বাংলাদেশের সবচেয়ে সুন্দর গ্রাম গুলোর মধ্যে একটি হলো পান্থুমাই গ্রাম। গ্রামটির পাশেই রয়েছে ঝর্ণা এবং গ্রামের নামেই এর নামকরণ করা হয়েছে পান্থুমাই ঝর্ণা।
বাংলাদেশ ও ভারত সীমান্তের মেঘালয়ের কোল ঘেঁষে অবস্থিত এই সুন্দর গ্রামটি। এটি সিলেট জেলার গোয়াইনঘাট উপজেলার পশ্চিম জাফলং ইউনিয়নের একটি গ্রাম। পান্থুমাই গ্রামের পিছনে মেঘালয় পাহাড় এবং চলমান পিয়াইন নদীর পাড়ে এই গ্রামটি অবস্থিত। সেখানকার স্থানীয়দের কাছে পান্থুমাই গ্রামের ঝর্ণাটি বিভিন্ন নামে পরিচিত। বিশাল এই ঝর্ণার স্থানীয় নাম গুলো হলো পান্থুমাই ঝর্ণা, ফাটাছড়ির ঝর্ণা ও বড়হিল ঝর্ণা ইত্যাদি। কারো কারো কাছে এই ঝর্ণাটি মায়াবতী ঝর্ণা নামেও পরিচিত।
পান্থুমাই ঝর্ণার সৌন্দর্য
সিলেট কে বলা হয় সৌন্দর্যের রানী। এখানের প্রকৃতি যেন এক অপরূপ সৌন্দর্যে ভরপুর। এখানের মেঘালয়ের পাহাড়, স্বচ্ছ পানির নদী ও ঝর্ণা সব কিছুই মানুষের মন ছুঁয়ে যায়। বিশাল ও উঁচু পাহাড় থেকে পাথর বেয়ে নেমে আসা স্বচ্ছ ঝর্ণার পানি দেখতে যেমন সুন্দর তেমনি চারপাশের প্রকৃতি দেখতেও মনোমুগ্ধকর। সেখানের প্রাকৃতিক পরিবেশ আপনার মনকে আরো প্রফুল্ল করে তুলবে।
পান্থুমাই নামক ঝর্ণা মূলত ভারতে অবস্থিত। সেখানে মানুষদের কাছে বড়হিল ঝর্ণা বা বোরহিল ঝর্ণা নামেও পরিচিত এই ঝর্ণাটি। যদিও ঝর্ণাটি ভারতের মধ্যে পড়েছে তবে পিয়াইন নদীর পাড়ে দাঁড়িয়েও খুব কাছ থেকে এর সৌন্দর্য উপভোগ করা যায়। ঝর্ণাটির পাশেই বি এস এফের ক্যাম্প রয়েছে। এখানে বিজিবির কোনো চৌকি নেই। সেজন্য সীমানার কাছাকাছি যাওয়াটা খুবই বিপদজনক।
দুই দেশের সীমানা ভাগ করা হয়েছে এখানে বড়ই গাছের সারি দিয়ে। ঝর্ণাটি ভারতে হলেও বাংলাদেশিরা নির্দিষ্ট দূরত্ব পর্যন্ত নৌকা নিয়ে সেখানে যেতে পারবে। সেখানের নৌকা ভাড়া ২০০ থেকে ৩০০ টাকা পর্যন্ত। সেখানের স্থানীয় মাঝিদের কথা মত নিরাপদ দূরত্বে থেকে মায়াবী এই ঝর্ণার সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারবেন। আর ঝর্ণাটি দেখার পাশাপাশি ছবি তোলা ও ভিডিও করতে পারবেন।
আর আপনারা চাইলে বাংলাদেশের অংশে থেকে ঝর্ণা দিয়ে নেমে আসা পানিতে ভিজতে পারবেন ও মন জুড়িয়ে নিতে পারবেন।
পান্থুমাই ঝর্ণা ভ্রমণের উপযুক্ত সময়
মায়াবী এই প্রকৃতির সৌন্দর্যের টানে সিলেটে সারা বছরই শত শত পর্যটকরা এখানে ভ্রমণ করতে আসেন। তবে এখানে প্রকৃতির আসল রূপ দেখা যায় ভরা বর্ষায়। বর্ষাকালে পূর্ণ যৌবনা হয়ে উঠে ঝর্ণা ও স্বচ্ছ পানির নদী গুলো। পান্থুমাই গ্রামের ঝর্ণাটি ভ্রমণের উপযুক্ত সময় হচ্ছে জুন থেকে অক্টোবর মাস পর্যন্ত। এই সময়ের দৃশ্য গুলো দেখতে অপূর্ব।
সেখানে শুকনো মৌসুমে না যাওয়াই ভালো। আর শুকনো মৌসুমে সেখানে নৌকা পাওয়া যায় না এবং সেখানে নৌকা দিয়ে যাওয়াও যায় না। সেক্ষেত্রে সেখানে বর্ষাকালই হচ্ছে ভ্রমণের আদর্শ সময়। সেই সময়ে চারপাশে পানিতে টুইটুম্বুর থাকে।
যাবার উপায়
পানথুমাই যাবার জন্য প্রথমে সিলেট আসতে হবে। সিলেটের সাথে সারা দেশের যোগাযোগ ব্যবস্থা অত্যান্ত ভালো ।
বাস: যেমন শ্যামলী পরিবহন, এনা পরিবহন, সোহাগ পরিবহন, গ্রীন লাইন পরিবহন। এসব বাস ঢাকার সায়দাবাদ, গাবতলী, ফকিরাপুল, মহাখালী থেকে নির্ধারীত সময় পর পর এসি নন এসি বাস ছেড়ে আসে।
ট্রেন: উপবন, কালনী, পারাবত, জয়ন্তিকা এক্সপ্রেস ঢাকা – সিলেট রোটে যাতায়াত করে। ঢাকার কমলাপুর, বিমান বন্দর ও চট্টগ্রাম রেলওয়ে স্টেশন থেকে উদয়ন ও পাহাড়িকা ট্রেন ছেড়ে আসে সিলেটের উদ্দেশ্যে এসব ট্রেনে সিলেট আসা যায়।
বিমানে: আকাশপথে সিলেট আসা যায়। তাছাড়া আরামদায়ক ভ্রমনের জন্য আপনি আকাশ পথে বিমানের মাধ্যমে সিলেট আসতে পারেন।
আরও পড়ুন: আজকের ট্রেনের সময়সূচী
সিলেট থেকে পানথুমাই যাওয়ার উপায়
সিলেট থেকে পানথুমাই গ্রুপ করে যাওয়া ভালো। পান্থুমাই যেতে হলে সর্বপ্রথম আপনাকে সিলেট শহরের আম্বরখানা পয়েন্ট যেতে হবে। সেখানে বিমানবন্দর রোডে সিএনজি স্টেশন আছে ৷ সেখান থেকে সিএনজি রিজার্ভ করে হাদারপার বাজারে গেলে ভাল হয় ৷ পাঁচজন মিলে ১০০০ টাকায় সাধারণত সিএনজি ভাড়া নিয়ে থাকে হাদারপার বাজারটি খুব একটা বড় না হলেও সবকিছুই পাবেন এখানে। খাবার, পানি, কাপড় সহ অন্যান্য সবই কিনতে পাওয়া যায় এই বাজারে। হাদারপার বাজারেই বিছানাকান্দি/পান্তুমাই যাওয়ার নৌকা ঘাট সেখান থেকে নৌকা পাওয়া যায়। নৌকা ভাড়া আসা-যাওয়া সর্বোচ্চ ১১০০-১৫০০ টাকা হতে পারে। দরাদরি করে নৌকায় উঠবেন। এর চেয়ে কম দামে নৌকা পেলে ভাল তবে অবশ্যই এর বেশি দামে যাবেন না। নৌকা ঠিক করার পূর্বে আলাপ করে নিবেন বিছানাকান্দি, পান্থুমাই ও লক্ষনছড়া ঘুরে দেখাতে হবে বলে নিবেন।
ভ্রমন টিপস
- পনথুমাই ও লক্ষণছড়া, বিছনাকান্দি, কুমুলছড়া দেখার জন্য একসাথে নৌকা ঠিক করে নিন।
- পনথুমাই ভ্রমনের সময় হাদারপার বাজারে দুপুরের খাবার খেয়ে নিতে পারেন।
- হাটার সময় সাবধানতা অবলম্বন করুন। কারন সেখানে উঁচু নিচু অনেক পাথর রয়েছে।
- হাদারপার নৌকা ঘাট থেকে নৌকা ঠিক করে নিন।
- সন্ধ্যার পূর্বে ফিরে আসার জন্য সময়ের দিকে খেয়াল রাখুন।
- নৌকার মাঝি পনথুমাই চিনে কিনা সেটা আগেই জিজ্ঞেস করে শিওর হয়ে নিবেন।
- ময়লা আবর্জনা যেখানে সেখানে ফেলবেন না।
- শিশু ও ছোট বাচ্চা সাথে থাকলে বেশি সাবধানতা অবলম্বন করুন।
- স্থানীয়দের সাথে ভালো আচরন করুন।
থাকা খাওয়ার ব্যবস্থা
পানথুমাই এলাকায় আপনি স্থানীয় খাবার খেতে পারবেন অথবা সিলেট শহরে আপনি খাবার খেয়ে নিতে পারেন। আপনি চাইলে সিলেট থেকে খাবার সংগ্রহ করে সাথে নিতে পারেন। সিলেটের উল্লেখযোগ্য হোটেল সমূহ হল জিন্দাবাজারে অবস্থিত হোটেল পাঁচ ভাই, উঠান রেস্টুরেন্ট, পানশি, এবং পালকিতে দেশীয় বিভিন্ন প্রকারের খাবার যেমন হরেক রকমের ভর্তা, ভাজি, মাছ, মাংস সহ আরো অনেক আইটেমের রয়েছে। এসব হোটেলের খাবারের মান অনেক ভালো এবং মূল্যও অনেক কম।
সিলেটে থাকার মত অনেকগুলো মানসম্মত আবাসিক হোটেল আছে, আপনি আপনার সামর্থ অনুযায়ী যে কোন ধরনের ছোট বড় হোটেল পাবেন। থাকার মত কয়েকটি পরিচিত হোটেল হল – দরগা গেইটে হোটেল হিল টাউন, গুলশান, কায়কোবাদ, সুরমা ইত্যাদি। রাত যাপনের জন্য দরগা রোডে বিভিন্ন মানের আবাসিক হোটেল রয়েছে। রুম ভাড়া ৫০০/- টাকা থেকে ৫০০০/- টাকা পর্যন্ত হয়ে থাকে ।
আরও পড়ুন:
লক্ষনছড়ার সৌন্দর্য্য ও যাবার উপায়