সূরা ইয়াসিন। সূরার ফযীলত – আমল ও Pdf ডাউনলোড

সূরা ইয়াসিন পবিত্র কুরআনের দিল বা অন্তর। প্রাণীর হার্ট যেমন দেহের জীবন, সূরা ইয়াসিন ও তেমনি কুরআন মাজীদের জীবন। পবিত্র কুরআনের ১১৪ টি সূরার মধ্যে সূরা ইয়াসীনের মান মর্যাদা সবার উপরে। সূরা ইয়াসিন কুরআনের দিল নামে সবার কাছে পরিচিত। এ সূরাটির মর্যাদা অপরিসীম। নিম্নে এ প্রসঙ্গে বিশদ আলোচনা করা হলো- 

সূরা ইয়াসীন আল-কুরআনের ৩৬ তম সূরা, সূরার আয়াত সংখ্যা ৮৩ এবং এর রূকুর সংখ্যা ৫। সূরাটি মক্কায় অবতীর্ণ হয়েছে। রাসূলে আকরাম (সা.) বলেন, এই সূরাকে কোরআনের হৃৎপিণ্ড বলা হয়।

সূরা ইয়াসিন

সূরা ইয়াসীন
সূরা ইয়াসীন – ১
সূরা ইয়াসীন
সূরা ইয়াসীন – ২
সূরা ইয়াসীন
সূরা ইয়াসীন – ৩

সূরা ইয়াছিন PDF

আমাদের দৈনন্দিন ব্যস্ততার কারনে ঘরে বসে কোরআন মাজিদ থেকে সূরা ইয়াছিন তেলাওয়াত করার সুযোগ কম হয়। বিভিন্ন সময় আমরা ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে, অফিসে, যাতায়াতের গাড়ী কিংবা প্লেনে বসে অনলাইনে সার্চ করে সূরা ইয়াছিন তেলাওয়াত করে থাকি। আপনাদের সুবিধার্থে আমরা এখানে নিভূলভাবে সূরা ইয়াছিন Pdf আকারে তুলে দিলাম।

সূরা ইয়াছিন পিডিএফ আকারে ডাউনলোড করতে  লিংকে ক্লিক করুন:

Downlord:  Surah Yasin

সূরা ইয়াছিন পাঠের ফযিলত

হাদীস শরীফে এসেছে-

عَنْ أَنَسٍ إِنَّ لِكُلِّ شَيْءٍ قَلْبًا وَقَلْبُ الْقُرْآنِ يُسَ مَنْ قَرَأَيْسَ كَتَبَ اللَّهُ لَهُ بِقِرَاءَتِهَا قِرَاءَةَ الْقُرْآنِ عَشَرَ مَرَّاتٍ 

“প্রত্যেকটি বস্তুর কলব আছে আর কুরআনের কলব হলো সূরা ইয়াসিন। যে ব্যক্তি সূরা ইয়াসীন পাঠ করল, মহান আল্লাহ তার এই তিলাওয়াতের কারণে তাকে দশবার কুরআন খতমের সওয়াব আমলনামায় লিখে দেন ।

অন্য হাদীসে এসেছে-

وَعَنْ أَبِي الدَّرْدَاءِ رَضِيَ الله عَنْهُ قَالَ : قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَا مِنْ مَّيّتٍ يَمُوتُ فَيُقْرَأُ عِنْدَهُ يُسَ إِلَّا هَوَنَ اللهُ عَلَيْهِ

হযরত আবুদ দারদা (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ বলেছেন, কোন ব্যাক্তির মৃত্যুকালে তার সম্মুখে সূরা ইয়াসীন পাঠ করা হলে সূরার উছিলায় তার উপরে আল্লাহপাক মৃত্যুকে সহজ করে দেন।

অন্য হাদীসে এসেছে-

يَا عَلِيُّ ، اِقْرَأْيْسَ فَإِنَّ فِي يُسَ عَشْرَ بَرَكَاتٍ مَا فَرَأَهَا جَائِعٌ إِلَّا شَبعَ ، وَلَا عَمْانُ إِلَّا رُوِيَ ، وَلَا عَادٍ إِلَّا اكْتَسَى، وَلَا عَربْ إِلَّا تَزَوَّجَ ، وَلَا خَائِفٌ إِلَّا أَمِنَ ، وَلَا مَسْجُوْنَ إِلَّا خَرَجَ ، وَلَا مُسَافِرٌ إِلَّا أُعِيْنَ عَلَى سَفَرِهِ ، وَلَا مِنْ ضَلَّتْ ضَالَتُهُ إِلَّا وَجَدَهَا ، وَلَا مَرِيضٌ إِلَّا بَراً، وَلَا قُرِئَتْ عِنْدَ مَيْتٍ إِلَّا خُفِّفَ عَنْهُ

“নবী কারীম (সা.) বললেন, হে আলী! সূরা ইয়াসীন পাঠ করো। কেননা, সূরা ইয়াসিন এর মধ্যে ১০ টি বরকত আছে। যথা:

১) ক্ষুধার্থ ব্যক্তি পাঠ করলে তার ক্ষুধা নিবারণ হবে,

২) পিপাসার্ত ব্যক্তি পাঠ করলে পিপাসা নিবারণ হবে,

৩) বস্ত্রহীন পাঠ করলে বস্ত্রের ব্যবস্থা হবে,

৪) অবিবাহিত ব্যক্তি পড়লে বিবাহের ব্যবস্থা হবে,

৫) ভীত ব্যক্তি পাঠ করলে নিরাপত্তা লাভ করবে,

৬) জেলখানায় আটক ব্যক্তি পাঠ করলে সে বেরিয়ে আসবে,

৭) মুসাফির ব্যক্তি পাঠ করলে তার নফরে সহযোগিতা বেড়ে যাবে,

৮) সওয়ারী হারানো ব্যক্তি পাঠ করলে তার সওয়ারী খুঁজে পাবে,

৯) অসুস্থ ব্যক্তি পাঠ করলে সে সুস্থ হয়ে উঠবে এবং

১০) মৃত্যুমুখী ব্যক্তির সামনে পাঠ করলে তার মৃত্যু যন্ত্রণা হালকা হয়ে যাবে।

অন্য আরেক হাদীস আছে

عَنْ أَبِي بْنِ كَعْبٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ ، قَالَ : قَالَ رَسُوْلُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : مَن قَرَأَ يس يُرِيدُ بِهَا وَجْهَ اللَّهِ غُفِرَ لَهُ ، وَمَنْ قَرَأَيْسَ فَكَأَنَّمَا قَرَأَ الْقُرْآنَ اثْنَتَى عَشْرَةَ مَرَّةً ، وَمَنْ قَرَأَ يُسَ وَهُوَ فِي سَكَرَاتِ الْمَوْتِ جَاءَ رِضْوَانُ خَازِنُ الْجَنَّةِ بِشَرْبَةٍ مِنْ شَرَابِ الْجَنَّةِ حَتَّى يَسْقِيَهُ وَهُوَ عَلَى فِرَاغِيهِ حَتَّى يَمُوْتَ رَيَّانَ، وَيُبْعَثُ رَيَّان

হযরত উবাই ইবন কা’ব (রা.) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি আল্লাহকে খুশি করার উদ্দেশ্যে সূরা ইয়াসীন পাঠ করবে মহান আল্লাহ তাকে ক্ষমা করে দেবেন। যে ব্যক্তি সূরা ইয়াসীন পাঠ করবে সে যেন ১২ বার পবিত্র কুরআন খতম করল। যে ব্যক্তি মৃত্যুমুখী ব্যক্তির সম্মুখে সূরা ইয়াসীন তিলাওয়াত করবে তার নিকট সাথে সাথে জান্নাতের রিদওয়ান ফেরেশতা জান্নাতের শরবত নিয়ে হাজির হবে এমনকি তাকে ঐ অবস্থায় তা পান করাতে থাকবে সে তার বিছানায় থাকাবস্থায়  খাশহালিতে মৃত্যুবরণ করবে।

সূরা ইয়াছিনের ফযীলত সম্পর্কে আরো কয়েকটি হাদিস

 

🌹🌹‘হযরত মা আয়েশা (রা.) বর্ণনা করেন, নবী কারীম বলেছেন, পবিত্র কুরআনে একটি সূরা আছে যা কিয়ামতের ময়দানে তর তিলাওয়াতকারীর জন্য মহান আল্লাহর দরবারে শাফায়াত করবে।”

🌹🌹 যে ব্যক্তি বৃহস্পতিবার-জুমু’আ রাতে এ সূরাটি পাঠ করে ঘুমাবে সে সকাল বেলা গুনাহ মুক্ত হয়ে তার বিছানা থেকে উঠবে 

🌹🌹 যে ব্যক্তি এ সূরাটি দিনে পাঠ করবে তাকে সারা দিনের শান্তি দেয়া হবে আর যে ব্যক্তি এ সূরাটি রাতে পাঠ করবে তাকে সারা রাতের শান্তি প্রদান করা হবে।

🌹🌹 রাসূল (সা.) বলেন, যে ব্যক্তি দিনের শুরুতে  সূরা ইয়াছিন পাঠ করবে মহান  আল্লাহ তার সকল নেক মাকসূদ পূরণ করে দেবেন।

🌹🌹যে ব্যক্তি কবরস্থানে গিয়ে সূরা ইয়াসীন পাঠ করবে মহান আল্লাহ সেই কবরস্থানের কবরবাসীর কবর আজাব হালকা করে দেবেন এবং ঐ কবরস্থানের কবরবাসীর সংখ্যানুযায়ী সওয়াব বণ্টন করে দেবেন ।

🌹🌹 হযরত ইব্‌ন আব্বাস (রা.)-এর দীর্ঘ হাদীসে এসেছে যে, মৃত শয্যায় শায়িত কোন ব্যক্তির কাছে বসে সূরা ইয়াসীন তিলাওয়াত করা হলে প্রত্যেকটি অক্ষরের বরকতে সেখানে ১০ জন করে ফেরেশতা অবতীর্ণ হয়ে সারিবদ্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে যায় এবং ঐ অসুস্থ ব্যক্তির গুনাহ মাফের জন্য দোয়া করতে থাকে। মৃত্যুর পরে ঐ সকল ফেরেশতা তার গোসল ও জানাযার নামাযে শরীক হয় ।

🌹🌹 কোন মুমূর্ষু ব্যক্তির উপরে সূরা ইয়াসীন তিলাওয়াত করা হলে মৃত্যুদানকারী ফেরেশতা তার জান কবয করে না যতক্ষণ পর্যন্ত জান্নাতের রিদওয়ান ফেরেশতা তাকে জান্নাতের শুভ সংবাদ না দেয়। অতঃপর মওতের ফেরেশতা অতি আসানীর সাথে তার জান কবয করেন। এই ব্যক্তি কবরেও সুখে-শান্তিতে অবস্থান করে। কিয়ামতের ময়দানে সে হাওজে কাওসারের মুখাপেক্ষী হবে না; বরং সে শান্তির সাথে আল্লাহর জান্নাতে প্রবেশ করবে।

আরও পড়ুন: তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ম, নিয়ত, দোয়া, ফজিলত ও বিস্তারিত 

🌹🌹 কোন ব্যক্তি মহাবিপদে পড়ে এই সূরাটি পাঠ করলে মহান আল্লাহ তাকে তার সেই বিপদ থেকে উদ্ধারের ব্যবস্থা করে দেবেন। নবী বলেন, আমার উম্মতের প্রত্যেকের উচিত সূরা ইয়াসীন মুখস্থ রাখা। এবং নিয়মিত পাঠ করা।

শেষকথা

সূরা ইয়াসিন মুসলিম সমাজের জীবনযাত্রা, তাদের ধর্মিক আস্থা, অপরাধ এবং মৃত্যু সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে মহত্ত্বপূর্ণ শিক্ষা দেয়। সূরা ইয়াছিনকে তাওরাতে মু’আম্মাহ বলে ডাকা হতো। কেননা এটি তার মুখস্তকারীকে দুনিয়া এবং আখিরাতের ব্যাপক কল্যানের অধিকারী বানায়। তার থেকে দুনিয়ার সকল বালা-মুসীবত দূরীভূত করে।