নামাজের সকল দোয়া সমূহ – নামাজের তাসবীহ ও দোয়া সমূহের অর্থ

নামাজের সকল দোয়া সমূহ: ঈমান আনার পর মুসলমানদের সবচেয়ে বড় ইবাদত হলো সালাত। নামাজ ছাড়া একজন মুসলমান মুমিন হতে পারেনা। সঠিক, সহীহ শুদ্ধ ও পরিপূর্ণ নিয়মে সালাত আদায় করলে মহান আল্লাহর প্রিয় বান্দা হওয়া যায়। তবে নামাজের সকল দোয়া সমূহ, তাসবীহ ছাড়া সালাত পরিপূর্ণ হয়না। তাই নামাজের তাসবীহ ও দোয়া সমূহের অর্থসহ জানা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

নামাজ হচ্ছে আল্লাহর কাছে দন্ডায়মান হওয়া। নামাজের মাধ্যমে বান্দার সকল চাহিদা আল্লাহর কাছে উপস্থাপন করা যায়। নামাজের সকল দোয়া সমূহ, নামাজের তাসবীহ ও দোয়া সমূহের অর্থ পাঁচ ওয়াক্ত সালাতের প্রথম উপকরণ। নামাজের ভিতরে এই দোয়া গুলো ফরজ, ওয়াজিব, সুন্নতের অন্তর্ভুক্ত। নামাজের সকল দোয়া সমূহ, নামাজের তাসবীহ ও দোয়া সমূহের অর্থ নিচে তুলে ধরা হলো:-

নামাজের সমস্ত গুরুত্বপূর্ণ দোয়া ও মোনাজাত

নামাজের অভ্যন্তরে আমাদের বিভিন্ন ধরনের নামাজের তাসবিহ ও দোয়া সমূহ পাঠ করতে হয়। নামাজের সকল দোয়া সমূহ জেনে সঠিকভাবে নামাজ আদায় করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। নামাজ শুরুর ক্ষেত্রে অযুর দোয়া থেকে শুরু করে নামাজের সালাম ফিরিয়ে মোনাজাত করা পর্যন্ত অনেকগুলো গুরুত্বপূর্ণ দোয়া ও তাসবিহ রয়েছে। এগুলো হলো:-

  • অযুর দোয়া
  • জায়নামাজের দোয়া
  • নামাজ শুরুর নিয়ত
  • সানা
  • নামাজে শয়তানের ধোঁকা থেকে বাঁচার দোয়া
  • রুকুর তাসবিহ ও দোয়া
  • রুকু থেকে উঠার পর দোয়া
  • সিজদার তাসবিহ ও দোয়া 
  • দুই সিজদার মাঝের দোয়া
  • তাশাহুদ
  • দুরুদ শরীফ। দুরুদে ইব্রাহিম
  • দোয়া মাসুরা
  • শেষ বৈঠকে অন্যান্য দোয়া
  • ফরজ সালাতে সালাম ফেরানোর পর দোয়া
  • ফরজ সালাতের পর তাসবিহ
  • আয়াতুল কুরসি। মৃত্যুর পর সরাসরি জান্নাতে যাওয়ার দোয়া
  • মোনাজাতের দোয়া

নামাজের সকল দোয়া সমূহ

নামাজ আদায় করতে নামাজের নিয়ম, দোয়া সমূহ ও কোথায় কোন দোয়া পড়তে হয় সে সম্পর্কে সঠিক তথ্য জানা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। নামাজের সকল দোয়া সমূহ সঠিকভাবে এবং অর্থ বুঝে তেলাওয়াত করলে নামাজে মনোযোগ বৃদ্ধি পাবে ও আল্লাহ তায়ালার সন্তুষ্টি অর্জন করা যাবে। নামাজের এই সকল দোয়া আরবি, বাংলা উচ্চারণ ও বাংলা অর্থসহ নিচে তুলে ধরা হলো:-

অযুর দোয়া

সালাত আদায় করা, কোরআন তেলাওয়াত করা ও অন্যান্য যেকোন আমলের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এছাড়াও অযুর পানির সাথে মুমিনের শরীরের গুনাহ গুলো ঝরে পড়তে থাকে। তাই ওযুর সময় নিম্নোক্ত দোয়াগুলো পড়তে হয়-

ওযুর শুরুতে ‘বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম’ বলে অযু শুরু করা। মহানবী (সাঃ) বলেছেন, যে অযুর শুরুতে বিসমিল্লাহ পড়েনি, তার অযু পরিপূর্ণ হয়নি। 

অযুর সময় এই দোয়াটি পড়া- اغْفِرْلِىْ ذَنْبِى وَ وَسِّعْلِىْ فِىْ دَارِىْ وَبَارِكْ لِىْ فِىْ رِزْقِىْ

বাংলা উচ্চারণ: “আল্লা-হুম্মাগফিরলি জামবি, ওয়া ওয়াস্ সিলি ফি দারি, ওয়া বারিক-লি ফি রিযক্বি।” (নাসাঈ)

বাংলা অর্থ: “হে আল্লাহ! আমার গোনাহ ক্ষমা করে দাও। আমার জন্য আমার বাসস্থান প্রসারিত করে দাও এবং আমার রিযিক্বে বরকত দাও।”

অযুর পর কালেমা শাহাদাত পাঠ করা-  

لَا إِلَهَ إِلا اللَّهُ وَحْدَهُ لا شَرِيكَ لَهُ ، وَأَشْهَدُ أَنَّ مُحَمَّدًا عَبْدُهُ وَرَسُولُهُ 

বাংলা উচ্চারণ: ‘আশ-হাদু আল্লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু লা-শারি কালাহু, ওয়া আশ-হাদু আন্না মুহাম্মাদান আবদুহু ওয়া রাসূলুহু।

হজরত ওমর (রাঃ) বর্ণনা করেন- রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, “যে ব্যক্তি উত্তমরূপে অযু করে কালেমায়ে শাহাদাত পাঠ করবে, তার জন্য জান্নাতের আটটি দরজা খুলে দেয়া হবে। যে দরজা দিয়ে ইচ্ছা সে প্রবেশ করবে।”(মুসলিম ও মিশকাত)

নামাজের সকল দোয়া সমূহের পূর্বে অযু পরিপূর্ণ হওয়া গুরুত্বপূর্ণ।

জায়নামাজের দোয়া

নামাজের শুরুতে নামাজের স্থানে বা জায়নামাজে দাঁড়িয়ে নিম্নোক্ত দোয়াটি পড়তে হয়:

আরবি: اِنِّىْ وَجَّهْتُ وَجْهِىَ لِلَّذِىْ فَطَرَالسَّمَوَتِ وَاْلاَرْضَ حَنِيْفَاوَّمَااَنَا مِنَ الْمُشْرِكِيْنَ

বাংলা উচ্চারণঃ ইন্নি ওয়াজ্জাহাতু ওয়াজহিয়া লিল্লাযী, ফাতারাছ্ সামাওয়াতি ওয়াল আরদা হানিফাঁও্ ওয়ামা আনা মিনাল মুশরিকীন ।

বাংলা অর্থ: নিশ্চই! আমি তাঁহার দিকে মুখ ফিরালাম, যিনি আসমান জমিন সৃষ্টি করেছেন। আমি মুশরিকদের অন্তর্ভুক্ত নই।

নামাজের নিয়ত

নামাজের সকল দোয়া সমূহের মধ্যে নিয়ত শব্দটি অন্তরের সাথে সম্পৃক্ত। মনে মনে শুধুমাত্র মহান আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে সালাত আদায় করছি এই নিয়ত করা সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। অনেকে নামাজের নিয়ত আরবীতে করা বাধ্যতামূলক মনে করেন। কিন্তু আরবি নিয়ত অনেকের অজানা থাকায়, হিতে বিপরীত হয়। তাই ভুল এড়াতে মনে মনে নামাজের ভাবনা আনাই যথেষ্ট। তবে বাংলায় নামাজের নিয়ত এভাবে করতে পারেন- 

“আমি মহান আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে কেবলামুখী হয়ে এই ওয়াক্তের এত রাকাত নামাজ (জামায়াতের সাথে হলে এই ইমামের পিছনে) আদায় করছি, আল্লাহু আকবার।”

সানা দোয়া

নিয়ত করে হাত বাধার পর নামাজে সর্বপ্রথম সানা পাঠ করতে হয়। হযরত আয়েশা (রাঃ) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাঃ) যখন নামাজ শুরু করতেন তখন এই দোয়াটি পড়তেন-

আরবি: سُبْحَانَكَ اَللَّهُمَّ وَ بِحَمْدِكَ وَ تَبَارَكَ اسْمُكَ وَ تَعَالِىْ جَدُّكَ وَ لَا اِلَهَ غَيْرُكَ

বাংলা উচ্চারণঃ “সুবহানাকা আল্লা-হুম্মা ওয়া বি-হামদিকা, ওয়া তাবারা-কাসমুকা, ওয়া তা আলা জাদ্দুকা ওয়া-লা ইলাহা গাইরুকা।” (আবু দাউদ, তিরমিজি, মিশকাত)

বাংলা অর্থ: “হে আল্লাহ! আমি তোমার পবিত্রতা বর্ণনা করছি। তুমি প্রশংসাময়, তোমার নাম বরকতময়, তোমার মর্যাদা অতি উচ্চে, আর তুমি ব্যতীত সত্যিকার কোনো মাবুদ নেই।”

নামাজের সকল দোয়া সমূহের মধ্যে সানা পড়া সুন্নত।

নামাজে শয়তানের ধোঁকা থেকে বাঁচার দোয়া

নামাজে শয়তান নানা ধরনের কুমন্ত্রণা দিতে চেষ্টা করে। তাই সানা পড়ার পর, কোরআন তেলাওয়াতের শুরুতে নামাজে এই দোয়া পড়তে হয়:

আরবি: أَعُوذُ بِاللَّهِ مِنَ الشَّيْطَانِ الرَّجِيمِ

বাংলা উচ্চারণ: “আউযু-বিল্লাহি মিনাশ্ শাইত্ব-নির রাজীম”।

বাংলা অর্থ: বিতাড়িত শয়তান থেকে আল্লাহ তায়ালার নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করছি।

তারপর, ‘বিসমিল্লাহ’ সম্পূর্ণরূপে পড়ে সালাতে সুরা ফাতেহা তেলাওয়াত করবে ও তার সাথে অন্য একটি সূরা মিলিয়ে নামাজের সকল দোয়া সমূহ পাঠ করবে।

রুকুর তাসবিহ অর্থসহ

বান্দা যখন রুকুতে যায় তখন মহান আল্লাহর কাছে নিজেকে নত করে আল্লাহর প্রশংসা মগ্ন হয়। নামাজের ভেতরে ৬ টি ফরজের মধ্যে রুকু অন্যতম। রুকুতে নিম্নোক্ত তাসবীহ ৩/৫/৭ বার পাঠ করতে হয়:-

আরবি: سُبْحَانَ رَبِّيَ الْعَظِيْمِ

বাংলা উচ্চারণ: “সুবহা-না রব্বিয়াল আ’যিম।” (তিরমিজি,আবু দাউদ)

বাংলা অর্থ: “আমার প্রভু পবিত্র ও মহামহিম।”

নামাজের সকল দোয়া সমূহ ছাড়াও মহান আল্লাহ সন্তুষ্টির জন্য রুকুতে অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ দোয়া পড়তে পারেন। যথা-

আরবি: اَللَّهُمَّ لَكَ رَكَعْتُ وَبِكَ آَمَنْتُ وَلَكَ أَسْلَمْتُ خَشَعَ لَكَ سَمْعِيْ وَبَصَرِيْ وَمُخِّيْ وَعَظْمِيْ وَعَصَبِيْ

বাংলা উচ্চারণ: “আল্লা-হুম্মা লাকা রাকা-আতু ওয়াবিকা আ-মানতু ওয়া লাকা আসলামতু। খাশা-আ লাকা সামঈ, ওয়া বাসারি, ওয়া মুখখি ওয়া আজমি, ওয়া আসাবি।”

বাংলা অর্থ: “হে আল্লাহ! আমি আপনার জন্যই রুকু করলাম, আপনার উপরই ঈমান এনেছি, আপনার কাছেই আত্মসমর্পণ করেছি। আপনার নিকটই অবনত আমার শ্রবণশক্তি, আমার দৃষ্টিশক্তি, আমার মজ্জা, আমার অস্থি ও আমার শিরা-উপশিরা।” (মুসলিম, মিশকাত)

রুকু থেকে উঠার পর দোয়া

রুকু থেকে উঠার পর নামাজের সকল দোয়া সমূহের একটি ফজিলতপূর্ণ দোয়া রয়েছে। রাসূলুল্লাহ (সাঃ)- سَمِعَ اللهُ لِمَن حَمِدَه’ ; উচ্চারণ-“সামিআল্লা-হু লিমান হামিদাহ” বলে রুকু থেকে সোজা হয়ে দাঁড়াতেন। এবং তিনি বলতেন-

আরবি: اَللّهُمَّ رَبَّنَا لَكَ الْحَمْد 

বাংলা উচ্চারণ: “আল্লা-হুম্মা রাব্বানা লাকাল হামদ।”  (বুখারি, মিশকাত, মুসলিম)

বাংলা অর্থ: “হে আল্লাহ! যাবতীয় সকল প্রশংসা তোমারই।”

তারপর রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলতেন-

আরবি: رَبَّنَا وَلَكَ الْحَمْدُ، حَمْداً كَثيراً طَيِّباً مُبارَكاً فِيهِ

বাংলা উচ্চারণ: “রব্বানা ওয়া লাকাল হামদু, হামদান, কাছিরান, ত্বায়্যিবান, মুবা-রাকান ফিহি।”

বাংলা অর্থ: “হে আমাদের প্রতিপালক! আর আপনার জন্যই সকল প্রশংসা; অঢেল, পবিত্র ও বরকত রয়েছে এমন প্রশংসা।” (বুখারি)

সিজদার তাসবিহ অর্থসহ

বান্দা যখন সিজদারত অবস্থায় থাকে তখন মহান আল্লাহর সবচেয়ে কাছে চলে যায়। এটি নামাজের সকল দোয়া সমূহ কবুলের অন্যতম সময়। সেজদার তাসবিহ:

আরবি:  سُبحانَ ربِّيَ الأعلَى 

বাংলা উচ্চারণ: “সুব-হানা রাব্বিয়াল আ’লা।”

বাংলা অর্থ: “আমার প্রতিপালক পবিত্র ও সুমহান।”

এছাড়াও রাসূলুল্লাহ (সাঃ) সিজদাতে বেশি বেশি দোয়া করতেন

আরবি: سُبْحَانَكَ اللَّهُمَّ رَبَّنَا وَبِحَمْدِكَ، اللَّهُمَّ اغْفِرْ لِي

বাংলা উচ্চারণ: “সুবহানাকা আল্লা-হুম্মা রাব্বানা ওয়া বি-হামদিকা আল্লা-হুম্মাগফিরলি।”

বাংলা অর্থ: “হে আমাদের প্রভু, আল্লাহ! আপনার পবিত্রতা বর্ণনা করছি এবং আপনার প্রশংসা করছি। হে আল্লাহ! আপনি আমাকে মাফ করে দিন।” (বুখারি)

এছাড়াও কুরআনের সবচেয়ে বরকতময় দোয়াটি পড়তে পারেন:-

আরবি: رَبَّنَا آتِنَا فِي الدُّنْيَا حَسَنَةً وَفِي الْآخِرَةِ حَسَنَةً وَقِنَا عَذَابَ النَّارِ

বাংলা উচ্চারণ: “রাব্বানা আতিনা ফিদ্-দুনিয়া হাসানাতাও ওয়া-ফিল আখিরাতি হাসানাতও ওয়াক্বিনা আজাবান্নার।”

বাংলা অর্থ: “হে আমার প্রভু! আমাকে দুনিয়াতে কল্যাণ দান করুন, আখেরাতেও কল্যাণ দান করুন এবং আমাকে জাহান্নাম থেকে বাঁচান।”

নামাজের সকল দোয়া সমূহের সাথে পবিত্র কোরআনের এই দোয়াটি পড়লে বান্দার দুনিয়া ও আখিরাতের সফলতা অর্জিত হয়। এছাড়াও রাসুলুল্লাহ (সাঃ) সিজদায় বেশি বেশি বিভিন্ন প্রয়োজনীয়, বরকতময় এবং ফজিলতপূর্ণ দোয়া করতেন।

দুই সিজদার মাঝের দোয়া

দুই সিজদার মধ্যবর্তী অবস্থা দোয়া কবুল হওয়ার অন্যতম স্থান। প্রতি রাকাতে প্রথম সেজদা দিয়ে সোজা হয়ে বসে একটি বিশেষ দোয়া পাঠ করার মাধ্যমে মুমিনের দুনিয়ার ও আখেরাতের সকল চাওয়া আল্লাহকে বলা যায়। মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) দুই সিজদার মাঝখানে নিম্নোক্ত দোয়াটি পড়তেন:-

আরবি: اَللّهُمَّ اغْفِرْلِيْ وَارْحَمْنِي وَاهْدِنِيْ وَعَافِنِيْ وَارْزُقْنِيْ

বাংলা উচ্চারণ: “আল্লা-হুম্মাগফিরলি, ওয়ার-হামনি, ওয়াহ-দিনি, ওয়া আফিনি, ওয়ার-যুকনি।” (মুসলিম, মিশকাত)

বাংলা অর্থ: “হে আল্লাহ! আপনি আমাকে মাফ করুন, আমার উপর রহমত বর্ষণ করুন, আমাকে হেদায়েত দান করুন, আমাকে শান্তি দান করুন এবং আমাকে রিজিক দান করুন।”

দুই সিজদার মধ্যবর্তী সময় ধীরে-সুস্থে মহান আল্লাহর কাছে উক্ত দোয়ার মাধ্যমে নিজের সকল চাওয়া পুর্ন করা যায়। এটি নামাজের সকল দোয়া সমূহের মধ্যে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

তাশাহুদ আরবি ও বাংলা অর্থ

রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর মেরাজের রাতে মহান আল্লাহর সাথে বিশেষ কথোপকথন হয়। যা ছিল অত্যন্ত মর্যাদাপূর্ণ, ফজিলতপূর্ণ এবং শ্রেষ্ঠতম কিছু বাক্য- তাশাহুদ। পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের সকল দোয়া সমূহের মধ্যে সালাতের প্রতিবার বৈঠকে তাশাহুদ পড়া ওয়াজিব। তাই অর্থসহ তাশাহুদ জেনে নিন-

আরবি: اَلتَّحِيَّاتُ لِلَّهِ وَالصَّلَوَاتُ وَالطَّيِّبَاتُ ، السَّلَامُ عَلَيْكَ أَ يُّهَا النَّبِيُّ وَرَحْمَةُ اللَّهِ وَبَرَكَاتُهُ، السَّلَامُ عَلَيْنَا وَعَلَى عِبَادِ اللَّهِ الصَّالِحِيْنَ ، أَشْهَدُ أَن لَّاإِلَهَ إِلَّا اللَّهُ وَأَشْهَدُ أَنَّ مُحَمَّدًا عَبْدُهُ وَرَسُولُهُ

বাংলা উচ্চারণ:

“আত্তা-হিয়্যাতু লিল্লাহি ওয়াস্ সালাওয়াতু, ওয়াত্ তাইয়্যিবাতু। আসসালামু আলাইকা আইয়্যুহান-নাবীয়্যু ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু। আসসালামু আলাইনা ওয়া আলা ইবা দিল্লা হিস্-সলিহীন। আশহাদু আল-লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়া আশ-হাদু আন্না মুহাম্মাদান আবদুহু ওয়া রাসুলুহু।”

বাংলা অর্থ: “আমাদের সকল সালাম শ্রদ্ধা, আমাদের সকল নামায এবং সকল প্রকার পবিত্রতা একমাত্র আল্লাহর জন্যই। হে নবী, আপনার প্রতি সালাম, আপনার উপর আল্লাহর রহমত এবং অনুগ্রহ বর্ষিত হউক। আমাদের এবং আল্লাহর সকল নেক বান্দাদের উপর আল্লাহর রহমত এবং অনুগ্রহ বর্ষিত হউক। আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ছাড়া (ইবাদাতের যোগ্য) আর কোন ইলাহ নেই, আমি আরও সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ) আল্লাহর বান্দা এবং রাসূল।”

আরও পড়ুন: দোয়া কুনুত- আরবি উচ্চারণ ও বাংলা অর্থসহ

দুরুদ শরীফ। দুরুদে ইব্রাহিম

রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর উপর দুরুদ পাঠ করা প্রত্যেক মুসলমানের নাজাতের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তাছাড়া যেকোন দোয়ার পূর্বে দুরুদ পাঠ করলে মহান আল্লাহ তায়ালা তা কবুল করেন। নামাজের সকল দোয়া সমূহের মধ্যে দুরুদ শরীফ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। নামাজের বৈঠকে পড়ার জন্য রাসূলুল্লাহ (সাঃ) আমাদেরকে নিম্নোক্ত দরূদ শিক্ষা দিয়েছেন:

আরবি: للَّهُمَّ صَلِّ عَلَى مُحَمَّدٍ وَعَلَى اَلِ مُحَمَّدٍ كَمَا صَلَّيْتَ عَلَى اِبْرَا هِيْمَ وَعَلَى اَلِ اِبْرَ اهِيْمَ اِنَّكَ حَمِيْدٌ مَّجِيْدٌ- اَللَّهُمَّ بَارِكْ عَلَى مُحَمَّدٍ وَعَلَى اَلِ مُحَمَّدٍ كَمَا بَارَكْتَ عَلَى اِبْرَا هِيْمَ وَعَلَى اَلِ اِبْرَا هِيْمَ اِنَّكَ حَمِيْدٌمَّجِيْدٌ

বাংলা উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা সাল্লি আলা মুহাম্মাদিও ওয়া আলা আলি মুম্মাদিন কামা সাল্লাইতা আলা ইব্রাহিমা ওয়া আলা আলি ইব্রাহিমা ইন্নাকা হামিদুম্ মাজীদ। আল্লাহুম্মা বারিক আলা মুহাম্মাদিও ওয়া আলা আলি মুহাম্মাদিন কামা বারাকতা আলা ইব্রাহিমা ওয়া আলা আলি ইব্রাহিমা ইন্নাকা হামীদুম্ মাজীদ। 

বাংলা অর্থ: “হে আল্লাহ! আপনি হযরত মুহাম্মদ ও তাঁর বংশধরের উপর রহমত বর্ষণ করুন, যেমন আপনি হযরত ইব্রাহিম ও তাঁর বংশধরের উপর রহমত বর্ষণ করেছেন। নিশ্চয় আপনি প্রশংসিত, গৌরবান্বিত।

হে আল্লাহ! আপনি হযরত মুহাম্মদ ও তাঁর বংশধরের উপর বর্কত বর্ষণ করুন, যেমন আপনি হযরত ইব্রাহিম ও তাঁর বংশধরের উপর বর্কত বর্ষণ করেছেন। নিশ্চয় আপনি প্রশংসিত, গৌরবান্বিত।” (বুখারী, মিশকাত)

দোয়া মাসুরা

নামাজের সকল দোয়া সমূহের মধ্যে দোয়া মাসুরা ক্ষমা প্রার্থনার জন্য অন্যতম। হযরত আবুবকর (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসুল (সাঃ) – কে বললাম, আমাকে একটি দোয়া শিক্ষা দিন, যা আমি আমার নামাজের মধ্যে পড়বো। তখন তিনি আমাকে এই দোয়াটি শিখিয়ে দিলেন:-

আরবি: اللَّهُمَّ إِنِّي ظَلَمْتُ نَفْسِي ظُلْمًا كَثِيرًا وَلاَ يَغْفِرُ الذُّنُوبَ إِلاَّ أَنْتَ فَاغْفِرْ لِي مَغْفِرَةً مِنْ عِنْدِكَ وَارْحَمْنِي إِنَّكَ أَنْتَ الْغَفُورُ الرَّحِيمُ،

বাংলা উচ্চারণ: “আল্লা-হুমা ইন্নি জলামতু নাফসি জুলমান কাছিরও ওয়ালা ইয়াগ-ফিরুয্ যুনুবা, ইল্লা আন্ত ফাগ-ফিরলি মাগফিরতাম মিন ঈনদিকা ওয়ারহামনি ইন্নাকা আনতাল গাফুরুর রাহিম।”

বাংলা অর্থ: “হে আল্লাহ! আমি নিজের উপর অনেক জুলুম করেছি! আর আপনি ছাড়া গুনাহ ক্ষমাকারী আর কেউ নেই। আপনি নিজ অনুগ্রহে আমাকে ক্ষমা করে দিন এবং আমার প্রতি রহম করুন। নিঃসন্দেহে আপনিই ক্ষমাকারী, পরম করুণাময়। (সহিহ বুখারি, সহিহ মুসলিম)

ফরজ সালাতে সালাম ফেরানোর পর দোয়া

সালাম ফিরিয়ে ফরজ সালাত শেষ করার পর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাসবীহ তাহলিল পাঠ করতে বলেছেন। তিনি সালাম ফিরিয়ে সর্বপ্রথম বলতেন ‘আল্লাহু আকবার’। তারপর তিনবার পড়তেন- 

আরবি: أَسْتَغْفِرُ اللَّهَ

বাংলা উচ্চারণ: “আস্তাগফিরুল্লাহ।”

বাংলা অর্থ: “আমি আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাই।”

অতঃপর তিনি নামাজের সকল দোয়া সমূহের মধ্যে নিম্নোক্ত দোয়াটি পড়তেন-

আরবি: اللَّهُمَّ أَنْتَ السَّلاَمُ وَمِنْكَ السَّلاَمُ تَبَارَكْتَ يَا ذَا الْجَلاَلِ وَالإِكْرَامِ

বাংলা উচ্চারণ: “আল্লা-হুম্মা আনতাস সালাম, ওয়া মিনকাস সালাম, তাবা-রকতা ইয়া জাল-জালালি ওয়াল ইকরাম।”

বাংলা অর্থ: “হে আল্লাহ! তোমার গুণবাচক নাম সালাম। তুমি শান্তিদাতা। তুমি কল্যাণময়। তুমি সম্মান ও মর্যাদার অধিকারী।”

তারপর তিনি বিভিন্ন দোয়া ও তাসবীহ পাঠ, ফরজ সালাতের পর অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ আয়াতুল কুরসি ও অন্যান্য আয়াত সমূহ পাঠ করতেন।

ফরজ সালাতের পর তাসবিহ

প্রত্যেক ওয়াক্ত সালাতের পর রাসূলুল্লাহ (সাঃ) নিম্নোক্ত তাসবীহ গুলো পাঠ করতে বলেছেন। 

  • সুবহানাল্লাহ ৩৩ বার, 
  • আলহামদুলিল্লাহ ৩৩ বার ও 
  • আল্লাহু আকবার ৩৪ বার পাঠ করা। (সহিহ মুসলিম: ১৩৭৭)

অথবা, সুবহানাল্লাহ ৩৩ বার, আলহামদুলিল্লাহ ৩৩ বার, আল্লাহু আকবার ৩৩ বার। এরপর ১ বার নিম্নোক্ত দোয়াটি:-

আরবি: لَا إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ وَحْدَهُ لَا شَرِيْكَ لَهُ لَهُ الْمُلْكُ وَلَهُ الْحَمْدُ وَهُوَ عَلَى كُلِّ شَىْءٍ قَدِيْرٌ

বাংলা উচ্চারণ: “লা ইলাহা ইল্লা-ল্লাহু ওয়াহ-দাহু লা শারি কা-লাহু, লাহুল মুলকু, ওয়ালাহুল হামদু, ওয়া-হুয়া আলা কুল্লি শাইয়িন ক্বাদির।”

পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের দোয়া/ নামাজের সকল দোয়া

প্রতিদিনের পাঁচ ওয়াক্ত নামাজে উপরোক্ত নামাজের সকল দোয়া সমূহ পাঠ করতে হয়। নামাজের তাসবীহ ও দোয়া সমূহের অর্থসহ জেনে নামাজ আদায় করলে, সে নামাজে একাগ্রতা বহুবনে বৃদ্ধি পায়। উপরোক্ত দোয়া গুলো প্রতি ওয়াক্ত নামাজের অংশ। এছাড়াও বিশেষ করে নামাজের রুকু ও সিজদাতে বেশি বেশি দোয়া করা প্রত্যেক মুমিনের নাজাতের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। 

নামাজের দোয়া সমূহ আরবি | নামাজের দোয়া ডাউনলোড | নামাজের দোয়া সমূহ

আজকের আলোচনায় নামাজের দোয়া সমূহ আরবি, বাংলা উচ্চারণ ও বাংলা অর্থসহ তুলে ধরা হয়েছে। এখান থেকে নামাজ শিক্ষার পরিপূর্ণ গাইডলাইন পাবেন। প্রয়োজনে এই পেজটি ব্রাউজারের এড টু হোম স্ক্রীন (Add To Home Screen) অপশন থেকে সেভ/ ডাউনলোড করে রাখতে পারেন। নিয়মিত এই সকল দোয়া গুলো চর্চার মাধ্যমে আয়ত্তে আনতে পারবেন। 

শেষকথা

নামাজের সকল দোয়া সমূহ দ্বীন শিক্ষার অন্তর্ভুক্ত। নামাজের তাসবীহ ও দোয়া সমূহের অর্থ জানা বাধ্যতামূলক না হলেও এর অর্থ আমাদের মনে তাড়াতাড়ি সঠিক মর্মার্থ তুলে ধরে। তাই পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের দোয়া, নামাজের সকল দোয়া সমূহ, নামাজের দোয়া সমূহ আরবি, নামাজের নিয়ম ও দোয়া সমূহ, নামাজের তাজবীহ ও দোয়া সমূহ সম্পর্কে জানা এবং দৈনন্দিন নামাজে তার প্রয়োগ করা আমাদের কর্তব্য।