ঢাকার দর্শনীয় ঐতিহাসিক স্থানসমূহ

ঢাকার দর্শনীয় ঐতিহাসিক স্থানসমূহ: বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকাকে ঘীরে রয়েছে নানান ঐতিহাসিক ঘটনা। যুগে যুগে এই এলাকাতে তৈরি হয়েছে বহু প্রত্নতাত্ত্বিক স্থাপনা,

যা এখনো ঢাকার দর্শনীয় ঐতিহাসিক স্থানসমূহ হিসেবে আমরা জেনে থাকি। বর্তমানে লালবাগ কেল্লা, কার্জন হল, মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর, জাতীয় জাদুঘর, আহসান মঞ্জিল, সোহরাওয়ার্দী উদ্যান, রোজ গার্ডেন প্যালেস সহ বেশ কিছু ঐতিহাসিক স্থানে প্রতিদিনই ভিড় করেন হাজারো দর্শনার্থীরা। আপনিও যদি ঘুরে আসতে চান ঢাকার দর্শনীয় ঐতিহাসিক স্থানসমূহ, তাহলে বিস্তারিত জেনে নিন এখানে।

লালবাগ কেল্লা

লালবাগ কেল্লা (Lalbagh Fort) ঢাকার দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলের পুরান ঢাকার বুড়িগঙ্গা নদীর তীরে অবস্থিত একটি অসমাপ্ত মুঘল দুর্গ। বাংলাদেশের প্রাচীন ঐতিহাসিক স্থানসমূহের মধ্যে লালবাগ কেল্লা সবচেয়ে বেশি নিপুণভাবে কষ্টি পাথর, মার্বেল পাথর ও রং-বেরঙের টালি দিয়ে তৈরি স্থাপনা। পূর্বে এর নাম ছিল ‘আওরঙ্গবাদ কেল্লা’। বর্তমান পুরান ঢাকার লালবাগ এলাকাতে অবস্থিত হওয়ায় ১৬৮৪ খ্রিস্টাব্দে একে লালবাগ কেল্লা নামে নামকরণ করা হয়। প্রতিদিন বিপুল সংখ্যক বেশি ও বিদেশী পর্যটকের ভিড় হয় ঢাকার দর্শনীয় ঐতিহাসিক স্থানসমূহ এর মধ্যে সেরা এই লালবাগ কেল্লা দর্শন করতে।

লালবাগ কেল্লার নির্মাণ কাজ শুরু করেন সম্রাট আওরঙ্গজেব। তার শাসনামলে আওরঙ্গবাদ কেল্লার স্থাপনার পরিকল্পনা করা হলেও তা সম্পন্ন না হওয়ায় পরবর্তীতে সম্রাট আওরঙ্গজেবের পুত্র যুবরাজ শাহজাদা আজম ১৬৭৮ খ্রিস্টাব্দে এই প্রাসাদ/দুর্গের নির্মাণ কাজ শুরু করেন। পরবর্তীতে ১৬৮৪ খ্রিস্টাব্দে সুবাদার শায়েস্তা খানের আমলে দুর্গটির নির্মাণ কাজ অসমাপ্ত রেখে পরিত্যক্ত করা হয়।

ঢাকার দর্শনীয় ঐতিহাসিক স্থানসমূহ এর মধ্যে অন্যতম লালবাগ কেল্লায় বেশকিছু আকর্ষণীয় ও দর্শনীয় স্থান রয়েছে। তবে সবচেয়ে বেশি আকর্ষণীয় হলো লালবাগ কেল্লা জাদুঘর। এটি পূর্বে সুবেদার শায়েস্তা খানের বাসভবন ও দরবার হল ছিল। এছাড়াও,

  • বাগান ঘেরা পরিবেশ
  • পরীবিবির সমাধি সৌধ
  • লালবাগ কেল্লা শাহী মসজিদ
  • কেন্দ্রস্থলে বিভিন্ন উপাদান ও হাম্মাম খানা।

লালবাগ কেল্লায় মোট তিনটি ফটক রয়েছে যার দুইটিই বর্তমানে বন্ধ। ভিতরে প্রবেশ করলেই দেখা যায় বাগান ঘেরা প্রাকৃতিক পরিবেশ যা দর্শনার্থীদের মনে আনন্দ যোগায়।

দেখতে পাবেন শায়েস্তা খানের প্রিয় কন্যা পরীবিবির সমাধি সৌধ। সম্রাট শায়েস্তা খান তার প্রিয় কন্যার স্মৃতি ধরে রাখার জন্যই ব্যয়বহুল একটি সমাধি তৈরি করেছিলেন। এই সমাধি সৌধটি ২০.২ মিটার বর্গাকৃতির মার্বেল পাথর, কষ্টিপাথর ও বিভিন্ন রঙের চাকচিক্যময় টালির সাহায্যে অলংকৃত করা হয়েছে। এর অভ্যন্তরে রয়েছে নয়টি কক্ষ। কক্ষগুলোর ছাদও তৈরি হয়েছে কষ্টিপাথর দিয়ে করবেল পদ্ধতিতে। মূল সমাধিসূদের উপরে আচ্ছাদিত রয়েছে একটি তামার পাদ দিয়ে তৈরি গম্বুজ।

এছাড়াও লালবাগ কেল্লায় রয়েছে নাম না জানা আরও দুটি সমাধি। কেল্লার ভিতরে দেখতে পাওয়া যায় কয়েকটি ফোয়ারা, পাহাড়ি উঁচু টিলা, দৈর্ঘ্যের প্রাচীরে নির্দিষ্ট দূরত্ব পর পর পলকাটা তোপমঞ্চ, সুরঙ্গ পথ, পুকুর। চেন্নাই একটিমাত্র পুকুর রয়েছে যার চারিদিকে ঘাডট বাঁধানো সিঁড়ির মত। সুরঙ্গ পথগুলোতে দর্শনার্থীদের প্রবেশ করতে দেওয়া হয় না।

লালবাগ কেল্লা শাহী মসজিদটি ১৬৭৮-৭৯ সম্রাট আওরঙ্গজেবের তৃতীয় পুত্র শাহজাদা আজম বাংলার আমলে নির্মাণ করেন। মসজিদে তিনটি গম্বুজ রয়েছে। বাংলাদেশের মোঘল আমলের মসজিদগুলোর মধ্যে এটি একটি আদর্শ এবং ঢাকার দর্শনীয় ঐতিহাসিক স্থানসমূহ এর মধ্যে অন্যতম। এছাড়াও শায়েস্তাগানের বাসভবনের পাশে একটি কামান রয়েছে যা তৎকালীন যুদ্ধের জন্য ব্যবহার করা হতো।

কার্জন হল

কার্জন হল ঢাকা
Curzon Hall

কার্জন হল (Curzon Hall) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরে বিজ্ঞান ও জীববিজ্ঞান অনুষদের পাঠনদানে ব্যবহৃত একটি ঐতিহাসিক স্থাপনা। ঢাকার দর্শনীয় ঐতিহাসিক স্থানসমূহ এর মধ্যে ১১৫ বছর পুরনো এই ঐতিহাসিক ভবনটি অন্যতম। ইউরোপ ও মুঘল স্থাপত্য রীতির সংমিশ্রণে তৈরি হয়েছিল এই দ্বিতল বিশিষ্ট ভবনটি। ভবন্তির বাইরের দিকে লাল রংয়ের কারুকার্য সমৃদ্ধ এবং ভিতরের নানান কারুকার্যময় নকশা।

মূলত ১৯০৪ সালের ১৪ ই ফেব্রুয়ারি তৎকালীন ব্রিটিশ গভর্নর জেনারেল জর্জ কার্জন এই ভবনটির ভিত্তি স্থাপন করেন। পরবর্তীতে ১৯০৫ সালে বঙ্গভঙ্গ রদ হওয়ার পর প্রাদেশিক রাজধানীর দফতর হিসেবে ব্যবহৃত হতো, কার্জন হল। এছাড়াও তখন থেকে থেকে ১৯২১ সাল পর্যন্ত ঢাকা কলেজের ভবন হিসেবে এটি ব্যবহৃত হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা হওয়ার পর থেকে এটি একটি নির্দিষ্ট অনুষদের পাঠদানের জন্য ব্যবহৃত হয়।

কার্জন হলের ভেতরে রয়েছে একটি আকর্ষণীয় প্রাকৃতিক পরিবেশে ঘেরা বাগান। বাগানের পূর্ব থেকে পশ্চিম পাস পর্যন্ত রয়েছে চমৎকার রাস্তা। সামনের দিকে রাস্তার পাশে রয়েছে বিখ্যাত দোয়েল চত্বর ও শিশু একাডেমি। কার্জন হল কে ঘিরে রয়েছে বিভিন্ন ঐতিহাসিক ঘটনা। সর্বপ্রথম উদ্যোগে একমাত্র রাষ্ট্রভাষা হিসেবে ঘোষণা করার প্রকাশ্য প্রতিবাদ জানানো হয় কার্জন হল থেকেই।

কার্জন হলের ভেতরের সৌন্দর্যের পাশাপাশি এর পেছনের দিকে রয়েছে প্রাচীন মুসা খাঁ মসজিদ ও শেরে বাংলা ফজলুল হক হলের মূল ভবন। এছাড়াও ঢাকার দর্শনীয় ঐতিহাসিক স্থানসমূহ দেখতে এখানে আসলে একইসাথে, রোজ গার্ডেন, আহসান মঞ্জিল, চারুকলা একাডেমিও ঘুরে আসতে পারেন।

আরও পড়ুন: আজকের ট্রেনের সময়সূচী 

মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর

Liberation War Museum
মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর

মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর (Liberation War Museum) ঢাকার আগারগাঁওয়ে সিভিক সেক্টরে অবস্থিত ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের ঐতিহাসিক বিষয়বস্তুর সংগ্রহশালা। এটি বাংলাদেশের একমাত্র মুক্তিযুদ্ধ ভিত্তিক জাদুঘর এবং ঢাকার দর্শনীয় ঐতিহাসিক স্থানসমূহ এর মধ্যে অন্যতম আকর্ষণ। ১৯৯৬ সালের ২২ শে মার্চ বেসরকারি উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত হয় মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর। সেগুনবাগিচার একটি সাবেকি ভবন ভাড়া নিয়ে সংস্কার করে উদ্বোধন হয়েছিল মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের। আটজন ট্রাস্টের উদ্যোগে এই ইতিহাসের স্মারক সংগ্রহ ও সংরক্ষণ শুরু হয়।

মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরে প্রায় ১৫ হাজারেরও বেশি নিদর্শন রয়েছে। বর্তমানে জাদুঘর টিকে আরও বিস্তৃত করার লক্ষ্যে ২০১১ সালের ৪ মে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের নতুন ভবনের ভিত্তিপ্রস্তরও স্থাপন করেন। প্রায় ১০২ কোটি টাকা ব্যয়ে তৈরি হয় মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের এই নয়তলা ভবন। পরবর্তীত্র ২০১৭ সালের ১৬ এপ্রিল থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের নতুন ভবন উদ্ভোদন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

ঢাকার দর্শনীয় ঐতিহাসিক স্থানসমূহ এর এই মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের প্রাথমিক উদ্দেশ্য হচ্ছে, বাংলাদেশের বীরমন্ত্রে গাথা ইতিহাসের স্মারক সংগ্রহ ও সংরক্ষণ করে যথাযথভাবে উপস্থাপন। এর বিশেষ লক্ষ্য নতুন প্রজন্মকে স্বাধীনতার ইতিহাস বিষয়ে সচেতন করা, মাতৃভূমির জন্য গর্ব ও দেশাত্ববোধে উদ্দীপ্ত করাই এর মূল লক্ষ্য।

এটি প্রায় দুই বিঘা জায়গার ওপর নির্মিত এবং ব্যবহারযোগ্য আয়তনের পরিমাণ ১ লাখ ৮৫ হাজার বর্গফুট। নতুন ভবনে রয়েছে ছয়টি গ্যালারি। গ্যালারিতে নিদর্শন উপস্থাপনের দায়িত্বে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের একটি প্রতিষ্ঠান।

প্রথম গ্যালারিতে রয়েছে ১৯৭০ সালের পূর্বের প্রাগৈতিহাসিক নিদর্শন। দ্বিতীয় গ্যালারিতে দেখতে পাবেন ১৯৭১ সালে বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণের ঘটনা।এর অন্যতম আকর্ষন হলো এই গ্যালারিতে শব্দ ও আলোর প্রক্ষেপণের একটি বিশেষ প্রদর্শনী আছে। এতে ২৫ মার্চ বাঙালিদের ওপর পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর গণহত্যার বর্বরতা, স্বাধীনতার ঘোষনা, কুষ্টিয়ার যুদ্ধ এবং সারা দেশের গণহত্যার নিদর্শন উদ্বাস্তু হয়ে পড়া বাঙালিদের শরণার্থী হিসেবে ভারতে যাত্রা, সেখানে আশ্রয়, জীবনযাপনের ঘটনাবলি রয়েছে এই গ্যালারিতে।

৪র্থ গ্যালারিতে মুক্তিযোদ্ধাদের প্রশিক্ষণ, গণমানুষের দুরবস্থা, বুদ্ধিজীবী হত্যা, মুক্তিযুদ্ধের সম্মুখযুদ্ধ, যৌথ বাহিনীর অভিযান, বিভিন্ন অঞ্চলে বিজয় এবং ঢাকায় পাকিস্তানি দখলদারদের আত্মসমর্পনের ঘটনা উল্লেখিত রয়েছে, যা একে ঢাকার দর্শনীয় ঐতিহাসিক স্থানসমূহ এর একটি করে তুলেছে।

বাকি নিদর্শন গুলো সংরক্ষিত রয়েছে জাদুঘরের আর্কাইভে। মাটির ভূগর্ভে রয়েছে ভবনটির তিন তলা। ওপরের অন্যান্য ছয়টি তলায় অফিস মিলনায়তন, পাঠাগার, গবেষণাকেন্দ্র, ক্যানটিন, প্রদর্শনী কক্ষ ইত্যাদি রয়েছে।

জাদুঘরের প্রবেশমূল্য জনপ্রতি ২০ টাকা এবং রবিবার ছাড়া সপ্তাহের প্রতিদিন সকাল ১০ টা থেকে বিকাল ৫ টা পর্যন্ত উন্মুক্ত থাকে।

জাতীয় জাদুঘর

Bangladesh National Museum
বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘর

বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘর (Bangladesh National Museum) ঢাকা শাহবাগ মোড়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশে অবস্থিত ঢাকার দর্শনীয় ঐতিহাসিক স্থানসমূহ এর একটি। এটি দক্ষিণ এশিয়ার সর্ববৃহৎ জাদুঘর। বাংলার প্রাচীন ইতিহাস, চারুকলা, প্রাচীন বিশ্ব সভ্যতা, মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস ইত্যাদি বাংলাদেশের যুগ যুগ ধরে বেড়ে উঠার সমস্ত স্মৃতি আগলে রেখেছে এই জাতীয় জাদুঘর। বর্তমানে বাংলাদেশ গণপ্রজাতন্ত্রী সরকারের সাংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের অধীনে জাতীয় জাদুঘর পরিচালিত হচ্ছে।

জাতীয় জাদুঘর সর্বপ্রথম ১৯১৩ সালে ঢাকা মেডিকেল কলেজের একটি কক্ষে তৎকালীন বাংলার গভর্নর লর্ড কার মাইকেল এর মাধ্যমে ঢাকা জাদুঘর নামে যাত্রা শুরু করে। ১৯৮৩ সালে ঢাকা জাদুঘরের নাম পরিবর্তন করে বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘর করা হয়।

জাতীয় জাদুঘরের ভবনটি প্রায় ২০,০০০ বর্গমিটারের ৪৬ টি গ্যালারি সমৃদ্ধ একটি চারতলা ভবন। এখানে রয়েছে ৮৩ হাজারেরও বেশি নিদর্শন। বাংলাদেশের ইতিহাস, সংস্কৃতি, সভ্যতা, ঐতিহ্যের সকল নিদর্শন ধারণ করে আছে এ জাদুঘরটি। বাংলাদেশের আদ্যোপান্ত জ্ঞান অর্জনের জন্য শিক্ষা ভ্রমণের এক উপযুক্ত স্থান এবং ঢাকার দর্শনীয় ঐতিহাসিক স্থানসমূহ এর মধ্যে অন্যতম এই বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘর।

ভবনের প্রবেশ দরজার দুপাশে রয়েছে দুটি সুসজ্জিত কামান। প্রবেশ তোরনের ভেতরে এগিয়ে গেলেই দেখতে পাবেন মূল জাদুঘরের গ্যালারি। ভেতরে রয়েছে নান্দনিক নভেরা ভাস্কর্য, নিচতলায় রয়েছে কয়েকটি খাবারের দোকান, ব্যাগ রাখার স্থান, শুভেচ্ছা স্মারক বিপনি দোকান। সিঁড়ির পাশে রয়েছে গ্যালারি নির্দেশক, যার মাধ্যমে জানতে পারবেন জাদুঘরের কোথায় কি আছে।

  • জাদুঘরের প্রথম তলায় রয়েছে- বাংলাদেশের মানচিত্র, গাছপালা, সুন্দরবন, প্রাণী, খনিজ শিলা, মুদ্রা এবং প্রাচীন যুগে নানাবিধ ভাস্কর্য, উপজাতিদের জীবনধারা ইত্যাদি।
  • দ্বিতীয় তলায় রয়েছে- সভ্যতা ও ইতিহাসের নিদর্শন, বিভিন্ন সময়ের বাদ্যযন্ত্র, অস্ত্র, চিনামাটির হস্তশিল্প পাণ্ডুলিপি, কুটির শিল্প ইত্যাদি।
  • তৃতীয় তলায় রয়েছে- বিশ্বের বিখ্যাত ব্যক্তিদের প্রতিকৃতি, বিশ্ব সভ্যতার নানা নিদর্শন ও চিত্রকর্ম।

প্রতি সপ্তাহের বৃহস্পতিবার ও সরকারি ছুটির দিন ছাড়া সব সময় ঢাকার দর্শনীয় ঐতিহাসিক স্থানসমূহ এর অন্যতম এই জাতীয় জাদুঘর দর্শনে যেতে পারবেন।

আহসান মঞ্জিল

আহসান মঞ্জিল পুরান ঢাকার ইসলামপুরের কুমারটুলি এলাকায় বুড়িগঙ্গা নদীর তীরবর্তী একটি ঐতিহাসিক জাদুঘর।
আহসান মঞ্জিল

আহসান মঞ্জিল পুরান ঢাকার ইসলামপুরের কুমারটুলি এলাকায় বুড়িগঙ্গা নদীর তীরবর্তী একটি ঐতিহাসিক জাদুঘর। নওয়াব আব্দুল গনি তার পুত্র খাজা আহসানুল্লাহ-র নামানুসারে আহসান মঞ্জিল এর নামকরণ করেন। ঢাকার দর্শনীয় ঐতিহাসিক স্থানসমূহ এর মধ্যে এটিকে বাংলাদেশের প্রথম ইট পাথরের তৈরি স্থাপনা মনে করা হয়। পূর্বে এখানে প্রায় ১০০ বছর ধরে ছিলো ঢাকার নবাবদের আবাসিক প্রাসাদ জমিদারি সদর কাচারি।

আহসান মঞ্জিলের বর্তমান স্থানে অষ্টাদশ শতাব্দীর মাঝামাঝি সময়ে জমিদার স্যাক এনায়েতুল্লাহ রংমহল নামে একটি প্রমোদভবন তৈরি করেন। পরবর্তীতে তার পুত্র শেখ মতিউল্লাহ সেটি বিদেশী বণিকদের কাছে বিক্রি করে দিলেও ১৮৩০ সালের নবাব আব্দুল গনির পিতা খাজা আলীমুল্লাহ এটি পুনরায় কিনে নেন। ১৮৫৯ খ্রিস্টাব্দ থেকে ১৮৭২ সাল পর্যন্ত দীর্ঘ ১৩ বছর আহসান মঞ্জিলের নির্মাণ কাজ চলে। ক্রমে ক্রমে এটি কয়েকবার সংস্কার করা হয়। বর্তমানে বাংলাদেশের জাতীয় জাদুঘর আহসান মঞ্জিল কে জাদুঘর হিসেবে পরিচালনা করছে।

আহসান মঞ্জুলে রয়েছে মোট ৪ হাজার ৭৭ টি নিদর্শন, যা প্রাসাদের ২৩ টি কক্ষে প্রদর্শিত হচ্ছে। নয়টি কক্ষ ভাবি আমলের মতই রয়েছে, জনগণদের ইতিহাস প্রদর্শন করে। এছাড়াও আহসান মঞ্জিল জাদুঘরে প্রাসাদের ইতিহাস, নওয়াবদের পরিচিতি ও বংশতালিকা রয়েছে।

ঢাকার দর্শনীয় ঐতিহাসিক স্থানসমূহ এর এই স্থাপনাতে দেখতে পাবেন নওয়াবদের ব্যবহৃত কাঠের আলমারি, বড় আয়না, বড় লোহার সিন্দুক, ঢাল ও তরবারি, কাজ ও চিনামাটির থালাবাসন, হাতির মাথার কঙ্কাল, ক্রিস্টালের তৈরি চেয়ার-টেবিল, বিভিন্ন তৈলচিত্র, সিংহাসন, অলংকৃত রূপা, ফুলদানি, রাজকীয় অতিথিদের বেডরুম ও নাচ ঘর এবং তৎকালীন বিখ্যাত ব্যক্তিদের প্রতিকৃতিও রয়েছে।

আহসান মঞ্জিল একটি দোতলা ভবন যার বারান্দা ও মেঝে তৈরি হয়েছে মার্বেল পাথর দিয়ে। বিশাল প্রাসাদের ভেতরে প্রথম তলায় রয়েছে জলসাঘর, দরবার হল, লাইব্রেরি, খাবার ঘর, বিলিয়ার্ড খেলার জায়গা। এছাড়াও দোতালায় রয়েছে নাচঘর, বৈঠকখানা, অতিথিদের থাকার কক্ষ, গ্রন্থাগার ও আরও কক্ষ।

বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর নবাব পরিবারের উত্তরসুরিরা আহসান মঞ্জিল নিলামে বিক্রি করার পরিকল্পনা করলে, তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তার রাজনৈতিক ও ঐতিহাসিক গুরুত্ব অনুধাবন করে সেখানে জাদুঘর ও পর্যটন কেন্দ্র স্থাপনের নির্দেশ দেন। বহু সংস্থার ও সৌন্দর্যবর্ধনের পর ১৯৯২ সালে তা জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়।

আহসান মঞ্জিল শনিবার থেকে বুধবার, সকাল ১০ঃ৩০ মিনিট থেকে বিকাল ৫ঃ৩০ মিনিট পর্যন্ত দর্শনার্থীদের জন্য খোলা থাকে। আহসান মঞ্জিল পরিদর্শনের জন্য প্রবেশ মূল্য ২০ টাকা এবং ১২ বছরের নিচে শিশুদের জন্য ১০ টাকা। তাই ঐতিহাসিক পটভূমি সম্পর্কে জানতে ঘুরে আসতে পারেন ঢাকার দর্শনীয় ঐতিহাসিক স্থানসমূহ এর অন্যতম এই আহসান মঞ্জিলে।

সোহরাওয়ার্দী উদ্যান

সোহরাওয়ার্দী উদ্যান (Suhrawardy Udyan) ঢাকার শাহাবাগে অবস্থিত বাংলাদেশের একটি বহুল তাৎপর্যপূর্ন ঐতিহাসিক স্থান।
সোহরাওয়ার্দী উদ্যান

সোহরাওয়ার্দী উদ্যান (Suhrawardy Udyan) ঢাকার শাহাবাগে অবস্থিত বাংলাদেশের একটি বহুল তাৎপর্যপূর্ন ঐতিহাসিক স্থান। এটিকে পূর্বে রমনা রেসকোর্স ময়দান/ রমনা জিমখানা/ ঢাকার রেসকোর্স ইত্যাদি নামে ডাকা হতো। বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর থেকে এই সুপুরিসর মাঠটির নামকরণ করা হয় সোহরাওয়ার্দী উদ্যান। এই উদ্যানের ঐতিহাসিক স্মৃতিচিহ্ন ব্যাপক। তাই বর্তমানে ঢাকার দর্শনীয় ঐতিহাসিক স্থানসমূহ এর মধ্যে এটি অন্যতম।

ব্রিটিশ শাসনামলে এখানে ব্রিটিশ সৈনিকদের সামরিক ক্লাব ছিল এবং প্রতি সপ্তাহে রবিবার এখানে ঘোড়া দৌড়ের প্রতিযোগিতা করা হতো। বর্তমানে এটি একটি সবুজ ছায়াঘেরা সুশীতল মাঠ, যা সকলের জন্য উন্মুক্ত। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের অন্যতম প্রধান ঐতিহাসিক পটভূমি হল বঙ্গবন্ধুর দেওয়া ৭ই মার্চের ভাষণ। এই মাঠেই প্রায় ১০ লক্ষ মানুষের সামনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিশ্বকাপানো মহাকাব্য রচিত করেন। এছাড়াও ১৯৭১ সালের দীর্ঘ ৯ মাসের যুদ্ধের পর পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী এই সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আত্মসমর্পণ করেছিল। তাই এই স্থানটি বাঙালি জাতির কাছে চির স্মরণীয় এবং ঢাকার দর্শনীয় ঐতিহাসিক স্থানসমূহ এর মধ্যে অন্যতম হয়ে থাকবে।

এখানে আকর্ষণীয় স্থাপনা গুলো হলো- স্বাধীনতা জাদুঘর, স্বাধীনতা স্তম্ভ, শিখা চিরন্তন, জনতার দেয়াল নামে ২৭৩ ফুট দীর্ঘ একটি দেয়াল চিত্র উল্লেখযোগ্য। এছাড়াও সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের পাশে বেশ কিছু দর্শনীয় স্থান রয়েছে। যেমন- পুরানো হাইকোর্ট ভবন, পশ্চিমে বাংলা একাডেমী, ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্র, চারুকলা ইনস্টিটিউট, বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় মসজিদ, পাবলিক লাইব্রেরি এবং বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘর, তিন নেতার মাজার, হাজী শাহাবাজের মাজার ও মসজিদ এবং উত্তরে বারডেম হাসপাতাল, ঢাকা ক্লাব ও ঢাকার টেনিস কমপ্লেক্স এবং পূর্বে ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউট, সুপ্রীম কোর্ট ভবন ও রমনা পার্ক রয়েছে।

কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার

Central Shaheed Minar
কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার

কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার (Central Shaheed Minar) ঢাকা মেডিকেল কলেজের পাশেই ভাষা আন্দোলনের গৌরবের স্মৃতি ধারণ করে আছে। বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে শহীদ মিনারের স্তম্ভ থাকলেও এটি তার প্রথম কেন্দ্রস্থল এবং ঢাকার দর্শনীয় ঐতিহাসিক স্থানসমূহ এর মধ্যে অন্যতম। রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাওয়ার দাবিতে ১৯৫২ সালের ২১ শে ফেব্রুয়ারিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ও রাজনৈতিক কর্মীদের মিছিলে ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করায় মিছিল কারীদের উপর নির্বাচনে গুলি বর্ষণ করা হয়। তখন সালাম, বরকত, শফিক, জব্বার, রফিক সহ অনেকেই শহীদ হয়। তাদের স্মৃতিচারণেই ২৩ শে ফেব্রুয়ারি ঢাকা মেডিকেল কলেজের ছাত্র হোস্টেলের ১২ নম্বর শেডের পূর্বপ্রান্তে শহীদ মিনার নির্মাণ করা হয়।

মাত্র এক দিনেই ২৩ শে ফেব্রুয়ারি বিকেল থেকে রাতের মধ্যেই শহীদ মিনার নির্মাণ করেন ঢাকা মেডিকেল কলেজের ছাত্ররা। প্রথম শহীদ মিনারটির উচ্চতা ছিল ১০ ফুট এবং তা ৬ ফুট চওড়া ছিল। এই স্তম্ভ নির্মাণের পর ‘শহীদ বীরের স্মৃতিতে’ – এই শিরোনামে দৈনিক আজাদ পত্রিকায় সর্বপ্রথম শহীদ মিনারের খবর ছাপা হয়। পরে তৎকালীন পাকিস্তানি সরকারের নির্দেশে ২৬ শে ফেব্রুয়ারি সেই শহীদ মিনারটি ভেঙে ফেলা হয়। তবে পুনরায় ১৯৫৭ সালে বাংলা ভাষাকে রাষ্ট্রভাষার স্বীকৃতি প্রদানের পর শহীদ মিনারের নির্মান কাজ শুরু হয় এবং ১৯৬৩ সালের শেষ হয়।

বর্তমানে প্রতিবছর একুশে ফেব্রুয়ারিতে হাজারো মানুষের ভিড় হয় সেই শহীদ মিনারে বাংলার ভাষা শহীদদের স্মৃতিচারণে ফুল প্রদান করতে। ঢাকার দর্শনীয় ঐতিহাসিক স্থানসমূহ এর মধ্যে এটি অন্যতম। শহীদ মিনার দেখতে গেলে একইসাথে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান, জাতীয় জাদুঘর, দোয়েল চত্বর, কার্জন হল, চারুকলা ইনস্টিটিউটও ঘুরে আসতে পারেন।

শঙ্খনিধি হাউস 

শঙ্খনিধি হাউজ (Songkhonidhi House)
শঙ্খনিধি হাউজ

শঙ্খনিধি হাউজ (Songkhonidhi House) বা শঙ্খনিধি মন্দির পুরান ঢাকার টিপু সুলতান রোডে অবস্থিত একটি শতবর্ষী পুরাতন ভবন। এটি বাংলাদেশের প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের ঐতিহ্যবাহী ৩২ টি ভবনের তালিকা এবং ঢাকা সিটি কর্পোরেশন ও রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ এর ৯৩ টি ঐতিহাসিক নান্দনিক ভবনের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত। ঢাকার দর্শনীয় ঐতিহাসিক স্থানসমূহ এর মধ্যে এটি বৈচিত্রও অন্যতম।

বিংশ শতকের শুরুর দিকে ভজহরি সাহা, গৌর নিতাই সাহা ও লালমোহন সাহা নামে তিন ভ্রাতৃত্রয় তাদের ব্যবসায় ব্যাপক উন্নতি লাভের ফলে বণিক উপাধি বর্জন করে শঙ্খনিধি/শঙ্খের বাহক উপাধি গ্রহণ করেছিল। তাদের ব্যবসায় উন্নতির ফলে ১৯২০-১৯২৬ সালের মধ্যে পুরান ঢাকার টিপু সুলতান রোড থেকে শুরু করে ওয়ারী পর্যন্ত বিভিন্ন জায়গায় নানা ভবন নির্মাণ করেন। সেই ভবন গুলোর মধ্যেই একটি শঙ্খনিধি হাউস, যা ১৯২১ সালে লালমোহন সাহা নির্মাণ করেন।

শঙ্খনিধি হাউসের নির্মাণ কার্যে গোথিক ইন্ডিয়ান ও ইন্দো-সারাসিন রীতির লক্ষ্য করা যায়। শঙ্খনিধি হাউসের মূল ভবনের দুই পাশেই রয়েছে তিনটি করে প্রবেশ পথ। ভবনের উত্তর দিকে রয়েছে একটি মন্দির। শঙ্খনিধি হাউসের অন্যতম আকর্ষণ ভবনের উত্তর দিকে থাকা ৫০ ফুট প্রশস্ত একটি নাচঘর। সেই নাচ ঘরে রয়েছে কারুকার্যময় ছাদ ও রঙিন টালির দেয়াল। শঙ্খনিধি হাউসেরদক্ষিণ মুখী ভবনটি সমতল থেকে প্রায় ৫ ফুট উচ্চতায় নির্মিত। ভবনের বারান্দায় প্রবেশের জন্য রয়েছে ২০ ফুট প্রশস্ত সোপান। ঢাকার দর্শনীয় ঐতিহাসিক স্থানসমূহ এর মধ্যে অন্যতম এই শঙ্খনিধি হাউসে নাচঘর ছাড়াও আরো পাঁচটি নানা আয়তনের ঘর রয়েছে।

১৯৭১ সালের শঙ্খনিধি হাউসের অধিবাসীগণ ভারতে চলে যাওয়ায় ১৯৮০ সালে তা প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের তালিকাভুক্ত করা হয়। ১৯৯১ সালে নাছির ও ভবনের একাংশ ভেঙে ফেলা হয়। বর্তমানে সেই অংশে গ্রাজুয়েটস উচ্চ বিদ্যালয় অবস্থিত।

জিন্জিরা প্রাসাদ

জিনজিরা প্রাসাদ (Jinjira Prashad) পুরান ঢাকার কেরানীগঞ্জ উপজেলার বুড়িগঙ্গা নদীর পাড়ে অবস্থিত ঢাকার দর্শনীয় ঐতিহাসিক স্থানসমূহ এর মধ্যে একটি। এটি মোগল আমলে নির্মিত। জিনজিরা শব্দের অর্থ হলো দীপ। সুবেদার দ্বিতীয় ইব্রাহিম খাঁ প্রমথকেন্দ্র হিসেবে ১৬২০ খ্রিস্টাব্দে জিনজিরা প্রাসাদ নির্মাণ করেছিলেন। পলাশীর যুদ্ধে পরাজয়ের পর নবাব সিরাজউদ্দৌলার স্ত্রী লুৎফুন্নেসা এবং তার শিশু কন্যাকে মীরজাফরের পুত্র নমিরনের নির্দেশে কেরানীগঞ্জের জিনজিরা প্রাসাদে বন্দী রাখা হয়েছিল। চারপাশে পানি এবং মধ্যবর্তী ভূখণ্ডে এই প্রাসাদটি নির্মাণ হওয়ার কারণে এর নামকরণ করা হয়েছিল জিনজিরা বা দ্বীপের প্রাসাদ।

ঐতিহাসিক এই পটভূমিতে দেশীয় গাছপালার ছায়া ঘেরা অপূর্ব কারুকার্য খচিত প্রাসাদ ও আসা-যাওয়ার জন্য কাঠের পুল ব্যবহার করা হতো। স্থানীয়দের মতে, লালবাগ কেল্লার সাথে জিনজিরা প্রাসাদের যোগাযোগ স্থাপনের জন্য বুড়িগঙ্গা নদীর তলদেশ দিয়ে একটি সুরঙ্গ তৈরি করা হয়েছিল যা মুঘল সেনা কর্মকর্তারা ব্যবহার করতেন। ওয়ারিশ সূত্রে জিনজিরা প্রাসাদের বর্তমান মালিক ও পরিবার প্রধান জাহানারা বেগম, যিনি হাজী অজিউল্লাহ এর পুত্রবধূ।

পূর্বে এখানে ছিল একটি নির্জন গ্রাম যার নাম হাওলি বা হাবেলি। বর্তমানে সেই গ্রাম ঘিঞ্জি বসতিতে পরিণত হয়েছে। বর্তমানে প্রাসাদটিতে বড় কাতরার আদলে নির্মিত প্রবেশ তরুণ ও দুইটি প্রাসাদ টিকে আছে। জিনজিরা প্রাসাদের চারপাশে এখন গড়ে উঠেছে অট্টালিকা ও দোকানপাট। ঢাকার বুড়িগঙ্গা নদীর পাশে সোয়ারীঘাট সংলগ্ন বড় কাটরায় পৌঁছে ঘুরে আসতে পারেন ঢাকার দর্শনীয় ঐতিহাসিক স্থানসমূহ এর মধ্যে অন্যতম জিনজিরা প্রাসাদটি।

রোজ গার্ডেন প্যালেস

Rose Garden Palace
রোজ গার্ডেন প্যালেস

রোজ গার্ডেন প্যালেস (Rose Garden Palace) বিংশ শতাব্দীর ঐতিহাসিক একটি প্রাচীন ভবন। বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকার টিকাটুলি এলাকায় অবস্থিত ঢাকার দর্শনীয় ঐতিহাসিক স্থানসমূহ এর মধ্যে এটি একটি। বর্তমানে এই ভবনটি বাংলাদেশের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ কর্তৃক ১৯৮৯ সাল থেকে সংরক্ষিত আছে। রোজ গার্ডেন প্যালেস ১৯ শতকে হৃষিকেশ দাস নামের এক হিন্দু জমিদার বিনোদনের জন্য নির্মাণ করেন।

তৎকালীন হিন্দু সমাজের বিত্তবানদের সামাজিক অনুষঙ্গ হিসাবে বলদা গার্ডেনে জলসার আয়োজন করা হতো। নিম্ন বর্ণের ফলে হৃষিকেশ দাস এক জলসায় অপমানের শিকার হন। তারপর তিনি নিজেই রোজ গার্ডেন প্যালেস তৈরি করেন এবং সেখানেই জলসার আয়োজন করতেন। ওই সময়ের মূল আকর্ষণ ছিল বাগান বাড়ির নয়না ভিরাম সাজঘর। বেহিসাবে জীবন-যাপনের জন্য দেউলিয়া হয়ে সম্পত্তি বিক্রি করতে বাধ্য হন হৃষিকেশ দাস। তখন ১৯৩৬ সালে তার কাছ থেকে খান বাহাদুর কাজী আব্দুর রশিদ এই বাগানবাড়িটি ক্রয় করেন। বর্তমান সময় পর্যন্ত কাজী আব্দুর রশিদের বড় ছেলে কাজী মুহাম্মদ বশির এই বাড়ির ঐতিহ্য ধরে রেখেছেন।

বর্তমানে এই বাগানবাড়িটি বিভিন্ন সিনেমা এবং নাটকে শুটিংয়ের জন্য ব্যবহার করা হয়। প্রাথমিকভাবে এই বাগানবাড়ি নির্মিত হয়েছিল শুধুমাত্র বিনোদনের উদ্দেশ্যে। তবে পরবর্তীতে এখানে মালিকরা বসবাস শুরু করেন। ঢাকার দর্শনীয় ঐতিহাসিক স্থানসমূহ এর মধ্যে অন্যতম এই রোজ গার্ডেনেই ১৯৪৯ সালে গঠিত হয়েছিল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ। এই বাগানবাড়িটির নিচ তলায় রয়েছে একটি হলরুম, আটটি কক্ষ ও করিনথিয়াম কলাম। উপর তলায় রয়েছে আরও একটি হল এবং পাঁচটি কক্ষ। পূর্বে রোজ গার্ডেন প্যালেসের প্রাঙ্গনে একটি ঝর্ণা ছিল যা বর্তমানে চালু নেই। সামনের দিকের বাগানে রয়েছে মার্বেলের তৈরি কয়েকটি মূর্তি। তবে এই প্রাসাদটির নাম রোজ গার্ডেন প্যালেস করা হলেও বর্তমানে সেই গোলাপ বাগান নিশ্চিহ্ন।

রোজ গার্ডেনে প্রতিদিন সকাল আটটা থেকে বিকাল ৫ টা পর্যন্ত প্রবেশ করতে পারবেন। তবে মূল ভবনে প্রবেশের জন্য অবশ্যই পূর্ব অনুমতি নিতে হয়।

রাজা হরিশচন্দ্রের ঢিবি

Raja Harishchandra Dhibi
রাজা হরিশচন্দ্রের ঢিবি

রাজা হরিশচন্দ্রের ঢিবি (Raja Harishchandra Dhibi) বা রাজাসন ঢিবি ঢাকার সাভার উপজেলার মজিদপুরে অবস্থিত একটি প্রত্নতাত্ত্বিক স্থান। ঢাকার দর্শনীয় ঐতিহাসিক স্থানসমূহ এর এই পটভূমিটিকে স্থানীয়রা একে রাজা হরিশচন্দ্রের ঢিবি, রাজা হরিশচন্দ্রের বাড়ি, রাজা হরিশচন্দ্রের প্রাসাদ, রাজা হরিশচন্দ্রের ভিটা ইত্যাদি নামেও জানেন। উনিশ শতকের শেষভাগ পর্যন্ত এই রাজবাড়ীটি মাটির নিচে চাপা পড়েছিল।

১৯১৮ সালের দিকে প্রথম রাজবাড়ি-ঢিবির কাছাকাছি রাজাশনে প্রত্নতাত্ত্বিক ক্ষননকাজ পরিচালনা করেন ডক্টর নলিনীকান্ত ভট্টশালী। সেখানে কিছু প্রত্নতাত্ত্বিক বস্তু ও রাজ বংশের গুপ্ত মুদ্রাস্মারক পাওয়ায় পরবর্তীতে ১৯৯০-১৯৯১ খ্রিস্টাব্দে হরিশচন্দ্রের প্রাসাদেরও ক্ষরণ কাজ চালানো হয়।

এই স্থানটির ঐতিহাসিক গুরুত্ব অনেক। সপ্তম-অষ্টম শতকে এখানে পাল বংশীয় রাজা হরিশচন্দ্রের শাসনাধীন রাজ্যের রাজধানী ছিল। ধারণা করা হয় তার রাজধানী সম্ভার থেকেই পর্যায়ক্রমে সাভার নামের উৎপত্তি হয়েছে। ঢাকার দর্শনীয় ঐতিহাসিক স্থানসমূহ এর মধ্যে অন্যতম এই রাজা হরিশচন্দ্রের ডিবি থেকে হরিকেল রৌপ্যমুদ্রা, স্বর্ণমুদ্রা এবং ব্রোঞ্জের তৈরি বুদ্ধমূর্তি পাওয়া গেছে। বর্তমানে সেগুলো বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরে সংরক্ষিত আছে।

নর্থব্রুক হল

নর্থব্রুক হল (Northbrook Hall)
নর্থব্রুক হল

নর্থব্রুক হল (Northbrook Hall) বা লালকুঠি ঢাকার বুড়িগঙ্গা নদীর তীরে ফরাসগঞ্জ এলাকায় ওয়াইজ ঘাটে অবস্থিত ঢাকার দর্শনীয় ঐতিহাসিক স্থানসমূহ এর মধ্যে অন্যতম একটি সৌন্দর্য স্থাপত্য। ১৮৭৪ সালে ভারতের গভর্নর জেনারেল জর্জ ব্যরিং নর্থব্রুক ঢাকা সফরে আসেন। তার সেই সফরকে স্মরণীয় করে রাখার জন্যই মোগল স্থাপত্য রীতি ও ইউরোপীয় কারুকার্যের অপূর্ব সংমিশ্রণে নর্থ গ্রুপ হল নির্মাণ করা হয়েছিল। প্রাথমিকভাবে টাউন হল হিসেবে নর্থব্রুক হল নির্মাণ করা হয়েছিল। তবে পরবর্তীতে একে গ্রন্থাগার এবং পাশাপাশি জনসন হল নামে একটি ক্লাবঘর বানানো হয়।

ঢাকার দর্শনীয় ঐতিহাসিক স্থানসমূহ এর অন্যতম এই নর্থব্রুক হল ভবনের রং লাল হওয়ার কারণেই এটি স্থানীয়দের কাছে লালকুঠি নামে পরিচিত। নর্থব্রুক হল তৈরি হয়েছে প্রায় এক বিঘা জমির উপরে। ভবনের দু’পাশে দুইটি করে অষ্টভুজ আকৃতির কারোকার্যখচিত মোট ৪টি মিনার রয়েছে। ভবনের উত্তর দিকে অবস্থিত সকল প্রবেশ দরজাগুলো অর্ধ-বৃত্তাকার ও অশ্বখুরাকৃতির। নর্থব্রুক হলের উত্তর ও দক্ষিণ দিকের নকশায় স্বতন্ত্রতা ও বৈচিত্রতা লক্ষ্য করা যায়। ফলে মুসলিম ঐতিহ্যের স্মারক এই ভবনটিকে প্রথমবার দেখলে দুই দিক থেকে দুটি পৃথক ভবন মনে হয়। ১৯২৬ সালের ৭ই ফেব্রুয়ারি বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে ঢাকা মিউনিসিপ্যালিটি এই নর্থব্রুক হলেই সংবর্ধনা দেয়।

ওসমানী উদ্যান

ওসমানী উদ্যান (Osmani Udyan)
ওসমানী উদ্যান

ওসমানী উদ্যান (Osmani Udyan) ঢাকার গুলিস্তানে নগর ভবন ও সচিবালয়ের পিছনে প্রায় ২৩.৩৭ একর জায়গা জুড়ে একটি ঐতিহাসিক মাঠ। ১৯৭১ সালের মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের কমান্ডার লেফটেন্যান্ট জেনারেল মোহাম্মদ আতাউল গনি ওসমানীর নামানুসারে ঢাকার দর্শনীয় ঐতিহাসিক স্থানসমূহ এর অন্যতম এই মাঠটিকে ওসমানী উদ্যান নামকরণ করা হয় এবং ওসমানী অডিটোরিয়াম নির্মাণ করা হয়।

ওসমানী উদ্যানে প্রবেশ পথ ৩ টি। প্রথম ও প্রধান প্রবেশপথ দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন ভবনের বিপরীত পাশে, দ্বিতীয়টি গোলাপ শাহ মসজিদ এবং তৃতীয় প্রবেশপথ ওসমানী অডিটোরিয়াম এর কাছে অবস্থিত। এই উদ্যানের প্রবেশ করেই মাঠের মানচিত্রে উদ্যানের লেক, হাঁটার পথ ও অন্যান্য স্থাপনার অবস্থান জানতে পারবেন। মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিকে ধারণ করতে ওসমানী উদ্যানকে ১১টি সেক্টরে ভাগ করা হয়েছে, যা সেই মানচিত্রে স্পষ্ট ভাবে লক্ষ্য করা যায়।

ওসমানি উদ্যানের ভিতরে রয়েছে স্বাধীনতা স্মৃতিস্তম্ভ, সম্রাট আওরঙ্গজেবের প্রধান সেনাপতি মীর জুমলার কামান, বিভিন্ন দুর্লভ গাছের সমারোহ এবং দেশি-বিদেশি নোনাজাতের ফুল-ফল। উদ্যানের মধ্যে দুইটি লেক ও দুইটি কৃত্রিম বালু দ্বীপ প্রায় ৫.৩৪ একর জায়গা জুড়ে রয়েছে।

বিরুলিয়া জমিদার বাড়ি

বিরুলিয়া জমিদার বাড়ি (Birulia Jamidar Bari)
বিরুলিয়া জমিদার বাড়ি

বিরুলিয়া জমিদার বাড়ি (Birulia Jamidar Bari) বিরুলিয়া গ্রামের শেষ প্রান্তে অবস্থিত জমিদার রজনীকান্ত ঘোষের বাড়ি। ঢাকার তুরাগ নদীর তীরবর্তী ছোট্ট একটি গ্রামের নাম বিরুলিয়া। শহরের অত্যন্ত নিকটবর্তী এই গ্রামে ১০ টিরও বেশি ঐতিহ্যবাহী স্থাপনা রয়েছে। তন্মধ্যে, বিরুলিয়া জমিদার বাড়ি ঢাকার দর্শনীয় ঐতিহাসিক স্থানসমূহ এর মধ্যে অন্যতম। জমিদারি ইতিহাসের সাক্ষী এই প্রত্নতাত্ত্বিক ঐতিহ্য বিরুলিয়া জমিদার বাড়ি দেখতে অনেকেই দর্শন করতে যান সেখানে।

স্থানীয়দের মতে, তৎকালীন জমিদার নলিনী মোহন সাহার কাছ থেকে ৮৯৬০ টাকা ৪ আনি অর্থের বিনিময়ে জমিদার রজনীকান্ত ঘোষ এই বাড়িটি ক্রয় করেন। তৎকালীন সময়ে রজনীকান্ত ঘোষের বিভিন্ন স্থানের সম্পত্তি থাকলেও বর্তমানে শুধুমাত্র বিরুলিয়া জমিদার বাড়িটি বেদখল অবস্থায় আছে। বর্তমানে সেখানে জমিদার রজনীকান্ত ঘোষের বংশধরগণ বসবাস করছেন। বিভিন্ন কাজে ব্যবহৃত হচ্ছে জমিদার বাড়ির সদরঘর, বিচারঘর, পেয়াদাঘর, বিশ্রামঘর ও ঘোড়াশালাগুলো। ঢাকার যেকোনো স্থান থেকে মিরপুর-১ গামী গাড়িতে করে বিরুলিয়া ব্রিজে পৌঁছে স্থানীয়দের কাছে জিজ্ঞেস জমিদের বাড়ির রাস্তা জিজ্ঞেস করে ঘুরে আসতে পারেন ঢাকার দর্শনীয় ঐতিহাসিক স্থানসমূহ এর মধ্যে অন্যতম এই স্থাপনাটি।

ঢাকার দর্শনীয় ঐতিহাসিক স্থানসমূহ সম্পর্কিত সচরাচর জিজ্ঞেসিত প্রশ্নোত্তর (FAQ’s)

ঢাকার ১০ টি দর্শনীয় স্থান কি কি?

ঢাকার দর্শনীয় ঐতিহাসিক স্থানসমূহ হলো- লালবাগ কেল্লা, আহসান মঞ্জিল, কার্জন হল, জাতীয় জাদুঘর, সোহরাওয়ার্দী উদ্যান, ওসমানী উদ্যান, কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার, রোজ গার্ডেন প্যালেস, রাজা হরিশচন্দ্রের ঢিবি ও বিরুলিয়া জমিদার বাড়ি।

রোজ গার্ডেন কোথায় অবস্থিত?

রোজ গার্ডেন প্যালেস ঢাকার টিকাটুলিতে কে.এম. দাস লেন এলাকায় অবস্থিত।

লালবাগ কেল্লার টিকেট মূল্য কত?

লালবাগ কেল্লার টিকেট মূল্য জনপ্রতি ১০ টাকা। তবে পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশুদের জন্য ফ্রি এবং বিদেশী দর্শনার্থীদের জন্য টিকেট মূল্য ১০০ টাকা।