আপনি যদি ধৈর্যশীল হতে চান, তাহলে আমাদের আজকের আর্টিক্যাল আপনার জন্য, ধৈর্য অনেক বড় একটি পরিক্ষা যে পরীক্ষায় সচরাচর আমরা সবাই পড়ি। অনেক এই পরীক্ষায় উর্ত্তিন হতে পারলেও বেশিরভাগ মানুষ তা থেকে উতরে উঠতে পারেন না। সকল কাজ আমাদের ধৈর্যের সাথে করা উচিত।
ধৈর্য কী?
হযরত আলী (রা:) বলেন-“ধৈর্য এমন একটি গাছ, যার সারা গায়ে কাটা কিন্তু ফল অতি সুস্বাদু”। কথায় বলে, সবুরে মেওয়া ফলে। ধৈর্য ধরে যে কোনো কাজ করলে অবশ্যই আপনি সফলতা পাবেন। কিন্তু দেখা যায় অনেকেই অল্পতেই হতাশ হয়ে ধৈর্য হারা হয়ে পড়েন। ধৈর্যের পরীক্ষা সাধারণত বন্ধ দরজার ভেতরেই ঘটে থাকে। সবাই এই পরীক্ষায় উত্তির্ণ হতে পারে না। ধৈর্য না থাকলে দীর্ঘমেয়াদী কোনো কাজ করা সম্ভব নয়। ভাল কিছু করতে হলে বা জীবনে সফল মানুষ হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে চাইলে অবশ্যই আপনাকে ধৈর্যশীল হতে হবে।
কিভাবে ধৈর্য বৃদ্ধি করা সম্ভব হবে?
- অতিরিক্ত চিন্তা না করা
- যোগাসন করা
- সময়ের কাজ সময়ে শেষ করা
- অন্যের কথায় প্ররোচিত না হওয়া
- অহেতুক বাক্ বিতন্ডা থেকে নিজেকে দূরে রাখা
- একমনে আল্লাহকে চিন্তা করা
ধৈর্যশক্তি বাড়ানোর ৭ টি উপায়
১। বই পড়া
ধৈর্যশক্তি বাড়ানোর অন্যতম উপায় হচ্ছে বই পড়া। তাই ধৈর্যশক্তি বাড়ানোর অন্যতম উপায় হচ্ছে বই পড়া। বই পড়া মানসিক চাপ কমায়। মনকে ধীর স্থির করে তোলে। আমাদের প্রতিদিন বই পড়া উচিত। বইকে ভালো বন্ধু মানাতে হবে।
২। ডায়েরি লেখার অভ্যাস
ডায়েরি লেখার অভ্যাস ধৈর্যশক্তি বৃদ্ধি করে। বিশেষ বিশেষ দিনের ঘটনা, যে ঘটনা আপনাকে খুব ভাবাচ্ছে, তাই ডায়েরিতে লিখে রাখতে পারেন। যেকোনো ঘটনা বিস্তারিত লিখতে ধৈর্যের প্রয়োজন। তাই নিয়মিত ডায়েরি লেখার অভ্যাস গড়ে তলুন।
৩। মেডিটেশন (ধ্যান) করুন
মেডিটেশন বা ধ্যান ধৈর্য বাড়ানোর একটি অন্যান্য কার্যকরি উপায়। যেকোনো মানসিক চাপ থেকে মুক্তি লাভের উপায় হলো মেডিটেশন। একাগ্রতার সাথে আল্লাহর ধ্যান আপনার ধৈর্য আরোও বাড়িয়ে দিবে।
৪। আত্মবিশ্বাসী হয়ে উঠুন
আত্মবিশ্বাস শুধু ধৈর্য বাড়ায় তা নয়, জীবনে সফলতা অর্জনে ও সাহায্য করে। তাই নিজেই নিজের প্রতি আত্মবিশ্বাসী হয়ে উঠুন। আত্মবিশ্বাস আপনার সফলতা চাবিকাঠি।
৫। নিজেকে সময় দিন
নিজেকে সময় দেওয়া খুব জরুরী। দৈনন্দিন কাজের ফাঁকে আমরা নিজেকে ভুলে যাই। ভুলে যাই আমাদেরও দরকার বিশ্রাম। কিন্তু শরীর মন ভাল রাখতে হলে অবশ্যই নিজেকে সময় দিতে হবে। শরীর মন ভাল থাকলে আপনি ধৈর্য ধারণে সক্ষম হবেন।
৬। তুলনা করবেন না
অন্যের সাথে কখনোই নিজের তুলনা করবেন না। অন্যরা কি করল তাতে নজর না দিয়ে নিজের প্রতি মনোযোগী হতে হবে। তাই দূরে কোথাও ঘুরে আসতে পারেন। দেখে আসতে পারেন সমুদ্র, ঝর্ণা, প্রকৃতি কিংবা পাহাড়।
৭। বাস্তববাদী হয়ে উঠুন
আমরা সবাই জানি বাস্তবতা বড়ই কঠিন । তাই আপনার সাথে ঘটে যাওয়া ছোট কোনো ঘটনা নিয়ে মন খারাপ করবেন না। যা ভবিষ্যতে হওয়ার, তাই হবে। এ নিয়ে হা-হুতাশ করে লাভ নেই। তবে চেষ্টায় কোন ত্রুটি রাখা চলবে না।
জীবনের কঠিনতম সময়ে কিভাবে ধৈর্য ধারণ সম্ভব?
যখন সব কিছু নিজের বিরুদ্ধে চলে যায়, বারবার মনে মনে একটা কথাই স্মরণ করতে হবে “সময়টা আমার বিরুদ্ধে,তবে আমি চাইলেই পারবো এবং সবকিছু আমার পক্ষে আনতে হবে! মনে মনে আল্লাহর সাহায্য চাইতে হবে। হে আল্লাহ তুমি আমাকে আরো ধৈর্যশক্তি দাও যেন আমি এ পরিস্থিতি সহ্য করতে পারি” অচিরেই আল্লাহর সাহায্য আসবে নিশ্চিত, তাই বিপদে পড়লে আল্লাহকে কখনোই ভুলা উচিত না। আর অবশ্যই মাথা ঠান্ডা রেখে কাজ করতে হবে এ সময়। মনে রাখবেন সময় আপনার প্রতিকূলে।
আবেগ ও আত্মনিয়ন্ত্রণ ক্ষমতা
- আমাকে দিয়ে আর কিচ্ছু হবে না
- কেন আমি ভালো কলেজে ভর্তি হতে পারলাম না
- কেন আমার সম্পর্কটি টিকলো না?
- আমার জীবন অন্যদের মতো সফল না কেন?
- কেন আমার চাকুরী হচ্ছে না?
আমাদের সকলেরই জীবনেই এমন একটি সময় আসে, যখন আমরা কোনো না কোনো ভাবে উপরোক্ত ভাবনাগুলোর সম্মুখীন হয়ে থাকি। জীবনের উঁচু নিচু পথ পাড়ি দিতে গিয়ে ধৈর্য হারিয়ে ফেলি। যদিও জগতের প্রত্যেক সফল মানুষের জীবনের একটি বিশেষ অংশ জুড়ে রয়েছে ব্যর্থতা। কিন্তু তাদের সফলতার রহস্য হলো, প্রবল ধৈর্যের সাথে ইচ্ছা শক্তি। ধৈর্য না থাকলে দীর্ঘমেয়াদী কোনো কাজ করা সম্ভব নয়।
আবেগ বা আত্মনিয়ন্ত্রণ অথবা ধৈর্য শক্তি বাড়ানো দীর্ঘ সময় অনুশীলনের মধ্য দিয়ে অর্জিত হয়। নিচের কৌশল গুলো নিয়মিত পালন করলে আপনিও সহজেই আপনার মনকে ধৈর্যের সাথে নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন। যেমন..
মেডিটেশন বা ধ্যান
নিজের মনকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে ধ্যান বা মেডিটেশন করা খুব উপকারী একটি বিষয়। যখন নেতিবাচক চিন্তাগুলো মনে আসে তখন মানসিক দৃঢ়তা কমে যায়। এই ধরনের চিন্তা মানসিক শক্তিকে দুর্বল করে দেয়। মানসিকতা দুর্বল হয়ে গেলে আমাদের আত্মবিশ্বাস হারিয়ে যায়। আর আমরা জানি আত্মবিশ্বাস একবার হারিয়ে গেলে কাজের অনুপ্রেরণা আর থাকে না।তখনই অই কাজের উপর আমাদের অনাগ্রহ চলে আসে।
কাজটি করতে আর আমাদের মন বসে না। ফলে আমাদের সেই কাজটি অসম্পূর্ণ থেকে যায়। আর আমরা সাফল্যের খুব কাছাকাছি এসেও আমরা ব্যর্থতা নিয়ে ঘরে ফিরি। কিন্তু নিয়মিত মেডিটেশনের অভ্যাস মনকে শান্ত করে এবং দৃঢ় রাখতে সাহায্য করে। আর মন ঠিক থাকলে অনুপ্রেরণার ঘাটতি থাকে না। তাই মনকে শান্ত রাখতে মেডিটেশন করুন।
শ্বাস-প্রশ্বাসের নিয়ন্ত্রন কারক ব্যায়াম
আমাদের মনকে শিথিল রাখতে শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যায়াম ভীষণ কার্যকারী একটা মাধ্যম। নানান ধরনের কাজের চাপের কারনে আমাদের মন প্রায়শই বিক্ষিপ্ত থাকে। এই চাপ হতে পারে আপনার সংসারের চাপ, অফিসে বসের চাপ, পড়ার চাপ, কাজের চাপ ইত্যাদি। আর এই চাপের কারনে মাঝে মাঝে বেচে থাকার আনন্দটাই নষ্ট হয়ে যায়। আর চাপ নিয়ে কাজ করলে সেই কাজ কখনই ভালো হয় না এবং সফলতা আসে না।
আরও পড়ুন: শরীরের জন্য উপকারী খাবার কি কি
তাই আপনার মন ভীষণ বিক্ষিপ্ত এবং অস্থির থাকলে একে নিয়ন্ত্রণের জন্য শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যায়াম করতে পারেন। এই ব্যায়াম করতে প্রথমে গভীরভাবে শ্বাস নিন। কিছুক্ষণ আটকে রাখুন। এরপর ধীরে ধীরে শ্বাস ছাড়ুন। এভাবে কয়েকবার ধরে করুন। এই ব্যায়াম আপনাকে শিথিল করতে সাহায্য করবে। নেতিবাচক চিন্তা ও আবেগগুলো থামাতে সাহায্য করবে। এবং যার ফলে আপনি আপনার কর্ম ক্ষেত্রে ভালো করতে পারবেন এবং জীবনকে আরও সুন্দর মনে হবে।
নিজের চিন্তাকে চিহ্নিত করুন
আমাদের মন বিক্ষিপ্ত হওয়ার মূল কারনই হচ্ছে কোন কাজ শুরু করার আগেই নানা ধরনের নেতিবাচক চিন্তা এসে যাওয়া।ধীরে ধীতে এসব চিন্তা আমাদের মধ্যে বাসা বাধা শুরু করে তখনই আমাদের মন বিক্ষিপ্ত হয়ে যায়। বিচলিত হয়ে পরে তার ফলে আমাদের অনুপ্রেরণা হারিয়ে যায় আর বেলা শেষে সেই কাজ আমাদের দ্বারা হয়ে উঠে না আর উঠলেও ফলাফল আমাদের আশানুরূপ হয় না। তাই নিজের মনকে নিয়ন্ত্রণ করতে যে চিন্তাগুলো আপনাকে এলোমেলো করে দিচ্ছে, সেগুলো চিহ্নিত করুন।
নেতিবাচক চিন্তাগুলো বারবার মনে এলে অকারণেই অস্থির হয়ে উঠবেন। তাই প্রথমে চিন্তার উৎসটা খুঁজে বের করুন। এরপর ভাবনাগুলোকে একেবারে থামিয়ে দিন। ইতিবাচক চিন্তা করা শুরু করুন। ভাবুন আপনার জীবনে ইতিবাচক কী কী দিক রয়েছে। এ ছাড়া ইতিবাচক বিষয়গুলোর একটি তালিকাও তৈরি করতে পারেন। নেতিবাচক চিন্তাগুলো যখন মাথায় আসবে, তখন ইতিবাচক চিন্তার সেই তালিকাটি দেখুন। তাতে করে আপনার মন শান্ত হবে।
মনকে ভিন্ন দিকে নিয়ে যান
এক্ষেত্রে মন খারাপ হওয়ার পরিবেশ থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। কোনো কিছু খুব বেশি সমস্যার মনে হলে বা কষ্টদায়ক হলে, কিছু সময়ের জন্য বিষয়টিকে এড়িয়ে যান। অন্য কোনো কাজে মনোযোগ দিন। তাতে করে আপমার মনের উপর বিরূপ প্রভাব পরতে পারবে না। এবং আপনার মনকে প্রভাবিত করতে পারবে না। ফলে আপনার মন আপনার নিয়ন্ত্রনেই থাকবে।
আরও কিছু আছে যা আমাদের মনকে নিয়ন্ত্রন করে ধৈর্য শক্তি বাড়াতে সাহায্য করে। যেমন, ভালো সঙ্গীত শোনা, আশাবাদী হয়ে উঠতে হবে, ভালো ঘুমাতে হবে, মানবিক চর্চায় নিজেকে নিয়োজিত রাখতে হবে, পছন্দের সিনেমা বা সিরিজ দেখতে পারেন, পজিটিভ মানুষদের সাথে মিশতে পারেন, নিজের কথা লিখে রাখুন ডায়েরিতে, নিজের শরীরের যত্ন নিন, বই পড়ুন, বাস্তব চিন্তায় থাকুন, তুলনা করবেন না, নিজেকে সময় দিন, আপনার পছন্দের কোন একটা সৃজনশীল কাজে যুক্ত হন, দেখবেন নিজেই নিজেকে চিনতে পারবেন না। (তানিয়া নোভা)
শেষ কথা
ধৈর্যের গুরুত্ব সম্পর্কে মহান আল্লাহ পবিত্র কোরআন মজিদে আরও বলেছেন, ‘মহাকালের শপথ, মানুষ অবশ্যই ক্ষতিগ্রস্ত; কিন্তু তারা নয়, যারা ইমান আনে ও সৎকর্ম করে এবং পরস্পরকে সত্যের উপদেশ দেয় ও ধৈর্যের উপদেশ দেয়। আল কুরআন (পারা: ৩০, সূরা আসর-১০৩, আয়াত: ১-৩)।