. সময়মতো একনিষ্ঠভাবে সালাত আদায় করা।

  2. রমজানের রোজা রাখা।

  3. যাকাতসাদাকাতুল ফিতর আদায় করা।

  4. হজ পালন করা।

  5. ইতিকাফ করা।

  6. আল্লাহর জন্য কোরবানি করা।

  7. দ্বীনের জন্য ক্ষতিকর, এমন স্থান থেকে সরে যাওয়া।

  8. শরীর ঢেকে রাখা ফরজ।

  9. সালামের জবাব দেওয়া।

  10. হাঁচি দেওয়ার পর কেউ আলহামদুলিল্লাহ বললে, ইয়ারহামুকাল্লাহ বলা।

  11. গুনাহ নয় এমন শপথ পূরণ করা।

  12. আল্লাহর কাছে যে মানত করা হয়েছে তা পূরণ করা।

  13. অপূর্ণ শপথের জন্য কাফফারা আদায় করা।

  14. নিজের ঋণ পরিশোধ করা।

  15. আপনার অধীনস্থ ব্যক্তিদের অধিকার পূরণ করা।

  16. পিতা-মাতাকে সান্তনা প্রদান।

  17. সঠিক পদ্ধতিতে সন্তান লালন-পালন করা।

  18. আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন না করা।

  19. প্রতিবেশীর চাহিদা দেখা।

  20. আমানত পূরণ করা।

  21. অভাবীদের ঋণ দিয়ে সহায়তা করা।

  22. আর্থিক লেনদেনের ক্ষেত্রে নিষিদ্ধ বিষয়বস্তু থেকে বিরত থাকা।

  23. সাক্ষী দেওয়ার ক্ষেত্রে সত্য বলা।

  24. নফস যখন বিয়ে করতে চায় তখন বিয়ে করা।

  25. মনিবকে মান্য করা।

  26. ন্যায়পরায়ন হওয়া।

  27. অন্যায়ভাবে কারো ক্ষতি না করা।

  28. মুসলিমদের জীবন ব্যবস্থার পরিপন্থী কোন পথের সূচনা না করা।

  29. যদি শাসকের আদেশ শরীয়তের পরিপন্থী না হয়, তাহলে তার আনুগত্য করা।

  30. ঝগড়াকৃত বা যুদ্ধরত দুই পক্ষের মাঝে শান্তি স্থাপন করা।

  31. মহৎ ও দ্বীনের পক্ষের কাজে সহায়তা করা।

  32. সৎকাজের আদেশ ও অসৎকাজে নিষেধ করা।

  33. সরকার বা শাসক হয়ে থাকলে, অপরাধীদের জন্য শরীয়াহ অনুযায়ী শাস্তির ব্যবস্থা করা।

  34. দ্বীনের শত্রুদের বিরোধীতা করা। (যদি সম্ভব হয় হাতে, যদি না হয় জিহ্বা দ্বারা, যদি না হয় হৃদয় দ্বারা)।

  35. হালাল ও বিশুদ্ধ পন্থায় আয়-রোজগার করা।

  36. শরিয়ত অনুযায়ী খরচ করা।

  37. শরিয়তের পরিপন্থী, এমন খেলাধুলা ও বিনোদন থেকে বিরত থাকা।

  38. মৃত ব্যক্তিকে কাফন-দাফন করা।

  39. রাস্তা থেকে নুড়ি, পাথর, কাঁটা, লাঠি ইত্যাদি সরিয়ে দেওয়া।

ঈমানের সর্বোচ্চ শাখা কি?

ঈমানের ৭০টি শাখার মধ্যে সবচেয়ে উত্তম হলো- ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ বলা বা মহান আল্লাহ ছাড়া কোন মাবুদ নেই বলে বিশ্বাস করা ও সাক্ষ্য দেওয়া। ঈমানের এই শাখার গুণাবলী অর্জন ব্যাতীত কেউ মুমিন হতে পারেনা।

শেষকথা

উপরেরটা আলোচনা থেকে ঈমানের শাখা কয়টি ও কি কি, সে সম্পর্কে বিস্তারিত জানলেন। মহান আল্লাহ তা’আলা আমাদেরকে এসকল বিষয়বস্তু মেনে চলার তৌফিক দান করুক, আমিন।