মেঘালয় ভ্রমণ: ভারতের মেঘালয় (Meghalaya) হচ্ছে মেঘেদের বাড়ি। উত্তর পূর্ব ভারতের মেঘালয় রাজ্য হচ্ছে মেঘ পাহাড় ও ঝর্ণার দেশ। প্রকৃতির অনাবিল সৌন্দর্য নিয়ে এই স্থানটি হাত ছানি দেয় ভ্রমণ প্রেমীদের। চারিদিকে উঁচু উঁচু সব পাহাড়, লেক ও ছবির মত সুন্দর গ্রাম, পাহাড়ের বুক চিরে নেমে আসা অসংখ্য ঝর্ণা ও স্বচ্ছ পানির নদী সবকিছুই যেন ভ্রমণ পিয়াসুদের আকর্ষণ করে। মেঘালয় বাংলাদেশের সিলেট সীমান্তের কাছাকাছি অবস্থান ও কম খরচেই সেখানে যাওয়া যায়। সেখানকার জনপ্রিয় দর্শনীয় স্থান শিলং,চেরাপুঞ্জি ও ডাউকির বিভিন্ন দর্শনীয় স্থান রয়েছে। পাহাড় ও ঝর্ণা খুব পছন্দ করে তাদের জন্য সবচেয়ে উত্তম জায়গা হচ্ছে মেঘালয় ভ্রমণ।
মেঘালয়ের দর্শনীয় স্থান
মেঘালয় ভ্রমণের অনেক দর্শনীয় স্থান রয়েছে। বাংলাদেশ থেকে মেঘালয়ে পর্যটকরা মূলত ভ্রমণে যায় ডাউকি, শিলং ও চেরাপুঞ্জিতে। সেখানকার দর্শনীয় স্থানগুলো পর্যটকরা অনেক বেশি পছন্দ করে, যেমন, ভারতের মেঘালয়, মেঘালয় রাজ্য, শিলং পিক, উমিয়াম লেক, এলিফেন্ট ফলস, নংরিয়াত গ্রাম, চেরাপুঞ্জি, লাইতলাম ক্যানিয়ন, গলফ লেক ও ওয়ার্ডস লেক, লেডি হায়াদ্রি পার্ক। নিম্নে সেখানের কিছু দর্শনীয় স্থান সম্পর্কে আপনাদের জন্য কিছু তথ্য দেয়া হলো :-
শিলং পিক
আপনি যদি প্রাণ ভরে সতেজ বাতাসে নিঃশাস নিতে চান তাহলে অবশ্যই শিলং পাহাড়ে চলে যেতে পারেন। শিলং পিক এর উপত্যকা ও সারি সারি পাহাড়ের দৃশ্য দেখে পর্যটকদের মন ভরে যায়। এই সর্বোচ্চ স্থান থেকে প্রায় পুরো এলাকার একটি মনোমুগ্ধকর দৃশ্য আপনি দেখতে পারবেন। যা আপনার হৃদয়ের মাঝে একটি ছবি হয়ে থাকবে।
চেরাপুঞ্জি
মেঘালয় ভ্রমণের চেরাপুঞ্জি তার বর্ষণের জন্য বিখ্যাত। এখানে সব সময় বৃষ্টিপাত হয়ে থাকে। এখানে রয়েছে রহস্যময় গুহা ও চোখ জুড়ানো ঝরনা। চেরাপুঞ্জের জনপ্রিয় স্থান গুলোর মধ্যে রয়েছে নোহকালিকাই ফলস, সেভেন সিস্টার্স ফলস, আরওয়াহ গুহা, মৌসুমাই গুহা ও পাহাড়ের সারির এক অসম্ভব সুন্দর দৃশ্য দেখার জন্য মাউন্টেন ভিউ।
মাওঙলাওঙ গ্রাম ও স্নোঙপাডং গ্রাম
শিলং থেকে এই গ্রামটি নব্বই কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। এশিয়ার সবচেয়ে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন গ্রাম হিসেবে এই গ্রামটি তকমা পেয়েছে। এখানে গাছের উপর তৈরি বাড়ি ও বেশিরভাগ বাঁশের তৈরি আসবাবপত্র ও ময়লা ফেলার ঝুড়ি প্রাচীন জীবনকাল ও পরিচ্ছন্নতা এখানে অনেক কিছু শেখায়। এই গ্রাম থেকে ১০-১৫ মিনিট দূরত্বের একটি সিঙ্গেল রুট ব্রিজ রয়েছে।
স্নোঙপাডং গ্রামে রয়েছে একটি উমগট নদী। যারা খুব ভালো সাঁতার জানেন তারা এখানে স্নোরকেলিং করতে পারবেন। এই নদীর পানি ফিরোজা সবুজ, যা খালি চোখেতে নদীর পানির মধ্যে সব কিছুই দেখা যায়।এই গ্রামের নদীর পানির দৃশ্য এতটা সুন্দর যে আগে কখনো কোথাও এমন দৃশ্য দেখা যায়নি।
মেঘালয় ভ্রমণ এর উপযুক্ত সময়
মেঘালয় ভ্রমণে গেলে চেরাপুঞ্জিতে পৃথিবীর সবচেয়ে বেশি বৃষ্টি হয়। এখানে ভ্রমণের উপযুক্ত সময় মে থেকে অক্টোবর মাস পর্যন্ত। এখানে উঁচু পাহাড়ের ঝর্ণার শব্দ শুনতে হলে বর্ষাকাল ভ্রমণের জন্য সবচেয়ে শ্রেষ্ঠ সময়। বছরের অন্যান্য সময়গুলো থেকে এই সময়টাতে সবচেয়ে বেশি পর্যটক থাকে এখানে। নভেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি মাস পর্যন্ত এখানে অনেক ঠান্ডা পড়ে, তখন পাহাড়ের অন্যান্য রূপ গুলো দেখা যায়। শীতকালে এখানের তাপমাত্রা ৫ থেকে ১৫ ডিগ্রি পর্যন্ত হয়ে থাকে। আপনার পছন্দমত সময়ে শীতকাল অথবা বর্ষাকালে প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্য দেখার জন্য আপনি সেখানে গিয়ে ঘুরে আসতে পারেন।
মেঘালয় কিভাবে যাবেন
বিভিন্ন মাধ্যমে মেঘালয় যাওয়া যায়। মেঘালয়ের শিলং এ সড়কপথে যেতে তুলনামূলক ভাবে খরচ কম হবে। ঢাকা থেকে শ্যামলী পরিবহন শিলংয়ে যাতায়াত করে। এক্ষেত্রে শ্যামলী পরিবহন ভিসা সহকারে আসার ও যাবার সেবা দিয়ে থাকে। যারা নিজ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে চান তারা বাসে, ট্রেনে অথবা প্লেনে করে সিলেট পৌঁছে ওখান থেকে বাসে অথবা সিএনজি করে তামাবিল যাবেন। তামাবিল ইমিগ্রেশন এর কাজ শেষ করে সেখান থেকে লোকাল গাড়ি অথবা ট্যাক্সি করে সরাসরি শিলং যেতে পারবেন। শিলং থেকে আপনি মেঘালয় ভ্রমণে আশেপাশের আরো দর্শনীয় স্থানে যেতে পারবেন।
আরও পড়ুন: আজকের ট্রেনের সময়সূচী
কোথায় থাকবেন
মেঘালয়ের আনাচে কানাচে বিভিন্ন মানের বিভিন্ন ধাপের অনেক আবাসিক হোটেল রয়েছে। বিশেষ করে পুলিশ বাজার নামক জায়গাটায় অনেক ধরনের অসংখ্য হোটেল রয়েছে। হোটেল গুলোর মধ্যে উল্লেখ্য- পাইন সুইটস হোটেল, শিলং ক্লাব গেস্ট হাউস,হোটেল নাইট ইন এদের মধ্যে অন্যতম। মাজারি বাজেটের হোটেলের মধ্যে আলপাইন কন্টিনেন্টাল হল হোটেল। ৯০০ থেকে ১২০০ রুপির মধ্যে হোটেল পাওয়া যায় যেখানে,গ্রুপ ট্রাভেলসরা সেখানে রুম শেয়ার করে একসাথে থাকতে পারবেন। হোটেলে ইয়ালানা, ব্লুবার্ড এবং দি ইসি হোটেলে ১৫০০ থেকে ৪ হাজার ৫০০ রুপির ভালো মানের রুম পাওয়া যাবে। সেখানে ফোর স্টার ও মোটামুটি লাক্সারিয়াস হোটেল শহরে মাত্র একটি আছে হোটেল পোলো টাওয়ারস। যারা বেশি বাজেটে মেঘালয় ভ্রমণ করতে যাবেন তারা সেখানে উঠতে পারেন।
কোথায় খাবেন
শিলং হিন্দু রাষ্ট্র হওয়ায় এখানে গরুর গোস্ত দেখা যায় না। এখানকার রেস্টুরেন্ট গুলাতে শূকরের মাংস ও মুরগির মাংস বেশি পাওয়া যায়। তবে এখানে প্রচুর পরিমাণে মাছের আইটেম পাওয়া যায়। উপজাতীয় স্বাদ নিতে হলে চলে যেতে হবে সিসেম রেস্তোরাঁয়। পুলিশ বাজার জামে মসজিদের পাশে হালাল রেস্টুরেন্ট সাভেড়াতে রয়েছে সেখানে গরুর গোস্ত পাওয়া যায়। শিলং শহরে ফাস্টফুড চেইনশপ কে এফ সি, ডোমিনোস সাবওয়ে দেখতে পাওয়া যায় । যে কোন রেস্টুরেন্টে ১৮০ থেকে ২০০ রুপির মধ্যে একজনের ভেজ ও নন ভেজ খাবার হয়ে যায়। এছাড়াও মেঘালয় ভ্রমণে সেখানকার স্ট্রিটফুড মোমো ও তোকমার জন্য শিলং প্রসিদ্ধ।
কেনাকাটা
কেনাকাটার জন্য সবচেয়ে ভালো জায়গা হচ্ছে পুলিশ বাজার। সেখানের কিছু লোকাল খাবার যেমন দারুচিনি,কমলালেবুর মধু, চেরি ব্র্যান্ড ইত্যাদি কিনতে হলে সোহরাবাজার যেতে হবে আর এই স্থানটি চেরিপুঞ্জে যাওয়ার পথে পড়বে।
ভ্রমণ টিপস
★মেঘালয় ভ্রমণে প্রায় সবসময়ই বৃষ্টি হয় এবং পাহাড় বেয়ে নেমে বিভিন্ন জায়গা ঝর্ণা দেখতে যেতে হয় সেজন্য সাথে ছাতা, রেইনকোট ট্রেকিং সু বা সাধারণ জুতা নেওয়া উত্তম।
★ সেখানে রবিবার দিন বন্ধ থাকে তাই কেনাকাটা বা অন্যান্য বিষয়ে বন্ধের কথা মাথায় রাখতে হবে।
★ সময় হাতে বেশি পাওয়ার জন্য সকাল সকাল ইমিগ্রেশন অফিসে থাকার চেষ্টা করবেন। রাতের বেলা সিলেট রওনা হয়ে পরের দিন সকালবেলায় বর্ডার পার হতে পারলে সেই দিন অনেক দর্শনীয় স্থান দেখা যাবে।
★ টুরিস্ট এলাকায় ডলার বাঙালে কম দাম পাওয়া যায়। পুলিশ বাজার এলাকায় অনেকগুলো মানি এক্সচেঞ্জ অফিস রয়েছে যেগুলো নির্ভরযোগ্য। ডলার ভাঙ্গানোর রশিদ সাথে রাখবেন কেননা অনেক সময় ইমিগ্রেশন দেখতে চাইতে পারে।
মেঘালয় ভ্রমণে প্রয়োজনীয় ফোন নাম্বার
শিলং পুলিশ সদর দপ্তর- 913642224400
মেঘালয় পর্যটন দপ্তর – 91364226220
আরো দর্শনীয় স্থান সম্পর্কে জানুন:
ঢাকার দর্শনীয় ঐতিহাসিক স্থানসমূহ
প্রয়োজনীয় প্রশ্নের উত্তর
মেঘালয় ভ্রমণের উপযুক্ত সময় কখন?
মেঘালয় ভ্রমণের উপযুক্ত সময় মে মাস থেকে অক্টোবরই মাস ভাল সময়।
মেঘালয় কোন রাজ্যে অবস্থিত?
মেঘালয় ভারতের রাজ্য , ভারতের উত্তর-পূর্ব অংশে অবস্থিত।
মেঘালয় পর্বত কয়টি?
মেঘালয়ে ১১ টি নামী পর্বত রয়েছে। উচ্চতম এবং সবচেয়ে বিশিষ্ট পর্বত হল শিলং।
শিলং এর ভাষা কি?
শিলংয়ের অধিকাংশ জনসংখ্যা খাসি নামে স্থানীয় ভাষায় কথা বলে। শিলং-এ কথিত অন্যান্য ভাষা হল বাংলা, হিন্দি, অসমীয়া, পাঞ্জাবি, নেপালি, গারো এবং উর্দু।
মেঘালয় কিসের জন্য বিখ্যাত?
বিখ্যাত বর্ষা, সমৃদ্ধ ঐতিহ্যবাহী উত্সব এবং নাটকীয় ভূখণ্ড এই রাজ্যের অনেক কিছুর জন্য বিখ্যাত।
শেষকথা:
মেঘালয় যা পূর্ব ভারতীয় একটি প্রদেশ, ভারতের উত্তর-পূর্বা অঞ্চলে অবস্থিত। মেঘালয়ের বাংলা অর্থ হলো “মেঘের দেশ” বা “মেঘের বাড়ি” । এই রাজ্যের সদর শহর হলো শিলং, যা একটি প্রশান্ত এলাকা হিসেবেও পরিচিত, হলেও মেঘালয়ের অন্যান্য অংশগুলি প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের জন্য বিখ্যাত। প্রকৃতি প্রেমিদের ভারতের মেঘালয় ভ্রমন করাটা একান্ত আবশ্যক।