বিজ্ঞান ও বিজ্ঞান ও বিজ্ঞান ও তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (Information and Communication Technology) -এর প্রভাবে এখন মানুষ ঘরে বসেই পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তের কাজ করতে পারছে। ফ্রিল্যান্সিংয়ের ক্ষেত্রেও এর ভূমিকা সবচেয়ে বেশি। মানুষের দৈনন্দিন জীবনের সামগ্রিক উন্নয়নে এটি অপরিহার্য হয়ে পড়েছে। কিন্তু এই ‘তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি কি’ -সে সম্পর্কে সঠিক তথ্য জানা নেই অনেকেরই।
তাই তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি কি, কাকে বলে, তথ্য প্রযুক্তি কি, যোগাযোগ প্রযুক্তি কি? তথ্য প্রযুক্তি ও যোগাযোগ প্রযুক্তির সম্পর্ক, বিজ্ঞান ও আইসিটির পার্থক্য এবং তথ্য ও যোগাযোগ সম্পর্কিত প্রযুক্তির ব্যবহার সম্পর্কে জানতে পারবেন এই লেখা থেকে।
তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি কি? (What is Information and Communication Technology)
মূলত তথ্যপ্রযুক্তি হলো, কোন ডাটাকে প্রক্রিয়াকরণ করে তথ্যের রূপান্তর করা এবং যোগাযোগ প্রযুক্তি হচ্ছে সেই তথ্যকে একই স্থান থেকে অন্য স্থানে সঠিকভাবে এবং সঠিক নিয়মে আদান-প্রদান করা। এই দুটি প্রযুক্তির সামগ্রিক সমন্বয়ে গঠিত হয় তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি।
উদাহরণস্বরূপ: কোন স্থানের সংঘটিত কোন ঘটনার উপাত্ত গুলোকে সজ্জিত করে একটি তথ্যভিত্তিক খবর প্রস্তুত করা হলে, এটি একটি তথ্য। সেই সজ্জিত তথ্যকে পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে টেলিভিশন চ্যানেল বা অন্য কোন মাধ্যমে সম্প্রচার করাই হলো যোগাযোগ প্রযুক্তি। বর্তমানে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির সবচেয়ে ব্যবহৃত উপাদান গুলো হলো: মোবাইল ফোন, কম্পিউটার, টিভি চ্যানেল, ইন্টারনেট, রেডিও, স্যাটেলাইট ইত্যাদি।
তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি কাকে বলে?
যে প্রযুক্তিতে, কোন উপাত্তকে প্রক্রিয়াকরণের মাধ্যমে তথ্যে রুপান্তর করে বিভিন্ন প্রযুক্তির সহযোগিতায় এক স্থান থেকে অন্য স্থানে প্রেরণ করা হয়, তাকে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (Information and Communication Technology) বলে।
এই প্রযুক্তিটি সামগ্রিকভাবে একটি তথ্যের প্রক্রিয়াকরণ, সংরক্ষণ, যোগাযোগ এবং প্রচারকে সহজতর করার জন্য ব্যবহার করা হয়।
তথ্য প্রযুক্তি কি? (What is Information Technology)
কোন একটি উপাত্তকে তথ্যে রুপান্তর করা এবং তথ্য ব্যবস্থাপনার সংগে সংশ্লিষ্ট প্রযুক্তিই হলো তথ্য প্রযুক্তি। মূলত তথ্যের মৌলিক কাঁচামাল বা একক হলো উপাত্ত। সামগ্রিকভাবে বলতে গেলে যে প্রযুক্তির মাধ্যমে উপাত্ত প্রক্রিয়াকরণ করে তথ্য তৈরী, প্রক্রিয়াকরণ, সংরক্ষণ, তথ্যের সত্যতা ও বৈধতা যাচাই, আধুনিকীকরণ, পরিবহন, বিপনন ও ব্যবস্থাপনা করা হয় তাকে তথ্য প্রযুক্তি বা ইনফরমেশন টেকনোলজি বলে।
যোগাযোগ প্রযুক্তি কি? (What is Communication Technology)
কোন তথ্য বা ডাটা আদান-প্রদানের প্রক্রিয়াই যোগাযোগ প্রযুক্তি। সামগ্রিকভাবে বলতে গেলে, কোন তথ্যকে এক স্থান থেকে অন্য স্থান/ এক কম্পিউটার থেকে অন্য কম্পিউটার/ এক ডিভাইস থেকে অন্য ডিভাইসে অথবা তথ্য প্রদানকারী থেকে অন্যজনের নিকট আদান-প্রদানের প্রক্রিয়াকে যোগাযোগ প্রযুক্তি বা কমিউনিকেশন টেকনোলজি বলে।
তথ্য প্রযুক্তি ও যোগাযোগ প্রযুক্তির মধ্যে সম্পর্ক
তথ্যপ্রযুক্তি ও যোগাযোগ প্রযুক্তি একে অপরের পরিপূরক হিসেবে নিবিড়ভাবে সম্পর্কিত। তথ্যপ্রযুক্তিটি বিশেষভাবে গবেষণা কর্মকাণ্ডের সাথে সম্পর্কিত। কিন্তু এই গবেষণা কার্যক্রম শেষ করে, সেই গবেষণার প্রাপ্ত ফলাফল কুণ্ঠিগত রাখা হয় না কখনোই। বৈশ্বিকভাবে নেটওয়ার্ক স্থাপনের মাধ্যমে সেই তথ্য পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে দিতে প্রয়োজন হয় যোগাযোগ প্রযুক্তির। আধুনিক ইলেক্ট্রনিক যোগাযোগ ব্যবস্থায় সবচেয়ে বেশি অবদান রাখছে কম্পিউটার ও মোবাইল ফোন প্রযুক্তি।
বিভিন্ন সংবাদপত্র বা নিউজ টেলিভিশন চ্যানেলে আমরা এই দুটি প্রযুক্তির সমন্বিত রূপ দেখতে পাই। এখানে কম্পিউটার, মোবাইল, টেলি যোগাযোগ, অডিও-ভিডিও, সম্প্রচারসহ আরো বহুবিধ প্রযুক্তির সমন্বয় রয়েছে। আপনি এখন যেই আর্টিকেলটি করছেন এটিও তথ্য এবং যোগাযোগ প্রযুক্তির সাথে গভীরভাবে সম্পর্কিত। এই প্রযুক্তি গুলোর মধ্যে সম্পর্ক স্থাপনকারী কিছু উদাহরণ হলো:
- ইন্টারনেনেটের মাধ্যমে অত্যন্ত দ্রুততার সাথে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে তথ্য আদান-প্রদান সম্ভব হচ্ছে।
- স্যাটেলাইট ব্যবহার করে মূহুর্তের মধ্যে বিশ্বের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে যোগাযোগ সম্ভব হচ্ছে।
- ফাইবার অপটিক ক্যাবলের মাধ্যমে বিপুল পরিমান তথ্যের আদান-প্রদান অত্যন্ত গতিশীল হয়েছে।
এই দুটি প্রযুক্তির সমন্বয়ের ফলেই আমরা সমগ্র পৃথিবীকে একটি গ্লোবাল ভিলেজ (Global Village) বা বৈশ্বিক গ্রামে পরিণত করতে সক্ষম হয়েছি।
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির মধ্যে পার্থক্য
প্রযুক্তি ও বিজ্ঞান একে অপরের অবিচ্ছেদ্য অংশ। উদাহরণস্বরূপ, বিজ্ঞানের গবেষণার মাধ্যমে আমরা বিদ্যুৎ পেয়েছি এবং এটি ব্যবহার সম্পর্কে ধারণা পেয়েছি। অন্যদিকে, সেই ধারণাকে কাজে লাগিয়ে টেলিভিশন, মোবাইল, রেফ্রিজারেটর, বৈদ্যুতিক বাতি ইত্যাদি প্রযুক্তির উদ্ভাবন করা হয়েছে।
বিজ্ঞান | প্রযুক্তি |
ভৌত বিশ্বের যা কিছু পর্যবেক্ষণযোগ্য, পরীক্ষণযোগ্য ও যাচাইযোগ্য, তার সুশৃঙ্খল, নিয়মতান্ত্রিক গবেষণা ও সেই গবেষণালব্ধ জ্ঞানভাণ্ডারের নাম বিজ্ঞান। | কোন একটি প্রজাতির বিভিন্ন যন্ত্র এবং প্রাকৃতিক উপাদান প্রয়োগের ব্যবহারিক জ্ঞানই প্রযুক্তি। |
বিজ্ঞান হল পরীক্ষালব্ধ জ্ঞান। | প্রযুক্তি হলো বিজ্ঞানের অর্জিত জ্ঞানের ব্যবহারিক প্রয়োগ। |
বিজ্ঞান বিভিন্ন জ্ঞানকে সুস্পষ্টভাবে কল্যাণকর বিষয়বস্তু হিসেবে উদ্ভাবন করে। | প্রযুক্তির কল্যাণকর ও অকল্যাণকর দুটো দিকই রয়েছে, এর প্রয়োগের উপর ভালো-মন্দ নির্ভর করে। |
বিজ্ঞান বিশ্লেষণ, ছাড় এবং তত্ত্ব বিকাশের সাথে সম্পর্কিত। | প্রযুক্তি বিশ্লেষণ এবং ডিজাইনের সংশ্লেষণের সাথে সম্পর্কিত। |
বিজ্ঞানের উদ্দেশ্য হচ্ছে প্রাকৃতিক নিয়ম-নীতির উদ্ঘাটন। | প্রযুক্তি উদ্দেশ্য হলো বিজ্ঞানের বাস্তব নীতিমালার প্রয়োগ ঘটিয়ে মানুষের জীবনকে সহজ ও সুন্দর করে তোলা। |
তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির ব্যবহার
বর্তমানে ICT ছাড়া আমাদের এই আধুনিক মানবসভ্যতার একটি দিনও কল্পনা করা যায় না। দৈনন্দিন জীবনের প্রায় প্রতিটি কর্মকাণ্ডের সাথেই কোন না কোন ভাবে জড়িয়ে আছে তথ্য প্রযুক্তি ও যোগাযোগ প্রযুক্তি। যে সকল খাতে তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহার সবচেয়ে বেশি লক্ষ্য করা যায়, তার কিছু প্রয়োগিক ক্ষেত্র নিচে তুলে ধরা হলো:
চিকিৎসা ক্ষেত্রে তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহার
যোগাযোগ প্রযুক্তির এর মাধ্যমে স্বাস্থ্যসেবাকে আরও উন্নত এবং একইসাথে সাশ্রয়ী করে তোলা সম্ভব হয়েছে। বিভিন্ন ডাক্তার এবং নার্স সর্বদা আইসিটির ব্যবহার করছে তাদের স্বাস্থ্যসেবার কর্মকাণ্ড পরিচালনা করতে। বর্তমানে অনলাইনেই বিভিন্ন বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের সাক্ষাৎকার নেওয়া যায়। এর ফলে রোগীদের সাথে যোগাযোগ করা, তাদের রোগ নির্ণয় করা এবং রোগ অনুযায়ী যথোপযুক্ত চিকিৎসা প্রদান করাও তুলনামূলক সহজ হয়েছে।
বর্তমানে পৃথিবীব্যাপী মৃত্যুর হার অনেকাংশই কমে এসেছে, কারণ চিকিৎসার ব্যবস্থা এখন যুক্ত হয়েছে বিজ্ঞান ও তথ্য প্রযুক্তি। যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নয়নের কারণে খুব সহজেই এবং মুহুর্তের মধ্যেই রোগীকে চিকিৎসালয় নিয়ে যাওয়া সম্ভব হচ্ছে, যার ফলে বেঁচে যাচ্ছে বহু প্রাণ। চিকিৎসা ক্ষেত্রে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির আরো কিছু ব্যবহার হলো:
- দ্রুত রোগ নির্ণয় এবং নিরাময় ব্যবস্থা;
- ইলেকট্রনিক স্বাস্থ্য রেকর্ড;
- বৈদ্যুতিন স্বাস্থ্য পরীক্ষার সঠিক ফলাফল;
- রোগীর তথ্য ডাটাবেসে স্থায়ীভাবে সংরক্ষণ;
- ব্যয় এবং পরিশ্রম হ্রাস পেয়েছে;
- কৃত্রিম অঙ্গ প্রতিস্থাপন করা যায়;
- রোবোটিক অস্ত্রোপচার করা যায়;
- টেলিমেডিসিন সহ ব্যক্তির চাহিদা অনুযায়ী সঠিক ঔষধ সরবরাহ।
শিক্ষা ক্ষেত্রে তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহার
বর্তমানে বিশ্বব্যাপী শিক্ষা খাতে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির ব্যবহার ব্যাপকভাবে শিক্ষা ব্যবস্থার পরিবর্তন এনেছে। ঐতিহাসিক তথ্যমতে, ১৯৬৪ সাল থেকে বাংলাদেশে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির আবির্ভাব ঘটেছিল। প্রাথমিকভাবে টেলিকমিউনিকেশন এবং কম্পিউটারের ব্যবহার শুরু হয় এবং পরবর্তীতে ধাপে ধাপে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির উন্নতি হয়েছে যুগে যুগে।
বর্তমানে ইন্টারনেটের মাধ্যমে বিশ্বের যেকোন স্থান থেকে শিক্ষনীয় বিষয়বস্তু সম্পর্কে ঘরে বসেই জানা যায়। এটি আমাদের শেখার গতিকে কয়েকগুণ বৃদ্ধি করেছে। স্কুল, কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বত্রই এখন মাল্টিমিডিয়া ক্লাস পরিচালনা করা হচ্ছে। অন্যদিকে এসএসসি এবং এইচএসসি সহ বিভিন্ন বোর্ড পরীক্ষার প্রশ্নপত্র প্রযুক্তির মাধ্যমে মূল্যায়ন করা হচ্ছে।
শিক্ষার্থীদের হাতে থাকা মোবাইলের মাধ্যমেই সকল প্রকার ই-বুক ব্যবহার করতে এবং পড়তে পারছে। এক্ষেত্রে শুধু যে পাঠ্য বই থেকে শিক্ষা গ্রহণ করছে তা নয় বরং পৃথিবীব্যাপী বিখ্যাত বইগুলো সহ লক্ষ লক্ষ বই থেকে এখন মোবাইলের মাধ্যমেই জ্ঞানার্জন করা সম্ভব। বিগত মহামারীর সময় কঠিন পরিস্থিতিতে অনলাইন ক্লাস এবং অনলাইনে পরীক্ষা একটি উল্লেখযোগ্য তথ্যপ্রযুক্তির উদাহরণ।
কর্মক্ষেত্রে ও ব্যবসাক্ষেত্রে তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহার
ব্যবসার উন্নয়নের ক্ষেত্রে তথ্য প্রযুক্তি ব্যাপক আধুনিকতা এনেছে এবং ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসার নিশ্চিত করেছে। তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করে এখন ব্যবসায়ীরা তাদের গ্রাহক, সরবরাহকারী ও অন্যান্য বিজনেস টু বিজনেস প্রতিষ্ঠানের সাথে দ্রুত এবং সহজে যোগাযোগ করতে পারছে। বড় বড় শিল্প কারখানাগুলো আগের যোগাযোগের অক্ষমতা পেরিয়ে এখন বিশ্বব্যাপী বিভিন্ন কোম্পানির সাথে নিজেদের পণ্য লেনদেন করতে পারছে। শিল্প কারখানার অভ্যন্তরীণ কাজেও আন্তঃযোগাযোগ রক্ষার্থে ব্যবহৃত হচ্ছে ICT।
বর্তমানে বাংলাদেশসহ পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তের ব্যবসা গুলোতে যুক্ত হয়েছে ই-কমার্স ব্যবসা। এর মাধ্যমে নিজের উত্তর দিতে পণ্য পৌঁছে দেয়া যাচ্ছে দেশসহ পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে মানুষের কাছে। ব্যবসার ক্রয়-বিক্রয় এবং বিশ্বব্যাপী লেনদেনও বৃদ্ধি পেয়েছে অনেক। সর্বোপরি দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে অন্যতম অংশীদার ‘শিল্প’ -কে পরিচালনা করতে যোগাযোগ প্রযুক্তি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
কৃষি ক্ষেত্রে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির ব্যবহার
বর্তমানে বাংলাদেশে একটি কৃষিপ্রধান দেশ। কৃষি ক্ষেত্রে আধুনিকতার ছোঁয়া দেশের সার্বিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে। এটি কৃষকদের তাদের চাষের জন্য প্রয়োজনীয় তথ্য সহজেই খুঁজে পেতে এবং ব্যবহার করতে সাহায্য করে। ইন্টারনেট এবং যোগাযোগ প্রযুক্তির ব্যবহার করে কৃষকরা বিভিন্ন কৃষি প্রযুক্তি, যেমন- কৃষি যন্ত্রপাতি, সার এবং কীটনাশক কি পরিমাণ ব্যবহার করতে হবে তার বিষয়ে স্পষ্ট ধারণা পাচ্ছে। কৃষকদের উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি, দক্ষতা এবং সেই সাথে লাভ বৃদ্ধি করতে সহায়তা করছে ICT।
অন্যদিকে, এই প্রযুক্তি ব্যবহার করে কৃষকরা তাদের কৃষি পণ্যগুলো অনলাইন এবং অফলাইন উভয় প্রক্রিয়াতেই বিপণন করতে পারছে। বিশ্বব্যাপী এখন আমদানি-রপ্তানিতে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ।
যোগাযোগ ক্ষেত্রে তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহার
ইন্টারনেট এবং যোগাযোগ প্রযুক্তির ব্যবহার করে মানুষ এখন একে অপরের সাথে যেকোনো সময় এবং যেকোনো জায়গা থেকে সহজেই যোগাযোগ করতে পারছে। ই-মেইল, সোশ্যাল মিডিয়া, ভিডিও কনফারেন্সিং ইত্যাদি তথ্যপ্রযুক্তিরই উদ্ভাবন। ব্যক্তিগত জীবন থেকে শুরু করে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে এই প্রযুক্তির ব্যাপক উন্নয়ন সাধিত করেছে।
যোগাযোগ ছাড়া অধিকাংশ ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান, অফিস-আদালত, কোম্পানি-কারখানা ইত্যাদি সকল প্রকার প্রতিষ্ঠানই শত শত বছর পূর্বের প্রাতিষ্ঠানিক কর্মকাণ্ড পিছিয়ে যাবে। বিশ্বের ভ্রমণ ব্যবস্থার ব্যাপক উন্নয়নও সম্ভব হয়েছে আইসিটি এর উন্নয়নের কারণে।
ব্যক্তিগত জীবনে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির ব্যবহার
আমাদের ব্যক্তিগত এবং দৈনন্দিন জীবনে আইসিটির প্রয়োগ সার্বক্ষণিকই রয়েছে। বর্তমানে আমাদের সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত তথ্য প্রযুক্তির উপাদানটি হলো মোবাইল ফোন। এই মোবাইল ফোনের মাধ্যমে সহজেই যোগাযোগ করতে পারছি পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে মানুষের সাথে।
প্রতিদিনের কাজে মোবাইল ফোন, কম্পিউটার, টেলিভিশন, রেডিও ইত্যাদি ব্যবহার করে পৃথিবীতে ঘটে যাওয়া সকল ঘটনা সম্পর্কে জানতে পারছি, যোগাযোগ স্থাপনের মাধ্যমে তথ্য চাহিদা পূরণ করতে পারছি। এটি আমাদের সামাজিক যোগাযোগও উন্নত করেছে। তাছাড়া আমাদের ট্রান্সপোর্টেশন ব্যবস্থা আধুনিক হওয়ায় অনলাইনে পণ্য ক্রয়, টিকেট ক্রয়-বিক্রয়, সরকারি দিকনির্দেশনা প্রাপ্তি ইত্যাদি সম্ভব হচ্ছে।
বিনোদনের ক্ষেত্রে তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহার
বিনোদনের ক্ষেত্রেও তথ্যপ্রযুক্তির উদ্ভাবন পিছিয়ে নেই। বহুকাল আগে থেকেই অনলাইনে বই পড়া, বিশ্ব অ্যাডভেঞ্চার, ভার্চুয়াল রিয়েলিটি ইত্যাদি থেকে শুরু করে খেলা দেখা, কৌতুক ও অন্যান্য বিনোদন রাজ্যে পদার্পণ করা সম্ভব হচ্ছে এই প্রযুক্তির প্রয়োগেই। কম্পিউটার গেম খেলা বিনোদন জগতের অন্যতম আকর্ষণীয় একটি উদ্ভাবন।
গবেষণায় তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির ব্যবহার
গবেষণার ক্ষেত্রে, কোন একটি বিষয়বস্তু নিয়ে গবেষণা করা ও আবিষ্কার করার জন্য প্রয়োজন হয় তথ্য সংগ্রহ এবং তথ্য বিশ্লেষণ করার। এই সামগ্রিক কার্যক্রমকে পরিচালনা করছে তথ্যপ্রযুক্তির উদ্ভাবন গুলো। কৃষি শিল্প, ঔষধ শিল্প, উৎপাদন শিল্প ও বিভিন্ন প্রকার আধুনিক যন্ত্রপাতি বা উপাদান নিয়ে গবেষণার কার্যক্রমকে অত্যন্ত দ্রুতগতির করে দিয়েছে ICT।
গবেষণার শুরুতে, সংশ্লিষ্ট বিষয়বস্তু নিয়ে অতীতের বিভিন্ন বিশেষজ্ঞ/ গবেষকদের তথ্য সম্পর্কে এবং প্রাচীন ইতিহাস সম্পর্কে অনলাইনেই জানা যায়। গবেষণাকৃত সেই তথ্যগুলো দেশের বিভিন্ন প্রান্তরে কৃষকদের মাঝে পৌঁছে দেওয়া, বিশ্বব্যাপী নতুন উদ্ভাবনী আবিষ্কারের তথ্য প্রচার করা সম্ভব হয়।
পরিবেশ ও আবহাওয়ায় তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহার
আবহাওয়া মানুষের দৈনন্দিন জীবনযাত্রায় প্রভাব বিস্তারকারী অন্যতম প্রাকৃতিক উপাদান। বিভিন্ন মৌসুমী অবস্থা সম্পর্কে বাংলাদেশের প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলের কৃষকদের পরিবেশ ও আবহাওয়া সম্পর্কিত তথ্য অবহিত করতে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
মহাকাশে বর্তমানে প্রায় ৯,৭০০ টিরও বেশি স্যাটেলাইট রয়েছে। এ সকল স্যাটেলাইট পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তের আবহাওয়ার বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে পৃথিবীবাসীকে জানাচ্ছে এবং ভিডিও ফুটেজ পাঠাচ্ছে। তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহার করে ঘূর্ণিঝড় সহ নানা প্রাকৃতিক দুর্যোগের পূর্বাভাস, ঝড়-বৃষ্টি, আগত দিনের আবহাওয়ার পূর্বাভাস গুলো রেডিও, টেলিভিশনের মাধ্যমে দেশের সকল প্রান্তে মানুষকে জানানো হচ্ছে।
প্রচার ও গণমাধ্যমে তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহার
গত ২০ বছর আগে রেডিও সংবাদের মাধ্যমে প্রচার প্রচারণা ও সংবাদ সম্প্রচার করা হতো। বর্তমানে এই প্রচার ও গণমাধ্যমের কি বিপুল পরিমাণ উন্নয়ন হয়েছে, তা শত শত টেলিভিশন চ্যানেল, ইউটিউব চ্যানেল, ফেসবুক পেজ, ওয়েবসাইট/ পোর্টাল ইত্যাদি দেখলেই ধারণা পাওয়া যায়।
সামগ্রিকভাবে গণমাধ্যম প্রায় সম্পূর্নরূপেই নির্ভর করছে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির উপর। পৃথিবীতে দৈনন্দিন ঘটে যাওয়া খবরা-খবর পেতে এখন আর সংবাদপত্র পড়তে হয় না, বরং মোবাইলের মাধ্যমে ইন্টারনেট থেকে হাজার হাজার সংবাদপত্রের এক্সেস পাওয়া সম্ভব।
অনলাইন ভিত্তিক সরকারি কার্যক্রম পরিচালনায় তথ্য প্রযুক্তি
বর্তমানে বাংলাদেশের প্রায় সকল সরকারি কর্মকাণ্ডগুলো অনলাইন ভিত্তিক করা হয়েছে। ফলে সরকারি কার্যক্রম আরো বেশি সহজলভ্য এবং তথ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করছে। ভোটার আইডি কার্ড, জন্ম নিবন্ধন, পাসপোর্ট, ভিসার আবেদন ও ভিসা প্রসেসিং, ভূমি কর পরিশোধ, ই-পর্চা যাচাই ইত্যাদি সকল কিছুই এখন ডিজিটালাইজড হয়েছে।
শুধু অনলাইনে নয় অফলাইনে যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নয়ন করতে রাস্তাঘাট, সেতু, বন্দর প্রকল্প উদ্ভাবন করেছে সরকার।
তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির সুবিধা
তথ্য ও যোগাযোগ সম্পর্কিত প্রযুক্তির সুবিধা রয়েছে সর্বত্রই। নিচে তার অল্প কিছু সুবিধাসমূহ তুলে ধরা হলো:
যোগাযোগ প্রযুক্তি ব্যবহার করে সহজেই কমিউনিকেশন এবং ডেটা স্থানান্তর করা যায়।
- ডেটা ট্রান্সমিশন গতি বহুগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে।
- নেটওয়ার্ক অনেক বেশী উন্নত হয়েছে, যেমন: ৫জি ও ব্রডব্যান্ড।
- সামগ্রিক কাজের গতি বৃদ্ধি পেয়েছে অনেক।
- পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে তথ্য আদান-প্রদান করা যাচ্ছে।
- শিক্ষার্থীরা ঘরে বসেই ক্লাসে অংশগ্রহন করতে পারছে।
- ঘরে বসেই অনলাইনে পণ্য কেনাকাটা করা যায়।
- সময় ও শ্রম কম লাগে।
- মানুষের কর্মদক্ষতা বৃদ্ধি পাচ্ছে।
- ইন্টারনেট ব্যবহার করে আয় করা যাচ্ছে।
- ইন্টারনেট ব্যবহার করে আয় করা যাচ্ছে।
- অফিসের হিসাব নিকাশ থেকে শুরু করে সমস্ত কিছু অতি সহজেই করা যাচ্ছে।
আরও পড়ুন: সমুদ্রের বুকে এক নতুন শহর- হারমনি অফ দ্য সিস
তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির কয়েকটি ক্ষতিকর দিক বা অপব্যবহার
বিশ্বব্যাপী তথ্য ও যোগাযোগ সম্পর্কিত আধুনিক প্রযুক্তির উপকারিতা ও ব্যবহারিক প্রয়োগ রয়েছে হাজার হাজার ক্ষেত্রে। বর্তমানে তার প্রয়োগ বৃদ্ধি পাচ্ছে আরও অনেকাংশেই। কিন্তু হাজার হাজার ভালো দিকের পাশাপাশি এর কিছু নেতিবাচক বা ক্ষতিকারক দিকও রয়েছে। তথ্যপ্রযুক্তির অতি প্রচলিত কয়েকটি অপব্যবহার সমূহ হলো:
- সাইবার ক্রাইম বৃদ্ধি পাচ্ছে প্রতিনিয়তই।
- স্বাভাবিক জীবন-যাপনে ব্যাঘাত ঘটে। প্রাচীনকালে মানুষের জীবনমান বর্তমান সময় থেকে অধিক
- পরিশ্রমী, কর্মঠ এবং সুস্থ-সবল ছিল। পারস্পারিক সম্প্রীতিও ছিল ভালো, যা এখন নেই।
- কম্পিউটার গেমসে আসক্ত হচ্ছে শিশুসহ বিভিন্ন বয়সের মানুষজন।
- বেশি সময় কম্পিউটার বা ফোন স্কিনের দিকে তাকিয়ে থাকার দরুন চোখের ক্ষতি হওয়া।
- সোশ্যাল মিডিয়াতে মানুষ তার জীবনের গুরুত্বপূর্ণ সময়টুকু অপচয় করছে অপ্রয়োজনীয় কাজে।
- সোশ্যাল মিডিয়ায় নারী-পুরুষ উভয়েই নানাউ হ্যারেজমেন্টের শিকার হচ্ছে।
- অ্যাডাল্ট মুভি বা ব্লু ফিল্ম দ্বারা যুবসমাজের সামগ্রিক জীবন ব্যবস্থার ক্ষতিসাধন হচ্ছে।
- প্রযুক্তি জগতে সাইবার হামলার মাধ্যমে অন্যের প্রাইভেসি নষ্ট হচ্ছে।
- এই প্রযুক্তির উন্নয়নের ফলে বিভিন্ন আধুনিক অস্ত্র তৈরি হচ্ছে, যা সমগ্র বিশ্ববাসীর জন্য হুমকিস্বরূপ।
- অনেকে নেতিবাচক কর্মকাণ্ড পরিচালনার জন্য বিভিন্ন টিভি চ্যানেল, ফেসবুক একাউন্ট, ব্যাংক
- একাউন্ট এমনকি স্যাটেলাইট পর্যন্ত হ্যাক করতে পারছে এই প্রযুক্তির ফলে।
- সাধারণ মানুষ বাস্তবিক জগত থেকে ভার্চুয়াল জগতে বেশি সময় ব্যয় করছে।
- হ্যাকাররা কম্পিউটারে ভাইরাস/ ম্যালওয়ার ছড়িয়ে অনেককে ক্ষতিগ্রস্ত করছে।
- পণ্য ক্রয় বিক্রয় সহ বিভিন্ন আর্থিক কর্মকান্ডে সাধারণ মানুষদের কাছ থেকে অর্থ নিয়ে প্রতারণা করা হচ্ছে।
- যদিও আধুনিক তথ্য প্রযুক্তি ও যোগাযোগ প্রযুক্তির ব্যবহার করে শিক্ষা ব্যবস্থার উন্নয়ন সম্ভব, কিন্তু এই
- প্রযুক্তি শিক্ষার্থীদের পড়ালেখা আরো ক্ষতিগ্রস্ত করছে।
আধুনিক তথ্য প্রযুক্তি ও বাংলাদেশ
বাংলাদেশকে বর্তমানে ডিজিটাল বাংলাদেশ বলা হয়ে থাকে। দেশকে ডিজিটালাইজড করার পেছনে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আধুনিক প্রযুক্তি হলো তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি। বিশ্বের উন্নত দেশগুলোর সাথে এখন বাংলাদেশও সমান তালে এগিয়ে যাচ্ছে।
মোবাইল ফোন কম্পিউটার ইত্যাদি তথ্যপ্রযুক্তি নিয়ে বহুকাল আগে থেকেই বাংলাদেশ উন্নত দেশগুলোর সাথে প্রতিযোগিতা করে আসছে। বাংলাদেশ এখন রয়েছে প্রায় অর্ধশতাধিক গণমাধ্যম টেলিভিশন চ্যানেল। অন্যদিকে, ২০১৮ সালের ১১ই মে উৎক্ষেপন করা ‘বঙ্গবন্ধু-১’ স্যাটেলাইট টি দেশের তথ্যপ্রযুক্তি কে কয়েক ধাপ এগিয়ে নিয়েছে। এছাড়া রয়েছে বহু তথ্য গবেষণা কেন্দ্র, সম্প্রচার মাধ্যম ইত্যাদি।
এখন দেশে পরিচালিত হচ্ছে ই-কমার্স ব্যবসা, অনলাইন বেজড চাকরি ও ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান ইত্যাদি। বাড়ছে আমদানি-রপ্তানি। এমনকি তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তিকে ব্যবহার করে বাংলাদেশের প্রায় ৬.৫ লক্ষ সফল ফ্রিল্যান্সার তৈরি হয়েছে। বর্তমানে এই সংখ্যা আরো কয়েক গুন বৃদ্ধির লক্ষ্যে এগিয়ে যাচ্ছে।
শেষকথা
উপরোক্ত আলোচনা থেকে আমরা তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি কি এবং তার সামগ্রিক বিষয়বস্তু জানতে পারলাম। একটি বিখ্যাত প্রবাদ রয়েছে যে, “বিজ্ঞান মানুষকে দিয়েছে বেগ, কেড়ে নিয়েছে আবেগ।” তেমনি তথ্য প্রযুক্তি যোগাযোগ কর্মকাণ্ডকে গতিশীল করলেও, পিছিয়ে ভার্চুয়াল জীবনে নির্ভরশীল করে বাস্তবিক জীবন থেকে পিছিয়ে দিচ্ছে।