শশীলজ জমিদার বাড়ি – কীভাবে আসবেন

শশীলজ জমিদার বাড়ি (Shoshi Lodge) হচ্ছে ময়মনসিংহ শহরের প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত মহারাজা শশীকান্ত আচার্যের বাড়ি। ময়মনসিংহের রাজবাড়ি নামেও খ্যাতি রয়েছে। ময়মনসিংহ শহরের মধ্যে, ব্রহ্মপুত্র নদের নিকটেই এই জমিদার বাড়ি এর অবস্থান।

শশীলজ জমিদার বাড়ির ইতিহাস 

রঘুনন্দন আচার্য চৌধুরী ছিলেন মুক্তাগাছা জমিদারির প্রতিষ্ঠাতা শ্রীকৃষ্ণ আচার্য চৌধুরীর তৃতীয় উত্তরপুরুষ। রঘুনাথ আচার্য চৌধুরী নিঃসন্তান ছিলেন। তার এই বিশাল জমিদারি উত্তর অধিকার কেউ ছিল না বিধায় একজন পুত্র সন্তানের খুবই অভাব বোধ ছিল। তাই তিনি পুত্র সন্তান দত্তক নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিলেন। অতঃপর গৌরীকান্ত আচার্য চৌধুরীকে দত্তক নিলেন রঘুনন্দন আচার্য চৌধুরী। মৃত্যুর পূর্বে পালক পুত্রের হাতে জমিদারির গুরুভার অর্পণ করেন।

শশীলজ জমিদার বাড়ির জমিদার গৌরীকান্ত আচার্য চৌধুরীরও ভাগ্য সুপ্রসন্ন ছিল না। তিনিও সন্তানহীন অবস্থায় মারা গেলেন। গৌরীকান্ত আচার্যের বিধবা স্ত্রী বিমলা দেবী দত্তক নিলেন কাশীকান্ত নামক একজনকে। কাশীকান্তের নসিবেও বেদনা লিখা ছিলো। তিনি দীর্ঘ রোগযন্ত্রণায় ভুগে সন্তানহীন অবস্থায় ইহলোক ত্যাগ করেন। শশীকান্তের বিধবা স্ত্রী লক্ষ্মী দেবী আচার্য চৌধুরানী পূর্বসূরিদের দেখানো মার্গানুসরণ করে চন্দ্রকান্তকে পালক নিলেন।

আবারো ভাগ্যের কী নির্মম পরিহাস। চন্দ্রকান্তও অতিদ্রুত দেহত্যাগ করলেন। তাই লক্ষ্মী দেবী আবারো সন্তান দত্তক নিলেন। দ্বিতীয় পালক পুত্রের নাম পূর্ণচন্দ্র মজুমদার। কিন্তু লক্ষ্মী দেবী পালক সন্তানের নতুন নাম রাখলেন সূর্যকান্ত আচার্য চৌধুরী।
এই সূর্যকান্ত আচার্য চৌধুরীর শাসনামলে ব্রহ্মপুত্র তীরবর্তী জনপদে যুক্ত হলো সুবর্ণ অধ্যায়। তিনি প্রায় ৪১ বছর জমিদারি করেন। এই দীর্ঘ সময়ে বহু জনহিতকর কাজ করেছেন। ময়মনসিংহে স্থাপন করেছেন একাধিক নান্দনিক স্থাপনা।

ঊনবিংশ শতকের শেষে ময়মনসিংহ শহরের কেন্দ্রস্থলে ৯ একর জমিনের ওপর একটি দৃষ্টিনন্দন দুইতলা ভবন নির্মাণ করেন সূর্যকান্ত আচার্য চৌধুরী। তিনিও নিঃসন্তান ছিলেন। সূর্যকান্ত তার পালক পুত্র শশীকান্ত আচার্য চৌধুরীর নামে এই ভবনের নাম রাখেন শশীলজ। এই স্থাপনাটি ১৮৯৭ সালের ১২ জুন ‘গ্রেট ইন্ডিয়ান’ ভূমিকম্পে অনেক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। যা অনেক ব্যথিত করে সূর্যকান্ত আচার্য চৌধুরীকে। পরবর্তী জমিদার শশীকান্ত আচার্য চৌধুরী ১৯০৫ সালে ঠিক একই স্থানে নতুনভাবে শশী লজ নির্মাণ করেন। ১৯১১ সালে শশী লজের সৌন্দর্যবর্ধন করতে তিনি আরও কিছু সংস্কারকাজ করেন।

শশী লজ এর জনপ্রিয়তা অর্জন

এই শশী লজ জমিদার বাড়ির চিত্রায়ন করা হয়েছিল হুমায়ূন আহমেদ রচিত ও নওয়াজীশ আলী খান পরিচালিত বিখ্যাত ধারাবাহিক নাটক অয়োময়। যা বিটিভিতে প্রচারিত হয়েছিল। এই নাটকে পরিচিতির পরেই স্থানীয়দের নিকট বাড়িটির জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি পায়।
এছাড়া রাখাল বন্ধু (২০০৩) নামে আরেকটি ধারাবাহিক নাটকের শ্যুটিংও এখানে হয়েছে।

শশীলজে দেখার মতো কী কী আছে?

শশীলজ জমিদার বাড়ি টি ৯ একর জমির উপর প্রতিষ্ঠিত। লজের মূল ফটকে রয়েছে ১৬টি সুদর্শন গম্বুজ। ভেতরের প্রায় প্রতিটি ঘরেই রয়েছে বড় বড় কারুকার্য খচিত কয়েকটি ঝাড়বাতি। বাসভবন ছাড়াও বাড়িতে আছে নৃত্যঘর, স্নানাগার। স্নানাগারে রয়েছে একটি সুড়ঙ্গ। জনশ্রুতি আছে এই সুড়ঙ্গ মুক্তাগাছা যাওয়ার পথের সাথে সংযুক্ত। মূল ভবনের পেছনেও আছে একটি স্নানঘর। পিছনের স্নানঘরটি দুইতলায়। এই স্নানঘরেই বসে রানী পাশের পুকুরে হংস ক্রীড়া দেখে মুগ্ধ হতেন।

পুকুর ঘাট মার্বেল পাথরে বাঁধানো। শশী লজের মূল ভবনের সামনে রয়েছে সুন্দর বাগান। বাগানের মাধ্যখানে রয়েছে শ্বেতপাথরের ফোয়ারা, যার মাঝখানে দাঁড়ানো স্নানরত স্বল্পবসনা গ্রিক দেবী ভেনাসের মর্মর মূর্তি। বাগানের পেছনেই আছে লালচে ইট আর হলুদ দেয়ালে নির্মিত শশীলজ এবং এর পাশেই রয়েছে পদ্মবাগান।

বাড়ির অন্দরে বারান্দা অতিক্রম করে কিছুটা এগোতেই আছে রঙ্গালয়। সেই সুদৃশ্য রঙ্গালয়ের এক পাশে বিশ্রামঘর। বিশ্রামঘরের পরেই আছে হলঘর। যার মেঝে কাঠ দিয়ে তৈরি। হলঘরের পাশেই রঙিন মার্বেল পাথরের তৈরি আরেকটি জলের ফোয়ারা। ফোয়ারার ওপরে ছাদ থেকে নিচে ঝোলানো স্বচ্ছ কাঁচের ঝাড়বাতি। ভবনটির পেছনে একটুকরো উঠান। সবুজ ঘাসে মোড়ানো উঠনের পরেই একটি জলাধার।

শশী লজের বর্তমান ব্যবহার

১৯৫২ সাল থেকে মহিলা শিক্ষক প্রশিক্ষণ কেন্দ্র হিসাবে ব্যবহৃত হচ্ছে। ২০১৫ সালে ৪ এপ্রিল জাদুঘর স্থাপনের জন্য বাংলাদেশ সরকারের প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর শশী লজটি অধিগ্রহণ করে।

শশীলজ জমিদার বাড়ি প্রবেশের সময়সূচি ও প্রবেশ মূল্য

সকাল ১০ টা থেকে বিকাল ৪.০০ টার মধ্যে লজে ভ্রমণ করা যাবে।

সরকারি ছুটির দিন ব্যতিত সব দিন লজ খোলা থাকে। ভবনে প্রবেশ পথের ফটক থেকে টিকিট সংগ্রহ করে তারপর ভিতরে প্রবেশ করতে হবে। টিকিটের মূল্য ২০ টাকা। এর মাঝেই শশী লজ এর সাথে সাথে অভ্যন্তরীণ জাদুঘর ভ্রমণের খরচও যুক্ত। অর্থাৎ মূল ভবনের ভেতরে প্রবেশ করার জন্য আপনাকে আর আলাদা করে অর্থ খরচ করতে হবে না।

যেসব বিষয় আপনাকে মানতে হবে

  • সাথে কোন প্রকার ব্যাগ নিয়ে লজের ভেতরে প্রবেশ করা যাবে না।
  • ভেতরে যেকোন প্রকার আইনবিরুদ্ধ কার্যক্রম করা যাবে না।
  • ভ্রমণ করতে গিয়ে যেখানে সেখানে ময়লা- আর্বজনা ফেলবেন না।
  • আপনার সাথে থাকা মূল্যবান জিসিনপত্র সাবধানে রাখবেন।
  • ছোট ছোট বাচ্চাদের নিয়ে ভ্রমনে গেলে অতিরিক্ত সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।
  • ভ্রমনে যে কোন ধরনের সমস্যায় স্থানীয় প্রসাশন অথবা পুলিশি সাহায্য নিন।

কীভাবে আসবেন?

প্রতিদিন অসংখ্য বাস ঢাকা থেকে ময়মনসিংহ আসে। এদের মধ্যে এনা ও সৌখিন জনপ্রিয়। ময়মনসিংহ শহরে এসে যে কোনো রিক্সা অথবা অটো চালককে বললেই শশীলজে নিয়ে যাবে।

আরও পড়ুন: আজকের ট্রেনের সময়সূচী 

থাকার স্থান

ময়মনসিংহ শহরের অনেক ভালো মানের হোটেল রয়েছে। এদের মধ্যে হোটেল আমির ইন্টারন্যাশনাল, হোটেল হেরা অন্যতম।
এছাড়া খাবারের জন্য রয়েছে অনেক ভালো ভালো রেস্তোরাঁ। যেমনঃ ধানসিঁড়ি, সারিন্দা ইত্যাদি।

আশপাশের দর্শনীয় স্থান

প্রায়সই জিজ্ঞাসিত প্রশ্নের উত্তর Faq’s

শশীলজ কোথায় অবস্থিত?

ময়মনসিংহ শহরের কেন্দ্রস্থলে, ব্রহ্মপুত্র নদের অদূরে, এই শশী লজ রাজবাড়ী অবস্থিত।

শেষ কথা:

ভ্রমনের মাধ্যমে শশীলজ জমিদার বাড়ি কে জানুন। ভ্রমনের মাধ্যমে আমাদের পর্যটন এরিয়াগুলোকে আমরা জীবিত রাখি। আপনার পরিবার সুরক্ষিত থাকুক। ভ্রমন সংক্রান্ত কোন বিষয় জানতে চাইলে আমাদের ইনবক্স করতে পারেন আমরা যথাসাধ্য সু-পরামর্শ দেওয়ার চেষ্টা করব।