ঈমান টিকিয়ে রাখার দোয়া ও আমল। ঈমানের উপর অটল থাকার দোয়া

ইসলামের সর্বপ্রথম এবং সবচেয়ে বড় রুকন হচ্ছে ঈমান। ঈমান রক্ষা ব্যতীত মহান আল্লাহ তায়ালা সন্তুষ্টি অর্জন এবং জান্নাত লাভ করা যাবেনা। তাই ইমান রক্ষার্থে মহান আল্লাহর কাছে ঈমানের উপর অটল থাকার দোয়া / ঈমান টিকিয়ে রাখার দোয়া করতে হবে প্রতিনিয়ত।

মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) হাদিসমতে, শেষ জামানায় ঈমান টিকিয়ে রাখা জ্বলন্ত কয়লা হাতের মুঠোয় ধরে রাখার মতোই কঠিন হবে। তাই আল্লাহর সাহায্য ছাড়া এটি সম্ভব নয়। 

এই পোস্টে মহান আল্লাহর কাছে ঈমানের উপর অটল থাকার দোয়া হিসেবে- ইমান বৃদ্ধির দোয়া, সাইয়্যিদুল ইস্তিগফারসহ শিরক, দুনিয়ার ফিতনা, অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের ফিতনা, অভাব অনটন থেকে মুক্তি ইত্যাদি ঈমান টিকিয়ে রাখার দোয়া তুলে ধরা হলো।

ঈমান টিকিয়ে রাখার দোয়া 

ও দ্বীনের উপর টিকে থাকার জন্য দোয়া: দ্বীনের উপর টিকে থাকার জন্য মহান আল্লাহ তায়ালার কাছে পবিত্র কোরআনের নিম্নোক্ত আয়াতটি পাঠ করা অত্যন্ত ফজিলতপূর্ন-

আরবি: رَبَّنَا لَا تُزِغْ قُلُوبَنَا بَعْدَ إِذْ هَدَيْتَنَا وَهَبْ لَنَا مِنْ لَدُنْكَ رَحْمَةً إِنَّكَ أَنْتَ الْوَهَّابُ

বাংলা উচ্চারন: “রাব্বানা লা তুযিগ কুলুবানা বা’দা ইজ হাদাই-তানা ওয়া হাব-লানা মিল্লাদুংকা রাহমাতান, ইন্নাকা আংতাল ওয়াহ-হাব।”

বাংলা অর্থ: “হে আমাদের রব! আপনি আমাদের যে হেদায়াত দান করেছেন, অতঃপর আর আমাদের অন্তরে বক্রতা সৃষ্টি করিয়েন না; আর আপনার একান্ত অনুগ্রহ থেকে আমাদের রহমত দান করুন। নিশ্চয়ই আপনি অসীম দানশীল-তার অধিকারী।” (সুরা আল ইমরান, আয়াত-৮)

এই ঈমান টিকিয়ে রাখার দোয়া আমাদের প্রতি মোনাজাতেই করতে পারি।

ঈমান বৃদ্ধি করার দোয়া 

মহানবী (সাঃ)- আমাদেরকে ঈমানের উপর অটল থাকার দোয়া শিক্ষা দিয়েছেন। থাকার হজরত আনাস (রাঃ) বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ (সাঃ) অধিক পরিমাণে এ দোয়াটি পড়তেন-

আরবি: يَا مُقَلِّبَ القُلُوبِ ثَبِّتْ قَلْبِي عَلَى دِينِكَ

বাংলা উচ্চারন: “ইয়া মুকাল্লিবা-ল কুলুবি ছাব্বিত ক্বালবি আ’লা দ্বী’নিক।”

বাংলা অর্থ: “হে অন্তরসমূহের পরিবর্তনকারী! আপনি আমার অন্তরকে আপনার দ্বীনের ওপর অটল রাখুন।”

আরও পড়ুন: কবর জিয়ারতের দোয়া ও নিয়ম 

শিরক থেকে বাঁচার দোয়া

মহান আল্লাহর সঙ্গে সব ধরনের ছোট-বড় জানা-অজানা শিরক থেকে মুক্ত থাকার জন্য তারই কাছে আশ্রয় চাওয়া সর্বোত্তম। আল্লাহর রাসুল (সাঃ) সেই উপায় ও ঈমান টিকিয়ে রাখার দোয়া শিখিয়ে দিয়েছেন। 

রাসুলুল্লাহ (সাঃ) আবু বকর (রাঃ)- কে বলেছেন, “হে আবু বকর! নিশ্চয় তোমাদের মাঝে শিরক পিপীলিকার পদধ্বনির চেয়েও সূক্ষ্ম। সেই সত্তার শপথ-  যার হাতে আমার প্রাণ, শিরক পিপীলিকার পদধ্বনির চেয়েও সূক্ষ্ম। আমি কি তোমাকে এমন কিছু শিখিয়ে দিব না, যা বললে শিরকের অল্প ও বেশি সবই দূর হয়ে যাবে? অতঃপর তিনি বললেন-

আরবি: ااَللَّهُمَّ اِنِّىْ اَعُوْذُبِكَ اَنْ أشْرِكَ بِكَ وَاَنَا أَعْلَمُ وَاَسْتَغْفِرُكَ لِمَا لَا أَعْلَمُ

বাংলা উচ্চারন: “আল্লা-হুম্মা ইন্নি আ’উযু বিকা আন আশরিকা বিকা-ওয়া আনা আ’লামু, ওয়া আসতাগ-ফিরুকা লিমা লা আ’লামু।”

বাংলা অর্থ: “হে আল্লাহ! আমি সজ্ঞানে তোমার সঙ্গে শিরক করা থেকে তোমার কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করি এবং যা আমার অজ্ঞাত তা থেকেও তোমার কাছে মাফ চাই।” (সহিহ আল আদাবুল মুফরাদ- ৫৫১)

দুনিয়ার ফিতনা ও কবর আযাব থেকে বাঁচার দোয়া। দাজ্জালের ফিতনা থেকে মুক্তির দোয়া

দুনিয়ার জীবন রং-তামাশা ছাড়া আর কিছুই নয়। বর্তমানে দুনিয়াতে প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রেই নানা রকম ফিতনা ছড়িয়ে আছে। তাই মহান আল্লাহর কাছে ঈমানের উপর অটল থাকার দোয়া করতে হবে।

নবী করীম (সাঃ) দুনিয়ার ফিতনার ভয়াবহতা সম্পর্কে আমাদের সচেতন করেছেন। তিনি বলেছেন- তোমরা নামাজের শেষ বৈঠকে তাশাহহুদ পড়ার পর, ৪ টি বিষয় থেকে মহান আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাইবে- 

  • জাহান্নামের আজাব থেকে,
  • কবরের আজাব থেকে,
  • জন্ম ও মৃত্যুর ফিতনা থেকে 
  • দাজ্জালের ফিতনা থেকে। (মুসলিম-৫৮৮)

মহানবী (সাঃ)- জীবন, মৃত্যু, কবর, জাহান্নাম ও দাজ্জালের ফিতনা থেকে আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাইতে এই দোয়া শিক্ষা দিয়েছেন-

আরবি: اَللّٰهُمَّ إِنِّيْ أَعُوْذُ بِكَ مِنْ عَذَابِ الْقَبْرِ، وَمِنْ عَذَابِ جَهَنَّمَ، وَمِنْ فِتْنَةِ الْمَحْيَا وَالْمَمَاتِ، وَمِنْ شَرِّ فِتْنَةِ الْمَسِيْحِ الدَّجَّالِ

বাংলা উচ্চারন: “আল্লা-হুম্মা ইন্নি আ‘উযু বিকা মিন আজা-বিল ক্বাবরি, ওয়া মিন আজা-বি জাহান্নামা, ওয়া মিন ফিতনাতিল মাহ্-ইয়া ওয়াল মামা-তি, ওয়া মিন শাররি ফিতনাতিল মাসী-হিদ্ দাজ্জাল।”

বাংলা অর্থ: “হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে আশ্রয় চাই কবরের আজাব থেকে, জাহান্নামের আজাব থেকে, জীবন ও মৃত্যুর ফিতনা থেকে এবং মাসিহ দাজ্জাল এর ফিতনার অনিষ্টতা থেকে।”

ঈমান টিকিয়ে রাখার দোয়া টি সুন্নত ও নফল সালাতের শেষ বৈঠকে পাঠ করা উত্তম। ফরজ সালাতে বিশিষ্ট আলেমগন অতিরিক্ত দোয়া পাঠ করতে নিরুৎসাহিত করেছেন।

ক্ষমা প্রার্থনার শ্রেষ্ঠ দোয়া বা সাইয়্যিদুল ইস্তিগফার

সাইয়্যিদুল ইস্তিগফার সবচেয়ে বড় ইস্তিগফার এবং অনেক ফজিলত পূর্ণ। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, যে ব্যক্তি সুদৃঢ় বিশ্বাসের সাথে সকালের সাইয়্যিদুল ইস্তিগফার পাঠ করবে, সে ব্যক্তি সন্ধ্যা হওয়ার পূর্বে মৃত্যুবরণ করলে জান্নাতে প্রবেশ করবে। 

আর যে ব্যক্তি সুদৃঢ় বিশ্বাসের সাথে সন্ধ্যায় সাইয়্যিদুল ইস্তিগফার পাঠ করবে, সে ব্যক্তি সকাল হওয়ার পূর্বে মৃত্যুবরণ করলে জান্নাতে প্রবেশ করবে। (সহিহ বুখারি- ৬৩০৬)। ঈমান টিকিয়ে রাখার দোয়া হিসেবে এই দোয়াটি আমাদের অন্তরকে জাগ্রত ও নরম করে।

সেই অসীম ফজিলতপূর্ণ সাইয়্যিদুল ইস্তিগফারটি হলো:- 

আরবি: اللَّهُمَّ أَنْتَ رَبِّي لَا إِلَهَ إِلَّا أَنْتَ خَلَقْتَنِي وَأَنَا عَبْدُكَ وَأَنَا عَلَى عَهْدِكَ وَوَعْدِكَ مَا اسْتَطَعْتُ أَعُوذُ بِكَ مِنْ شَرِّ مَا صَنَعْتُ أَبُوءُ لَكَ بِنِعْمَتِكَ عَلَيَّ وَأَبُوءُ لَكَ بِذَنْبِي فَاغْفِرْ لِي فَإِنَّهُ لَا يَغْفِرُ الذُّنُوبَ إِلَّا أَنْتَ

বাংলা উচ্চারন: “আল্লা-হুম্মা আনতা রাব্বি। লা-ইলাহা ইল্লা আনতা। খালাক্বতানি ওয়া আনা আব-দুকা। ওয়া আনা আলা আহ-দিকা। ওয়া ওয়া’দিকা মাস-তাত্বা’তু। আ’উযু বিকা মিন শাররি মা সানা’তু। আবুয়ু লাকা বিনি’মাতিকা আলাইয়্যা। ওয়া আবুয়ু লাকা বি জাম্বি। ফাগ-ফিরলী ফা ইন্নাহু লা ইয়াগফিরুজ জুনুবা ইল্লা আনতা।”

বাংলা অর্থ: “হে আল্লাহ! শুধুমাত্র আপনিই আমাদের প্রতিপালক। আপনি ব্যতীত আর কোনো ইলাহ্ নেই। আপনিই আমার সৃষ্টিকর্তা এবং আমি আপনারই দাস। আমি আপনার সঙ্গে কৃত ওয়াদা ও অঙ্গীকারের ওপর সাধ্যানুযায়ী অটল ও অবিচল রয়েছি। 

আমি আমার কৃতকর্মের সব অনিষ্ট হতে আপানার কাছে আশ্রয় প্রার্থনা চাইছি। আমার উপর আপনার দানকৃত সব নেয়ামতের স্বীকার করছি। আমি আমার সব গুনাহ স্বীকার করছি। অতএব, আপনি আমাকে মাফ করে দিন। কেননা, আপনি ছাড়া আর কেউ গুনাহ মাফ করতে পারবে না।”

চোখ, কান, জিহবা, মন ও বীর্যের অপকারিতা হতে পরিত্রাণের দোয়া। অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের ফিতনা থেকে মুক্তির দোয়া

পৃথিবীতে চারিদিকে প্রতিটি অঙ্গের হাজারো ফিতনা ছড়িয়ে রয়েছে। অঙ্গ প্রত্যঙ্গের ফিতনা থেকে বাঁচার জন্য মহান আল্লাহর কাছে নিম্নোক্ত ঈমান টিকিয়ে রাখার দোয়া টি করা যায়-

আরবি: اللهَّم إني أَعُوذُ بِكَ مِنْ شَرِّ سَمْعِي، وَشَرِّ بَصَرِي، وَشَرِّ لِسَانِي، وَشَرِّ قَلْبِي، وَشَرِّ مَنِيِّي 

বাংলা উচ্চারন: “আল্লা-হুম্মা ইন্নি আ’উযু বিকা মিন শাররি সাম’য়ি, ওয়া শাররি বাসারি’, ওয়া শাররি লিসানি’, ওয়া শাররি ক্বলবি’, ওয়া শাররি মানিয়্যি।”

বাংলা অর্থ: “হে আল্লাহ! আমি আমার কান, চোখ, জিহ্বা, অন্তর এবং বীর্যের অনিষ্ট থেকে আপনার কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করছি।”

অভাব, স্বল্পতা ও অপমান থেকে পরিত্রাণের দোয়া। অভাব থেকে মুক্তির দোয়া

আর্থিক সংকট, অভাব-অনটন মহান আল্লাহ তায়াল পক্ষ থেকে বান্দার প্রতি একটি পরীক্ষা। তবে অভাবগ্রস্থ ব্যক্তি নানা রকম ফিতনায় জড়িয়ে পড়ে। তাই ঈমান টিকিয়ে রাখার দোয়া সমূহের মধ্যে অভাব থেকে মুক্ত থাকা অন্যতম।

মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) অভাব, স্বল্পতা ও অপমান থেকে বেঁচে থাকতে মহান আল্লাহর কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করতেন ও হাদিস শরীফে অন্যদের নির্দেশ করেছেন। তিনি এইভাবে দোয়া করতেন-

বাংলা উচ্চারন: “আল্লা-হুম্মা ইন্নি আ’উযু বিকা মিনাল ফাক্বরি, ওয়াল ক্বিল্লাতি ওয়াজু-জিল্লাতি, ওয়া আ’উযু বিকা মিন আন আজ-লিমা আউ উজ-লামা।”

বাংলা অর্থ: “হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে অভাব, স্বল্পতা ও অপমান থেকে আশ্রয় চাই। এবং আরো আশ্রয় চাই অত্যাচার করা ও অত্যাচার হওয়া থেকে। (আবু দাউদ, মিশকাত, নাসাঈ)

শেষকথা

পরিপূর্ণ ঈমান ছাড়া কখনোই মু’মিন হওয়া যায়না। তাই মহান আল্লাহ তায়ালার কাছে- ঈমানের উপর অটল থাকার দোয়া / ঈমান টিকিয়ে রাখার দোয়া সমূহ বেশি বেশি পাঠ করতে হবে। তিনিই আমাদের পথ নির্দেশক। আল্লাহর সাহায্য ও রহমতের মাধ্যমেই দুনিয়া ও আখিরাত সুন্দর হয়।