পায়রা বন্দর (Payra Bondor) বাংলাদেশের পটুয়াখালী জেলার রামনাবাদ নদীর মোহনায় অবস্থিত। এটি বাংলাদেশের তৃতীয় এবং এশিয়া মহাদেশের অন্যতম একটি সামুদ্রিক বন্দর। এই বন্দরটি বাংলাদেশের পটুয়াখালী জেলার কলাপাড়া উপজেলায় অবস্থিত। ২০১৩ সালের ১৯শে নভেম্বর টিয়াখালী ইউনিয়নের ইটবাড়িয়া গ্রামে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই বন্দরটির ভিত্তিফলক উন্মোচন করেন। ২০১৬ সালের ১৩ই আগস্ট এই সমুদ্র বন্দরটির অনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রা শুরু হয়। প্রায় ৬ হাজার একর জায়গা নিয়ে এই বন্দরটি গড়ে উঠেছে এবং সেখানে বিশাল অবকাঠামো বানানো হচ্ছে।
পায়রা বন্দর এর সংক্ষিপ্ত কিছু তথ্য
- অবস্থান : কলাপাড়া পটুয়াখালী।
- দেশ : বাংলাদেশ।
- স্থানাঙ্ক : ২১.৯৮৫৩° উত্তর, ৯০.২৮৬৮° পূর্ব।
- চালু : ১৩ই আগস্ট ২০১৬।
- পরিচালনা করে : পায়রা সমুদ্র বন্দর কর্তৃপক্ষ।
- মালিক : পায়রা সমুদ্র বন্দর কর্তৃপক্ষ।
- পোতাশ্রয়ের ধরন : কৃত্রিম।
- ওয়েবসাইট : ppa.gov.bd।
- ইউএন : BGPAY
বন্দর কর্তৃপক্ষ
এই বন্দরটির কর্তৃপক্ষ একটি সরকারি স্বায়ত্তশাসিত সংস্থা। এই সংস্থাটি পায়রা সামুদ্রিক বন্দর পরিচালনা ও ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে নিয়োজিত। এ বন্দরটি সদর দপ্তর বাংলাদেশের পটুয়াখালী জেলায় অবস্থিত।
পায়রা বন্দরের ইতিহাস
বন্দরের কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল এম সোহেল। ১৯ শে নভেম্বর ২০১৩ সালে বন্দর কর্তৃপক্ষ ও বন্দরটি পায়রা সাগর বন্দর হিসেবে আইন ২০১৩ এর মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। ২০১৬ সালের আগস্ট মাস থেকে এই বন্দরটির কর্তৃপক্ষের অধীনে বন্দরে বাণিজ্যিকভাবে কার্যক্রম শুরু হয়। ২০১৬ সালে চীন ইঞ্জিনিয়ারিং কনস্ট্রাকশন কোম্পানি এবং চীন হারবার ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি বন্দরটি উন্নত করার জন্য কর্তৃপক্ষের সাথে একটি চুক্তি স্বাক্ষর করেছে।
এই চুক্তিগুলো ৫০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের বেশি ছিল এবং ঢাকায় নৌ মন্ত্রণালয় স্বাক্ষরিত হয়। একই বছর বাংলাদেশ নৌবাহিনী সাথে বন্দর কর্তৃপক্ষ বন্দরের প্রবেশ পথ নির্মাণের জন্য একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। ২০১৭ সালের ডিসেম্বর মাসে জন দে নুল ৫৫০ মিলিয়ন ইউরো ড্রেজিং চুক্তিতে অগ্রসর হতে শুরু করেন।
এই বন্দরটি আমদানি ও রপ্তানির জন্য সরকারিভাবে একটি রুট। ৫ ই নভেম্বর জাতীয় সংসদে বন্দর কর্তৃপক্ষ আইন, (২০১৩) পাশ হয়।
পায়রা বন্দর অর্থনৈতিকভাবে কতটা লাভজনক হবে
বাংলাদেশের দক্ষিণের পায়রা সমুদ্র বন্দরের সুযোগ-সুবিধা বাড়াতে বেশ কয়েকটি উন্নয়ন প্রকল্প প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উদ্বোধন করেছেন। এই সবগুলো প্রকল্প বাবদ মোট খরচ হিসেবে করে ধরা হয়েছে ১১ হাজার ৭২ কোটি টাকা। এই প্রকল্পের খরচের পুরোটাই বাংলাদেশের রিজার্ভের টাকা দিয়ে তৈরি করা তহবিল থেকে বরাদ্দ দেয়া হচ্ছে। এই তহবিলের নাম “বাংলাদেশ অবকাঠামো উন্নয়ন তহবিল”।
আগামী ২০২৩ সালের শেষ নাগাদ এই পায়রা বন্দর প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার কথা রয়েছে এবং এর ফলে সমুদ্র বন্দরের কয়েক গুণ সক্ষমতা বেড়ে যাবে বলে জানাচ্ছেন প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন বিদেশি অর্থায়নে অনেক ঝামেলা পোহাতে হয়। এজন্য রিজার্ভের টাকা দিয়ে এই বন্দরের প্রকল্পের কাজ শুরু করা হচ্ছে। এতে ঘরের টাকা ঘরেই থাকবে। সেজন্য কোন দেশ থেকে ঋণ না নিয়ে বাংলাদেশের অর্থায়নে প্রকল্পের কাজ শুরু করেছে।
আরও পড়ুন: ঠিকানা রিসোর্ট
বন্দরের ভিত্তি স্থাপনের পর এখন পর্যন্ত ২৬০ টি জাহাজ বন্দরের ভিড়েছে এবং রাজস্ব আয় হয়েছে ৬১৩ কোটি টাকা।
পায়রা বন্দর প্রকল্প সংযোজন
বাংলাদেশের অন্যতম বড় এই প্রকল্পে উন্নয়ন কাজের মধ্যে বন্দরে নতুনত্ব ধরে রাখার জন্য রয়েছে দেশের বৃহত্তর ক্যাপিটাল ড্রেজিং। এই ড্রেজিং এর মাধ্যমে রামনাবাদ বন্দরে ৭৫ কিলোমিটার দীর্ঘ ১০০ থেকে ১২৫ মিটার প্রশস্ত এবং ১০.৫ মিটার গভীর চ্যানেলের নির্মাণ কাজ এগিয়ে নেয়া হবে। এতে বন্দরে ৪০ থেকে ৫০ হাজার মেট্রিক টন কার্গো বহনকারী জাহাজ ভিড়তে পারবে।
এই বন্দরে এতদিন নিজস্ব কোন টার্মিনাল ছিল না। এই বন্দরে ৬৫০ মিটার দীর্ঘ প্রথম টার্মিনাল নির্মাণ করা হবে। টার্মিনালটিতে ২০০ মিটারের তিনটি জাহাজ একই সাথে ভিড়তে পারবে। এই প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে বিদেশী বিভিন্ন জাহাজ এই টার্মিনালে আসতে পারবে এবং মালামাল টার্মিনালের মাধ্যমে খালাস করতে পারবে। তারপর এই মালামাল গুলো এখান থেকে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে চলে যাবে। এই টার্মিনাল থেকে রপ্তানির কাজও হবে।
জাহাজ থেকে খালাস হওয়া বিভিন্ন মালামাল গুলো পণ্যবাহী পরিবহন চলাচলের জন্য ছয় লেনের সংযোগ সড়ক ও আন্দারমানিক নদীর উপর একটি সেতু নির্মাণের কাজ চলবে। প্রধানমন্ত্রীর শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘এসব প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে বন্দরের সক্ষমতা কয়েক গুণ বেড়ে যাবে এবং চট্টগ্রাম ও মংলা বন্দরের চাপ অনেকটা নিরসন করা যাবে’।
প্রধানমন্ত্রীর শেখ হাসিনা আরও বলেছেন যে, যেহেতু এটার এক পাশে মংলা ও আরেক পাশে চট্টগ্রাম বন্দর সেহেতু পায়রা বন্দরের আলাদা গুরুত্ব আছে। এই বন্দর এর সাথে বিভিন্ন বন্দর গুলোর যোগাযোগ বাড়বে। আন্তর্জাতিক বাণিজ্যিক করিডোরের সাথে সংযুক্ত বাড়াবে। নেপাল, ভারত ও ভুটান সবাই এই বন্দরটি ব্যবহার করে উপকৃত হবে। এর মাধ্যমে প্রচুর পরিমাণে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা যাবে। বন্দরটির আশেপাশে পর্যটন শিল্প গড়ে উঠবে। নতুন নতুন শিল্প কারখানা স্থাপন করা হবে। বহু মানুষের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হবে।
পায়রা উন্নয়ন প্রকল্পে আরো রয়েছে আটটি জাহাজের নির্মাণ কাজ। এর মধ্যে সাতটি জাহাজ হচ্ছে বাংলাদেশের বিভিন্ন শিপইয়ার্ডের তৈরি। এ জাহাজ গুলো দিয়ে বন্দরের বিভিন্ন বিদেশি জাহাজ গুলোর হ্যান্ডেলিং এর কাজ করা হবে।
বাংলাদেশের সামগ্রীক বাণিজ্যের ৯২% নদী পথে ও সমুদ্র বন্দরে হয়ে থাকে। বাংলাদেশের আমদানি ও রপ্তানির খাতে গতি বাড়াতে পায়রা বন্দরটি বিশেষভাবে ভূমিকা রাখবে বলে মনে করা হচ্ছে।
বন্দর সম্পর্কে সচরাচর জিজ্ঞাসিত প্রশ্নাবলী (FAQ’s)
বন্দর বাংলাদেশের কোথায় অবস্থিত?
পায়রা নামক সমুদ্র বন্দর (Payra Bondor) বাংলাদেশের পটুয়াখালী জেলার রামনাবাদ নদীর মোহনায় অবস্থিত।
পায়রা বন্দরের প্রকল্পটিতে কত টাকা ব্যয় নির্ধারণ করা হয়েছে?
প্রকল্প বাবদ মোট খরচ হিসেবে করে ধরা হয়েছে ১১ হাজার ৭২ কোটি টাকা।