আমাদের আজকের আলোচনা ঋণ পরিশোধের দোয়া নিয়ে। আমরা আর্থিক অসচ্ছলতায় ও নানা প্রয়োজনে মানুষ ঋণ নিয়ে থাকে। তবে রাসুলুল্লাহ (সাঃ) সাধারণ কারণে ঋণ নিতে অনুৎসাহিত করেছেন। তিনি সর্বদা মহান আল্লাহর কাছে গুনাহ ও ঋণ থেকে পানাহ চাইতেন। কারণ তিনি বলেন, “মানুষ ঋণগ্রস্ত হলে মিথ্যা বলে ও ওয়াদা ভঙ্গ করে।” তাছাড়া জীবদ্দশায় ঋণ পরিশোধ করতে ব্যর্থ হলে কিয়ামতের দিন কঠিন জবাবদিহিতা ও বান্দার হক আদায় করতে হবে।
অতিরিক্ত ঋণগ্রস্থ হলে ঋণ পরিষদের চেষ্টার পাশাপাশি মহান আল্লাহর কাছে সাহায্য চাইতে হবে। ঋণ পরিশোধের দোয়া/ঋণ মুক্তির দোয়া পাঠ করে আল্লাহর সাহায্যপ্রাপ্ত হওয়া যায়।
ঋণ পরিশোধের দোয়া
হযরত আলী (রা.)- এর কাছে এক ব্যক্তি ঋণ পরিশোধের জন্যে কিছু সাহায্য চায়। তখন আলী (রাঃ) তাকে বলেন, আমি কি তোমাকে কয়েকটি শব্দ শিক্ষা দেব, যা আমাকে রাসুলুল্লাহ (সা.) শিক্ষা দিয়েছেন? যা তুমি পাঠ করলে, পর্বত সমান ঋণ হলেও আল্লাহই তোমার ঋণমুক্তির ব্যবস্থা করে দেবেন। এরপর আলী (রা.) ওই ব্যক্তিকে নিম্নোক্ত দোয়া পড়তে বলেন-
আরবি: اللهم اكْفِنِي بِحَلَالِكَ عن حَرَامِكَ ، وَأَغْنِنِي بِفَضْلِكَ عَمَّنْ سِوَاكَ
বাংলা উচ্চারণ: “আল্লা-হুম্মাকফিনি বি হালালিকা আন হারামিকা, ওয়া আগনিনি বি-ফাদলিকা আম্মান সিওয়াকা।” (তিরমিজি-৩৫৬৩; মুসনাদ আহমদ-১৩২১)
বাংলা অর্থ: “হে আল্লাহ, হারামের পরিবর্তে আপনার হালাল রুজি আমার জন্য যথেষ্ট করে দিন। আর আপনাকে ছাড়া আমাকে কারো মুখাপেক্ষী করিয়েন না এবং স্বীয় অনুগ্রহ দিয়ে আমাকে স্বচ্ছলতা দান করুন।
আরও পড়ুন: ইফতারের দোয়া- তারাবির নামাযের দোয়া ও নিয়ত
ঋণ থেকে মুক্তির দোয়া
ঋণ পরিশোধের দোয়া হিসেবে হাদিস শরীফে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দোয়া রয়েছে। দোয়াটি হলো:-
আরবি: اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ مِنَ الْهَمِّ وَالْحَزَنِ، وَالْعَجْزِ وَالْكَسَلِ، وَالْبُخْلِ وَالْجُبْنِ، وَضَلَعِ الدَّيْنِ وَغَلَبَةِ الرِّجَالِ
বাংলা উচ্চারণ: “আল্লা-হুম্মা ইন্নী আ‘উযু বিকা মিনাল হাম্মি ওয়াল হাযানি; ওয়া আ‘উযু বিকা মিনাল আজযি ওয়াল কাসালি, ওয়া আ‘উযু বিকা মিনাল বুখলি ওয়াল জুবনি; ওয়া আ‘উযু বিকা মিন দ্বালা-য়িদ্দাইনি ওয়া গালাবাতির্ রিজা-ল।” (বুখারি- ২৮৯৩)
বাংলা অর্থ: “হে আল্লাহ! নিশ্চয় আমি আপনার আশ্রয় চাই দুঃশ্চিন্তা ও দুঃখ থেকে; অপারগতা ও অলসতা থেকে; কৃপণতা ও ভীরুতা থেকে; ঋণের ভার ও মানুষের দমন-পীড়ন থেকে।”
ঋণ মুক্তির নিয়তে সকাল-সন্ধ্যা আল্লাহ তায়ালার কাছে সাহায্য প্রার্থনা করা। ঋণ মুক্ত হওয়ার সর্বাত্মক চেষ্টা চালানো। তবেই মহান আল্লাহ তায়ালা ওই তাঁর বান্দাকে ঋণ থেকে মুক্তি দিবেন ইনশআল্লাহ।
ঋণমুক্তির জন্যে রাসূল (সাঃ) যে দোয়া পড়তেন
রাসুলুল্লাহ (সাঃ) আল্লাহর কাছে এই ঋণ মুক্তির দোয়া করতেন:
আরবি: اللهم إني أعوذ بك من الكسل والهرم والمأثم والمغرم
বাংলা উচ্চারণ: “আল্লা-হুম্মা ইন্নি আ’উযু বিকা মিনাল কাসালি, ওয়াল হারামি, ওয়াল মা’ছামি, ওয়াল মাগরামী।”
বাংলা অর্থ: “হে আল্লাহ, আমি আপনার কাছে অলসতা, অতি বার্ধক্য, গুনাহ এবং ঋণ থেকে আশ্রয় চাই।” (বুখারি- ৬০০৭)
হজরত আলী (রা) বর্ণনা করেছেন, ‘একজন চুক্তিবদ্ধ গোলাম (ক্রীতদাস) তাঁর কাছে এসে বলে, আমার চুক্তির অর্থ পরিশোধ করতে আমি অপরাগ হয়ে পড়েছি। আমাকে আপনি (হজরত আলী (রা)) সহযোগিতা করুন। তিনি বললেন, আমি তোমাকে কি এমন একটি বাক্য শিখিয়ে দেব না; যা আমাকে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম শিখিয়েছিলেন? যদি তোমার উপর সীর (সাবীর) পর্বত পরিমাণ ঋণও থাকে তবে আল্লাহ তাআলা তোমাকে তা পরিশোধের ব্যবস্থা করে দেবেন। তখন তিনি বললেন, তুমি বল-
اللَّهُمَّ اكْفِنِي بِحَلاَلِكَ عَنْ حَرَامِكَ، وَأَغْنِنِي بِفَضْلِكَ عَمَّنْ سِوَاكَ
উচ্চারণ : আল্লাহুম্মাকফিনি বিহালালিকা আন হারামিকা ওয়া আগনিনি বিফাদলিকা আম্মান সিওয়াক।
ঋণ পরিশোধের সময় ও দোয়া করা
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আবু রবিআ আল-মাখযুমি (রা:) বর্ণনা করেন, নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হুনাইন যুদ্ধের সময় তার কাছ থেকে ৩০ অথবা ৪০ হাজার দিরহাম ঋণ নিয়েছিলেন। নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যুদ্ধ থেকে ফিরে এসে তার পাওনা পরিশোধ করেন। এরপর নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাকে (দোয়া করে) বললেন-
بارَكَ اللَّهُ لَكَ فِي أَهْلِكَ وَمَالِكَ، إِنَّمَا جَزَاءُ السَّلَفِ الْحَمْدُ وَالأَدَاءُ
বাংলা অনুবাদ : ‘বারাকাল্লাহু লাকা ফি আহলিকা ওয়া মালিকা; ইন্নামা ঝাযাউস-সালাফিল হামদু ওয়াল-আদাউ।’
বাংলা অর্থ : ‘আল্লাহ তাআলা তোমাকে তোমার পরিবার ও সম্পদে বরকত দান করুন। নিশ্চয়ই ঋণের প্রতিদান হলো- তা পরিশোধ করা এবং প্রশংসা করা।’ (ইবনে মাজাহ, মুসনাদে আহমাদ)
শেষকথা
ঋণগ্রহণ থেকে আমাদের যথাসাধ্য বিরত থাকা উচিত। তবে অতি প্রয়োজনের ঋণ নিলে তা পরিশোধের চেষ্টা, ইচ্ছা আল্লাহর কাছে ঋণ মুক্তির দোয়া / ঋণ পরিশোধের দোয়া করতে হবে।