নামাযের গুরুত্বপূর্ণ মাসলা – মাসাইল : ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভের মধ্যে দ্বিতীয় স্তম্ভ সালাত। ফার্সি ভাষায় যাকে নামায বলা হয়। ঈমানের পরেই অন্য চারটি রুকনের মধ্যে নামায সর্বশেষ্ট্র ইবাদত। সালাতকে হাদিসের ভাষায় বা দ্বীনের খুটি বলা হয়েছে। খুঁটি ছাড়া যেমন ঘর দাড় করানো যায় না। তেমনি সালাত ছাড়া দ্বীন পরিপূর্ণ হয় না। মহান আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কালামে পাকে সূরা বাকারাহ এর ৪৩ নং আয়াতে ইরশাদ করেন —
وَاَقِيْمُوا الصَّلَاة وَأتُوا الزَّكَةَ وَارْكَعُوْ مَعَ الرُّكِعِيْنَ
অর্থ:— তোমরা সালাত কায়িম কর যাকাত দাও এবং রুকুকারীদের সাথে রুকু কর।
সূরা নিসা এর ১০৩ নং আয়াতে আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন—
إِنَّ الصَّلوةَ كَانَتْ عَلَى الْمُؤْمِنِيْنَ كِتَابًا مَوْقُوْتًا
অর্থ:— নিশ্চয় নির্ধারিত সময়ে সালাত কায়িম করা মুমিনদের উপর অবশ্য কর্তব্য।
নামাযের গুরুত্ব বুঝাতে নবী করীম (সা.) বলেন—
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ أَنَّهُ سَمِعَ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ أَرَأَيْتُمْ لَوْ أَنَّ نَهْرًا بِبَابِ أَحَدِكُمْ يَغْتَسِلُ فِيْهِ كُلَّ يَوْمٍ خَمْسًا مَاتَقُوْلُ ذَالِكَ يَبْقَى مِنْ دَرَنِهِ قَالُوا لَا يُبْقِي مِنْ دَرَنِهِ شَيْئًا قَالَ فَذَالِكَ مَثَلُ
অর্থ:— হযরত আবু হুরায়রা (রা.) হতে বর্ণিত তিনি রাসূলুল্লাহ (সা.) এ কথা বলতে শুনেছেন যে, তোমরা কি মনেকর যদি কারও ঘরের দরজায় কোন নহর থাকে এবং তাতে সে দৈনিক পাঁচবার করে গোসল করে তবে কি তার শরীরে কোন ময়লা থাকবে? সাহাবাগণ বললেন না তার দেহে কেনো ময়লাই থাকবে না। তখন মহানবী (সা.) বললেন পাঁচ ওয়াক্ত নামাযের দৃষ্টান্তও ঠিক এরুপ। আল্লাহ তায়ালা নামাযের দ্বারা যাবতীয় গুনাহ মিটিয়ে দেন (সহী বুখারী)
আমাদের আজকের আলোচনার বিষয়বস্তু হলো নামাযে সকল মাসলা- মাসাইল নিত্যদিনের প্রয়োজনীয় সকল দোয়া যেমন- দোয়া কুনুত, ইফতারের দোয়া, তারাবির নামাজের দোয়া, সহবাসের দোয়া, দোয়া মাসুরা, জানাজার নামাজের দোয়া, ঘুম থেকে উঠার দোয়া, কবর জিয়ারতের দোয়া, দুই সিজদার মাঝের দোয়া সম্পর্কে নিম্নে ধারাবাহিক আলোচনা করা হলো-
- নামাযের আহকাম ও আরকানসমূহ
- আরকান তথা নামাযের ভিতরের ফরজ ছয়টি
- নামাযের ওয়াজিবসমূহ
- নামাযের সুন্নাত সমূহ
- নামায ভঙ্গ হওয়ার কারণ
- নামাযের নিষিদ্ধ সময়
- ধারাবাহিক নামাযের সুন্নতের বিবরন
- রুকুর বিবরণ
- সিজ্দার বিবরণ
- বৈঠকের বিবরণ
- নামাযের মুস্তাহাবের বিবরণ
- যে সকল কাজে নামায ফাছেদ হয়
- আমলে কাছির
- পুরুষ ও স্ত্রীলোকের নামাযে যে সমস্ত স্থানে ভিন্নতা রয়েছে তাহার বিবরণ
- ছোতরার গুরুত্ব ও বিবরণ
- নামাযের নিয়ত ও দু’আ
- ফজরের নামায
- যোহরের নামায
- আসরের নামায
- মাগরিবের নামায
- এশার নামায
- জায়নামাযে দাড়িঁয়ে পড়ার দোয়া
- সানা
- রুকুর তাসবীহ
- রুকু থেকে উঠার তাসবীহ
- রুকু থেকে উঠার পর তাসবীহ
- সিজদার তাসবীহ
- দুই সিজাদার মধ্যখানে বসে পড়ার দুয়া
- তাশাহুদ
- দুরুদ শরীফ
- প্রতিদিনের জরুরী দোয়া সমূহ
নামাযের আহকাম ও আরকানসমূহ
নামাযের আহকাম ও আরকান তেরটি।
আহকাম তথা বাইরের ফরয সাতটি। যথা—
১। নামাযের জায়গা পবিত্র হওয়া।
২। কাপড় পবিত্র হওয়া।
৩। শরীর পবিত্র হওয়া।
৪। সতর আবৃত রাখা।
৫। ওয়াক্ত মতো নামায আদায় কর।
৬। কিবলামুখী হয়ে নামায পড়া।
৭। নিয়ত করা।
আরকান তথা নামাযের ভিতরের ফরজ ছয়টি
১। তাকবীরে তাহরীমা অথার্ৎ আল্লাহ আকবার বলে নামায আরম্ভ করা।
২। কিয়াম তথা দাঁড়িয়ে নামায পড়া।
৩। কিরাত পড়া অথার্ৎ নামাযের ভিতর সূরা ফাতিহার পর অন্য কোন সূরা অথবা তিন আয়াত পরিমান পাঠ করা।
৪। রুকু করা।
৫। সিজদা করা।
৬। শেষ বৈঠক ।
নামাযের ওয়াজিবসমূহ
১। সূরা ফাতিহা পাঠ করা।
২। সূরা ফাতিহার সাথে অন্য সূরা মিলানো।
৩। রুকু হতে সোজা হয়ে দাঁড়ানো।
৪। দুই সিজদার মাঝখানে সোজা হয়ে বসা।
৫। তিন বা চার রাকাত বিশিষ্ট নামাযে দুই রাকাতের পর বসা।
৬। প্রথম ও শেষ বৈঠকে তাশাহুদ পড়া।
৭। ইমামের জন্য কিরাত ওয়াক্ত অনুযায়ী আস্তে এবং জোরে পড়া।
৮। বিতরের সালাতে দুআয়ে কুনুত পড়া।
৯। দুই ঈদের সালাতে অতিরিক্ত ছয় তাকবীর বলা।
১০। ফরয নামাযে প্রথম দুই রাকাতে কিরাত পড়া।
১১। প্রত্যেক রাকাতের ফরযগুলোর তারতীব ঠিক রাখা।
১২। প্রত্যেক রাকাতের ওয়াজিবগুলোর তারতীব ঠিক রাখা।
১৩। তাদিলে আরকান অথার্ৎ রুকু, সিজদা, দাড়ানো, বা বসায় কমপক্ষে এক তাসবীহ পরিমান স্থির থাকা।
১৪। ٱلسَّلَامُ عَلَيْكُمْ وَرَحْمَةُ ٱللَّٰهِ বলে নামায শেষ করা।
নামাযের সুন্নাত সমূহ
১। তাকবীরে তাহরীমা বলার সময় পুরুষের কানেরলতি বরাবর এবং মহিলার কাঁধ পর্যন্ত দুহাত উঠানো।
২। তাকবীরে তাহরীমা বলে পুরুষের নাভির নিচে এবং মহিলার বুকের উপর হাত বাধাঁ।
৩। তাকবীরে তাহরীমার সময় মাথা অবনত না করা।
৪। ইমামের জন্য তাকবীর উচ্চস্বরে বলা।
৫। সানা পড়া।
৬। প্রথম রাকাতে সানার পর أَعُوْذُ بِاللهِ مِنَ الشَّيْطَانِ الرَّجِيْمِ পড়া ।
৭। প্রত্যেক রাকাতে সূরা ফাতিহার পূর্বে ﷽ পড়া।
৮। সুরা ফাতিহার শেষে আমীন পড়া।
৯। সানা, আউযুবিল্লাহ, বিস্মিল্লাহ ও আমিন আস্তে পড়া।
১০। ফরয নামাযের তৃতীয় ও চতুর্থ রাকাতে সূরা ফাতিহার পড়া।
১১। প্রত্যেক উঠা বসায় আল্লাহু আকবার বলা।
১২। রুকুর তাসবীহ পড়া ।
১৩। রুকু থেকে উঠার সময় – سَمِعَ اللهُ لِمَنْ حَمِدَهُ পড়া।
১৪। সিজদার তাসবীহ পড়া।
১৫। দুরুদ শরীফ পড়া।
১৬। দুয়ায়ে মাসুরা اللهم إني ظلمت نفسي ظلما كثيرا ولا يغفر الذنوب إلا أنت فاغفرلي مغفرة من عندك وارحمني إنك أنت الغفور الرحيم পড়া।
নামায ভঙ্গ হওয়ার কারণ
১। নামাযের অবস্থায় কথা বলা।
২। নামাযে সালাম দেওয়া।
৩। নামাযে সালামের উত্তর দেওয়া।
৪। নামাযের মধ্যে উহঃ আহঃ শব্দ করা।
৫। বিনা ওযরে কাশি দেওয়া।
৬। বিপদে বা বেদনায় শব্দ করে কাঁদা।
৭। নামায অবস্থায় নামাযের বাহিরের লোকের লুকমা গ্রহন করা।
৮। নামাযে কোরআন শরীফ দেখে পড়া।
৯। অপবিত্র জায়গায় সিজদা করা।
১০। নামায অবস্থায় দুনিয়াবী কোন কিছু চাওয়া।
১১। পানাহার করা।
১২। হাচিঁর জওয়াব দেওয়া।
১৩। কিবলার দিক হতে সিনা ঘুরে যাওয়া।
১৪। ইমামের আগে মুক্তাদী দড়ানো।
১৫। নামাযে শব্দ করে হাসা।
১৬। তিন তাসবীহ পরিমান সময় সতর খুলে থাকা।
১৭। বাহিরের কথা শুনে কোন কিছু বলা বা করা।
নামাযের নিষিদ্ধ সময়
তিন সময় নামায আদায় করা নিষিদ্ধ
১। সূর্যদয়ের সময়।
২। ঠিক দুপুরের সময়।
৩। সূর্যাস্তের সময়।
ধারাবাহিক নামাযের সুন্নতের বিবরন:
কিয়াম:
কিয়াম তথা দাড়ানোর মধ্যে সুন্নত তরিকা হচ্ছে—
১। নামাযের জন্য সোজা হয়ে দাঁড়ানো।
২। নামাযে দাঁড়াইবার সময় (পুরুষ) পদদ্বয় চারি অঙ্গলী পরিমান ফাঁক রাখিয়া দাঁড়ানোর আর মহিলা পদদ্বয়ের মধ্যে ফাঁক না রাখিয়অ উভয় পা মিলিয়ে দাড়াবে।
৩। নামাযের জন্য যখন দাড়াবে তখন এই দু’আ পড়া মুস্তাহাব—
اِنِّىْ وَجَّهْتُ وَجْهِىَ لِلَّذِىْ فَطَرَالسَّمَوَتِ وَاْلاَرْضَ حَنِيْفَاوَّمَااَنَا مِنَ الْمُشْرِكِيْنَ
উচ্চারণ:— ইন্নি ওয়াজ্জাহতু ওয়াজহিয়া লিল্লাযি ফাতারাস্ সামাওয়াতি ওয়াল আরদা হানিফা ওয়ামা আনা মিনাল মুশরিকীন।
অর্থ : নিশ্চই আমি তাঁহার দিকে মুখ ফিরালাম, যিনি আসমান জমিন সৃষ্টি করিয়াছেন । আমি মুশরিকদের অর্ন্তভূক্ত নই ।
৪। তাকবিরের সময় পুরুষ ও বাঁদি হস্তদ্বয় কর্ন বরাবর ও স্বাধীনা স্ত্রীলোক হইলে স্কন্ধ পর্যন্ত হাত উঠানো।
৫। কর্ণ পর্যন্ত হাত উঠাইতে অঙ্গুলী সমূহ খোলা ভাবে রাখা।
৬। মুক্তাদি ইমামের তাকবীরে তাহরীমার পরক্ষনে সঙ্গে সঙ্গেই তাকবীর বলা।
৭। তাকবীর বলা ও কর্নে অঙ্গলি স্পর্শ করার সময় মাথা সোজা রাখা, মাথা বক্র না করা।
৮। পুরুষ হইলে নাভির নিন্মেদেশে বাম হাতের উপর ডান হাত রাখা ও স্ত্রীলোক হইলে বক্ষদেশে হাত রাখা।
৯। ছানা পড়া—
– سُبْحَانَكَ اَللَّهُمَّ وَ بِحَمْدِكَ وَ تَبَارَكَ اسْمُكَ وَ تَعَالِىْ جَدُّكَ وَ لَا اِلَهَ غَيْرُكَ
সানা বাংলা উচ্চারণ :— সুবহানাকা আল্লাহুম্মা ওয়াবিহামদিকা ওয়াতাবা রাকাসমুকা ওয়া তা’আলা জাদ্দুকা ওয়ালাইলাহা গাইরুকা।
সানা এর বাংলা অর্থ : হে আল্লাহ্! আমি আপনার পবিত্রতা বর্ণনা করছি। তুমি প্রশংসাময়, তোমার নাম বরকতময়, তোমার মর্যাদা অতি উচ্ছে, আর তুমি ব্যতীত সত্যিকার অন্য কোনো মাবুদ নাই।
১০। তায়ওউজু (আউজুবিল্লা) পড়া। প্রকাশ থাকে যে প্রত্যেক রাকাআতে ফাতেহা পড়ার পূর্বে বিস্মিল্লাহ বলা সুন্নাত চাই ফরজ ওয়াজিব সুন্নাত নফল নামায হউক।
১১। ফাতেহা পাঠান্তে আমীন বলা।
১৩। ফাতেহা পড়ার পরক্ষনেই সূরা পড়া আরম্ভ করা।
১৪। ফাতেহার পর সুন্নত মুতাবেক সূরা মিলানো।
১৫। ইমামেম জন্য তাকবির সমূহ উচ্চস্বরে বলা।
রুকুর বিবরণ
মারাকিল ফালাহ কিতাবে আছে তকবির বলতঃ রুকুতে যাওয়া শামী কিতাবে লিখিত আছে রুকুর আরম্ভে তকবীর আরম্ভ করিয়া পূর্ণ রুকু অবস্থায় গিয়া শেষ করা।
- রুকুর মধ্যে তিন তাসবীহ سُبْحَانَ رَبِّيَ الْعَظِيْمِ (উচ্চারণ— সুবহানা রাব্বিয়াল আযীম) বলা।
- রুকু অবস্থায় দুই হাটুঁ হস্তদ্বয় দারা ধরা। (ইহাতে মতবেদ আছে)
- পুরুষ নামাযী হাতে আঙ্গুলী বিস্তার করিয়া হাঁটু ধরা এবং মহিলা নামাযী অঙ্গুলী বিস্তার না করিয়া হাটুঁতে হাত রাখা।
- হাটুঁদ্বয় সোজা রাখা।
- রুকুর সময় পিঠ সমতল রাখা।
- মাথা পিঠ ও পিছনের অংশ সমসূত্রে রাখা।
- রুকু হইতে ইমাম ও একা নামাযী – سَمِعَ اللهُ لِمَنْ حَمِدَهُ
(উচ্চারণ— সামিয়াআল্লাহু লিমান হামিদা) পড়া। - মুক্তাদি ইমাম ও একাকী নামাযী সকলেই রুকু হইতে উঠিয়া চুপে চুপে (উচ্চারণ— রাব্বানা লাকাল হাম্দ পড়া।) কিন্তু ইমামের বলা সম্মন্ধে মতভেদ আছে। (গায়াতুল আওতার)
সিজদার বিবরণ
- সিজ্দায় যাইবার জন্য اللَّهُ أَكْبَرُ আল্লাহু আকবার তাকবীর বলা।
- হাটুঁদ্বয় প্রথমে জমিনে রাখা।
- এরপর হস্তদ্বয় প্রথম রাখা।
- এর পর নাসিকা জমিনে রাখা।
- পরে জমিনে কপাল রাখা।
- উটিবার সময় প্রথম কপাল পরে নাসিকা তৎপর হাত শেষভাগে হাঁটু উঠান।
- দুই হাত কিছু ব্যবধানভাবে জমিনে রাখিয়া তাহার মধ্যে বরাবর সিজ্দাহ করা।
- সিজ্দার তাসবীহ سُبْحَانَ رَبِّيَ الْعَظِيْمِ উচ্চারণ— সুবহানা রাব্বিয়াল আ’লা তিনবার বলা।
- পুরুষের পেট ও কানের মধ্যে ফাঁকা রাখা দুই পার্শ্ব হইতে কুনুদ্য় কিছু ব্যবধান রাখা বাহুদ্বয় জমিনে না লাগানো। স্ত্রীলোকের রানের সহিত পেঠ দুই পার্শ্বের সহিত কুনই এবং বাহুদ্বয় জমিনে বিছাইয়া রাখা।
- শামী কিতাবে আছে পদদ্বয়ের অঙ্গুলীর অগ্রভাগ কেবলার দিক রাখিবে।
- পদদ্বয়ের গোড়ালীর উর্ধভাগের গিরাদ্বয় মিশাইয়া রাখা।
- আল্লাহু আকবার اللَّهُ أَكْبَرُ বলিয়া সিজ্দাহ হইতে উঠা।
- দুই সিজ্দার মধ্যভাগে তাশাহুদ পড়িবার জন্য বসার ন্যায় বসিয়া হস্তদ্বয়ের আঙ্গুলীসমূহ রানের উপর রাখা।
বৈঠকের বিবরণ
- পুরুষ বাম পা বিছাইয়া ডান পায়ের অঙ্গুলী উপর ভর করিয়া গোড়ালী উপর দিকে রাখিয়া বসা। স্ত্রীলোক দুই পায়ের পাতা ডান দিকে কিছু বাহির করিয়া বসা।
- দুই রানের উপর হস্তদ্বয়ের আঙ্গুলীসমূহ স্বাভাবিক ভাবে রাখিবে যেন অঙ্গুলীর অগ্রভাগ কেবলার দিকে থাকে হাত দ্বারা হাঁটু ধরিবে না।
- তাশাহুদ পড়িবার সময় “লা ইলাহা” শব্দ উচ্চারনের সঙ্গেই শাহাদাত আঙ্গুলী উর্ধ্ব দিকে ইশারা করা এবং ইল্লাল্লাহ শব্দ উচ্চারনের সঙ্গে সঙ্গেই নামান। (তবে ইহার মধ্যে মতবেদ আছে)।
- শেষ বৈঠকে আশাহুদের পর দরুদ শরীফ পড়া।
- দরুদ শরীপের পর দুয়ারে মাছুরা পড়া।
- প্রথম ডান দিকে ছালাম ফিরানো।
- ডান ও বাম দিকে ছালামের সাথে সাথে মুখ ফিরানো।
- প্রথম বারের চেয়ে দ্বিতীয় বার নিম্নস্বরে ছালাম বলা।
- ইমামের সঙ্গে সঙ্গেই মুক্তদির ছালাম বলা।
নামাযের মুস্তাহাবের বিবরণ
- পুরুষের হাতলী আস্তিনের মধ্য হইতে বাহির করিয়া নামাজ পড়া স্ত্রীলোক হাতলী কাপড়ে আবৃত রাখিবে।
- পুরুষ এবং স্ত্রীলোক উভয়ের দাড়ানো অবস্থায় সিজদার স্থানের দিকে দৃষ্টি রাখা।
- রুকু করার অবস্থায় পদদ্বয়ের পৃষ্ঠাদেশে দৃষ্টি রাখিবে।
- সিজদার সময় নাসিকার অগ্রভাগের দিকে দৃষ্টি রাখিবে।
- বসা অবস্থায় নিজের কোলের দিকে দৃষ্টি রাখিবে।
- ছালাম ফিরানোর সময় নিজ স্কন্ধের দিকে দৃষ্টি রাখিবে।
- কাশি আসিলে তাহা দমন করার চেষ্টা করা।
- হাই আসিলে দমনের জন্য মুখ বন্ধ করা।
- একামতে হাইয়্যালাচ্ছালাহ উচ্চারন কালে দাড়ানো।
যে সকল কাজে নামায ফাছেদ হয়
যে সকল কারনে নামায ফাছেদ (ভঙ্গ) হয় নিম্নে এ কয়েকটি কারন উল্লেখ করা হলো।
- নামাযের মধ্যে থাকিয়া কথা বলিলে।
- নামাযের মধ্যে অন্যকে ছালাম করিলে। (যদিও ভুলে)।
- নামাযের মধ্যে থাকিয়া কাহার সালামের উত্তর দিলে।
- আমলে কাছির করিলে। (বিস্তারিত আমলে কাছির অংশে লিখা হবে)
- নামাযের মধ্যে কিব্লার দিক থেকে অন্য দিকে ছিনা ফিরাইলে।
- মুখের বাহির হইতে সামান্য পরিমান কোন দ্রব্য আহার করিলে।
- মুখের ভিথরের মধ্যস্থিত খাদ্য বুট পরিমান বা তদপেক্ষা বেশী আহার করিলে।
- বিনা ওজরে গলা খাকরাইলে।
- ফু দিয়া সিজদাহের স্থানের ধূলা—বালি সরাইলে।
- নামাযের মধ্যে উহ্ আহ্ শব্দ করিলে।
- শরিরের কোন যন্ত্রনা বা কষ্টের কারনে শব্দ করতঃ কাদিলে।
- নামাযের মধ্যে থাকিয়া অন্যের হাচিঁর জবাবে ইয়রহামুকাল্লা বলিলে।
- সু—সংবাদ শ্রবনে আলহামদুলিল্লাহ বলিলে।
- দুঃসবাদ শ্রবনে ইন্নালিল্লাহ বলিলে।
- আশ্চর্য জনিত সংবাদ শ্রবনে লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ বা ছুবহানাল্লাহ বলিলে।
- ইমাম অনুপযুক্ত মোক্তাদিকে খলিফা নিযুক্ত করিলে।
- নামাযের মধ্যে বেহুশ বা পাগল হইলে।
আমলে কাছির
- দুররুল মোখতার কিতাবে লিখিত আছে নামাযের মধ্যে যদি এরুপ কোন অতিরিক্ত কাজ করে যাহা নামাযের কোন ক্রিয়া নহে বা নামাযের সাহায্যের জন্যও নহে এরুপ অতিরিক্ত কাজ করাকে আমলে কাছির বলে।
- গায়াতুল আওতার কিতাবে আমলে কাছির সম্পর্কে পাঁচ প্রকার মত পাওয়া যায়। যথা—
১। যদি নামাযের মধ্যে মুসল্লি এরুপ আমল করে যে অন্য লোক যে তাহাকে নামায আরম্ভ করিতে দেখে নাই সে দেখিলে যদি মনে করে এই লোক নামায আরম্ভ করে নাই এমন আমল করিলে।
২। দুই হাত দ্বারা যে কাজ করিতে হয় তাহা যদিও নামাযি এক হাত দ্বারাও করে তাহা আমলে কাছির যেমন পাগড়ি বাধাঁ পায়জামা পরিধান করা ইত্যাদি।
৩। নামাযে থাকিয়া উপযুর্পরি তিন বার নামাযের বাহিরের কোন কাজ করাকে কাছির বালে।
৪। শামী কিতাবে আছে যদি কোন স্ত্রীলোক নামাযে আছে আর তার স্বামী যদি বিনা খায়েশে বা খায়েশের শহিত চুম্বন করিলে বা ধরিলে নামায বাতিল হবে। যদিও স্ত্রীলোক ইচ্ছা না থাকা স্বত্ত্বেও এইরুপ হইয়া পড়ে।
৫। নামাযী যদি নিজেই বুঝিতে পারে যে, আসলে কাছির করিয়াছে।
শরহে বেকায়া, শামী, মারাকিল ফালাহ আলমগীরি অন্যান্য ফিকহ এর কিতাবে উল্লেখিত পাঁচ কৌলের প্রথম কৌলকে সর্বাগ্রগণ্য মত লিখিয়াছেন।
পুরুষ ও স্ত্রীলোকের নামাযে যে সমস্ত স্থানে ভিন্নতা রয়েছে তাহার বিবরণ।
নিম্নে গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলি উল্লেখ করা হলো।
১। পুরুষ তাকবিরে তাহরিমার সময় কানের লতি বরাবর হাত উঠাবে কিন্তু মহিলা স্কন্ধ বরাবর হাত উঠাবে।
২। পুরুষের হাত আস্তিনের বাহিরে থাকিবে আর মহিলাদের জন্য আস্তিনের ভিথরে থাকিবে।
৩। পুরুষ তাকবিরে তাহরিমা দিয়ে নাভির নিচে হাত বাধিবে কিন্তু মহিলা বুকের উপুর হাত রাখিবে।
৪। পুরুষ ডান হাত দিয়ে বাম হাত ধরিবে কিন্তু মহিলা হাত না ধরে ডান হাত বাম হাতের উপর রাখিবে।
৫। পুরুষ রুকু করিতে মাথা পিঠ বরাবর করতে হয় কিন্তু মহিলা সামান্য ঝুকিবে।
৬। পুরুষ রুকু করিতে হাটুঁর উপর ভর করিবে কিন্তু মহিলা হাত দ্বারা হাটুঁ স্পর্ষ করিবে ভর দিবে না।
৭। পুরুষ রুকুর মধ্যে হস্তদ্বয়ের আঙ্গুলী বিস্তার করিয়া হাটুঁ ধরবে মহিলা অঙ্গুলী বিস্তার করবে না।
৮। পুরুষ রুকু করার সময় হাঁটু ধরবে কিন্তু মহিলা হাটুঁ ধরবে না।
৯। রুকু করার সময় পুরুষ হাটুঁ সোজা রাখবে কিন্তুু মহিলা হাটুঁ কিছু বাঁকাইবে।
১০। রুকুর সময় পুরুষ হস্ত দুইটি পার্শ্বদ্বয়ের সহিত মিলাইয়া রাখিবে না কিন্তু মহিলা মিলাইয়া রাখিবে।
১১। সিজদার সময় পুরুষ দুই হাত মাটি হতে আলাদা রাখিবে তবে মহিলা মাটির উপর বিছাইয়া রাখিবে।
১২। তাশাহুদ পাঠকালে পুরুষ ডান পা সোজা রেখে বাম পা বিছিয়ে উহার উপর বসিবে কিন্তু মহিলা উভয় পা ডান দিকে বাহির করিয়া মাটির উপর চোতরে ভয় করিয়া বসিবে।
ছোতরার গুরুত্ব ও বিবরণ
তাহতাবী হেদায়া প্রভৃতি কিতাবের মর্মে জানা যায় নামাজীর সম্মুখে দিয়া অন্য লোক যাতায়াতের আশংঙ্কা থাকিলে নামাজীর সম্মুখে যে আড় বা পর্দা স্থাপন করা হয় তাহাকে ছোতরা বলে।
হেদায়া মায়াল ফেকায়া কিতাবে আছে হযরত নবী করিম (সা.) নিজে ছোতরা স্থাপন করিয়া নামাজ পড়িয়াছেন তাই ইহা সুন্নত।
নামাজীর সম্মুখ দিয়া যাতায়াত করা বিশেষ গুনাহের কাজ। গায়াতুল আওতার কিতাবে বর্ণিত রয়েছে নবী করিম (সা.) ফরমাইয়াছেন নামাজীর সম্মুখ দিয়া যাতায়াত করা কিরুপ গুনাহের কাজ গনমকারী তাহা জানিলে চল্লিশ বছর বিলম্ব করিতে হইলেও বিলম্ব করিত তবুও নামাজির সম্মুখ দিয়া গমন করিত না।
মারাকিল ফালাহ কিতাবে আছে নামাজী ব্যক্তি যদি অনুমান করে তাহার সম্মুখ দিয়ে লোক যাতায়াতের পথ আছে ঐরুপ অবস্থায় ছোতরা স্থাপন না করিয়া নামাজ পড়িলে নামাজীর মাকরুহের গুনাহ হইবে।
গায়াতুল আওতার কিতাবে আছে অন্তত: এক আঙ্গুলী পরিমান মোটা ও এক হাত লম্বা ছোতরা নামাজীর দাড়াঁনোর স্থান হইতে তিন হাতের ছেয়ে দূরবর্তী স্থানে পুতিলে সুন্নাত মুতাবিক ছোতরা হইবে।
নামাযের নিয়ত ও দু’আ
পাঁচ ওয়াক্ত নামাযের নিয়ত
নিয়ত হচ্ছে মনের ইচ্ছা বা সংকল্প। নামাযের পূর্বে নিয়ত করা ফরয। মনে মনে নিয়ত করাই আসল নিয়ত তবে নিয়ত মুখে উচ্চারণ করা ভালো।
ফজরের নামায: মোট চার রাকাত
ফজরের দুই রাকাত সুন্নাত নামাযের নিয়ত:—
-نَوَيْتُ أنْ أصَلَّى لِلَّهِ تَعَالَى رَكْعَتَى صَلوةِ الفَجْرِ سُنَّةُ رَسُولِ اللَّهِ تَعَالَى مُتَوَجِّهَا إِلَى جِهَةِ الْكَعْبَةِ الشَّرِيْفَةِ اللَّهُ أَكْبَرْ
উচ্চারণ:— নাওয়াইতুআন উসাল্লিয়া লিল্লাহি তা’য়ালা রাকআতাই সালাতিল ফাজরি সুন্নাতু রাসুলিল্লাহি তা’য়ালা মুতাওয়াজ্জিহান ইলা জিহাতিল কা’বাতিশ শরীফাতি আল্লাহু আকবার।
ফজরের দুই রাকাত ফরয নামাযের নিয়ত:—
-نَوَيْتُ أَنْ أَصَلِّيَ لِلَّهِ تَعَالَى رَكْعَتَى صَلوةِ الفَجْرِ فَرْضُ اللَّهِ تَعَالَى مُتَوَجّها إلى جهَةِ الكَعْبَةِ الشَّرِيفَةِ الله أكبر
উচ্চারণ:— নাওয়াইতুআন উসাল্লিয়া লিল্লাহি তা’য়ালা রাকআতাই সালাতিল ফাজরি ফারদুল্লাহি তা’য়ালা মুতাওয়াজ্জিহান ইলা জিহাতিল কা’বাতিশ শরীফাতি আল্লাহু আকবার।
যোহরের নামায: মোট ১২ রাকাত
যুহরের চার রাকাআত সুন্নাত নামাযের নিয়ত:—
-نَوَيْتُ أَنْ أَصَلِّيَ لِلَّهِ تَعَالَى أَرْبَعَ رَكَعَاتِ صَلوةِ الظُّهْرِ سُنَّةُ رَسُوْلِ اللَّهِ تَعَالَى مُتَوَجِّهَا إِلَى جِهَةِ الْكَعْبَةِ الشَّرِيفَةِ اللَّهُ أَكْبَرُ
উচ্চারণ:— নাওয়াইতুআন উসাল্লিয়া লিল্লাহি তা’য়ালা আরবা’আ রাকাআতি সালাতিয যুহরি সুন্নাতু রাসুলিল্লাহি তা’য়ালা মুতাওয়াজ্জিহান ইলা জিহাতিল কা’বাতিশ শরীফাতি আল্লাহু আকবার।
যুহরের চার রাকাআত ফরয নামাযের নিয়ত:
-نَوَيْتُ أَنْ أَصَلِّيَ لِلَّهِ تَعَالَى أَرْبَعَ رَكَعَاتِ صَلوةِ الظُّهْرِ فَرْضُ اللَّهِ تَعَالَى مُتَوَجِّها إلى جِهَةِ الْكَعْبَةِ الشَّرِيفَةِ اللَّهُ أَكْبَر
উচ্চারণ:— নাওয়াইতুআন উসাল্লিয়া লিল্লাহি তা’য়ালা আরবা’আ রাকাআতি সালাতিয যুহরি ফারদুল্লাহি তা’য়ালা মুতাওয়াজ্জিহান ইলা জিহাতিল কা’বাতিশ শরীফতি আল্লাহু আকবার।
যুহরের দুই রাকাত সুন্নাত নামাযের নিয়ত:
-نَوَيْتُ أَنْ أَصَلِّيَ لِلَّهِ تَعَالَى رَكْعَتَيْ صَلوةِ الظُّهْرِ سُنَّةُ رَسُوْلِ اللَّهِ تَعَالَى مُتَوَجِّهًا إلى جِهَةِ الْكَعْبَةِ الشَّرِيفَةِ اللَّهُ أَكْبَرُ
উচ্চারণ:— নাওয়াইতুআন উসাল্লিয়া লিল্লাহি তা’য়ালা রাকাআতাই সালাতিয যুহরি সুন্নাতু রাসুলিল্লাহি তা’য়ালা মুতাওয়াজ্জিহান ইলা জিহাতিল কা’বাতিশ শরীফাতি আল্লাহু আকবার।
যুহরের দুই রাকাত সফল নামাযের নিয়ত:
-نَوَيْتُ أَنْ أَصَلِّيَ لِلَّهِ تَعَالَى رَكَعَتَيْ صَلوةِ الظُّهْرِ نَفْلُ مُتَوَجِّهَا إِلَى جِهَةِ الْكَعْبَةِ الشَّرِيفَةِ اللَّهُ أَكْبَر
উচ্চারণ:— নাওয়াইতুআন উসাল্লিয়া লিল্লাহি তা’য়ালা রাকাআতাই সালাতিল যুহরি নাফলু মুতাওয়াজ্জিহান ইলা জিহাতিল কা’বাতিশ শরীফাতি আল্লাহু আকবার।
আসরের নামায: মোট আট রাকাত
আসরের চার রাকাআত সুন্নাত নামাযের নিয়ত:
-نَوَيْتُ أَنْ أَصَلِّيَ لِلَّهِ تَعَالَى اَرْبَعَ رَكَعَاتِ صَلوةِ الْعَصْرِ سُنَّةُ رَسُوْلِ اللَّهِ تَعَالَى مُتَوَجِّهَا إِلَى جِهَةِ الْكَعْبَةِ الشَّرِيفَةِ اللَّهُ أَكْبَرُ
উচ্চারণ:— নাওয়াইতুআন উসাল্লিয়া লিল্লাহি তা’য়ালা আরবা’আ রাকাআতি সালাতিল আসরি সুন্নাতু রাসুলিল্লাহি মুতাওয়াজ্জিহান ইলা জিহাতিল কা’বাতিশ শরীফাতি আল্লাহু আকবার।
আসরের চার রাকাআত ফরয নামাযের নিয়ত:
-نَوَيْتُ أَنْ أَصَلَّى لِلَّهِ تَعَالَى أَرْبَعَ رَكَعَاتِ صَلوةِ الْعَصْرِ فَرْضُ اللَّهِ تَعَالَى مُتَوَجِّهًا إلى جِهَةِ الْكَعْبَةِ الشَّرِيفَةِ اللَّهُ أَكْبَر
উচ্চারণ:— নাওয়াইতুআন উসাল্লিয়া লিল্লাহি তা’য়ালা আরবা’আ রাকাআতি সালাতিল আসরি ফারদুল্লাহি তা’য়ালা মুতাওয়াজ্জিহান ইলা জিহাতিল কা’বাতিশ শরীফাতি আল্লাহু আকবার।
মাগরিবের নামায: মোট সাত রাকাত:
মাগরিবের তিন রাকাআত ফরজ নামাযের নিয়ত:
-نَوَيْتُ اَنْ اُصَلَّى لِلَّهِ تَعَالَى ثَلْثَ رَكَعَاتِ صَلوةِ الْمَغْرِبِ فَرْضُ اللَّهِ تَعَالَى مُتَوَجِّهَا إِلَى جِهَةِ الْكَعْبَةِ الشَّرِيفَةِ اللَّهُ أَكْبَر
উচ্চারণ:— নাওয়াইতুআন উসাল্লিয়া লিল্লাহি তা’য়ালা সালাসা রাকাআতি সালাতিল মাগরিবি ফারদুল্লাহি তা’য়ালা মুতাওয়াজ্জিহান ইলা জিহাতিল কা’বাতিশ শরীফাতি আল্লাহু আকবার।
মাগরিবের দুই রাকাআত সুন্নাত নামাযের নিয়ত:
-نَوَيْتُ اَنْ اُصَلَّى لِلَّهِ تَعَالَى رَكْعَتَيْ صَلوةِ الْمَغْرِبِ سُنَّةُ رَسُوْلِ اللَّهِ تَعَالَى مُتَوَجِّهًا إلى جِهَةِ الْكَعْبَةِ الشَّرِيفَةِ اللَّهُ أَكْبَرُ
উচ্চারণ:— নাওয়াইতুআন উসাল্লিয়া লিল্লাহি তা’য়ালা রাকআতাই সালাতিল মাগরিবি সুন্নাতু রাসুলিল্লাহি তা’য়ালা মুতাওয়াজ্জিহান ইলা জিহাতিল কা’বাতিশ শরীফাতি আল্লাহু আকবার।
মাগরিবের দুই রাকাআত নফল নামাযের নিয়ত:
-نَوَيْتُ أنْ أصَلَّى لِلَّهِ تَعَالَى رَكْعَتَى صَلوةِ الْمَغْرِبِ نَفْلُ مُتَوَجَّهَا إِلى جِهَةِ الْكَعْبَةِ الشَّرِيفَةِ اللَّهُ أَكْبَرُ
উচ্চারণ:— নাওয়াইতুআন উসাল্লিয়া লিল্লাহি তা’য়ালা রাকআতাই সালাতিল মাগরিবি নাফলু মুতাওয়াজ্জিহান ইলা জিহাতিল কা’বাতিশ শরীফাতি আল্লাহু আকবার।
ইশার নামায: বিতির সহ মোট ১৮ রাকাত
ইশার চার রাকাআত সুন্নাত নামাযের নিয়ত:
نَوَيْتُ أَنْ أَصَلِّيَ لِلَّهِ تَعَالَى أَرْبَعَ رَكَعَاتِ صَلوةِ الْعِشَاءِ سُنَّةُ رَسُوْلِ اللَّهِ تَعَالَى مُتَوَجِّهًا إِلى جِهَةِ الْكَعْبَةِ الشَّرِيفَةِ اللَّهُ أَكْبَرُ
উচ্চারণ:— নাওয়াইতুআন উসাল্লিয়া লিল্লাহি তা’য়ালা আরবা’আ রাকাআতি সালাতিল ইশাই সুন্নাতু রাসুলিল্লাহি তা’য়ালা মুতাওয়াজ্জিহান ইলা জিহাতিল কা’বাতিশ শরীফাতি আল্লাহু আকবার।
ইশার চার রাকাআত ফরয নামাযের নিয়ত:
نَوَيْتُ أَنْ أَصَلِّيَ لِلَّهِ تَعَالَى اَرْبَعَ رَكَعَاتِ صَلوةِ الْعِشَاءِ فَرْضُ اللَّهِ تَعَالَى مُتَوَجِّهَا إِلى جِهَةِ الْكَعْبَةِ الشَّرِيفَةِ اللَّهُ أَكْبَر
উচ্চারণ:— নাওয়াইতুআন উসাল্লিয়া লিল্লাহি তা’য়ালা আরবা’আ রাকাআতি সালাতিল ইশাই ফারদুল্লাহি তা’য়ালা মুতাওয়াজ্জিহান ইলা জিহাতিল কা’বাতিশ শরীফাতি আল্লাহু আকবার।
ইশার দুই রাকাআত সুন্নাত নামাযের নিয়ত:
نَوَيْتُ أَنْ أَصَلِّيَ لِلَّهِ تَعَالَى رَكْعَتَيْ صَلوةِ الْعِشَاءِ سُنَّةُ رَسُوْلِ اللَّهِ تَعَالَى مُتَوَجِّهًا إلى جِهَةِ الْكَعْبَةِ الشَّرِيفَةِ اللَّهُ أَكْبَرُ
উচ্চারণ:— নাওয়াইতুআন উসাল্লিয়া লিল্লাহি তা’য়ালা রাকআতাই সালাতিল ইশাই সুন্নাতু রাসুলিল্লাহি তা’য়ালা মুতাওয়াজ্জিহান ইলা জিহাতিল কা’বাতিশ শরীফাতি আল্লাহু আকবার।
ইশার দুই রাকাআত নফল নামাযের নিয়ত:
نَوَيْتُ أَنْ أَصَلِّيَ لِلَّهِ تَعَالَى رَكْعَتَيْ صَلوةِ الْعِشَاءِ نَفْلُ مُتَوَجِّهَا إِلَى جِهَةِ الْكَعْبَةِ الشَّرِيفَةِ اللَّهُ أَكْبَرُ
উচ্চারণ:— নাওয়াইতুআন উসাল্লিয়া লিল্লাহি তা’য়ালা রাকআতাই সালাতিল ইশাই নাফলু মুতাওয়াজ্জিহান ইলা জিহাতিল কা’বাতিশ শরীফাতি আল্লাহু আকবার।
বিতরের নামাযের নিয়ত:
نَوَيْتُ اَنْ اُصَلَّى لِلَّهِ تَعَالَى ثَلْثَ رَكَعَاتِ صَلوةِ الْوِتْرِ وَاجِبِ اللَّهِ تَعَالَى مُتَوَجّها إلى جِهَةِ الْكَعْبَةِ الشَّرِيفَةِ اللَّهُ أَكْبَرُ
উচ্চারণ:— নাওয়াইতুআন উসাল্লিয়া লিল্লাহি তা’য়ালা সালাসা রাকাআ’তি সালাতিল উইতরি ওয়াজিবিল্লাহি তা’য়ালা মুতাওয়াজ্জিহান ইলা জিহাতিল কা’বাতিশ শরীফাতি আল্লাহু আকবার।
দুই রাকাত হালকি নফল নামাযের নিয়ত:—
উচ্চারণ:— নাওয়াইতুআন উসাল্লিয়া লিল্লাহি তা’য়ালা রাকাআতাই সালাতিল ইশাই নাফলু মুতাওয়াজ্জিহান ইলা জিহাতিল কা’বাতিশ শরীফাতি আল্লাহু আকবার।
নোটঃ— ফরয নামযে জামাতের সাথে ইমামের পিছনে ইকতাদা করতে মুতাওয়াজ্জিহান এর পূর্বে বলতে হয়
উচ্চারণ— ইকতাদাইতু বিহাযাল ইমাম।
আর ইমামতি করার ক্ষেত্রে ইমাম সাহেবকে মুতাওয়াজ্জিহান এর পূর্বে পড়তে হয়—
উচ্চারণ:— আনা ইমামুল লিমান হাদ্বারা ওয়া মাই—য়াহদুর।
জায়নামাযে দাড়িঁয়ে এই দুআ পড়তে হয়—
اِنِّىْ وَجَّهْتُ وَجْهِىَ لِلَّذِىْ فَطَرَالسَّمَوَتِ وَاْلاَرْضَ حَنِيْفَاوَّمَااَنَا مِنَ الْمُشْرِكِيْنَ
উচ্চারন:— ইন্নি ওয়াজ্জাহতু ওয়াজহিয়া লিল্লাযি ফাতারাস সামাওয়াতি ওয়াল আরদা হানিফাং ওয়ামা আনা মিনাল মুশরিকিন।
সানা :
سُبْحَانَكَ اَللَّهُمَّ وَ بِحَمْدِكَ وَ تَبَارَكَ اسْمُكَ وَ تَعَالِىْ جَدُّكَ وَ لَا اِلَهَ غَيْرُكَ
সানা বাংলা উচ্চারণ :— সুবহানাকা আল্লাহুম্মা ওয়াবিহামদিকা ওয়াতাবা রাকাসমুকা ওয়া তা’আলা জাদ্দুকা ওয়ালাইলাহা গাইরুকা।
সানা এর বাংলা অর্থ : হে আল্লাহ্! আমি আপনার পবিত্রতা বর্ণনা করছি। তুমি প্রশংসাময়, তোমার নাম বরকতময়, তোমার মর্যাদা অতি উচ্ছে, আর তুমি ব্যতীত সত্যিকার অন্য কোনো মাবুদ নাই।
রুকুর তাসবীহ
سُبْحَانَ رَبِّيَ الْعَظِيْمِ
উচ্চারন:— সুবহানা রাব্বিয়াল আযীম।
বাংলা অর্থ : “ আল্লাহ পবিত্র ও মহামহিম।
রুকু থেকে উঠার তাসবীহ:
سَمِعَ اللهُ لِمَنْ حَمِدَة
উচ্চারন:— সামিআল্লাহু লিমান হামিদাহ।
রুকু থেকে উঠার পর তাসবীহ:
رَبَّنَا لَكَ الْحَمْد
উচ্চারণ: রাব্বানা লাকাল হামদু।
অর্থ: হে আল্লাহ! যাবতীয় প্রশংসা তোমারই।
সিজদার তাসবীহ:
سُبحانَ ربِّيَ الأعلَى
উচ্চারণ : সুবহানা রাব্বিয়াল আ’লা
বাংলা অর্থ : আমার প্রতিপালক সুমহান ও পবিত্র।
দুই সিজাদার মধ্যখানে বসে পড়ার দুয়া:
اغْفِرْلِيْ ااَللّهُمَّ
উচ্চারন:— আল্লাহুম্মাগফিরলি।
অর্থ: আল্লাহ আমাকে ক্ষমা করে দিন।
নোটঃ— হাদীস শরীফে দুই সিজদার মাঝখানে দীর্ঘ দোয়া পড়ার বর্ণনা আছে। এসব দু’আ নফল নামাযে পড়া যায়। তবে ফরজ ও জামাতের সাথে নামাযে সংক্ষিপ্ত দু’আ পড়তে হয়।
তাশাহুদ
التَّحِيَّاتُ لِلَّهِ وَالصَّلَوَاتُ وَالطَّيِّبَاتُ ، السَّلَامُ عَلَيْكَ أَيُّهَا النَّبِيُّ وَرَحْمَةُ اللَّهِ وَبَرَكَاتُهُ ، السَّلَامُ عَلَيْنَا وَعَلَى عِبَادِ اللَّهِ الصَّالِحِينَ ، أَشْهَدُ أَنْ لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ وَأَشْهَدُ أَنَّ مُحَمَّدًا عَبْدُهُ وَرَسُولُهُ
তাশাহুদ বাংলা উচ্চারণ : আত্তাহিয়্যাতু লিল্লাহি ওয়াস্সালাওয়াতু ওয়াত্তায়্যিবাতু আস্সালামু আলাইকা আইয়্যুহান্নাবিয়্যু ওয়ারাহমাতুল্লাহি ওয়াবারাকাতুহু। আস্সালামু আলাইনা ওয়া আলা ইবাদিল্লাহিস্ সোয়ালিহিন। আশহাদু আল্লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়া আসহাদু আন্না মুহাম্মাদান আব্দুহু ওয়া রাসুলুহু।
তাশাহুদ অর্থ : ‘সমস্থ মৌখিক ইবাদত আল্লাহর জন্য। হে নবি! আপনার প্রতি শান্তি বর্ষিত হোক এবং আল্লাহর অনুগ্রহ ও বরকত বর্ষিত হোক। শান্তি আমাদের ওপর এবং আল্লাহর নেক বান্দাদের ওপর বর্ষিত হোক। আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ব্যতীত আর কোনো মাবুদ বা উপাস্য নাই এবং আমি আরও সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, নিশ্চয়ই মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আল্লাহর বান্দা ও রাসুল।
দুরুদ শরীফ:
اَللّٰهُمَّ صَلِّ عَلٰى مُحَمَّدٍ. وَّعَلٰى اٰلِ مُحَمَّدٍ كَمَا صَلَّيْتَ عَلٰى اِبْرَاهِيْمَ وَعَلٰى اٰلِ اِبْرَاهِيْمَ’ اِنَّكَ حَمِيْدٌ
উচ্চারন: আল্লাহুম্মা সাল্লিআলা মুহামাদিও ওআলা আলী মুহাম্মদ কামা সাল্লাইতা আলা ইব্রাহিম ওয়ালাআলী ইব্রাহিম ইন্নাকা হামিদুন মাজিদ।
اَللّٰهُمَّ بَارِكْ عَلٰى مُحَمَّدٍ. وَّعَلٰى اٰلِ مُحَمَّدٍ كَمَا بَارَكْتَ عَلٰى اِبْرَاهِيْمَ وَعَلٰى اٰلِ اِبْرَاهِيْمَ. اِنَّكَ حَمِيْدٌ مَّجِيْدٌ
উচ্চারন: আল্লাহুম্মা বারিকআলা মুহামাদিও ওআলা আলী মুহাম্মদ কামা বারেকতা আলা ইব্রাহিম ওয়ালাআলী ইব্রাহিম ইন্নাকা হামিদুন মাজিদ।
দোয়া মাসুরা
اللهم إني ظلمت نفسي ظلما كثيرا ولا يغفر الذنوب إلا أنت فاغفرلي مغفرة من عندك وارحمني إنك أنت الغفور الرحيم
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা ইন্নি যালামতু নাফসি যুলমান্ কাসিরা ওয়ালা ইয়াগফিরুযুনুবা ইল্লা আন্তা ফাগফিরিলী মাগফিরাতাম মিন ইন্দিকা ওয়ারহামনী আন্তাল গাফুরুর রাহীম।
দোয়া মাসুরা অর্থ : হে আল্লাহ! আমি নিজের উপর অনেক জুলুম করেছি। আর আপনি ছাড়া গুনাহ ক্ষমাকারী আর কেউ নেই। আপনি নিজ অনুগ্রহে আমাকে ক্ষমা করুন এবং আমার প্রতি রহম করুন। নিঃসন্দেহে আপনিই ক্ষমাশীল, করুণাময়। (মুত্তাফাক্কুন আলাইহি)
সালাম
সালাম ফিরাতে উভয় কাঁধের দিকে নজর করে বলতে হয়:
ٱلسَّلَامُ عَلَيْكُمْ وَرَحْمَةُ ٱللَّٰهِ
উচ্চারণ: আস্সালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ।
দোয়া কুনুত
দোয়া কুনুত (dua-kunut) : মূল্যবান দোয়াগুলোর মধ্যে থেকে অন্যতম। এশার নামাযের পর থেকে সোবহে সাদিকের পূর্ব পর্যন্ত রাতের নামাজ অর্থ্যাৎ বিতর নামাযের সময়, এর ভিতরে যে কোনো সময় এ বিতর নামাজ পড়া যায়। তবে তাহাজুজদের নামাযের পর এ নামায পড়া উত্তম।
اللّهُمَّ إِنَّا نَسْتَعِينُكَ وَنَسْتَغْفِرُكَ وَنُؤْمِنُ بِكَ وَنَتَوَكَّلُ عَلَيْكَ وَنُثْنِيْ عَلَيْكَ الْخَيْرَ وَنَشْكُرُكَ وَلاَ نَكْفُرُكَ، وَنَخْلَعُ وَنَتْرُكُ مَنْ يَّفْجُرُكَ، اللّهُمَّ إِيَّاكَ نَعْبُدُ، وَلَكَ نُصَلِّيْ وَنَسْجُدُ، وَإِلَيْكَ نَسْعٰى وَنَحْفِدُ، نَرْجُو رَحْمَتَكَ وَنَخْشٰى عَذَابَكَ، إِنَّ عَذَابَكَ بِالْكُفَّارِ مُلْحِقٌ
দোয়া কুনুত এর উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা ইন্না নাস্তাঈনুকা ওয়ানাস্তাগফিরুকা ওয়ানু’মিনু বিকা ওয়ানাতাওয়াক্কালু আলাইকা ওয়ানুসনী আলাইকাল খাইর। ওয়ানাশকুরুকা ওয়ানা নাকফুরুকা, ওয়ানাখলাউ, ওয়ানাতরুকু মাইয়্যাফজুরুকা। আল্লাহুম্মা উয়্যাকা না’বুদু ওয়ালাকা নুসাল্লি ওয়ানাসজুদু, ওয়া ইলাইকা নাসআ, ওয়ানাহফিদু ওয়ানারজু রাহমাতিকা ওয়ানাখশা আযাবাকা ইন্না আযাবাকা বিলকুফ্ফারি মুলহিক্ব।
দোয়া কুনুত বাংলা অর্থ : হে আল্লাহ আমরা তোমারই সাহায্য চাই, তোমারই নিকট ক্ষমা চাই, তোমারই প্রতি ঈমান রাখি, তোমারই ওপর ভরসা করি এবং আমাদের সকল কিছু তোমার দিকে ন্যস্ত করি। আমরা তোমার কৃতজ্ঞ হয়ে চলি অকৃতজ্ঞ হই না, এবং যারা তোমার অবাধ্য হয় তাদের থেকে সম্পর্ক বিছিন্ন করে তাদেরকে পরিত্যাগ করি।
চিত্রসহ পুরুষদের নামাযের পদ্ধতি
পুরুষদের নামাযে দাঁড়ানোর চিত্র
নামাযে দাঁড়ানোর সময় প্রথমে অবশ্যই কিবলামূখী হতে হবে। (আলমগীরী)
নামাযের নিয়ত করার পূর্ব পর্যন্ত হাত ছাড়া অবস্থায় রাখবে, এ সময় হাত বাঁধা মাকরুহ।
পুরুষদের পা রাখার চিত্র:
নামাযে এমন ভাবে দাঁড়াতে হবে, যেন উভয় পায়ের মধ্যখানে চার আঙ্গুল পরিমান ফাঁক থাকে।
পুরুষদের কান বরাবর হাত উঠানোর নিয়ম:
পুরুষদের দুই হাত কান বরাবর এভাবে উঠাবে যাতে উভয় হাতের তালু কিবলার দিকে হয়। আঙ্গুলগুলোর মাথা যেন কিবলামুখী থাকে। (শামী)
নাভীর নিচে হাত বাঁধার নিয়ম:
নাভির নিচে ডান হাতকে বাম হাতের উপর বাঁধবে। এ সময় ডান হাতের বৃদ্ধা ও কনিষ্ঠা আঙ্গুলি দ্বারা বাম হাতের কব্জি ধরে রাখবে এবং বাকী তিনটি আঙ্গুল বাম হাতের উপর থাকবে। হযরত আলী (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নামাযের মধ্যে সুন্নত হলো ডান হাতকে বাম হাতের উপর রেখে নাভির নীচে বাঁধা। (আবূ দাউদ)
নামাযে কব্জি পর্যন্ত হাত ঢেকে রাখা:
হাতের আস্তিন সম্পূর্ণ লম্বা হওয়া চাই যাতে কব্জি বরাবর ঢেকে থাকে আস্তিন গুটিয়ে নামায পড়া মাকরুহ। (আলমগীরী)
জামাআতে নামাজ পড়ার সময় কাতার সোজা কর:
যখন জামাআতে নামায পড়বে, তখন প্রত্যেকের পায়ের গোড়ালির শেষ মাথা এক বরাবর রেখে কাতার সোজা করা প্রয়োজন।
হযরত আনাস (রা.) হতে বর্ণিক, নবী করীম (সা.) বলেছেন, তোমরা সকলে নামাযের কাতারসমূহ সোজা করে নিবে। কেননা কাতার সোজা করা সঠিকভাবে নামায কায়েম করারই অংশ বিশেষ। (সহীহ বুখারী)
রুকুতে ঝুঁকার পরিমান:
শরীরের উপর অংশকে এভাবে ঝুঁকাবে যাতে মাথা, গর্দান ও পিঠ এক বরাবর হয়। ( আলমগীরী)
রুকু থেকে সোজা হয়ে দাঁড়ানো:
হযরত আয়েশা (রা.) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল (সা.) যখন রুকু হতে মাথা উঠাতেন তখন সম্পূর্ণভাবে না দাড়িঁয়ে সিজদা করতেন না এবং যখন সিজদা হতে মাথা উঠাতেন তখন সম্পূর্ণভাবে না বসে দ্বিতীয় সিজদা করতেন না। (মুসলিম শরিফ)
সিজদায় যাওয়ার নিয়ম:
সেজদায় যাওয়ার সময় প্রথমে হাঁটু যমীনের উপর রাখবে, তারপর হাত, তারপর নাক, অতঃপর কপাল রাখবে। (শামী)
সিজদায় হাত, নাক ও কপাল রাখা:
সিজদা অবস্থায় উভয় হাতের বৃদ্ধাঙ্গুলি কানের লতি বরাবর থাকবে। কপাল এবং নাক মাটিতে লাগানো থাকবে আর উভয় হাতের কনুই মাটি থেকে উপরে এবং শরীর থেকে আলাদা থাকবে।
বসা অবস্থায় পা রাখায় নিময়:
তাশাহুদ পড়ার সময় বাম পা বিছিয়ে তার উপর বসবে। উম্মুল মুমিনীন হযরত মাইমুনা (রা.) হতে বর্ণিত, নবী করিম (সা.) যখন বসতেন তখন বাম পায়ের উপর ধীরস্থির ভাবে বসতেন। (সহিহ মুসলিম)
চিত্রসহ মহিলাদের নামাযের পদ্ধতি:
নামাযে মহিলাদের পা রাখার নিময়
মহিলাগণকে নামাযে উভয় পা মিলিয়ে দাঁড়াতে হয়। দু’পায়ের মাঝখানে ফাঁক রাখতে নেই।
হাত উঠানোর নিয়ম
মহিলাগণ তাকবীরে তাহরিমা বলার সময় কাঁধ বরাবর উঠাবে। হাত কাপড়ের ভেতরে রেখে—ই উঠাবে, কাপড় থেকে বের করে নয়।
হাত বাঁধার নিয়ম: সর্ববস্থায় হাতের আঙ্গুল মিলিয়ে রাখা
মহিলাগণপুরুদের মত নাভীর নিচে হাত বাঁধবে না বরং বুকের উপর শুধু বাম হাতের উপর ডান হাতের তালু চেপে ধরবে এবং সর্বাবস্থায় হাতের আঙ্গুল মিলিয়ে রাখবে। (শামী)
রুকুতে ঝুকার পরিমাণ:
রুকুতে মহিলাদের পিঠ সামান্য বাঁকা রেখে, গর্দান কোমর থেকে উঁচু রাখতে হয় অর্থাৎ মহিলাগণ পুরুষের থেকে কম ঝুঁকতে হয় (আলমগীরী)
সর্বাবস্থায় কাপড়ের ভিতর হাত রাখতে হয়।
সিজদা অবস্থায় পা, হাত রাখার নিয়ম
মহিলাদের সিজদায় উভয় পা ডান দিক দিয়ে বের করে মাটিতে বিছিয়ে রাখতে হয় এবং উভয় পায়ের আঙ্গুলসমূহ যথাসম্ভব কিবলামুখী করে রাখতে হয়। উভয় হাতের মাঝে এই পরিমাণ ফাঁক রাখা যাতে ভালোভাবে সিজদা করতে পারে। (আলমগীরী)
জুমুআ, কাযা নামায ও মুসাফিরের নামায
প্রথম পাঠ : জুমুআর নামাযের ফদ্বীলত
জুমুআর নামাযের ফদ্বীলত অনেক। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, “যে ব্যক্তি পায়ে হেটে জুমুআর সালাত আদায়ের জন্য যায়া তার প্রতি পদক্ষেপে এক বছরের নফল সাওম আদায় করার সওয়াব দেয়া হয়া।(তিরমিযী)
জুমুআর গুরুত্ব সম্পর্কে আল্লাহ তা’আলার বাণী
– يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوْا إِذَا نُودِيَ لِلصَّلَاةِ مِنْ يَوْمِ الْجُمُعَةِ فَاسْعَوْا إِلَى ذِكْرِ اللهِ وَذَرُوا الْبَيْعَ ذَلِكُمْ خَيْرٌ لَّكُمْ إِنْ كُنْتُمْ تَعْلَمُونَ
অর্থ: হে মুমিনগণ! জুমুআর দিনে যখন নামাযের জন্য আযান দেয়া হয় তখন তোমরা মহান আল্লাহর যিকিরে দ্রুত বের হয়ে পড়ে এবং ক্রয় —বিক্রয় ত্যাগ কর। এটি তোমাদের জন্য উত্তম যদি তোমরা বুঝতে পার। (সূরা: জুমুআ—৯)
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, যে ব্যক্তি শুক্রবারে গোসল করে যথা সম্ভব পাক সাফ হয়ে খুশবু লাগিয়ে জুমুআর নামায আদায়ের জন্য মসজিদে যায়, মসজিদে গিয়ে কাউকে কষ্ট না দিয়ে যেখানে জায়া গা পায় সেখানেই বসে যায়, যথানিয়মে সালাত আদায়া করে এবং নিরবে বসে। মনোযোগ সহকারে খুতবাহ শুনে মহান আল্লাহ তাআলা বিগত জুমুআ হতে পরবর্তী জুমুআ পর্যন্ত তার সকল গুনাহ (সগীরা) মাফ করে দিবেন। (সহীহ বুখারী)
জুমুআর দুই রাকাত ফরযের পূর্বে ইমাম সাহেব মুসল্লিদের উদ্দেশ্যে মিম্বরে দাঁড়িয়ে যে ভাষণ দেন তাকে খুতবা বলে। মুসাল্লিগণ খুতবা শুনা ওয়াজিব। এ সময়া কথা বলা বা অন্য কোনো সালাত আদায়া করা নিষেধ।
জুমুআর নামাযের নিয়ত:
চার রাকাআত কাবলাল জুমুআর নিয়ত:
نَوَيْتُ أَنْ أَصَلِّيَ لِلَّهِ تَعَالَى اَرْبَعَ رَكَعَاتِ صَلوةِ قَبْلَ الْجُمُعَةِ سُنَّةُ رَسُوْلِ اللَّهِ تَعَالَى مُتَوَجِّهًا إلى جِهَةِ الْكَعْبَةِ الشَّرِيفَةِ اللَّهُ أَكْبَرُ
উচ্চারণ: নাওয়াইতুআন উসাল্লিয়া লিল্লাহি তা’য়ালা আরবা’আ রাকাআ’তি সালাতি কাবলাল জুমুআতি সুন্নাতু রাসূলিল্লাহি তা’য়ালা মুতাওয়াজ্জিহান ইলা জিহাতিল কা’বাতিশ শরীফাতি আল্লাহু আকবার।
জুমুআর দুই রাকাআত ফরয নামাযের নিয়ত:
نَوَيْتُ أَنْ أَسْقِطَ عَنْ ذِمَّتِي فَرْضَ الظَّهِرِ بِآدَاءِ رَكْعَتَيْ صَلوةِ الْجُمُعَةِ فَرْضُ اللهِ تَعَالَى مُتَوَجِّهًا إلى جِهَةِ الْكَعْبَةِ الشَّرِيفَةِ اللَّهُ أَكْبَر
উচ্চারণ: নাওয়াইতু আন উসকিতা আন যিম্মাতি ফারদায যুহরি বি—আদায়ি রাকাআ’তি সালাতিল জুমুআতি ফারদুলল্লাহি তা’য়ালা মুতাওয়াজ্জিহান ইলা জিহাতিল কা’বাতিশ শরীফাতি আল্লাহু আকবার।
চার রাকাআত বাদাল জুমুআর নামাযের নিয়ত:
نَوَيْتُ أَنْ أَصَلِّيَ لِلَّهِ تَعَالَى أَرْبَعَ رَكَعَاتِ صَلوةِ بَعْدَ الْجُمُعَةِ سُنَّةُ رَسُوْلِ اللهِ تَعَالَى مُتَوَجِّهًا إلى جِهَةِ الْكَعْبَةِ الشَّرِيفَةِ اللَّهُ أَكْبَرُ
উচ্চারণ: নাওয়াইতুআন উসাল্লিয়া লিল্লাহি তা’য়ালা আরবা’আ রাকাআ’তি সালাতি বা’দাল জুমুআতি সুন্নাতু রাসূলিল্লাহি তা’য়ালা মুতাওয়াজ্জিহান ইলা জিহাতিল কা’বাতিশ শরীফাতি আল্লাহু আকবার।
চার রাকাআত আখেরী যুহরের নিয়ত:
نَوَيْتُ أَنْ أَصَلِّيَ لِلَّهِ تَعَالَى أَرْبَعَ رَكَعَاتِ صَلوةِ أَخِرِ الظُّهْرِ سُنَّةُ رَسُوْلِ اللَّهِ تَعَالَى مُتَوَجِّهًا إِلى جِهَةِ الْكَعْبَةِ الشَّرِيفَةِ اللَّهُ أَكْبَرُ
উচ্চারণ: নাওয়াইতুআন উসাল্লিয়া লিল্লাহি তা’য়ালা আরবা’আ রাকাআ’তি সালাতি আখিরিয যুহরী সুন্নাতু রাসূলিল্লাহি তা’য়ালা মুতাওয়াজ্জিহান ইলা জিহাতিল কা’বাতিশ শরীফাতি আল্লাহু আকবার।
কাযা নামাযের হুকুম
যে নামাযের যে বৈশিষ্ট্য রয়েছে তা তার কাযাতেও বিদ্যমান থাকবে। তাই ফরজ নামাযের কাযা করা ফরজ, ওয়াজিব নামাজের কাযা করা ওয়াজিব। মুসাফির অবস্থায় যে নামায কাযা হয়েছে তা মুকীম হওয়ার পর দু,রাকাআত কাযা করতে হবে এবং মুকীম অবস্থায় যে নামায কাযা হয়েছে মুসাফির অবস্থায় সেই কাযা আদায় করলে চার রাকাআতের নামায চার রাকাআতই আদায় করতে হবে। (আলমগীরি, ১ম খণ্ড)
সুন্নাতের কাযা
ফরজ ও ওয়াজিব নামাযের কথা হয় সুন্নাতের কথা হয় না। তবে ফজরের ফরজ নামাযের পূর্বে যে দু,রাকাআত সুন্নাত রয়েছে কেবল এই সুন্নাতের কাযা আদায়ের বিধান রয়েছে। এ দু’রাকাআত ব্যতীত অন্য কোন সুন্নাত মুআয়াক্কাদাহ বা সুন্নাতে যায়িদাহ—এর কাযা নেই।
যদি ফজরের ফরয ও সুন্নাত কোনটিই আদায় করা না হয়, তাহলে যুহরের ওয়াক্ত হবার পূর্বে কাযা আদায় করা হলে ফরয ও সুন্নত উভয়টি কাযাই আদায় করতে হবে। কিন্তু যদি যুহরের ওয়াক্ত হবার পর কাযা আদায় করা হয়, তাহলে শুধু ফরয দু’রাকাআত কাযা আদায় করবে, সুন্নাতের কাযা আদায় করবে না।
কাযা নামাযের তারতীব রক্ষা করা:
কাযা নামাযের তারতীব রক্ষা করা পাঁচ ওয়াক্ত ফরয নামাযের মাঝে যে তারতীব বা ধারাবাহিকতা রয়েছে, কাযা নামাযের মাঝেও সে ধারাবাহিকতা রক্ষা করা জরুরী। তাই কারো যদি ফজর হতে ইশা পর্যন্ত পাঁচ ওয়াক্ত নামায কাযা হয়ে যায়, তাহলে তাকে প্রথমে ফজর, তারপর যুহর তারপর আসর তারপর মাগরিব এবং তারপর ইশার নামায পড়তে হবে। সবশেষে বিতর আদায় করতে হবে। কেননা, ফরয ও ওয়াজিব নামাযের কাযা করা যেমন জরুরী তেমনি ফরয ও ওয়াজিবের মাঝে ধারাবাহিকতা রক্ষা করাও জরুরী (বাহরুর রাইক, ২য় খন্ড)। যদি কেউ ধারাবাহিকতার প্রতি লক্ষ্য না করে প্রথমে যুহর ও তারপর ফজরের কাযা আদায় করে তাহলে তাকে পুনরায় যুহরের নামায আদায় করতে হবে। ফজরের নামাযের পূর্বে যুহরের নামায পড়া হলেও তা সহীহ হবে না। একাধিক কাযা নামাযের মাঝে যেমন ধারাবাহিকতা রক্ষা করা জরুরী, তেমনি কাযা ও আদা (ওয়াক্তিয়া) নামাযের মধ্যেও তারতীব ও ধারাবাহিকতা রক্ষা করা জরুরী। তাই কারো যদি ইশার নামায কাযা হয়ে থাকে, তাহলে ফজরের নামাযের সময় প্রথমে তাকে ইশার ফরয, তারপর বিতরের নামায পড়তে হবে। অতঃপর ফজরের নামায আদায় করতে হবে। যদি ফজরের নামায পড়ার পর ইশা ও বিতর পড়, তাহলে তাকে পুনরায় ফজরের নামায পড়তে হবে (আলমগীরী)। তবে তিন কারণে তারতীব রহিত হয়।
যেমন:
- ওয়াক্তিয়া নামাযের সময় একেবারে সংকীর্ণ হলে যে, কাযা আদায় করতে গেলে ওয়াক্ত চলে যাবে ।
- কাযা নামাযের কথা ভুলে গেলে,
- কাযা নামাযের পরিমান ছয় ওয়াক্ত বা এর চেয়ে বেশি হলে।
কাযা নামাযের নিয়ত:
নমুনা স্বরুপ ফজরের কাযা দুই রাকাত ফরযের নিয়ত:
نَوَيْتُ أَنْ أَقْضِيَ لِلَّهِ تَعَالَى رَكْعَتَيْ صَلوةِ الْفَجْرِ الفَائِتَةِ فَرْضُ اللَّهِ تَعَالَى مُتَوَجِّهًا إلى جِهَةِ الْكَعْبَةِ الشَّرِيفَةِ اللَّهُ أَكْبَرُ
উচ্চারণ: নাওয়াইতুআন উসাল্লিয়া লিল্লাহি তা’য়ালা রাকাআতাই সালাতিল ফাজরিল ফাইতাতি ফারদুল্লাহি তা’য়ালা মুতাওয়াজ্জিহান ইলা জিহাতিল কা’বাতিশ শরীফাতি আল্লাহু আকবার।
কাযা নামাযের জন্য ওয়াক্তিয়া নামাযের অনুরুপ নিয়ত করলেও হবে।
ঈদের নামাযের বিবরণ
দুই ঈদের সালাত আদায় করা ওয়াজিব। ঈদের সালাত আদায়ের সময় হলো সুর্যোদয়ের পর থেকে দ্বিপহরের পূর্ব পর্যন্ত। তবে ঈদুল ফিতর এ সময়ের মধ্যে একটু দেরি করে আদায় করা এবং ঈদুল আদ্বহার সালাত একটু সকাল আদায় করা সুন্নত। ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আদ্বহার সালাত ঈদগাহে মুসলমানগণের সমবেত হয়ে আদায় করে থাকেন। ঈদগাহ না থাকলে বা বৃষ্টির কারণে মসজিদেও ঈদের সালাত আদায় করা যায়।
ঈদের নামাযের নিয়ত
ঈদুল ফিতর নামাযের নিয়ত:
نَوَيْتُ اَنْ اُصَلَّى لِلَّهِ تَعَالَى رَكْعَتَيْ صَلوةِ عِيْدِ الْفِطِرِ مَعَ سِتَّةِ تَكْبِيرَاتٍ وَاجِبِ اللهِ تَعَالَى مُتَوجّها الى جِهِةِ الْكَعْبَةِ الشَّرِيفَةِ اللَّهُ أَكْبَرُ
উচ্চারণ: নাওয়াইতুআন উসাল্লিয়া লিল্লাহি তা’য়ালা রাকাআ’তি সালাতি ঈদুল ফিতরি মাআ সিত্ততি তাকবিরাতি ওয়াজিবিল্লাহি তা’য়ালা মুতাওয়াজ্জিহান ইলা জিহাতিল কা’বাতিশ শরীফাতি আল্লাহু আকবার।
ঈদুল আদ্বহার নামাযের নিয়ত:
نَوَيْتُ أَنْ أَصَلَّى لِلَّهِ تَعَالَى رَكْعَتَيْ صَلوةِ عِيْدِ الْأَضْحَى مَعَ سِتَّةِ تَكْبِيرَاتٍ وَّاجِبِ اللهِ تَعَالَى مُتَوَجِّهًا إلى جِهَةِ الْكَعْبَةِ الشَّرِيفَةِ اللَّهُ أَكْبَرُ
উচ্চারণ: নাওয়াইতুআন উসাল্লিয়া লিল্লাহি তা’য়ালা রাকাআ’তি সালাতি ঈদুল আদ্বহা মাআ সিত্ততি তাকবিরাতি ওয়াজিবিল্লাহি তা’য়ালা মুতাওয়াজ্জিহান ইলা জিহাতিল কা’বাতিশ শরীফাতি আল্লাহু আকবার।
জানাযার নামাযের নিয়ম
জমহুর ফুকাহায়ে কিরামের মতে জানাযার নামায ফরযে কিফায়। কিছু সংখ্যক লোক (দু’তিন জন) আদায় করলে আদায় হয়ে যাবে। তবে জীবিতদের কেউই আদায় না করলে সকলেই গুনাহগার হবে। (আলগীরী)
জানাযার নামাযের নিয়ম হলো লাশ পুরুষ হোক কিংবা মহিলা হোক সম্মুখে রেখে তার সীনা বরাবর দন্ডায়মান হবেন। তারপর চার তাকবীরে জানাযার নামায আদায় করতে হবে। নিম্নলিখিত নিয়ত করে তাকবীরে তাহরীমা বলবে।
জানাযা নামাযের নিয়ত
نَوَيْتُ أَنْ أُؤَدِّيَ لِلَّهِ تَعَالَى اَرْبَعَ تَكْبِيرَاتِ صَلْوَةِ الْجَنَازَةِ فَرْضِ الْكِفَايَةِ اَلتَّنَاءُ لِلَّهِ تَعَالَى وَالصَّلوةُ عَلَى النَّبِيِّ وَالدُّعَاءُ لِهَذَا الْمَيِّتِ اقْتَدَيَتُ بِهَذَ الْإِمَامِ مُتَوَجِّها الى جِهَةِ الْكَعْبَةِ الشَّرِيفَةِ اللَّهُ أَكْبَرَ
উচ্চারণ: নাওয়াইতু আন উয়াদ্দিয়া লিল্লাহি তা’য়ালা আরবা’আ তাকবিরাতি সালাতিল জানাযাতি ফারদ্বুল কিফায়াতি আস্সানাউ লিল্লাহি তা’য়ালা ওয়াস সালাতু আলান্নবিয়্যি ওয়াদ্দুআউ লিহাযাল মায়্যিতি ইকতাদাইতু বিহাযাল ইমাম মুতাওয়াজ্জিহান ইলা জিহাতিল কা’বাতিশ শরীফাতি আল্লাহু আকবার।
বি:দ্র: মায়্যিত মহিলা হলে লিহাযাল মায়্যিতি এর স্থলে লিহাযিহিল মায়্যিতি শব্দ বলবে।
নিয়তের সাথে সাথে যে তাকবীর বলা হয় এটি প্রথম তাকবীর। এরপর সানা পড়ে দ্বিতীয় তাকবীর বলবে।
সানা
سُبْحَانَكَ اَللَّهُمَّ وَ بِحَمْدِكَ وَ تَبَارَكَ اسْمُكَ وَ تَعَالِىْ جَدُّكَ وَ لَا اِلَهَ غَيْرُكَ
উচ্চারণ— সুবহানাকা আল্লাহুম্মা ওয়াবিহামদিকা ওয়াতাবারাকাসমুকা ওয়া তায়ালা জাদ্দুকা ওয়ালা ইলাহা গইরুকা।
দ্বিতীয় তাকবীরের পর দুরুদ শরীফ পড়বে।
দুরুদ শরীফ
اَللّٰهُمَّ صَلِّ عَلٰى مُحَمَّدٍ. وَّعَلٰى اٰلِ مُحَمَّدٍ كَمَا صَلَّيْتَ عَلٰى اِبْرَاهِيْمَ وَعَلٰى اٰلِ اِبْرَاهِيْمَ’ اِنَّكَ حَمِيْدٌ
উচ্চারন: আল্লাহুম্মা সাল্লিআলা মুহামাদিও ওআলা আলী মুহাম্মদ কামা সাল্লাইতা আলা ইব্রাহিম ওয়ালাআলী ইব্রাহিম ইন্নাকা হামিদুন মাজিদ।
اَللّٰهُمَّ بَارِكْ عَلٰى مُحَمَّدٍ. وَّعَلٰى اٰلِ مُحَمَّدٍ كَمَا بَارَكْتَ عَلٰى اِبْرَاهِيْمَ وَعَلٰى اٰلِ اِبْرَاهِيْمَ. اِنَّكَ حَمِيْدٌ مَّجِيْدٌ
উচ্চারন: আল্লাহুম্মা বারিকআলা মুহামাদিও ওআলা আলী মুহাম্মদ কামা বারেকতা আলা ইব্রাহিম ওয়ালাআলী ইব্রাহিম ইন্নাকা হামিদুন মাজিদ।
দুরুদ শরীফ শেষে তৃতীয় তাকবীর বলবে। এরপর পড়বে।
اللَّهُمَّ اغْفِرْ لِحَيِّنَا وَمَيِّتِنَا وَشَاهِدِنَا وَغَائِبِنَا وَصَغِيْرِنَا وَكَبِيْرِنَا وَذَكَرِنَا وَأُنْثَانَا اللهُمَّ مَنْ أَحْيَيْتَهُ مِنَّا فَأَحْيِه عَلَى الْإِسْلَامِ وَمَنْ تَوَفَّيْتَهُ مِنَّا فَتَوَفَّه عَلَى الْإِيْمَانِ
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মাগফির লিহায়্যিনা ওয়া মায়্যিতিনা ওয়া শাহিদিনা ওয়া গায়িবিনা ওয়া সাগীরিনা ওয়া কাবীরিনা ওয়া যাকারিনা ওয়া উনসানা। আল্লাহুম্মা মান আহইয়াতাহু মিন্না ফাআহয়িহি আলাল ইসলাম ওয়ামান তাওয়াফ্ফাইতাহু মিন্না ফাতাওয়াফ্ফাহু আলাল ঈমান।
মায়্যিত যদি নাবালিগ ছেলে হয়, তাহলে উপরোক্ত দু’আর পরিবর্কে নিম্নলিখিত দু’আ পড়বে।
اللَّهُمَّ اجْعَلْه لَنَا فَرْطًا وَاجَعَلْه لَنَا أَجْرًا وَذُخْرًا وَاجَعَلَه لَنَا شَافِعًا وَمُشَفَّعًا
উচ্চারন: আল্লাহুম্মাজাআলহু লানা ফারতাও ওয়াজআলহু লানা আজরাও ওয়াযুখরাও ওয়াজআলহু লানা শাফিয়াও ওয়ামুশাফ্ফা’আ।
মায়্যিত যদি নাবালিগ মেয়ে হয়, তাহলে উপরোক্ত দু’আর পরিবর্কে নিম্নলিখিত দু’আ পড়বে।
اللهُمَّ اجْعَلْهَا لَنا فَرْطًا وَاجْعَلْهَا لَنَا أَجْرًا وَذُخْرًا وَاجَعَلَهَا لَنَا شَافِعَةً ومُشَفْعَةً
উচ্চারন: আল্লাহুম্মাজাআলহু লানা ফারতাও ওয়াজআলহা লানা আজরাও ওয়াযুখরাও ওয়াজআলহু লানা শাফিয়াও ওয়ামুশাফ্ফা’আ।
জানাযা নামাযের রোকন
জানাযা নামাযের রুকন তথা ফরয দুইটি। চার তাকবীর বলা ও দাঁড়িয়ে নামায আদায় করা। যেহেতু চার তাকবীর বলা ফরয কাজেই যদি তার কোন একটি কম হয় তাহলে জানাযার নামায শুদ্ধ হবে না। (ফাতাওয়া ও মাসাইল)
নিত্যদিনের প্রয়োজনীয় সকল দোয়া
কুরবানীর দোয়া
إِنِّي وَجَّهْتُ وَجْهِيَ لِلَّذِي فَطَرَ السَّمَوَاتِ وَالْاَرْضَ عَلَى مِلَّةِ إِبْرَاهِيمَ حَنِيفًا وَمَا أَنَامِنَ الْمُشْرِكِيْنَ. إِنَّ صَلَوَتِيْ وَنُسُكِي وَمَحْيَايَ وَمَمَاتِي لِلَّهِ رَبِّ الْعَالَمِيْنَ لَا شَرِيكَ لَهُ وَبِذَالِكَ أُمِرْتُ وَاَنَا اَوَّلُ الْمُسْلِمِيْنَ. اَللَّهُمَّ مِنْكَ وَلَكَ اللهُمَّ تَقَبَّلْ مِنْ
বলে কুরবানী দাতার নাম বলবেন তারপর
بِسْمِ اللهِ اللهُ الكُبَرْ
সায়্যিদুল ইস্তিগফার রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, যে কেউ দৃঢ় বিশ্বাসের সাথে দিনের বেলা এই দু’আটি (সায়্যিদুল ইসতিগফার) পাঠ করবে ঐ দিন সন্ধ্যা হওয়ারর আগে মৃত্যুবরণ করলে সে জান্নাতবাসী হবে এবং যে কেউ ইয়াকীনের সাথে রাত্রিতে পাঠ করবে ঐ রাত্রিতে মৃত্যুবরণ করলে সে জান্নাতবাসী হবে। (সহীহ বুখারী)
সায়্যিদুল ইস্তিগফার:
اللهُمَّ أَنتَ رَبِّي لَا إِلَهَ إِلَّا أَنْتَ خَلَقْتَنِي وأَنَّا عَبْدُكَ وَأَنَّا عَلَى عَهْدِكَ وَوَعْدِكَ مَا اسْتَطَعتُ. أَعُوذُ بِكَ مِنْ شَرِّ مَا صَنَعْتُ أَبُوءُ لَكَ بِنِعْمَتِكَ عَلَيَّ وأبُوْءُ بِذَنْبِي فَاغْفِرْ لِي فَإِنَّهُ لَا يَغْفِرُ الذُّنُوبَ إِلَّا أَنْتَ.
মসজিদে প্রবেশের দু’আ
اَعُوْذُ بِاللهِ الْعَظِيمَ. وَبِوَجْهِهِ الكَرِيم وَسُلْطَانِهِ القَدِيمَ مِنَ الشَّيْطَانِ الرَّجَيْمَ بِسْمِ اللَّهِ وَالصَّلَاةُ وَالسَّلَامُ عَلَى رَسُوْلِ اللهِ اللَّهُمَّ افْتَحْ لِي أَبْوَابَ رَحْمَتِكَ.