সুন্দরবন ভ্রমণ, ভ্রমণের খরচ ও ভ্রমণ টিপস

সুন্দরবন (Sundarban) হলো পৃথিবীর সবচেয়ে বড় ম্যানগ্রোভ বন বা লবণাক্ত বনাঞ্চল। এই বনটি বঙ্গোপসাগর উপকূলবর্তী অঞ্চলে অবস্থিত একটি প্রশস্ত বনভূমি। ভ্রমণের জন্য সুন্দরবন ভ্রমণ সকলের কাছেই অনেক প্রিয়। ১৯৯৭ সালের ৬ই ডিসেম্বর ইউনেস্কোর বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থান হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করে সুন্দরবন। ১০ হাজার বর্গ কিলোমিটার জুড়ে বিস্তৃত এই বন। এই বনের ৬,৫১৭ বর্গ কিলোমিটার বা ৬৬℅ বাংলাদেশের মধ্যে রয়েছে এবং বাকি অংশ ৩৪% ভারতের মধ্যে রয়েছে। এই অপরুপ বনভূমি বাংলাদেশের পদ্মা, মেঘনা ও ব্রহ্মপুত্র নদীর অববাহিকার বদ্বীপ এলাকায় অবস্থিত। বাংলাদেশের বাগেরহাট, খুলনা, বরগুনা, ও সাতক্ষীরা জেলার কিছু অংশ জুড়ে বিস্তৃত রয়েছে এই বনে।

এই বনে প্রচুর পরিমাণে সুন্দরী গাছ রয়েছে। আর সুন্দরী গাছের নাম অনুসারে এই সুন্দরবন রাখা হয়। এই বনে সবচেয়ে বেশি পরিমাণে সুন্দরী ও গেওয়া গাছের প্রজাতি রয়েছে। এখানে আরও রয়েছে ৩৫০ প্রজাতির উদ্ভিদ, ২৭০ প্রজাতির পাখি, ১২০ প্রজাতির মাছ, ৩৫ প্রজাতির সরীসৃপ, ৪২ প্রজাতির সরীসৃপ এবং ৮ টি উভচর প্রাণীসহ ৪৫৩ টি বন্যপ্রাণীর বাসস্থান সরবরাহ করে। ভ্রমণ পিপাসু মানুষের জন্য বাংলাদেশের সবচেয়ে আকর্ষণীয় হলো সুন্দরবন ভ্রমণ।

সুন্দরবন ভ্রমণের উপযুক্ত সময়

সুন্দরবনের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য সারা বছর ধরেই উপভোগ করা যায়। তবে জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি মাসে সুন্দরবনের পাশে থাকা সমুদ্র সমুদ্র এবং নদী শান্ত থাকে। ফলে এই সময় সুন্দরবনের গহীনে প্রবেশ করে সকল স্থানের আকর্ষণীয় রূপ শোভা উপভোগ করা যায়। তবে সুন্দরবনের করমজল ও হারবাড়িয়াতে বছরের যে কোন সময়েই ঘুরতে যাওয়া যায়।

সুন্দরবনের ইতিহাস

<yoastmark class=

আমলে ১২০৩ থেকে ১৫৬৮ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত স্থানীয় এক রাজা পুরো সুন্দরবনটি ইজারা নেন । ঐতিহাসিক আইনি পরিবর্তনগুলোর কাঙ্খিত যেসব মৌলিক পরিবর্তন হয়েছে তার মধ্যে রয়েছে বিশ্বের প্রথম ম্যানগ্রোভ বন হিসেবে স্বীকৃতি বিজ্ঞানভিত্তিক তত্ত্বাবধানের অধীনে আসা। ১৭৫৭ সালে সুন্দরবন এলাকার মানচিত্র তৈরি করা হয় ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি কর্তৃক মুঘল সম্রাট দ্বিতীয় আলমগীর এর কাছ থেকে স্বতাধিকার পাওয়ার পরপরই। ১৮৬০ খ্রিস্টাব্দের দিকে ভারতের তৎকালীন বাংলা প্রদেশের বন বিভাগ স্থাপনের পর থেকে বন অঞ্চলটি সাংগঠনিক ব্যবস্থাপনার আওতায় আসে, যা সুন্দরবন ভ্রমণের জন্য উপযোগী করার প্রথম পর্যায়।

অষ্টাদশ শতাব্দীর শুরুতে এই বনের আয়তন বর্তমান বনের দ্বিগুণ ছিল। মানুষের বনের উপর অধিক চাপের প্রভাবে আয়তন ধীরে ধীরে সংকুচিত হয়ে আসছে। ১৮২৮ সালে ব্রিটিশ সরকার এই বনের স্বত্বাধিকার অর্জন করেন। ১৮২৯ সালে এল. টি. হজেয এই বনের প্রথম জরিপ কার্য পরিচালনা করেন। ১৮৭৮ সালে পুরো বন এলাকাকে সংরক্ষিত বন হিসেবে ঘোষণা দেওয়া হয়। ১৯৪৭ সালে ভারত ভাগের সময় সুন্দরবনের বাংলাদেশের অংশে ৬,৫১৭ বর্গ কিলোমিটার পরে। যা বাংলাদেশের সমগ্র বনভূমির ৬৬ পারসেন্ট এবং আয়তনে ৪.৩%। ১৮৬৯ সালে সুন্দরবনের প্রথম বন ব্যবস্থাপনা বিভাগের আইনগত অধিকার প্রতিষ্ঠিত হয়।

১৮৬৫ সালের বন আইন ধারা ৮ মোতাবেক সুন্দরবনের একটি বড় অংশকে একটি সংরক্ষিত বনভূমি হিসেবে ঘোষণা দেওয়া হয় ১৮৭৫-১৮৭৬ সালে। বন ব্যবস্থাপনার জন্য বন বিভাগ প্রতিষ্ঠিত হয় যার সদর দপ্তর ছিল খুলনায়। ১৮৯৩-১৮৯৮ সাল সময় কালে সুন্দরবন ভ্রমণ উপযোগী করার জন্য বন বস্থাপনা পরিকল্পনা করা হয়। ১৯১১ সালে সুন্দরবনকে ট্রাক্ট অব ওয়াস্ট ল্যান্ড হিসেবে আখ্যা দেয়া হয় , যা কখনো জরিপ করা হয়নি আর কোনদিন শুমারির অধীনেও আসেনি। সে সময়ে মেঘনা নদীর মোহনা থেকে হুগলি নদীর মোহনা পর্যন্ত প্রায় ১৬৫ (২৬৬ কি.মি.) মাইল এলাকা জুড়ে এর সীমানা নির্ধারণ করে।

আরও পড়ুন: কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত

সুন্দরবনের বর্তমান অবস্থা

<yoastmark class=

সুন্দরবন ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের দুই জেলা উত্তর ২৪ পরগনা ও দক্ষিণ ২৪ পরগনা জুড়ে বিস্তৃত রয়েছে। সুন্দরবনকে জলের মত জড়িয়ে রয়েছে সামুদ্রিক স্রোত ধারা, ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র দ্বীপ মালা, কাদা চড় ও ম্যানগ্রোভ বনভূমির লবণাক্ত পানি। মোট বনভূমির নদী-নালা, খাল বিল ও জলাকীর্ণ অঞ্চল রয়েছে ১,৮৭৪ বর্গ কিলোমিটার বা ৩১.১ শতাংশ। ১৯৯২ সালের ২১ শে ফেব্রুয়ারি সুন্দরবন রামসার স্থান হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করে। সুন্দরবন ভ্রমণ করতে চাইলে পূর্বে জেনে থাকবেন এই বনটি রয়েল বেঙ্গল টাইগারের জন্য বিখ্যাত তাছাড়াও এই বনে রয়েছে নানা ধরনের পাখি, কুমির, সাপ, চিত্রা হরিণ ও বানরসহ অসংখ্য প্রজাতির প্রাণীর আবাসস্থল হিসেবে পরিচিত। এই বনে জরিপ মোতাবেক ১০৬ টি বাঘ ও ১ লাখ থেকে ১,৫০০০০ লাখ চিত্রা হরিণ রয়েছে।

বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন দুর্যোগের কারণে এই বনটি অনেক ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে থাকে। যেমন- ২০০৭ সালে ঘূর্ণিঝড় সিডরের কারণে এই বনের প্রায় ৪০% ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এতে স্বাধুপানি সরবরাহ হ্রাস পাওয়া ও সমুদ্রের জলস্তর বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে বনটি বর্ধিত সালিনিটিতে ও ভুগছে। আবার ২০০৯ সালে ঘূর্ণিঝড় আয়লার কারণে এই বনের অনেক ক্ষতি হয় এবং কমপক্ষে ১ লাখ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। বাংলাদেশের খুলনার বাগেরহাট জেলার রামপাল উপজেলার সুন্দরবন থেকে ১৪ কিলোমিটার উত্তরে অবস্থিত প্রস্তাবিত কয়লা চালিত রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি। ২০১৬ সালের একটি প্রতিবেদন অনুসারে কয়লা চালিত এই বিদ্যুৎ কেন্দ্রের কারণে বনটির আরো ক্ষতি করবে বলে ধারণা করছেন।

প্রাণী বৈচিত্র

সুন্দরবন ভ্রমণ এর জন্য বিখ্যাত হওয়ার অন্যতম কারণ এর ব্যাপক প্রাণী বৈচিত্র বিদ্যমান। প্রাণীদের সংরক্ষিত রাখার জন্য প্রানিবৈচিত্র সংরক্ষণ ব্যবস্থাপনা এই বনের কিছু কিছু এলাকায় শিকার নিষিদ্ধ করার মধ্যেই সীমাবদ্ধ রয়েছে। যদিও এটা স্পষ্ট যে সাম্প্রতিক সময় বাংলাদেশের প্রাণিসম্পদ হ্রাস পাচ্ছে সেখানে এই বন ও বাংলাদেশের বাইরে নয় তাই এখানেও হ্রাস পাচ্ছে। তারপরও সুন্দরবন অনেকগুলো প্রাণী প্রজাতি তাদের সাথে সম্পর্কিত অন্যান্য প্রজাতি ও টিকিয়ে রেখেছে। এদের মধ্যে বাঘ ও শুশুককে প্রাধান্য দিয়ে পরিকল্পনা হচ্ছে প্রাণীবৈচিত্র সংরক্ষণ ব্যবস্থাপনা ও পর্যটন উন্নয়ন। ২০০৪ সালের হিসাব মত সুন্দরবনে ৫০০ রয়েল বেঙ্গল টাইগারের আবাসস্থল যা পৃথিবীতে বাঘের একক বৃহত্তম অংশ।

মানুষের সম্পদ সংগ্রহ ও বন ব্যবস্থাপনার প্রভাব অনেক রয়েছে বন্যপ্রাণীর সংখ্যা এবং এর লালন ক্ষেত্রের উপর। যেমন গিরগিটি, ধুম তরুনাস্তি কাছিম, কচ্ছপ, সুন্দি কাছিম, অজগর, গুইসাপ এবং রয়েল বেঙ্গল টাইগার সুন্দরবন ভ্রমণ এর জন্য স্থানীয় প্রজাতি গুলোর মধ্যে অন্যতম। বাংলাদেশ বন্যপ্রাণী (সংরক্ষণ) (সংশোধিত) আইন ১৯৭৪ ধারা এগুলোর মধ্যে কিছু প্রাণী সংরক্ষিত রয়েছে। বিংশ শতাব্দীর মাঝামাঝির দিক থেকে সুন্দরবনে বিভিন্ন প্রজাতির প্রাণী বিলুপ্ত হয়ে গিয়েছে যেমন- হরিণ, মহিষ, ভারতীয় গন্ডার, সাধু পানির কুমির, জাভাদেশীয় গন্ডারের মতো অনেক প্রাণী বিলুপ্ত হয়ে গিয়েছে। সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা গিয়েছে যে বাংলাদেশের সুন্দরবনের বাণিজ্যিক দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ ১২০ প্রজাতির মাছ, ৪২ প্রজাতির স্তন্যপায়ী, ২৭০ প্রজাতির পাখি, ৩৫ প্রজাতির সরীসৃপ এবং ৮ টি উভচর প্রজাতি সহ ৪৫৩ টি প্রাণী বন্যপ্রাণীর বাসস্থান সরবরাহ করে।

উদ্ভিদ বৈচিত্র্য

<yoastmark class=

মূলত সুন্দরী গাছের আধিক্য থেকেই সুন্দরবন নামকরণ করা হয়। এছাড়াও সুন্দরবন ভ্রমণ করতে গেলে দেখতে পাবেন গেওয়া, ঝামটি গরান এবং কেওড়া গাছ রয়েছে প্রচুর পরিমাণে। সুন্দরবনে রয়েছে মোট ২৪৫ টি শ্রেণী এবং ৩৩৪ প্রজাতির উদ্ভিদ। সমুদ্র উপকূলবর্তী অঞ্চল হওয়ায় এখানের বিশেষ করে লবণাক্ততার সহনশীল উদ্ভিদ জন্মগ্রহণ করে। সুন্দরবনের বড় উদ্ভিদ গুলোর পাশাপাশি গোলপাতা, ঘাস, গুল্ম, শন, নলখাগড়া ইত্যাদি উদ্ভিদগুলো বিক্ষিপ্তভাবে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে।

সুন্দরবনের বিভিন্ন উদ্ভিদে বিভিন্ন প্রকার প্রাণীর বসবাস। বিশেষ করে কেওড়া গাছ নতুন তৈরি হওয়া পলি ভূমিকে নির্দেশ করে। এই গাছগুলো সেখানে বন্যপ্রাণীর জন্য, বিশেষ করে চিত্রা হরিণের জন্য অত্যন্ত উপযোগী বাসস্থান। সুন্দরবনের লক্ষ লক্ষ উদ্ভিদ বাংলাদেশের একটি বড় অংশকে বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে রক্ষা করে।

সুন্দরবনের দর্শনীয় স্থানসমূহ

সুন্দরবন বিশাল বড় একটি এলাকা নিয়ে তৈরি। তবে বাংলাদেশের বন বিভাগ নির্দিষ্ট কিছু স্থান দিয়েই সুন্দরবন দর্শন করার অনুমতি দিয়েছে। খুলনা, সাতক্ষীরা, বাগেরহাট ও বরগুনা দিয়ে সুন্দরবন ভ্রমণ করা যায়। বাংলাদেশ থেকে সবচেয়ে বেশি দর্শনার্থী খুলনা ও বাগেরহাটের মংলা দিয়ে সুন্দরবন দর্শনে যায়। খুলনা ও বাগেরহাটের মংলা থেকে সুন্দরবনের যে সকল দর্শনীয় ভ্রমণ করা যায় সেগুলো হলো- করমজল, কছিখালী, কটকা, জামতলা, হারবাড়িয়া, দুবলার চর ও হিরণ পয়েন্ট। এ স্থানগুলো সম্পর্কে নিচে সংক্ষিপ্ত তথ্য দেওয়া হলো-

জামতলা সি বিচ

এখানে জাওয়ার জন্য ভোরে শিপ মাধ্যমে বনের কাছে গিয়ে ৩০ মিনিট ট্রেকিং করে বনের নির্জন পরিবেশে ভিতরে গেলে জামতলা সি বিচ এ পৌছাতে পারবেন। সেখানে যাওয়ার পথে দেখতে পাবেন বাঘের পায়ের ছাপ। কখনোও বা সামনে পড়ে যেতে পারে রয়েল বেঙ্গল টাইগার। তবে সুন্দরবনে বাঘের সংখ্যা পরিসংখ্যান অনুযায়ী মাত্র ১১৪ টি। তাই বাঘ দেখতে পাওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম। বিচে এসে দেখতে পাবেন ঘূর্ণিঝড় সিডরে ক্ষতিগ্রস্ত ধ্বংসস্তূপ। তবে এখানের সৌন্দর্য কোন অংশে কমে যায়নি এখনো।

হারবাড়িয়া

সুন্দরবনের অন্যতম আকর্ষনীয় অংশ এই হারবাড়িয়া। এখানের মূল আকর্ষন প্রচুর পরিমানে বানর ও সুন্দরী গাছ।

দুবলার চর

সুন্দরবন ভ্রমণ এর এই এলাকাটি বিভিন্ন প্রজাতির মাছ, কাকড়া ও শুটকির জন্য বিখ্যাত। প্রতিদিন বিকাল- সন্ধ্যার দিকে এখানে এসকল উপাদানের বাজার বসে। সুন্দরবন ভ্রমন করতে গেলে এই বাজারটিও ঘুরে আসতে পারেন।

করমজল

এটা সুন্দরবনের অভ্যন্তরীণ একটি চিড়িয়াখানার মতো। এখানে আসলে চোখে পড়বে সুন্দরবনের ম্যাপ। ভিতরে কুমির, হরিন ইত্যাদি দেখতে পাবেন। আপনি চাইলে হরিনকে খাবার কিনেও খাওয়াতে পারবেন। তবে সেখানে এই প্রানী গুলোকে বন্দি অবস্থায় দেখতে পাবেন।

কটকা

কটকা একটি ফরেষ্ট ষ্টেশন। এর দক্ষিনে বঙ্গোপসাগর অবস্থিত। সাগরের কোল ঘেষে তৈরি এই অভয়ারণ্য টি। এখানে রয়েছে একটি কাঠের ট্রেইল। কেওওড়া বনের মাঝ দিয়ে কাঠের এই ট্রেইল ধরে হাটলেই দেখা মিলবে হরিনের দলের। এখানের সবচেয়ে বড় আকর্ষন হরিনের দল।

কটকা সি বিচ

কটকা অভয়ারণ্য থেকে ট্রেইল ধরে খানিকক্ষন হাটএলি যেতে পারবন কটকা সি বিচ। বঙ্গোপসাগরের পাশ ঘেষা এই বিচে দেখতে পাবেন প্রচুর লাল কাকড়া। সুন্দরবন ভ্রমণ এর এই স্থানটি অত্যন্ত পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন।

কচিখালী

সুন্দরবনের কটকা নদীর পূর্ব দিকে কচিখালী সমুদ্র সৈকত অবস্থিত। এখানে পৌছাতে হলে কটকা নদী ও সুন্দরবনের ৩ কিলোমিটার বন পাড়ি দিতে হয়। এখানে রয়েছে প্রচুর পরিমানে পশুর, সুন্দরী, কেওড়া, আমুর, বাইন গাছ। গাছে গাছে পাখির বাসস্থান,হরিণ, মায়া হরিণ, বানর, বন মোরগ, অজগর সাপ ইত্যাদি
বিচিত্র প্রানী।

হিরন পয়েন্ট

এই স্থানটিতে নেভি ক্যাম্প রয়েছে। ফলে আশেপাশের জায়গাটা বেশ উন্নত। এই স্থানে জাওয়ার পথেও দুপাশে কুমির দেখতে পাওয়া যায়। তবে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য এখানে তেমন ফুটে উঠেনা।

সুন্দরবন কিভাবে যাবেন/সুন্দরবন ভ্রমণ

 

<yoastmark class=

বাংলাদেশ থেকে সুন্দরবন ঘুরতে চাইলে সবচেয়ে উপযুক্ত খুলনা ও বাগেরহাটের মংলা দিয়ে ভ্রমন করতে যাওয়া। এগুলো সবচেয়ে জনপ্রিয় ও সুন্দরবন ভ্রমনের জন্য নিরাপদ। তবে খুলনা থেকে জাহাজে করে সুন্দরবন ভ্রমণ করতে গেলেও মংলার পথ দিয়েই যেতে হয়।

এক্ষেত্রে প্রথমে ঢাকা থেকে বাসে বা ট্রেনে করে খুলনা যেতে হবে। ঢাকার সায়দাবাদ, গুলিস্তান ও গাবতলী থেকে বিভিন্ন বাস খুলনাতে যাতায়াত করে। এসব বাসের নন এসি বাস ভাড়া ৬০০-৭০০ টাকা এবং এসি বাসের ক্ষেত্রে ৭০০-১৪০০ টাকা হতে পারে।

এছাড়া সকালে ঢাকা থেকে খুলনার উদ্দেশ্যে সুন্দরবন এক্সপ্রেস ট্রেন ছেড়ে যায়। সন্ধ্যায় আবার খুলনার উদ্দেশ্যে যায় চিত্রা এক্সপ্রেস। ট্রেনের ক্লাস অনুযায়ী ভাড়া ৫০৫-১৭৩১ টাকা পর্যন্ত। ট্রেনে করে খুলনা যাওয়ার পথে খুলনার পূর্বেই কাটখালী নামক স্টেশনে নেমে নিয়ে ৩২ কিলোমিটার পথ বাস, সিএনজি, মাহিন্দ্রাতে করে সরাসরি মংলা চলে যেতে পারেন।

ঢাকা থেকে সরাসরি মোংলা যাবারও বাস রয়েছে। দিগন্ত, রাজধানী, কমফোর্ট লাইন, আরমান পরিবহনের নন এসি বাসে মোংলা যেতে পারেন। ভাড়া বাসভেদে ৪৫০-৫০০ টাকা।

কোথায় থাকবেন

সুন্দরবন ভ্রমণে জাহাজে বা লঞ্চে করে ঘুরতে গেলে সেখানেই থাকার ব্যবস্থা থাকে। তবে ব্যক্তিগতভাবে ভ্রমণের জন্য সুন্দরবনের বিভিন্ন দর্শনীয় স্থানগুলোর পাশে ভালো থাকার ব্যবস্থা রয়েছে। সুন্দরবনের টাইগার পয়েন্টের কচিখালী, কাটকা বন বিভাগের রেস্ট হাউজ এবং হিরণ পয়েন্টের নীলকমলে দর্শনার্থীদের জন্য থাকার ব্যবস্থা রয়েছে।

মংলায় থাকার জন্য রয়েছে পর্যটন কর্পোরেশনর হোটেল। পশুর বন্দর এলাকায়ও পর্যটকদের জন্য কিছু সাধারণ মানের হোটেল রয়েছে। সুন্দরবনের পাশের খুলনা নগরীতে পেয়ে যাবেন বিভিন্ন মানের বেশ কিছু আবাসিক হোটেল। এ সকল হোটেলের মধ্যে হোটেল রয়েল, হোটেল ওয়েস্ট ইন, হোটেল টাইগার গার্ডেন, হোটেল সিটি ইন, হোটেল মিলেনিয়াম, ক্যাসেল সালাম ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য।

সুন্দরবন ভ্রমণে সাতক্ষীরা শহরে থাকতে চাইলেও বেশ কিছু সাধারণ মানুষের হোটেল পাবেন। শ্যামনগরের মুন্সীগঞ্জে রয়েছে এনজিও সুশীলনের রেস্ট হাউস ও ডরমেটরিতে রাত্রি যাপন করার ব্যবস্থা।

কি খাবেন

সুন্দরবনের জাহাজ বা লঞ্চের মাধ্যমে ঘুরতে প্যাকেজ নিলে সেই প্যাকেজের আওতায় ৩ বেলা খাবারের ব্যবস্থা ও ২ বেলা হালকা নাস্তার ব্যবস্থা করা হয়। এছাড়াও আপনি দর্শনীয় স্থানগুলোর আসে পাশে বেশ কিছু ভালো মানের হোটেল পেয়ে যাবেন। যেখানে বাহারি রকমের খাবার, নদীর মাছ, বিভিন্ন ফল ইত্যাদি খেতে পারবেন।

সুন্দরবন ভ্রমণ প্যাকেজ

<yoastmark class=

সুন্দরবন দর্শন করার জন্য বিভিন্ন টুরিস্ট ম্যানেজমেন্ট প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এছাড়াও আপনি খুলনা থেকে লঞ্চে বা জাহাজে করে সম্পূর্ণ সুন্দরবন ট্যুর প্যাকেজ নিতে পারেন। এক্ষেত্রে সাধারণত দুই ধরনের প্যাকেজ পাওয়া যায়। যেমন- ২ রাত ৩ দিন অথবা ৩ রাত ৪ দিন।

এই প্যাকেজের আওতায় তিন বেলা খাবারের ব্যবস্থা ও দুই বেলা হালকা নাস্তার ব্যবস্থা করা হয়। সুন্দরবন ঘুরার জন্য নিরাপত্তা রক্ষী, বনবিভাগের নির্ধারিত ফি এই প্যাকেজের অন্তর্ভুক্ত থাকে। এবং জাহাজেই থাকার ব্যবস্থা রয়েছে। এ সকল প্যাকেজের জনপ্রতি খরচ ১৫,০০০- ২৫,০০০ টাকা পর্যন্ত হয়ে থাকে। তবে একসাথে ৩০-৪০ হলে একটি শীপ রিজার্ভ করে নিতে পারেন। সেক্ষেত্রে খরচ কম পড়বে।

সুন্দরবন ভ্রমণ টিপস

  • সুন্দরবন ঘুরতে যাবার প্যাকেজ বুকিং এর আগে এজেন্সির সম্পর্কে জেনে নিন।
  • খরচ কমাতে চাইলে ছুটির দিনগুলোতে যাবেন না।
  • ভ্রমণের জন্য ন্যাশনাল আইডি কার্ড সাথে রাখুন।
  • একজন ট্যুর অপারেটর সংগ্রহ করে নিবেন।
  • প্রয়োজনে উপাদান ও নিরাপদ খাবারের ব্যবস্থা সাথেই রাখুন।
  • সুন্দরবনের অনেক স্থানেই মোবাইল নেটওয়ার্ক দুর্বল। এক্ষেত্রে টেলিটক নেটওয়ার্ক ভালো পাওয়া যায়।
  • আপনার সাথে থাকা ট্যুর গাইডের কথা মেনে চলুন।
  • নিরাপত্তার জন্য সুদক্ষ এবং সশস্ত্র বন্যপ্রহরী সাথে রাখুন।
  • বনে প্রবেশের সময় সকলেই একসাথে থাকুন।

সুন্দরবন সম্পর্কে সচরাচর জিজ্ঞাসিত প্রশ্নোত্তর (FAQ’s)

সুন্দরবন কোন জেলায় অবস্থিত?

পৃথিবীর বৃহত্তম নিরবিচ্ছিন্ন ম্যানগ্রোভ বন সুন্দরবন বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিম অংশের খুলনা, বাগেরহাট ও সাতক্ষীরা জেলা এবং ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের দক্ষিণ চব্বিশ পরগণা জেলায় অবস্থিত।

সুন্দরবন বাংলাদেশের কয়টি জেলায় অবস্থিত?

বাংলাদেশের ৫ টি জেলায় সুন্দরবন অবস্থিত। এগুলো হলো: সাতক্ষীরা, খুলনা, বাগেরহাট, পটুয়াখালি, বরগুনা।

সুন্দরবন বাংলাদেশের কোন দিকে অবস্থিত?

বাংলাদেশে দক্ষিণ পশ্চিমে ও ভারতে দক্ষিণ পূর্বে সুন্দরবনটি অবস্থিত।

সুন্দরবন কোন নদীর তীরে অবস্থিত?

বঙ্গোপসাগরের নিকটে মাতলা নদীর মুখে প্রায় ছয় বর্গকি.মি. বনাঞ্চল নিয়ে এই অভয়ারণ্যটি অবস্থিত।

সুন্দরবন ভ্রমণে কত টাকা খরচ হতে পারে?

সুন্দরবন একটি বিশাল পর্যটন ভূমি। সুন্দরবনের সকল এলাকা ঘুরে দেখতে চাইলে খুলনা বা মংলা থেকে জাহাজের ট্যুর প্ল্যান সংগ্রহ করলে এবং যাতায়াত খরচসহ ১৫,০০০-২৫,০০০ টাকা খরচ হতে পারে।

সুন্দরবনের কোন এলাকা সবচেয়ে বেশি আকর্ষণীয়?

বাংলাদেশ থেকে সবচেয়ে বেশি দর্শনার্থী খুলনা ও বাগেরহাটের মংলা দিয়ে সুন্দরবন ভ্রমণে যায়। খুলনা ও বাগেরহাটের মংলা থেকে সুন্দরবনের যে সকল দর্শনীয় ভ্রমণ করা যায় সেগুলো হলো- করমজল, কছিখালী, কটকা, জামতলা, হারবাড়িয়া, দুবলার চর ও হিরণ পয়েন্ট।

সুন্দরবনের আয়তন কত?

সুন্দরবন মোট ১০ হাজার বর্গ কিলোমিটার জুড়ে বিস্তৃত। এই বনের ৬,৫১৭ বর্গ কিলোমিটার বা ৬৬℅ বাংলাদেশের মধ্যে রয়েছে এবং বাকি অংশ ৩৪% ভারতের মধ্যে রয়েছে।

বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী বন কোনটি?

সুন্দরবন বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী বন। ১৯৯৭ সালের ৬ই ডিসেম্বর ইউনেস্কো বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থান হিসেবে সুন্দরবনকে স্বীকৃতি প্রদান করে।

সুন্দরবন কেন বিখ্যাত?

সুন্দরবন (Sundarban)নামটি সুন্দরবনের হওয়ার কারণ এখানে প্রচুর সুন্দরী গাছ জন্মায়। সুন্দরবন বিশ্বের বৃহত্তম ব-দ্বীপ। ব্রহ্মপুত্র ও গঙ্গা উভয় নদীর সমন্বয়ে গঠিত এই ব-দ্বীপটিকে বেঙ্গল ডেল্টাও বলা হয়।

ইতিকথা:

পৃথিবীর বৃহত্তম নিরবিচ্ছিন্ন ম্যানগ্রোভ বন সুন্দরবনে প্রতি দিন হাজার হাজার মানুষের আনাগোনা হয়ে থাকে। সুন্দরবন ভ্রমণ এখন পর্যটকের প্রধান আকর্ষণীয় স্থান।