অনলাইন জিডি করার সঠিক নিয়ম- ২০২৪

 অনলাইন জিডি করার নিয়ম সম্পর্কে জানতে চান। তাহলে আজ আপনি সঠিক পোস্টে এসেছেন আজকের এই আলোচনায় আমরা আমরা আপনাকে অনলাইন জিডি করার নিয়ম সম্পর্কে বিস্তারিত জানাবো। তার আগে অবশ্যই আপনাকে জানতে হবে অনলাইন জিডি কী?

অনলাইন জিডি কী?

জিডি (Online GD) হলো একটি সাধারণ ডায়রি যা একজন নাগরিক ঘরে বসেই থানায় না গিয়ে ইন্টারনেটের মাধ্যমে পুলিশকে তার সমস্যার কথা জানাতে পারেন ও তার সমস্যার ব্যপারে একটি ডাইরি বা জিডি করতে পারেন। অনলাইন জিডি হলো এটি বাংলাদেশ পুলিশের একটি উন্নত ডিজিটাল সেবা।

জিডি করার জন্য একজন নাগরিকের একটি কম্পিউটার বা স্মার্টফোন এবং ইন্টারনেট সংযোগ থাকতে হবে। তিনি বাংলাদেশ পুলিশের ওয়েবসাইট (gd.police.gov.bd) বা মোবাইল অ্যাপ (GD App) ব্যবহার করে অনলাইন জিডি করতে পারেন। তাহলে আসুন জেনেনি,অনলাইন জিডি করার নিয়ম সম্পর্কে

যে কারণে জিডি করতে হয়

কারও দ্বারা হুমকি প্রাপ্ত হলে, নিরাপত্তার অভাব বোধ করলে থানায় প্রাথমিক প্রতিকার হিসেবে জিডি করতে হয়। কোনো ব্যক্তি বা তার পরিবারের সদস্যের বিরুদ্ধে অপরাধ সংঘটনের আশঙ্কা থাকলেও জিডি করা যায়।কোনো প্রয়োজনীয় কাগজপত্র, যেমন জাতীয় পরিচয়পত্র, পাসপোর্ট, ড্রাইভিং লাইসেন্স, সনদ, দলিল, মোবাইল ফোন প্রভৃতি হারিয়ে গেলেও জিডি করতে হয়। কোন ব্যাক্তি নিখোঁজ হলে জিডি করতে হয়। অনেকের ধারণা, জিডি শুধু কেউ ভয়ভীতি বা হুমকি দিলেই করতে হয়। আসলে তা নয়। যেকোনো ধরনের অধর্তব্য অপরাধের ক্ষেত্রেই প্রাপ্তবয়স্ক যে কোনো ব্যক্তি থানায় হাজির হয়ে বা মোবাইল এ্যাপস ব্যবহার করে জিডি করতে পারেন।

এজাহার করবেন কখন?

কোনো ধর্তব্য অপরাধ সম্পর্কে থানায় যে অভিযোগ দেওয়া হয়, তাকে এজাহার বা এফআইআর বলে। ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তি নিজে বা তাঁর পরিবারের কেউ কিংবা অন্য কোনো ব্যক্তি, যিনি ঘটনা ঘটতে দেখেছেন (স্বাক্ষী) কিংবা ঘটনার কথা শুনেছেন বা অবগত আছেন, তিনি থানায় এজাহার করতে পারেন। এজাহার হচ্ছে মামলা রুজু করা। ঘটনাটি যে থানার অধিনে হয়েছে, সাধারণত ওই থানাতেই এজাহার করা হয়। তবে, একটি ঘটনা এক থানা এলাকায় শুরু ও অন্য থানা এলাকায় শেষ হলে এই দুই থানার যে কোন থানাতেই এজাহার দায়ের করা যাবে। এজাহারে ঘটনার পূর্ণ বিবরণ, ঘটনার স্থান, সময়, কীভাবে ঘটনা সংগঠিত হয়েছে, কারা গঠনা ঘটালো তার স্পষ্টভাবে বিবরণ লিখতে হবে।

বি:দ্র: ঘটনা কারা ঘটিয়েছে এটা আপনার জানা না থাকলে ‘অজ্ঞাত ব্যক্তি/ব্যক্তিরা’ কথাটি লিখতে হবে। সম্ভব হলে তাদের শারীরিক বর্ণনা দিতে হবে। এজাহারকারীর পূর্ণ ঠিকানা ও স্বাক্ষর থাকতে হবে। যদি মৌখিকভাবে থানায় এজাহার দেওয়া হয়, তাহলে থানার সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা তা লিখবেন এবং এজাহারকারীকে শোনাবেন। এজাহারকারী তা পড়ে বুঝে স্বাক্ষর করবেন।

এজাহারকারী নিরক্ষর বা কোন ধরেনের সদস্যা হলে, তাকে পড়ে শুনানো হবে। অতঃপর তিনি স্বাক্ষর বা টিপসহি দেবেন।

জিডি করলে কি হয়?

কিছু অপরাধ সংঘটিত হলে পুলিশ আদালতের পূর্বানুমতি ছাড়া তদন্ত ও ওয়ারেন্ট ছাড়া গ্রেপ্তার করতে পারে না। এগুলো ফৌজদারী কার্যবিধির ২য় তফসিল অনুযায়ী আমলের অযোগ্য অপরাধ বা অধর্তব্য অপরাধ। এসব অপরাধের অভিযোগ থানায় এলে, যেহেতু আমলযোগ্য অপরাধ নয়, সেহেতু জনস্বার্থে তা সাধারণ ডায়রিতে এন্ট্রি করে পুলিশ সংশ্লিষ্ট ম্যাজিস্ট্রেটের অনুমতি নিয়ে তদন্ত শেষে অপরাধ প্রমানিত হলে একটি নির্দিষ্ট ফর্মে নন এএফআইআর প্রসিকিউশন আদালতে দাখিল করেন। এ ধরনের অপরাধের প্রসিকিউশন দাখিলের পর কোর্টের নন-জিআর রেজিস্ট্রারভুক্ত হয়ে মামলা পরিচালিত হয় বলে এ মামলাকে নন-জিআর মামলা বলে এবং এই নন জি আর মামলাগুলোতে আপনার বিরুদ্ধে সমন বা ওয়ারেন্ট ইস্যূ হতে পারে। সে ক্ষেত্রে কোনো কোনো সময় আপনার বিরুদ্ধে জিডির কারণেও কোর্টে বা থানায় হাজীর হওয়া বাধ্যতামূলক হয়ে যেতে পারে।

কিছু অ-আমলযোগ্য অপরাধ বা অধর্তব্য অপরাধের উদাহরণঃ

জনসাধারণের জন্য বিরক্তিকর কার্য করা, জখম বিহীন মারামারি, মিথ্যা দলিল, গর্ভপাত, উস্কানি দেওয়া, ভয় দেখান ইত্যাদি

কিছু আমল যোগ্য অপরাধের বা ধর্তব্য অপরাধের উদাহরণঃ

চুরি, ডাকাতি, খুন, জখম, ছিনতাই, ধর্ষন, মাদক বহন, চাঁদাবাজী, অবৈধ অস্ত্র বহন, প্রতারণা, কর্মচারী কর্তৃক জনক বিশ্বাস ভংগ, অবৈধ সমাবেশ, দাঙ্গা ইত্যাদি।

আশা করি আমরা কিছুটা বোঝাতে পেরেছি। আর হ্যা এই জিডি (GD) কিন্তু বাংলাদেশ-ভারত উভয় দেশের জন্যই প্রযোজ্য। কারণ আমাদের উভয় দেশের মূল আইনগুলো ব্রিটিশ আমলে প্রণীত এবং অপরিবর্তিত। (শেখ যাহিদ ফুয়াদ, বাংলাদেশ পুলিশ এ প্রাক্তন অ্যাডিশনাল এসপি)

অনলাইন জিডি করার নিয়ম 

বাংলাদেশ পুলিশের ওয়েবসাইটে https://gd.police.gov.bd/ অনলাইনে জিডি করার সুযোগ রয়েছে। এখন যেকোনো নাগরিক ঘরে বসেই অনলাইনে জিডি করতে পারবেন খুব সহজে। তবে অনলাইনে জিডি করার জন্য কিছু গুরুত্বপূর্ণ ধাপ রয়েছে যা আপনাকে খুব সর্তকতা করে সম্পন্ন করতে হবে, তবে এই প্রক্রিয়াটি খুব সহজ। নিম্নে অনলাইন জিডি করার নিয়ম সুস্পষ্টভাবে উপস্থাপন করা হলো:

ধাপ ১: নিবন্ধন ও পরিচয় নিশ্চিতকরণ

  • প্রথমে আপনাকে বাংলাদেশ পুলিশের ওয়েবসাইটে (gd.police.gov.bd) বা GD অ্যাপ এ প্রবেশ করতে হবে।
  • রেজিস্ট্রেশন বাটনে ক্লিক করে আপনাকে রেজিস্ট্রেশন করতে হবে । আর রেজিস্ট্রেশন করার জন্য
  • আপনার জন্ম সনদ(জন্ম নিবন্ধন) বা জাতীয় পরিচয় পত্র বা পাসপোর্ট এর নম্বর লিখুন।
  • এরপর আপনি আপনার বর্তমান ঠিকানা লিখুন (আপনি বর্তমানে যে স্থানে অবস্থান করছেন)।
  • এরপর আপনার লাইভ ছবি তোলার প্রয়োজন হবে। সে ক্ষেত্রে আপনি আপনার ছবিটি তুলুন অ্যাপস এর সাহায্যে।
  • এরপর আপনার সচল মোবাইল নম্বরটি ব্যবহার করুন (এটি পরবর্তীতে আপনার ইউজার নেম হিসেবে
  • বিবেচিত হবে)। তবে উল্লেখিত যে আপনার যদি ইমেইল ঠিকানা থাকে তাহলে অবশ্যই আপনি ইমেইল ঠিকানাটি এখানে প্রদান করুন। এরপর আপনার পছন্দের ৮ ডিজিটের শক্তিশালী পাসওয়ার্ড প্রদান করুন।
  • রেজিস্ট্রেশন আপনি করেছেন কিনা সেটি যাচাইয়ের লক্ষ্যে তারা আপনাকে একটি OTP কোড প্রদান করবে SMS এর মাধ্যমে। আপনি এটি সঠিক স্থানে প্রদান করুন।
  • এরপর আপনি আপনার দেওয়া ইউজার নেম তথা মোবাইল নম্বর ও পাসওয়ার্ড দিয়ে লগইন করুন।

ধাপ ২: জিডি ফর্ম পূরণ

২য় ধাপ,  জিডি ফরম পূরণ আপনাকে অবশ্যই সতর্কতার সাথে সম্পন্ন করতে হবে। নিচে জিডি ফর্ম এর ধাপসমূহ উপস্থাপন করা হলো:

থানা নির্বাচন: আপনার বর্তমান ঠিকানা অনুযায়ী আপনি থানা সিলেক্ট করুন। তবে অবশ্যই আপনার যদি কিছু হারিয়ে থাকে বা যে থানার এরিয়ার মধ্যে আপনার সমস্যাটি হয়েছে সেই থানাটি আপনাকে সিলেক্ট করতে হবে।

আপনার সম্পর্কে: এরপর, আপনার সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য জিডি ফরম পূরণের সময় পূরণ করতে হবে।

ঘটনার বিবরণ: আপনাকে অবশ্যই ঘটনার বিবরণ দিতে হবে। এই বিবরণটি যতটা সম্ভব বিস্তারিত দিতে হবে। ঘটনাটি কখন, কোথায়, কীভাবে ঘটেছে তা স্পষ্টভাবে উল্লেখ করতে হবে। ঘটনার সাথে জড়িত ব্যক্তি বা ব্যক্তিদের নাম, বর্ণনা, মোবাইল নম্বর ইত্যাদিও উল্লেখ করতে হবে।

অন্যান্য তথ্য: যদি উক্ত ঘটনার কোন প্রমাণপত্র থাকে। তাহলে অবশ্যই আপনাকে উক্ত ঘটনার প্রমাণপত্র সম্পর্কে এখানে জানাতে হবে। তবে আপনার ঘটনা সম্পর্কে যদি কোন ব্যক্তি সাক্ষ্য প্রমান হিসেবে থাকেন তাহলে অবশ্যই তার সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য আপনাকে সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ করতে হবে।

আরও পড়ুন: বাংলাদেশের মানচিত্র ও ম্যাপ 

ধাপ ৩: জিডি জমা ও জিডির অনুলিপি সংগ্রহ

  • ফর্মটি পূরণ করার পর “জমা দিন” বা “Submit”বোতামে ক্লিক করুন। জিডি জমা হয়ে গেলে, একটি সফল বার্তা প্রদর্শিত হবে আপনার ডিভাইসে। স্বয়ংক্রিয়ভাবে আপনি একটি শনাক্তকরণ নম্বর পাবেন নম্বরটি সংগ্রহ করুন।
  • Submit বাটন ক্লিক করার পর আপনি একটি শনাক্তকরণ নম্বর পাবেন। এই নম্বরটি সংরক্ষণ করুন। থানা থেকে আপনার সাধারণ ডায়েরির সত্যায়িত কপিটি সংগ্রহ করতে পরে এই নম্বরটির প্রয়োজন পড়বে।
  • আপনার সাধারণ ডায়েরিটি বা জিডি থানায় জমা দেওয়ার পর থানা থেকে আপনাকে একটি সত্যায়িত কপি দেওয়া হবে। এই কপিটি আপনার কাছে সংরক্ষণ করা উচিত।

জিডি ফর্ম পূরণের টিপস

জিডি ফর্মটি পূরণের জন্য আপনি কিছু টিপস অনুসরণ করতে পারেন। নিচে আমরা কিছু টিপস উপস্থাপন করেছি যা আপনি পড়তে পারেন।

  • জিডি ফরমটি পূর্ণাঙ্গভাবে পূরণ করুন। জিডি ফর্মে কোথাও আপনি ফাঁকা রাখবেন না।
  • আপনাকে অবশ্যই ঘটনার বিবরণ সুস্পষ্ট ও যথাযথভাবে পূরণ করতে হবে সহজ ভাষায়।
  • উক্ত ঘটনার সাথে জড়িত ব্যক্তিদের নাম ঠিকানা এবং তাদের সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য আপনাকে পূরণ করতে হবে।
  • আপনার যদি কোন প্রমাণ থেকে থাকে বা সাক্ষ্য থেকে থাকে তাহলে আপনি এটি পূরণ করতে ভুলবেন না।
  • সবশেষে আপনাকে এই জিডি ফর্মটি জমা দেওয়ার আগে এক নজরে জিডি ফর্মটি পুনরায় দেখে নিন কোথাও ভুল আছে কিনা।

অনলাইন জিডি করার প্রয়োজনীয়তা

অনলাইন জিডি করার অনেক সুবিধা রয়েছে। এর মধ্যে কয়েকটি হল:

সময় ও অর্থ সাশ্রয়ী: অনলাইনে জিডি করার জন্য আপনার যেমন সময় বাঁচবে তেমনি আপনাকে তৎক্ষণাৎ থানায় যেতে হবে না এর কারণে আপনার থানায় যাতায়াতের খরচ সাশ্রয় হবে।
সহজ ও দ্রুত: অনলাইনে জিডি করা একটি সহজ ও দ্রুত প্রক্রিয়া। এর ফলে নাগরিকেরা ঘরে বসে খুব সহজে করতে পারেন।
নিরাপদ: অনলাইনে জিডি করা খুবই নিরাপদ। এর ফলে আপনার ব্যক্তিগত তথ্য অন্য কেউ জানতে পারবে না।

অনলাইন জিডি করার সুবিধা

অনলাইনে জিডি করার অনেক সুবিধা রয়েছে। এর তিনটি সুবিধা হলো:

  • আপনি আপনার করা অভিযোগের সর্বশেষ অবস্থা আপনি অনলাইনে দেখতে পারবেন।
  • আপনি আপনার যে অভিযোগ তার তদন্তকারী অফিসারের সাথে আপনি অনলাইনের যোগাযোগ করতে পারবেন।
  • আপনি আপনার অভিযোগের কপিটি হারিয়ে ফেললে আপনি অনলাইন থেকে অভিযোগের ডিজিটাল কপিটি সংগ্রহ করতে পারবেন।

সচারাচর জিজ্ঞাসিত প্রশ্নাবলী (FAQ)

(প্রশ্ন-১) অনলাইন জিডি app এর নাম কি?
উওর: অনলাইনে জিডি app এর নাম “Online GD”।
(প্রশ্ন:২) অনলাইনে জিডি করার জন্য কি তৎক্ষণাৎ থানায় যেতে হয়?
উওর: অনলাইনে জিডি করার জন্য তৎক্ষণাৎ সময়ে থানায় যেতে হয় না।
(প্রশ্ন-৩) অনলাইন জিডির শনাক্তকরণ নম্বর এর সুবিধা কি?
উওর: অনলাইন জিডির শনাক্তকরণ নম্বরের দ্বারা আপনি আপনার অভিযোগের সর্বশেষ আপডেট জানতে পারবেন।

শেষ কথা 

আশা করি আমরা আপনাকে,অনলাইন জিডি করার নিয়ম সম্পর্কে বিস্তারিত জানাতে পেরেছি। যদি এই পোস্টটি সম্পর্কে আপনার যদি কোন প্রশ্ন থাকে তাহলে আপনি কমেন্ট করে আমাদের জানাতে পারেন।