ঐতিহ্যবাহী রবিরবাজার জামে মসজিদ সম্পর্কে আজকের আলোচনা। সিলেট বিভাগের মৌলভীবাজার জেলার কুলাউড়া উপজেলার প্রায় ১০ কি.মি দক্ষিনে পৃথিমপাশা ইউনিয়নের স্থানীয় রবিরবাজারে ‘রবিরবাজার জামে মসজিদটি অবস্থিত’।
রবিরবাজার জামে মসজিদের ইতিহাস
রবিরবাজার জামে মসজিদটি কবে স্থাপিত হয়েছিল তার কোন সন তারিখ জানা নেই। তবে মসজিদের বয়স ১৫০ শতাধিক বৎসর হবে। পৃথিমপাশা নবাব বাড়ীর এক মহীয়সী নারী বেগম তালিবুন্নেছা খাতুনের নিজস্ব উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত হয় এই মসজিদটি। ধর্মপ্রান এই মহিলা স্বপ্নে আদিষ্ট হয়ে মসজিদটি স্থাপন করেছিলেন বলে জনশ্রুতি আছে। প্রথমে বেগম তালিবুন্নেছার নিজ অর্থায়নে মসজিদটি গড়ে উঠেছিল টিন ও বাশের দ্বারা।
সময়ের সাথে সাথে মসজিদে মুসল্লিদের সংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি পাওয়ায় মসজিদটি বড় করা আবশ্যক হয়। পরবর্তীতে দেড় বিঘা জমির উপর তৈরী করা হয়েছিল মূল মসজিদটি। দেশ-বিদেশে রবিরবাজার জামে মসজিদের সুনাম দিন দিন বাড়তে থাকে এবং দেশের নানা প্রান্ত থেকে মুসল্লিগন এই মসজিদে নামায আদায় করতে আসেন।
দেশ-বিদেশের বিভিন্ন পর্যায়ের মানুষের আর্থিক সহযোগিতায় নতুনভাবে স্থায়ী পরিকল্পনা অনুযায়ী ৫ তলাবিশিষ্ট প্রায় ১ লাখ বর্গফুট আয়তনের সিলেট বিভাগের মধ্যে ব্যয়বহুল অপূর্ব বিরল নির্মাণশৈলীর বৃহত্তর এ মসজিদ ভবনের নির্মাণ কাজ শুরু হয়। যা সম্পন্ন হলে একসাথে প্রায় ১০/১৫ হাজার মানুষ জামাতে নামাজ আদায় করতে পারবেন।
এই মসজিদে প্রতিদিন গড়ে লক্ষ টাকা এবং সোনা, রুপা, ডলার, ভারত, পাকিস্থান, দুবাই, সৌদি আরব, কাতার, লন্ডন, আমেরিকা সহ সারা বিশ্বের সব দেশ থেকে অর্থ আয় হয়ে থাকে। প্রত্যক ধর্ম ভীরু স্থানীয় ও বহিরাগত লোকজন এই মসজিদে দান করে হলেও আত্মতৃপ্তি লাভ করেন।
এই মসজিদে যে কোন সৎ মানত করে দান করলে আশানুরুপ ফলাফল পাওয়া যায় বিধায় বিভিন্ন স্থান থেকে মানুষ এসে নামায পড়েন, কোরআন তিলাওয়াত ছাড়াও অন্যান্য ধর্মাবলম্বীগন দর্শন করে থাকেন। উল্লেখ্য যে, ইসলাম ধর্ম ছাড়াও অন্যান্য ধর্মাবলম্বীরা এই মসজিদে দান খয়রাত করে আশানুরুপ ফল পেয়ে থাকেন।
বিভিন্ন ইসলামী দিবসে এই মসজিদে সারা বাংলাদেশ থেকে হাজার হাজার মুসিল্লিদের সমাগম হয়ে থাকে এবং এক সাথে নামায আদায় করে থাকেন। মসজিদের ওপর ৫০ ফুট উচ্চতার ২টি মিনার, ৭টি গোলাকার গম্বুজ ও নিরাপত্তা ব্যবস্থার জন্য সিসি টিভি, মসজিদের ডানদিকে গাড়ি পার্কিং, প্রতি তলায় অজুর ব্যবস্থা ও সুবিশাল টয়লেট এবং এক পাশে নারীদের জন্য নামাজের ব্যবস্থা রয়েছে।
ইমাম ও অন্যান্য কর্মচারী:
রবিরবাজার জামে মসজিদে একজন খতিব আলহাজ্ব হযরত মাওলানা আব্দুল জব্বার সাহেব (অধ্যক্ষ, রবিরবাজার ফাজিল ডিগ্রি মাদ্রাসা), একজন পেশ ইমাম হযরত মাওলানা ইয়াছিন আলী সাহেব, একজন ছানী ইমাম, মোঃ আব্দুস শুকুর সাহেব, ২ জন মোয়াজ্জিন, ৫/৬ জন খাদেম রয়েছেন।
রবিরবাজার জামে মসজিদে কিভাবে ভ্রমন করবেন
বাংলাদেশের যে কোন স্থান হতে প্রাইভেট কার, বাস, ট্রেন, কিংবা মাইক্রোবাসে সিলেট বিভাগের মৌলভীবাজার জেলার কুলাউড়ায় উপজেলায় এসে কুলাউড়া থেকে সি.এন. জি, (ভাড়া ২৫/-) কিংবা বাসে (ভাড়া ১৫/-) করে রবিরবাজার আসা যায়। দেশের ভিবিন্ন স্থান হতে কুলাউড়ায় আসার জন্য ভালো মানের এসি বাস এবং ঢাকা, চট্রগ্রাম থেকে আন্তঃনগর ট্রেনও রয়েছে।
আশেপাশের দর্শনীয় স্থান
- মাধবকুন্ড জলপ্রপাত
- সিতেশ বাবুর চিড়িয়াখানা যাবার উপায় ও ভ্রমন টিপস
- আমানিপুর পার্ক
- রোকনটিলা ইকোপার্ক
- দুলনচাঁপা ইকোপার্ক
কোথায় থাকবেন
স্থানীয় রবিরবাজরে থাকা কিংবা রাত্রি যাপনের কোন সু-ব্যবস্থা নাই। কিন্তু কুলাউড়া ও এর আশেপাশে থাকার জন্য সরকারি-বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় স্থানীয় পর্যায়ের বেশ কিছু মানসম্মত আবাসিক হোটেল এবং রেস্ট হাউস রয়েছে, যেখানে ৪০০ থেকে ২০০০ টাকায় বিভিন্ন ধরণের রুম পাওয়া যায়। এসব আবাসিক হোটেল এবং রেস্ট হাউসের মধ্যে রয়েছেঃ
- উপজেলা পরিষদ ডাক বাংলো: কুলাউড়া থানার সম্মুখে;
- ফাল্গুনী রেস্ট হাউজ : মিলি প্লাজা, কুলাউড়া, মৌলভীবাজার;
- বাদশাহী হোটেল, কুলাউড়া- ০১৭৬০-১৩৮৩৯১
আরও পড়ুন: পর্যটকের আকর্ষণ পৃথিমপাশা নবাব বাড়ি
কোথায় খাবেন
কুলাউড়া তথা সিলেট বিভাগে সাতকরা দিয়ে গরুর গোস্ত ভূনা অন্যতম খাবার। কুলাউড়ায় ভালো মানের খাবার হোটেল রয়েছে, তার মধ্যে অন্যতম ইস্টান রেস্টুরেন্ট, পাকশী রেস্টুরেন্ট, ছামী ইয়ামি রেস্টুরেন্ট, ফুড ল্যাব এবং বরিববাজারে রয়েছে ফুড কেয়ার রেস্টুরেন্ট ও ছোট ছোট হোটেল। যেখানে আপনি অল্প টাকায় ভালো খাবার খেতে পারবেন।
ইতি কথা: রবিরবাজার জামে মসজিদে এক ওয়াক্ত মানায পড়ে, কিছু টাকা পয়সা দান করে মানুষ মনের আত্মতৃপ্তি লাভ করে এবং মানুষের মনের আশাও পূর্ন হয়।