রোজা: যার অর্থ হলো- দান করা, পুড়িয়ে ফেলা, প্রখরতা, গরম, উতপ্ত ইত্যাদি। রোজা একটি শারিরীক ইবাদাত, রমজান মাসে প্রাপ্ত বয়ষ্ক সকলের উপর রোজা রাখা ফরজ। আমাদের আজকের আলোচনা রোজার নিয়ত ও সকল মাসলা মাসায়েল, রোজার ফজিলত, রোজা রাখার নিয়ত, রোজা ভঙ্গের কারণ, রোজার নিয়ত বাংলা এ সকল বিষয় নিয়ে।
রোজার ফযীলত
পবিত্র কোরআন মাজিদে ইরশাদ হচ্ছে,
يَأَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا كُتِبَ عَلَيْكُمُ الصِّيَامُ كَمَا كُتِبَ عَلَى الَّذِيْنَ مِنْ قَبْلِكُمْ لَعَلَّكُمْ تَتَّقُونَ
“হে ঈমানদারগণ। রোযা তোমাদের জন্য ফরম করে দেয়া হয়েছে যেমন তোমাদের পূর্ববর্তীদের ওপর ফরয ছিল, যাতে তোমরা আত্মসংযমের নীতি অবলম্বন করতে পার।”
আল্লাহ তায়ালা বলেন রোজা আমার আর রোজার বদলা আমার নিজ হাতে দেব। (সুবহানআল্লাহ)
রোজা একটি ফযীলতসমৃদ্ধ ইবাদত। এ ইবাদতটি মুসলমানদের ওপরে ফরয করা হয়েছে, যাতে করে তারা অধিক পরিমাণে তাকওয়া অর্জন করতে পারে এবং গুনাহ থেকে পরিত্রাণ পেতে পারে। আল্লাহর ভয়ে ভীত হয়ে থাকার অনুশীলন এই সিয়াম সাধনায় এত অধিক পরিমাণে রয়েছে যে, বান্দাহ এই ইবাদতটির মাধ্যমে সকল গুনাহ থেকে পরিত্রাণ লাভ করতে সক্ষম হয়। সিয়াম সাধনার এই ইবাদতটির মাধ্যমে সহসা বান্দাহ আল্লাহর রঙে রঙীন হওয়ার এবং আল্লাহর গুণে গুণান্বিত হওয়ার সৌভাগ্য অর্জন করে। নবী কারীম বলেছেন-
‘তোমরা আল্লাহর গুণে গুণান্বিত হও।”
আল্লাহ তায়ালা কোন পানাহার গ্রহন করেন না, আল্লাহ তায়ালা অদৃশ্য, গোপন। এ রোজা রাখার কারণে বান্দাহ পানাহার করে না, রোজার পুরো ইবাদতটিই একটি গোপন ইবাদত, রোজাদার ব্যক্তি প্রকাশ করা ছাড়া রোযা বুঝার কোন উপায় নেই। এটি একটি অদৃশ্য এবং গোপনীয় ইবাদত। রোযাদার ব্যক্তি তার সর্বাঙ্গ দিয়ে সিয়াম সাধনায় অংশগ্রহণ করে। এ জন্যই মহান আল্লাহর নিকট এই ইবাদতটি এতই প্রিয় যে, কিয়ামত দিবসে স্বয়ং আল্লাহ পাক নিজ হাতে (কুদরতী হাতে) রোযার পুরস্কার দিবেন অথবা তিনি স্বয়ং নিজে এর প্রতিদান হবেন।
রোজার নিয়ত
রোজার নিয়ত করা ফরয। আর এই নিয়ত অন্তর দিয়ে হলেও মুখে নিয়্যত করে নেয়া উত্তম। আর তা এভাবে, “আয় আল্লাহ পাক! আমি আগামীকাল রোযা রাখার নিয়্যত করলাম।” প্রত্যেক দিনের রোযার জন্য আলাদা আলাদা নিয়্যত করা জরুরি। রোযার চাঁদ দেখে এক মাসের রোযার এক সাথে নিয়্যত করলে রোযা শুদ্ধ হবে না।
রোজার নিয়ত আরবী:
نَوَيْتُ اَنْ اُصُوْمَ غَدًا مِّنْ شَهْرِ رَمْضَانَ الْمُبَارَكِ فَرْضَا لَكَ يَا اللهُ فَتَقَبَّل مِنِّى اِنَّكَ اَنْتَ السَّمِيْعُ الْعَلِيْم
বাংলা উচ্চারণ: নাওয়াইতু আন আছুমা গাদামমিন শাহরি রমাদানাল মুবারাক; ফারদাল্লাকা ইয়া আল্লাহু, ফাতাকাব্বাল মিন্নি ইন্নিকা আনতাস সামিউল আলিম।
রোজার নিয়ত বাংলা:
হে আল্লাহ! আমি আগামীকাল পবিত্র রমজানের তোমার পক্ষ থেকে নির্ধারিত ফরজ রোজা রাখার ইচ্ছা পোষণ (নিয়্যত) করলাম। অতএব তুমি আমার পক্ষ থেকে (আমার রোজাকে) কবুল কর, নিশ্চয়ই তুমি সর্বশ্রোতা ও সর্বজ্ঞানী।
রোজার নিয়ত নিয়ে মতবেদ রয়েছে- যেমন
- আল্লামা নাজমুদ্দীন নসফী (র.)-এর মতে, সাহারী খাওয়া দ্বারা রোজার নিয়্যত আদায় হয়ে যাবে ।
- আল্লাহ চাইলে আগামীকাল রোযা রাখব। একথা বললেও নিয়্যত শুদ্ধ হবে।
- নিয়্যতের সময় কাল হলো সূর্যাস্তের পর হতে পরের দিন দ্বীপ্রহরের পূর্ব পর্যন্ত। এর মধ্যে নিয়্যত করলে সহীহ হবে। কেননা চান্দ্রমাসে রাত আগে আসে দিন পরে আসে ।
- রামাযান মাসে নফল রোযার নিয়্যত করলেও ফরয রোযা আদায় হয়ে যাবে। নফলের নিয়্যত সহীহ হবে না।
- রামাযানে মানত বা কাযা যে রোযারই নিয়্যত করা হোক না কেন, নিয়্যত সহীহ হবে না; বরং চলমান রোযাই আদায় হয়ে যাবে। মুসাফির বা অসুস্থ ব্যক্তি যদি নিয়্যত করে “আমি রোযা রাখব” তাহলে তার রামাযানের রোযা আদায় হয়ে যাবে।
- দিনের বেলায় রামাযানের রোযার নিয়্যত করলে তাকে পরিষ্কারভাবে বলতে হবে “যখন থেকে দিন শুরু হয়েছে তখন থেকে রোযা রাখার নিয়্যত করেছি” অন্যথায় রোযা আদায় হবে না।
- রোযার নিয়্যত ছাড়া সারাদিন পানাহার থেকে বিরত থেকে ইফতার করলে রোযা আদায় হবে না ।
ইফতারের দোয়া
হযরত মুয়ায ইবন যোহরা (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী কারীম যখন ইফতার করতেন তখন এই দোয়াটি পাঠ করতেন—
ইফতারের দোয়া আরবি:
اللَّهُمَّ لَكَ صُمْتُ وَعَلَى رِزْقِكَ أَفْطَرْتُ
ইফতারের দোয়া বাংলা : আল্লাহুম্মা লাকা ছুমতু ওয়া আলা রিজকিকা আফতারতু
ইফতারের দোয়া বাংলা অর্থসহ: “হে আল্লাহ! কেবল তোমার উদ্দেশ্যেই রোযা রেখেছি এবং তোমার দেয়া রিযিক দিয়েই ইফতার করছি।
যাদের উপর রোজা ফরজ
মুসলমান, রোজা রাখতে সক্ষম, সাবালক এবং সুস্থ, জ্ঞান সম্পন্ন নারী পুরুষের উপর রোজা রাখা ফরয। অক্ষম, নাবালক, অসুস্থ ও পাগলের উপর রোযা রাখা ফরয নয়। তবে রোযা রাখার ওয়াজিব ২টি
১। কঠিন ও জটিল রোগে আক্রান্ত না হওয়া এবং সুস্থ্য থাকা।
২) সফরে না থাকা বা মুকীম অবস্থায় থাকা।
কাদের উপর রোযা রাখা ফরয নিম্নে বিস্তারিত পেশ করা হলো-
১। মুসলমান হওয়া: কোন অমুসলিমের উপর রোযা ফরয নয়।
২। সক্ষম হওয়া: রোয়া অক্ষম ব্যক্তির উপর রোযা ফরজ নয়, সেক্ষেত্রে অক্ষম ব্যক্তির ফিদইয়া আদায় করা ওয়াজিব।
৩। সাবালক হওয়া: নাবালকের উপর রোযা ফরজ নয়।
৪। মুকীম হওয়া: সফরে অবস্থানরত মুসাফিরের ব্যক্তির উপর রোযা ফরজ নয়।
৫। সুস্থ থাকা: এমন রোগীর উপর রোযা ফরজ নয়, যিনি রোযা রাখলে প্রাণ নাশের আশংক্ষা থাকে। মহিলারা রজঃগ্রস্থ হলে, নেফাস হলে তার রোযা রাখা ফরজ নয়।
রোজার প্রকারভেদ
রোজা সাধারনত তিন প্রকার: যথা- (১) ফরয রোজা, (২) ওয়াজিব রোজা, (৩) নফল রোজা।
ফরয রোজা
ফরয রোজা ২ প্রকার:
ক) রামযান মাসের রোজা
খ) রোযার কাযা ও কাফ্ফারার রোযা।
ওয়াজিব রোজা
ক) মানতের রোযা, নির্দিষ্ট দিনের রোজা
খ) অনির্দিষ্ট দিনের মানতের রোযা।
নফল রোজা
ক) আশুরার রোযা : মহররম মাসের ৯ ও ১০ তারিখের রোযা
খ) শাবান মাসের রোজা: ১৫ ই শাবানের রোযা বা শবে বরাতের রোজা।
গ) আরাফার দিনের রোজা
ঙ) প্রতি মাসের আইয়ামে বীযের রোজা
চ) সাওমে দাউদ (আ:)
ছ) লাগাতার বা বিরতিহীন রোযা সওমে বিসাল : কোন প্রকার ইফতার ও সাহরি ব্যতিত লাগাতার মাসভর রোজা রাখা। এটি মহানবী (সা:) এর বৈশিষ্ট ছিল। তিনি সাহাবিদের এমন রোযা রাখতে নিষেধ করেছেন।
জ) শাওয়ালের ৬ রোজা: রমযান মাসের পর ঈদুল ফিতরের পরের দিন থেকে ৬টি রোযা রাখা মুস্তাহাব। একাধারে বা আলাদা আলাদাভাবে এ রোজা রাখা যায়।
ঝ) প্রতি সপ্তাহের সোমবার দিনের রোযা: সপ্তাহের প্রতি সোমবার দিনে রোজা রাখা মুস্তাহাব।
রোজা ভঙ্গের কারণ
যে যে কারণে রোযা ভেঙ্গে গেলে শুধুমাত্র কাযা ওয়াজিব হয় নিম্নে তার বিবরণ দেয়া হল:
- ওযু বা গোসলের সময় কুলি করার কারণে গলার ভিতরে পানি প্রবেশ করলে ।
- ইচ্ছাকৃত মুখভরে বমি করা।
- কাগজ, কাঠের টুকরা বা পয়সা জাতীয় কোন কিছু গিলে ফেললে ।
- ইচ্ছাকৃতভাবে আগরবাতী, লোবানের ধোঁয়া নাকে প্রবেশ করালে।
- বিড়ি সিগারেট বা হুক্কা পান করলে ।
- ভুলবশত খাওয়ার পর স্মরণ হওয়ার পরে ইচ্ছাকৃত কিছু খাওয়া।
- সাহরীর সময় আছে মনে করে সুবহি সাদিকের পরে খাওয়া-দাওয়া করা ।
- সূর্যাস্তের পূর্বে ইফতার করা ।
- ডুস গ্রহণ করা।
- সুবহি সাদিক হয় নাই মনে করে স্ত্রী মিলন করা ।
- ঘুমন্ত অবস্থায় পানি পান করলে ।
- চাল, বাজরা, মশুরী ও চানা বুট গিলে ফেললে ।
- মাটি খেয়ে ফেলা ।
- চানা বুটের ন্যায় কোন কিছু দাঁত থেকে বের হয়ে পেটে গেলে ।
- অন্যের জন্য বা শিশুদের খাবার চিবাবার সময় গলার ভেতরে গেলে।
- সাহরীর খাবার মুখে থাকা অবস্থায় ফজরের আযান হলে ।
- অন্যের থুথু খেয়ে ফেললে। নিজের মুখের থুথু বের করে পুনরায় গিলে ফেলা।
- চোখের পানিতে সারা মুখ লবণাক্ত হলে পরে তা গিলে ফেললে।
- শৌচনালীর ভেতরে পানি পৌঁছলে ।
- স্ত্রীর প্রতি দৃষ্টিপাতে বির্যস্খলন হলে ।
- হস্তমৈথুন দ্বারা বীর্যপাত হলে।
- নাকের ঔষধ বা পানি খাদ্য নালীতে চলে গেলে ।
- পান-সুপারি চিবাতে চিবাতে ঘুমিয়ে পড়া অবস্থায় সুবহি সাদিক হয়ে গেলে।
- রোযা রাখা অবস্থায় ঋতুস্রাব শুরু হলে ।
- অন্যের হুমকিতে রোযা ভেঙ্গে ফেললে ।
- গোসলের সময় নাকে মুখের পানি গলায় প্রবেশ করলে ।
উল্লেখিত কারণসমূহে রোযা ভেঙ্গে যাবে এবং কাযা আদায় করা ওয়াজিব হবে এবং সারাদিন রোযাদারের মত সূর্যাস্ত পর্যন্ত কোন কিছু না খেয়ে সময় কাটাতে হবে।
রোযার কাযা এবং কাফ্ফারা
রোযার কাযা: রোজার কাযা অর্থ সমানভাবে আর একটি রোযা রাখা।
রোজার কাফ্ফারার: রোজার কাফফারা হলো ইচ্ছাকৃত একটি রোযা ভাঙ্গলে রমযানের পরবর্তী মাসে যে কোন সময়ে একটানা কাযা রোজার নিয়ত করে ধারাবাহিক ৬০টি রোযা পালন রাখা। যদি মাঝখানে রোজা ছেড়ে দেন তাহলে পুনরায় ধারাবাহিকভাবে ৬০ টি রোজা রাখতে হবে।
নিম্নে যে কারনে রোজা ভাঙ্গার কারনে কাযা ও কাফ্ফারা উভয়টি ওয়াজিব হবে।
- কোন কারণ ব্যতীত ইচ্ছাকৃতভাবে রোযা ভঙ্গ করলে কাযা এবং কাফ্ফারা উভয়টি ওয়াজিব হবে।
- যে সব গাছের লতা-পাতা (সাক-সবজি) সাধারণত খাওয়া যায় এমন সব লতা- পাতা খেলে রোযার কাযা ও কাফ্ফারা উভয়টি দিতে হবে।
- রোযা রাখা অবস্থায় লবণ খেলে ।
- কোন ঘুমন্ত মহিলার সাথে সহবাস করলে।
- রোযা রেখে বিড়ি, সিগারেট বা ধুমপান করলে ।
- ভুলে পানাহারের কথা মনে রেখে ইচ্ছাকৃত পানাহার করলে কাযা কাফ্ফারা ওয়াজিব হবে।
- ইচ্ছাকৃতভাবে কাঁচা গোশত, চাল, ডাল, তরকারী খেয়ে ফেললে কাযা কাফ্ফারা উভয়টি ওয়াজিব হবে।
যে সকল কারণে রোযা ভঙ্গ হয় না
- ভুলবশত খাবার খেলে রোযা ভঙ্গ হয় না কেননা, নবী বলেছেন,
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَنْ نَبِيِّ وَهُوَ صَائِمٌ فَأَكَلَ أَوْ شَرِبَ فَلَيْتِمَّ صَوْمَهُ فَإِنَّمَا أَطْعَمَهُ اللهُ وَسَقَاهُ
“হযরত আবূ হুরায়রা (রা.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল (সা:) বলেছেন, যে ব্যক্তি ভুলে গেছে যে, সে একজন রোযাদার অথচ সে পানাহার করল এ অবস্থায় সে যেন তার রোযা পূর্ণ করে। কেননা আল্লাহ তাকে খাইয়েছেন এবং পান করিয়েছেন।
- ভুলবশত স্ত্রী সহবাস করলে।
- রোযা অবস্থায় সুগন্ধিযুক্ত তেল, আতর, ব্যবহারে রোযা ভঙ্গ হয় না। আতর, ফুলের ঘ্রাণ বা পারফিউমের স্প্রে নিলে ।
- রোযাদারের গলায় কোন কিছুর ধোঁয়া, মশা-মাছি প্রবেশ করলে।
- মাথার ঘাম অথবা চোখের পানি মুখে প্রবেশ করলে।
- কানে তৈল বা পানি প্রবেশ করলে।
- চোখে ড্রপ দিলে।
- অযু অবস্থায় নাকের ভেতরে পানি গেলে ।
- রোযা রেখে অযুর পানির স্বাদ মুখে থাকলে।
- সর্দি বা কফ গলার ভেতরে গেলে ।
- স্বাভাবিক থুথু বা মুখের লালা পেটে গেলে ।
- দাঁত ব্যবহার করলে।
- মিসওয়াক, মাজন ব্যবহার করলে।
- স্ত্রীকে আলিঙ্গন বা চুম্বন করলে।
- রাতের ফরয গোসল দিনে করলে।
- রোযা অবস্থায় বারবার গোসল করলে।
- চিকিৎসার জন্য দেহ থেকে সিরিঞ্জ দিয়ে রক্ত বের করে নিলে।
- রোযা রেখে দিনে ঘুমালে এবং স্বপ্নদোষ হলে ।
- অনিচ্ছাকৃতভাবে বমি হলে, কম হোক বা বেশি হোক। অনুরূপভাবে বমি মুখে এসে নিজে নিজে ভেতরে চলে গেলে রোযা নষ্ট হবে না।
- কুলি করার পরেও মুখে পানের লালচে ভাব থাকলে ।
- রোযার নিয়্যত করার পর অজ্ঞান হয়ে গেলে।
- বদ মেজাজ স্বামীর জন্য, স্ত্রীর তরকারীতে লবণের স্বাদ পরীক্ষা করলে।
- রোজা অবস্থায় মিসওয়াক করলে।
- শিশুর মুখে খাবার চিবিয়ে দিলে পরে মুখ ভালকরে পরিষ্কার করে নিতে হবে।
যে কারনে রোযা মাকরুহ হয়
- বিনা কারণে মুখে কিছু চিবানো। যেমন, গাছের ডাল, কলমের পেছন, নিজের হাতের আঙ্গুল হতে পারে।
- দিনের বেলায় টুথপেস্ট বা কয়লা দ্বারা দাত পরিষ্কার করলে।
- নাপাক অবস্থায় থাকা, ফরজ গোসল না করে সময় কাটালে।
- রক্তদান করা। তবে অতি জরুরি ক্ষেত্রে রক্তদান করতে পারবে।
- গীবত এবং পরনিন্দা করা।
- ঝগড়া-বিবাদ, মিথ্যা বা অশ্লীল গালমন্দে লিপ্ত থাকলে।
- কোন খাদ্য জাতীয় বস্তু ক্রয় করার সময় মুখে দিয়ে স্বাদ যাচাই করা, যেমন মধু, তৈল ।
- শৌচকর্মে প্রয়োজনের অতিরিক্ত পানি ব্যবহার করলে।
- কুলি করার সময় গড়গড়া করলে।
- নাকে পানি দেয়ার সময় নাকে টেনে পানি নিলে।
- গোসল করার সময় পুকুরের পানিতে থাকা অবস্থায় বায়ুপথে বায়ু নির্গত হলে ।
- স্বামীর অনুমতি ব্যতিত স্ত্রীর নফল রোযা রাখলে ।
- মহিলাদের রোযা থাকা অবস্থায় লিপস্টিক ব্যবহার করলে।
যে সকল কাজ করলে রোযা মাকরূহ হয় না
- গাছের ডাল দ্বারা মিসওয়াক করলে।
- আঙ্গুল দ্বারা দাঁত পরিষ্কার করলে।
- শরীরে তৈল মালিশ করলে।
- চোখে ঔষধ বা সুরমা ব্যবহার করলে।
- অধিক গরমে বারবার অযু করলে।
- আতর বা সুগন্ধি ব্যবহার করলে।
- টিকা বা ইনজেশন নিলে ।
- ভুলবশত কোন কিছু খেয়ে ফেললে ।
- মুখের থু থু গিলে ফেললে ।
- অনিচ্ছাকৃত বমি করলে।
- নাকের ভিতরে পানি প্রবেশ করেল
- গোসল করতে গিয়ে কানে পানি প্রবেশ কেরলে।
- দাঁতের ফাঁক থেকে খাদ্য কণা বের করা করলে।
- সর্দি গলার ভেতরে প্রবেশ করলে।
- ঘুমের মধ্যে স্বপ্নদোষ হলে।
- মুখের ভেতরে দু’ এক ফোঁটা ঘাম বা চোখের পানি প্রবেশ করলে।
- রোযা অবস্থায় স্ত্রীকে চুম্বন করলে।
- শরীর ঠাণ্ডা রাখার জন্য শরীরে ভেজা কাপড় দিয়ে রাখলে।
- স্বামীর ভয়ে, স্ত্রী জিহ্বার আগা দ্বারা তরকারীর স্বাদ বা লবণ পরীক্ষা করলে।
- কোন উপায় না থাকলে, মা শিশুর খাবার চিবিয়ে দিলে রোযা মাকরূহ হয় না ইত্যাদি ৷
রোজার উপকারিতা
রমযান মাসব্যাপী রোজার নিয়ত করে রোযা রাখলে পেটের যাবতীয় রোগ নিরাময় হয়। সিয়াম সাধনা দ্বারা দেহে পুষ্টির অভাব হয় না এবং স্বাস্থ্যহানি ঘটে না; বরং অতিরিক্ত চর্বিসহ শরীরের ক্ষতিকর এমন উপাদানগুলো ধ্বংস হয়ে যায়।
চিকিৎসা বিজ্ঞানের মতে রোজা রাখার মূল রূপটি নিম্নে উল্লেখ করা গেল।
১. মর্মাথিউ পিকথল বলেছেন, সভ্যতার এই চরম যুগ সন্ধিক্ষণে রোযার স্বাস্থ্যগত উপকারিতা সম্বন্ধে কারো দ্বিমত নেই। সিয়াম সাধনা রোযাদারকে কর্মক্ষম বানায়, যে কোনো কর্মে তার উদ্যোগ তৈরি হয়। এবং জ্ঞানের গভীরে পৌঁছার মানসিকতা তৈরি হয়।
২. ডা. আব, ক্যাম, ফোর্সের মত হলো, সিয়াম সাধনা পরিপাকতন্ত্রের শক্তি বৃদ্ধিতে প্রচণ্ড ধরনের সাহায্য করে।
৩. অধ্যক্ষ ডি. এফ. ফোর্ট বলেছেন, রোযা পালন সংযম ও আত্মশুদ্ধির অন্যতম উপায়। । সিয়ামের মাধ্যমে স্রষ্টার পরিচয় পাওয়া যায় এবং তার অনুগ্রহ লাভ করা যায়। স্বাস্থ্য সুরক্ষা সহজ হয়, হিংসা-বিদ্বেষ এবং কুপ্রবৃত্তি থেকে মুক্ত হয়ে উৎকৃষ্টমানবে পরিণত হওয়া যায়।
৪. ডা. ডিউই লিখেছেন, খাদ্যে বিরতি মানে পেটকে বিরতি দেয়া, লোকটিকে উপবাস রাখা উদ্দেশ্য নয়। এর দ্বারা মূলত তার ভেতরে ঘাপটি মেরে থাকা রোগটিকে অনাহারে রাখা হয়। ফলে সিয়াম সাধনায় ফুসফুসের সমস্যা, লিভারের সমস্যা, যকৃতের ফোঁড়া, মূত্রালয়ের নানাবিধ উপসর্গ এবং আলসার জাতীয় রোগ থেকে সুস্থ হওয়া যায়। সিয়াম দ্বারা নিম্নবর্ণিত উপকারসমূহ সাধিত হয়:
- নিউমোনিয়া, সর্দি ও ইনফ্লুয়েঞ্জা দূর হয়।
- মস্তিষ্ক ও স্নায়ুতন্ত্র অধিক পরিমাণে বিকশিত হয়।
- পক্ষাঘাত রোগ কমে যায় ।
- মানসিক শক্তি বৃদ্ধি পায় এবং বিশেষ করে অঙ্গগুলোর অনুভূতি জাগ্রত হয়।
- চিন্তাশক্তি ও স্মরণশক্তি বেড়ে যায় ।
- আধ্যাত্মিক শক্তির উন্মেষ ঘটে
- সহানুভূতি, প্রীতি-ভালোবাসা সমধিক পরিমাণে বেড়ে যায় । জ. শরীরের প্রতি অঙ্গে রোযার প্রভাব পড়ে ফলে দৈহিক শান্তি বিরাজ করে।
- খাদ্য নিয়ন্ত্রণের কারণে পশুত্বসুলভ কামনা-বাসনা ধ্বংস হয় এবং রোযাদার নৈতিক অবক্ষয় থেকে রক্ষা পায় ।
- ইবাদত-বন্দেগীতে আগ্রহ সৃষ্টি হয় এবং গুনাহর কাজে অংশগ্রহণে অনাগ্রহ সৃষ্টি হয়। যেটি মানসিক উন্নতির জন্য একটি জরুরি বিষয় ।
সফর অবস্থায় রোযা রাখার বিধান
মুসাফির বা বিদেশ ভ্রমণ অবস্থায় অথবা শরী‘আতসম্মত মুসাফির (৪৮ মাইলের বেশি দূরের সফর) এর জন্য রোযা না রাখার অনুমতি দিয়েছে ইসলাম । সফর অবস্থায় অনাদায়ী রোযাগুলো পরবর্তীতে শুধুমাত্র কাযা আদায় করতে হবে। যদি সম্ভব হয় সফর অবস্থায় রোযা রাখতে পারলে অতি উত্তম।
তবে যদি সফরে কষ্ট হয়, প্রাণহানির সম্ভাবনা থাকে তাহলে রোযা রাখা জায়েয হবে না। যেমন হাদীস শরিফে বীর্ণত হয়েছে,
عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ رَجُلٍ مِنْهُمْ : أَنَّهُ أَتَى النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَالنَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَتَغَدُّى قَالَ فَقَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ هَلُمَّ لِلْغَدَاءِ . فَقُلْتُ : يَا نَبِيَّ اللَّهِ إِنِّى صَائِمٌ. فَقَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : إِنَّ اللَّهَ وَضَعَ عَنِ الْمُسَافِرِ الصَّوْمَ وَشَطْرَ الصَّلَاةِ ، وَعَنِ الْحُبْلَى وَالْمُرْضِعِ .
হযরত আনাস ইব্ন মালেক (র.) থেকে বর্ণিত আছে যে, তাদের এক ব্যক্তি নবী – এর নিকট আসলেন, তখন নবী কারীম খাবার খাচ্ছিলেন। তিনি বলেন, নবী তাকে দেখে খাবার দাওয়াত দিলেন। তখন আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! আমি একজন রোযাদার । তখন নবী বললেন, নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ মুসাফিরের থেকে নামাযের অর্ধেক এবং রোযা তুলে নিয়েছেন এবং অনুরূপভাবে গর্ভবতী এবং দুগ্ধদানকারিণীর থেকে রোযা তুলে নিয়েছেন । (২৭৩)
মুসাফির ব্যক্তি রোযা মুখে নিয়ে সফরে বের হলে রোজা ভাঙা জায়েয নেই। ভঙ্গ করলে শুধু কাযা ওয়াজিব হয়ে যাবে। মুসাফিরের সফরের সময়সীমা ১৫ দিনের কম হতে হবে। অন্যথায় কোনো জায়গায় ১৫ দিন অথবা আরও বেশিদিন থাকতে চাইলে তার ওপর রোজার নিয়ত করে রোযা রাখা বাধ্যতামূলক ও ফরয হবে। (তথ্যসূত্র: পবিত্র মাহে রামাযান ও সিয়াম সাধনা)
শেষকথা
রোজার নিয়ত রোজার ফজিলত ও রোজার সকল বিধান সমূহ লিখাটি পড়ে আশা করি রোজা সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পারবেন। আল্লাহ তায়ালা আমাদের সবাইকে ইসলামের ৫ স্তম্বের তিন নম্বর স্তম্ভ রোজাকে সঠিক ভাবে আদায় করার তৌফিক দান করুন। আমিন