কুমিল্লা জেলার দর্শনীয় স্থান সমূহ

কুমিল্লা জেলার দর্শনীয় স্থান সমূহ: বাংলাদেশের চট্টগ্রাম বিভাগের কুমিল্লা জেলা শিক্ষা, সংস্কৃতি, খাদিকাপুর ও রসমালাই ইত্যাদির জন্য বিখ্যাত। প্রাচীন ঐতিহ্যের নানা দর্শনীয় স্থান ও ঐতিহাসিক স্থাপনা নিয়ে তৈরি বৈচিত্র্যময় কুমিল্লা জেলা।

বর্তমানে কুমিল্লা জেলার দর্শনীয় স্থান এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য- ময়নামতি জাদুঘর, ময়নামতি ওয়ার সিমেট্রি, শালবন বৌদ্ধ বিহার, রানী ময়নামতি প্রাসাদ, আনন্দ বিহার, রূপবান মুড়া, ইটাখোলা মুড়া, জাহাপুর জমিদার বাড়ি, ফান টাউন পার্ক, ডাইনো পার্ক ও ম্যাজিক প্যারাডাইস উল্লেখযোগ্য।

কুমিল্লা জেলার দর্শনীয় স্থান সমূহ

বাংলাদেশের সবচেয়ে বেশি প্রাচীন ঐতিহ্য ঘেরা জেলা কুমিল্লা। এখানে রয়েছে অসংখ্য প্রত্নতাত্ত্বিক স্থান। বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে অসংখ্য পর্যটক আসে কুমিল্লা জেলার দর্শনীয় স্থান গুলো দেখতে। কুমিল্লা জেলার সবচেয়ে বেশি পরিচিত প্রত্নতাত্ত্বিক দর্শনীয় স্থানসমূহ হলো-

ময়নামতি জাদুঘর

ময়নামতি জাদুঘর বাংলাদেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনের সংগ্রহশালা।
কুমিল্লা জেলার দর্শনীয় স্থান

ময়নামতি জাদুঘর বাংলাদেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনের সংগ্রহশালা। এটি কুমিল্লা শহর থেকে ১৪ কিলোমিটার দূরে সালমানপুরে অবস্থিত ও কুমিল্লা জেলার দর্শনীয় স্থান সমূহের মধ্যে অন্যতম । কুমিল্লার বিভিন্ন প্রত্নতাত্ত্বিক স্থান, যেমন- আনন্দ বিহার, ভোজ রাজার বাড়ি বিহার চারপত্র মুড়া, কোটিলা মুড়া, রূপবানমুড়া, ইটাখোলা মুড়া, রানীর বাংলা ইত্যাদি খননকালে অনেক মুল্যবান পুরাসামগ্রী খুঁজে পাওয়া যায়। এসব প্রাচীন নিদর্শন গুলো সংরক্ষণ ও প্রদর্শনের জন্য ১৯৬৫ সালে কুমিল্লা কোটবাড়ির শালবন বিহারের দক্ষিণ পাশে শালবনকে সামনে রেখে পশ্চিমমুখী করে একটি জাদুঘর স্থাপন করা হয়। পরবর্তীতে পুরাবস্তু গুলো প্রদর্শনের জন্য পর্যাপ্ত জায়গা না হওয়ায় ১৯৭০-৭১ সালে জাদুঘরটি দক্ষিণ পাশে বর্ধিত করা হয়।

ময়নামতি জাদুঘর ভবনে পুরাবস্তু সম্পূর্ণ প্রদর্শনের জন্য মোট ৪২টি আধার রয়েছে। এসকল প্রদর্শনী আধার গুলোতে প্রত্মতাত্ত্বিক স্থান খননের পর পাওয়া প্রাচীন মুদ্রা, ভূমি-নকশা, মৃন্ময় মুদ্রক-মুদ্রিকা, ধাতু লিপি ফলক, পোড়া মাটির ফলক, ব্রোঞ্জ মূর্তি, পাথরের মূর্তি, পাথরের গুটিকা, অলংকারের অংশ, লোহার পেরেক, এবং ঘরে ব্যবহৃত মাটির হাড়ি পাতিল প্রদর্শিত হচ্ছে কুমিল্লা জেলার দর্শনীয় স্থান টিতে।

এছাড়াও ভবনের বিভিন্নস্থানে কিছু পাথর এবং ব্রোঞ্জ মূর্তিও প্রদর্শিত হচ্ছে। এই মূর্তিগুলো হলো- বিভিন্ন ধরনের পাথরের দন্ডায়মান লোকোত্তর বুদ্ধ মূর্তি, গনেশ মূর্তি, সূর্যমূর্তি, পার্বতী মূর্তি, ত্রি বিক্রম বিষ্ণুমূর্তি, তারা মূর্তি, মারীছী মূর্তি, মঞ্জুরের মূর্তি, হেরুক মূর্তি এবং ব্রোঞ্জের বজ্রসত্ত্ব মূর্তি।

এ জাদুঘরে রয়েছে ব্রোঞ্জের তৈরি বিশাল একটি ঘন্টা। যার ওজন প্রায় ৫০০ কেজি। এর ব্যাস ০. ৮৪ মিটার এবং এর উপরের বেড়িসহ উচ্চতা ০.৭৪ মিটার। এছাড়াও জাদুঘরে রয়েছে ময়নামতিতে পাওয়া সুরক্ষিত স্বর্ণ ও রৌপ্য মুদ্রা, পোড়ামাটির ফলক, প্রাচীন হস্তলিপির পান্ডুলিপি ইত্যাদি।

দর্শনের সময় ও মূল্য

ময়নামতি জাদুঘর প্রতি রবিবার ও বিভিন্ন সরকারি ছুটির দিনগুলোতে বন্ধ থাকে। জনপ্রতি প্রবেশ মূল্য ২০ টাকা এবং ৫ বছরের কম বয়সী শিশুদের কোন প্রবেশ মূল্য নেই।

সার্কভুক্ত বিদেশী দর্শনার্থীদের প্রবেশ মূল্য ১০০ টাকা ও অন্যান্য বিদেশী দর্শনার্থীদের প্রবেশ মূল্য ২০০ টাকা। প্রাচীন ইতিহাসের সাথে পরিচিত হতে আপনিও ঘুরে আসতে পারেন কুমিল্লা জেলার দর্শনীয় স্থান টি।

আরও পড়ুন: এনা বাস কাউন্টার নাম্বার

ময়নামতি ওয়ার সিমেট্রি

ময়নামতি ওয়ার সিমেট্রি মূলত দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে (১৯৩৯-১৯৪৫ সালে) নিহত হওয়া তৎকালীন ভারতীয় ও ব্রিটিশ সৈন্যদের কবরস্থান
ময়নামতি ওয়ার সিমেট্রি

ময়নামতি ওয়ার সিমেট্রি মূলত দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে (১৯৩৯-১৯৪৫ সালে) নিহত হওয়া তৎকালীন ভারতীয় ও ব্রিটিশ সৈন্যদের কবরস্থান। বর্তমানে এটি একটি কুমিল্লা জেলার দর্শনীয় স্থান। এটি ১৯৪৩-১৯৪৪ সালে তৈরি হয়েছে। কুমিল্লা শহর থেকে ৫ কিলোমিটার দূরে কুমিল্লা ক্যান্টনমেন্টের টিপরা বাজার ও ময়নামতি সাহেব বাজারের মধ্যস্থলে এই যুদ্ধ সমাধির অবস্থান।

এটি প্রায় ৪.৫ একর পাহাড়ি ভূমির উপর অবস্থিত। এই সমাধিক্ষেত্রটি Commonwealth War Graves Commission (CWGC) প্রতিষ্ঠা করেছিলেন যুদ্ধে মারা যাওয়া সৈনিকদের বিগ্রেডিয়ার পদমর্যাদা দেওয়ার জন্য। ময়নামতি ওয়ার্ড সিমেট্রি বাংলাদেশের ২য় কমনওয়েলথ সমাধিক্ষেত্র। এছাড়াও চট্টগ্রামে ৭৫৫ জন সৈনিকের আরেকটি কমনওয়েলথ সমাধিক্ষেত্র রয়েছে।

ময়নামতি একটি ছোট গ্রাম ছিল, তবে একটি হাসপাতাল, যুদ্ধ সরঞ্জাম সরবরাহ, বিমান ঘাঁটি, চতুর্দশ সেনাবাহিনীর সদরদপ্তর ছিল এখানে। এই সমাধিক্ষেত্রে মোট ৭৩৭টি কবর আছে। যুদ্ধের পর ময়নামতি হাসপাতালের মৃত সৈনিকদের ও বিভিন্ন স্থান থেকে কিছু লাশ স্থানান্তর করেও এখানে সমাহিত করা হয়। এছাড়াও ২৪ জন জাপানি যুদ্ধবন্দী ও একজন বেসামরিক ব্যক্তির সমাধি রয়েছে।

শালবন বৌদ্ধ বিহার

শালবন বৌদ্ধ বিহার
শালবন বৌদ্ধ বিহার কুমিল্লা জেলার কোটবাড়িতে বার্ডের কাছে লালমাই পাহাড়ের মাঝামাঝি এলাকায় অবস্থিত

শালবন বৌদ্ধ বিহার কুমিল্লা জেলার কোটবাড়িতে বার্ডের কাছে লালমাই পাহাড়ের মাঝামাঝি এলাকায় অবস্থিত। বিহারটির আশেপাশে একসময় শালগ বাজারের ঘনবান ছিল বলে শালবন বিহার নামে নামকরণ করা হয়। এর অবস্থানকৃত গ্রামের নাম শালবনপুর। এটি দেখতে পাহাড়পুর বৌদ্ধবিহারের মতো, তবে কিছুটা ছোট একটি কুমিল্লা জেলার দর্শনীয় স্থান।

১৮৭৫ সালে কোটবাড়ি এলাকায় রাস্তা নির্মাণের সময় এখানে ইমারতের ধ্বংসাবশেষ দেখা যায় এবং এটিকে কোন প্রাচীন দুর্গের অংশ হিসেবে ধারণা করা হয়েছিল। তবে সর্বমতের ধারণায়, খৃস্টীয় সপ্তম শতাব্দীর শেষ থেকে অষ্টম শতাব্দীর শুরুতে দেববংশের চতুর্থ রাজা শ্রীভবদেব এ বিহারটি নির্মাণ করে। ধারণা করা হয়, ৮ম শতাব্দীর মধ্যেই ৩য় বারের মতো কেন্দ্রীয় মন্দির ও বিহারের সার্বিক সংস্কার করা হয়। ৪র্থ ও ৫ম পর্যায়ে নির্মাণ কাজ ও সংস্কার সম্পন্ন হয় ৯ম-১০ম শতাব্দীতে।

এটি আকারে চৌকা বা আয়তাকার। বিহারের প্রতিটি বাহুর দৈর্ঘ্য ১৬৭.৭ মিটার। চারিদিকের দেয়াল প্রায় ৫ মিটার পুরু। এর কক্ষগুলো চারপাশের বেষ্টনী দেয়ালের দিকে পিঠ করে নির্মিত। বিহারের প্রবেশ এবং বের হওয়ার জন্য উত্তর ব্লকের মাঝামাঝি স্থানে একটি মাত্র দরজা রয়েছে। প্রতিটি কক্ষের মাঝে রয়েছে ১.৫ মিটার চওড়া দেয়াল।

শালবন বিহারে মোট ১১৫ টি কক্ষ আছে‌ এবং মাঝেই ছিলো কেন্দ্রীয় মন্দির। মনে করা হয়, এই কক্ষগুলোতে ভিক্ষুরা বসবাস ও ধর্মচর্চা করতেন। কক্ষগুলোর সামনে ৮.৫ ফুট চওড়া টানা বারান্দা রয়েছে।

বিহারের বাইরে প্রবেশদ্বারের পাশে চার দিকের দেয়াল ও সামনে চারটি বিশাল গোলাকার স্তম্ভের ওপর নির্মিত একটি রয়েছে,যা ভিক্ষুদের খাবার ঘর ছিল বলে ধারণা করা হয়। হলঘরের মাপ ১০×২০ মিটার। হলঘরের চার দিকে ইটের চওড়া রাস্তা রয়েছে।

কুমিল্লা জেলার দর্শনীয় স্থান এই বিহারটির ধ্বংসাবশেষ থেকে প্রত্নতাত্ত্বিক খননের মাধ্যমে আটটি তাম্রলিপি, অসংখ্য পোড়া মাটির ফলক বা টেরাকোটা, প্রায় ৪০০টি স্বর্ণ ও রৌপ্য মুদ্রা, ব্রোঞ্জ ও মাটির মূর্তি, সিলমোহর পাওয়া গেছে, যার বেশিরভাগই ময়নামতি জাদুঘরে প্রদর্শিত হয়।

নব শালবন বিহার

নব শালবন বিহার
নব শালবন বিহার (Nobo Shalbon Bihar) কুমিল্লার শালবন বৌদ্ধ বিহারের পাশে ঐতিহাসিক স্থাপনার নতুন এক সংযোজন।

নব শালবন বিহার (Nobo Shalbon Bihar) কুমিল্লার শালবন বৌদ্ধ বিহারের পাশে ঐতিহাসিক স্থাপনার নতুন এক সংযোজন। ১৯৯৫ সালের ৮ ই সেপ্টেম্বর প্রায় আড়াই একর জায়গা জুড়ে নব শালবন বিহার ও বাংলাদেশ বুদ্ধিস্ট কালচারাল একাডেমী প্রতিষ্ঠা করা হয়। বর্তমানে এটি কুমিল্লা জেলার দর্শনীয় স্থান গুলোর মধ্যে অন্যতম।

এর প্রধান আকর্ষণ হচ্ছে, সোনালী রঙের বিশাল বৌদ্ধ মূর্তি। মূলত, ২০১৪ সালে থাইল্যান্ডের বৌদ্ধ ধর্মীয় ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে ধাতব পদার্থের উপহার পাওয়া যায়। সেই পদার্থ দিয়ে প্রায় ৬ টন ওজনের ৩০ ফুট উচ্চতার বৌদ্ধ মূর্তি স্থাপন করা হয়।

বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের জন্য এটি একটি বৌদ্ধ উপাসনালয়। এটি দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের অন্যতম ‘শান্তি বিহার’ হিসেবে পরিচিত। নব সালবন বিহারে প্রবেশ করলেই দেখা যায় সূর্যের আলোয় চকচক করা সোনালী রঙের বিশাল বুদ্ধ মূর্তি।

মূর্তিটির পাশেই রয়েছে রাজকীয়ভাবে কারুকার্য মন্ডিত দুটি সিংহ। মন্দিরের সিঁড়িতে রয়েছে আশ্চর্য কারুকার্যময় স্থাপনা। মন্দিরের চারপাশ জুড়ে রয়েছে ৩ টি বড় ও ১ টি ছোট মটক। এছাড়াও মেডিটেশন সেন্টার, এতিমখানা, লাইব্রেরী, জাদুঘর, শালবন বিহার, সেমিনার ও আবাসিক হোস্টেল রয়েছে এই কুমিল্লা জেলার দর্শনীয় স্থান টিকে ঘীরে।

রানী ময়নামতি প্রাসাদ

কুমিল্লার রানী ময়নামতি প্রাসাদ
কুমিল্লা জেলার দর্শনীয় স্থান – রানী ময়নামতি প্রাসাদ (Place of Queen Mainamati) দশম শতাব্দীতে চন্দ্র বংশীয় রাজা মানিক চন্দ্রের স্ত্রী ময়নামতির আরাম আয়েশের জন্য নির্মাণ করা হয়

কুমিল্লা জেলার দর্শনীয় স্থান – রানী ময়নামতি প্রাসাদ (Place of Queen Mainamati) দশম শতাব্দীতে চন্দ্র বংশীয় রাজা মানিক চন্দ্রের স্ত্রী ময়নামতির আরাম আয়েশের জন্য নির্মাণ করা হয়। বর্তমান, কুমিল্লা জেলার বুড়িচং উপজেলায় ময়নামতি ওয়ার সিমেট্রি থেকে তিন কিলোমিটার দূরে এই প্রতাত্ত্বিক নিদর্শনটি অবস্থিত।

১৯৮৮ সালে সমতল ভূমি থেকে ৩ মিটার গভীরে প্রাপ্ত সুড়ঙ্গ পথের সামনে খনন করলেপ্রাসাদের সন্ধান পাওয়া যায়। স্থানীয়দের মতে, এটি একটি ক্রোশাকৃতির মন্দির ছিল, যা পরবর্তীতে সংস্কার করে ২য়,৩য় ও ৪র্থ যুগে পূর্বমুখী ছোট আকৃতির মন্দির বানানো হয়।

কুমিল্লার লালমাই-ময়নামতি পাহাড়ের প্রায় উত্তর প্রান্তে প্রায় ১০ একর জায়গা জুড়ে সমতল ভূমি থেকে ১৫.২৪ মিটার উচ্চতায় একটি বিচ্ছিন্ন পাহাড়ের চূড়ায় রানী ময়নামতি প্রাসাদের অবস্থান। এখানে নির্মান যুগের ৪ টি স্থাপত্য, ৫১০ ফুট দৈর্ঘ্য ও ৫০০ ফুট আয়তনের বেষ্টনী প্রাচীর আবিষ্কৃত হয়। এছাড়াও প্রত্যতাত্ত্বিক নিদর্শন হিসেবে মূল্যবান প্রত্নবস্তু, পোড়ামাটির ফলক ও অলংকৃত ইট আবিষ্কৃত হয়।

এই প্রাসাদের আঙ্গিনায়, প্রতিবছর ৭ই বৈশাখ সনাতন ধর্মাবলম্বীদের মাসব্যাপী বৈশাখ মেলার আয়োজন করা হয়। মূলত এই সময়টিতেই কুমিল্লা জেলার দর্শনীয় স্থান সবচেয়ে বেশি দর্শনার্থী ভিড় করে।

জাহাঁপুর জমিদার বাড়ি

জাহাঁপুর জমিদার বাড়ি
জাহাপুর জমিদার বাড়ি( Jahapur Zamindar Bari) কুমিল্লা জেলার মুরাদনগরে অবস্থিত একটি ঐতিহাসিক ও কুমিল্লা জেলার দর্শনীয় স্থান এর একটি

জাহাপুর জমিদার বাড়ি( Jahapur Zamindar Bari) কুমিল্লা জেলার মুরাদনগরে অবস্থিত একটি ঐতিহাসিক ও কুমিল্লা জেলার দর্শনীয় স্থান এর একটি। বর্তমানে কালের বিবর্তনে জমিদারি প্রথার বিলুপ্তি ঘটেছে। কিন্তু আজও ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে বাংলাদেশে বেশ কিছু জমিদার বাড়ি টিকে আছে।

জাহাঁপুর জমিদার বাড়িও জাহাঁপুর গ্রামের গৌরী মোহনের হাত ধরে প্রায় ৪০০ বছর আগে নির্মিত হয়েছিল। তবে পুরনো এই বাড়িতে জমিদারীর গোরা প্রথম হয় ১৮৬২ খিস্টাব্দে। এই পরিবার জমিদারি লাভ করে ঢাকা জেলার সরোজী মহালের জমিদার রাধিকা মোহন দাস হতে শ্রী গৌরী মোহন রায়ের মাধ্যমে।

জমিদার বাড়িটির আয়তন প্রায় ৩ একর। বাড়ির প্রবেশ ফটকের দু’পাশে রয়েছে দুটি সিংহ মূর্তি। জমিদার বাড়িতে রয়েছে একটি ৩ তলা বিশিষ্ট মূল ভবন ও ৯ টি দু’তলা ভবন। সবগুলো ভবনে দেখা যায় মুঘল রীতিতে অঙ্কিত নকশা। জমিদার বাড়িতে প্রবেশ করতেই একটি নাট্য মন্দির দেখা যায়। জাহাঁপুর জমিদার বাড়ির বর্তমান বংশধর প্রফেসর অঞ্জন কুমার রায়। তার দাদা জমিদার অশ্বিনী কুমার রায় সর্বশেষ জগন্নাথ দেবের রথ ও মন্দির এবং একটি প্রাসাদ প্রতিষ্ঠা করেন।

জাহাঁপুর জমিদার বাড়িতে নিদর্শন হিসেবে জমিদারদের ব্যবহৃত শৌখিন খাট, কাঠের তৈরি আসবাবপত্র, নকশা করা চেয়ার, ফুলদানি, রুপার হাতলের ছাতা ও অন্যান্য নান্দনিক কারুকার্যমণ্ডিত জিনিস দেখা যায়। কুমিল্লা জেলার দর্শনীয় স্থান ঘুরতে চাইলে যেতে পারেন এখানেও।

আনন্দ বিহার

আনন্দ বিহার
আনন্দ বিহার (Ananda Bihara) বাংলাদেশের প্রাচীন প্রত্নতাত্ত্বিক স্থাপত্য গুলোর একটি।

আনন্দ বিহার (Ananda Bihara) বাংলাদেশের প্রাচীন প্রত্নতাত্ত্বিক স্থাপত্য গুলোর একটি। এটি ছিল ময়নামতির অন্যান্য প্রাচীন স্থাপনা গুলোর মধ্যে এটি একটি বৃহত্তম মন্দির ও উপমহাদেশের শেষ বৌদ্ধ বিশ্ববিদ্যালয়। এটি কুমিল্লা জেলা সদরের কোটবাড়ির ময়নামতিতে অবস্থিত। ধারণা করা হয়, ৭ম শতাব্দীর শেষ দিকে বা ৮ম শতাব্দী শুরুর দিকে দেব রাজবংশীয় তৃতীয় শাসক শ্রী আনন্দ দেব এই আনন্দবিহার নির্মাণ করেন। বলা হয়, ৭ম শতকের শেষ দিকে সমতটের রাজধানী ছিল আনন্দ বিহার। কুমিল্লা জেলার দর্শনীয় স্থান এর মধ্যে এটি খুবই আকর্ষনীয়।

১৯৪৪-১৯৪৫ খ্রিস্টাব্দে আনন্দ বিহারের ক্ষরণ কাজ শুরুর জন্য কর্তৃপক্ষের দৃষ্টিগোচর হয়। বিহারে রয়েছে কারুকার্য খচিত নকশা করা বিশাল কাঠামোর কেন্দ্রে সুন্দর একটি দিঘী ও কেন্দ্রীয় মন্দির। মন্দিরের চারদিকের কাঠামোর প্রতিটি বাহুতে রয়েছে সন্ন্যাসীদের কক্ষ। বিশাল আঙ্গিনার এই বিহারের একমাত্র প্রবেশপথ রয়েছে মন্দিরের উত্তর দিকের মধ্যভাগে। বর্তমানে শুধু মন্দিরের দক্ষিণ দিকে খনন কাজ শেষ হয়েছে এবং বিহারের অধিকাংশ খনন বাকি রয়েছে।

কুমিল্লা জেলার দর্শনীয় স্থান আনন্দ বিহার থেকে উদ্ধারকৃত প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন গুলোর মধ্যে তাম্রশাসন, ব্রোঞ্জ মূর্তি, ৬৩ টি রৌপ্য মুদ্রা, পোড়ামাটির ভাস্কর্য ফলক ও মৃৎশিল্পের কাজে ব্যবহৃত ভাঁটি উল্লেখযোগ্য।

রূপবান মুড়া

রূপবান মুড়া দর্শনীয় স্থান
প্রাচীন ইতিহাসের, রহিম ও রূপবানের ভালোবাসার অন্যতম এক নিদর্শন হলো রূপবান মুড়া (Rupban Mura)।

প্রাচীন ইতিহাসের, রহিম ও রূপবানের ভালোবাসার অন্যতম এক নিদর্শন হলো রূপবান মুড়া (Rupban Mura)। কুমিল্লা শহর থেকে প্রায় ৯ কিলোমিটার দূরে কোটবাড়িতে এই প্রত্নতাত্ত্বিক স্থাপনাটি অবস্থিত। ৯০ এর দশকে কুমিল্লা কালিবাজার সড়কের কাছে এই বিহারটি খনন করা হয়। সেই প্রত্নতাত্ত্বিক খনন করে রুপবান মুড়ায় ৩৪.১৪×২৫ মিটারের একটি বিহার ও ২৮.৯৬ মিটারের একটি মন্দিরের ধ্বংসাবশেষ পাওয়া যায়।

মন্দিরের ধ্বংসাবশেষ থেকে একটি বিশাল কারুকার্যময় বোদ্ধ মূর্তি ও ৫ টি মুদ্রা পাওয়া গেছে। ধারণা করা হয়, সেই নিদর্শনগুলো ৭ম থেকে ১২শ শতাব্দীতে নির্মিত হয়েছে। বর্তমানে সেগুলো ময়নামতি জাদু ঘরের সংরক্ষিত আছে। এই সবুজ প্রকৃতির মাঝে গড়ে ওঠা বিহারটিকে ঘিরে রয়েছে রূপবান ও রহিমের প্রেমের নানা ঘটনা ও কাহিনী। বিকেল বেলায় বিহারের উপরে দাঁড়ালে দেখা যায় সূর্যাস্তের মনমুগ্ধকর দৃশ্য। এছাড়াও নিরিবিলি সময় কাটাতে স্থানীয় বাসিন্দারা সহ সারা দেশ থেকে অসংখ্য পর্যটক রূপবান মুড়াসহ কুমিল্লা জেলার দর্শনীয় স্থান ঘুরতে আসে।

ইটাখোলা মুড়া

ইটাখোলা মুড়া (Itakhola Mura) কুমিল্লা সদর উপজেলা থেকে প্রায় ৯ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত একটি বৌদ্ধ বিহার।
ইটাখোলা মুড়া

ইটাখোলা মুড়া (Itakhola Mura) কুমিল্লা সদর উপজেলা থেকে প্রায় ৯ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত একটি বৌদ্ধ বিহার এবং কুমিল্লা জেলার দর্শনীয় স্থান সমূহের মধ্যে অন্যতম। তৎকালীন সেই স্থানে ঈদ পোড়ানো হতো, তাই জায়গাটি ইটাখোলা মুড়া নামে পরিচিত লাভ করে। এটি ৭ম-৮ম শতাব্দীতে নির্মিত হয়। কুমিল্লার রূপবান মুড়ার বিপরীত পাশে সমতল থেকে প্রায় ৪০ ফুট উঁচুতে এই প্রত্নস্থান টির তিনটি স্তর পরিলক্ষিত হয়। এটি কুমিল্লার জেলার দর্শনীয় স্থানসমূহ এর মধ্যে অন্যতম।

ইটা খোলা মুড়ায় প্রত্নতাত্ত্বিক ক্ষননের মাধ্যমে একটি বৌদ্ধ মঠ ও বৌদ্ধস্তূপ পাওয়া যায়। কুমিল্লা জেলার দর্শনীয় স্থান হিসেবে ইটাখোলা মুড়ার মূল আকর্ষণ এর আবিষ্কৃত বিস্তীর্ণ স্তূপ কমপ্লেক্স। এটি প্রায় ১৩.১ বর্গমিটার ভিতের উপর অবস্থিত। এর সম্মুখভাগের কেন্দ্রে ২.৪ মিটার দৈর্ঘ্য ও ২.১ মিটার প্রস্থের একটি ক্ষুদ্র পীঠ স্থান রয়েছে। আয়তাকার ক্ষেত্রের মাঝখানে রয়েছে বিহারের মূল মন্দির।

প্রত্নতাত্ত্বিক খননের সময় এখানে বেশ কিছু উল্লেখযোগ্য নিদর্শন পাওয়া গিয়েছে। যেমন- তাম্রশাসন, প্রায় ১৮ তোলা ওজনের স্বর্ণ, রৌপ্য মুদ্রা, মাটির পাতিল রক্ষিত সোনার বল, ধাতব ধ্যানীবুদ্ধ অক্ষোভ্য, কলংকৃত পোড়ামাটির ফলক, তেলের প্রদীপ, মাটির পাত্র, ইত্যাদি।

নবাব ফয়জুন্নেসা জমিদার বাড়ি

নবাব ফয়জুন্নেসা জমিদার বাড়ি
নবাব ফয়জুন্নেসা জমিদার বাড়ি কুমিল্লা

নবাব ফয়জুন্নেসা জমিদার বাড়ি কুমিল্লা জেলা লাকসাম উপজেলার পশ্চিমগাঁও এলাকায় ডাকাতিয়া নদীর তীরে অবস্থিত। এটি কুমিল্লা জেলার দর্শনীয় স্থান গুলোর মধ্যে অন্যতম। এটি প্রতিষ্ঠা করেন ভারতবর্ষের একমাত্র মহিলা নবাব ফয়জুন্নেসা চৌধুরানী। তিনি একটি সম্ভ্রান্ত মুসলিম জমিদার পরিবারের জন্মগ্রহণ করেন এবং জমিদার গাজী চৌধুরীকে বিয়ে করেন।

কিন্তু পরবর্তীতে তাদের বিবাহ বিচ্ছেদ হয়। বিবাহ বিচ্ছেদের সময় পাওয়া দেনমোহরের এক লক্ষ এক টাকা দিয়ে তিনি এই জমিদার বাড়িটি তৈরি করেন। তিনি ছিলেন নারীদের শিক্ষার ক্ষেত্রে এক সাহসী উদ্যোগী। তার জমিদারির অধিকাংশ আয় নারী শিক্ষার পেছনে ব্যয় করতেন। এখানে ব্রিটিশ রাণী ভিক্টোরিয়া তাকে এক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে নওয়াব উপাধিতে ভূষিত করে।

বর্তমানে সেই জমিদার বাড়িতে বাড়ির প্রবেশদ্বার, বসবাসের জন্য একটি দ্বিতল বিশিষ্ট ভবন, বাগানবাড়ী, মসজিদ, কবরস্থান ও একটি কাছারিঘর রয়েছে। প্রায় নষ্ট হতে যাওয়া বাড়িটি বর্তমানে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর এই বাড়িটির সংস্কার করেন।

উপরোক্ত কুমিল্লা জেলার দর্শনীয় স্থান গুলো বাংলাদেশের প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনের পরিচয় তুলে ধরে।

কুমিল্লা জেলার আধুনিক দর্শনীয় স্থানসমূহ

অসংখ্য প্রত্নতাত্ত্বিক স্থানের পাশাপাশি কুমিল্লায় বেশ কিছু আধুনিক পার্ক রয়েছে। বর্তমানে সবচেয়ে পরিচিত কুমিল্লার আধুনিক পার্কগুলো হলো-

ফান টাউন পার্ক

 ফান টাউন (Fun Town) পার্ক বিনোদনের একটি আধুনিক ভার্চুয়াল থীম পার্ক।
কুমিল্লা জেলার দর্শনীয় স্থান

ফান টাউন (Fun Town) পার্ক বিনোদনের একটি আধুনিক ভার্চুয়াল থীম পার্ক। এটি কুমিল্লা জেলার ঢুলিপাড়াতে বেসরকারি উদ্যোগে ২০১৬ সালে তৈরি করা হয়। এটি ছোট বড় সব বয়সী মানুষের জন্য নির্মল বিনোদনের একটি উপযুক্ত স্থান। কুমিল্লা জেলার দর্শনীয় স্থান সমূহের মধ্যে এইপার্কটিতে রয়েছে আকর্ষণীয় মনোরম পরিবেশ।

বিনোদনের জন্য আকর্ষণীয় নানারকম মজার রাইড পেয়ে যাবেন এই পার্কে। ফান টাউন পার্কের মুল আকর্ষণ ১৫ ডি সিনেমা। এছাড়াও বাচ্চাদের জন্য রয়েছে নাগরদোলা, বাম্পার কার, সুইং চেয়ার, ট্রেন, প্যাটেল বোট, মেরিগো রাউন্ড, সেল্ফ কন্ট্রোল এরোপ্লেন ইত্যাদি ইনডোর ও আউটডোর রাইড। বিশেষ দিনগুলোতে এখানে কনসার্ট, ডিজে এবং সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজিত হয়।

পার্কের ভ্রমণের তথ্য

ফান টাউন পার্কটি প্রতিদিন সকাল ৮ টা থেকে রাত ৮:৩০ মিনিট পর্যন্ত উন্মুক্ত থাকে। এই পার্কে ভ্রমণের বিভিন্ন খরচ গুলো হলো-

  • প্রবেশ মূল্য- ৫০ টাকা
  • নাগরদোলা- ৫০ টাকা
  • মেরিগো রাউন্ড- ৫০ টাকা
  • ট্রেন- ৫০ টাকা
  • ইনডোর গেমস- ৫০ টাকা
  • ১৫ ডি সিনেমা- ১০০ টাকা
  • বাম্পার কার – ১০০ টাকা
  • প্যাডেল‌ বোট- ১০০ টাকা
  • সেলফ কন্ট্রোল এরোপ্লেন- ১০০ টাকা
  • সুইং চেয়ার- ১০০ টাকা

ছুটির দিনগুলোতে আধুনিক বিনোদনের খোঁজে অসংখ্য দর্শনার্থী ছুটি আসেন এই পার্কে।

ডাইনো পার্ক

 বিলুপ্ত হওয়া ডাইনোসরদের চলাফেরার রাজ্য ডাইনোসর পার্ক কুমিল্লা জেলার কোটবাড়ির লালমাই পাহাড়ে নির্মাণ করা হয়।
কুমিল্লা জেলার দর্শনীয় স্থান

বিলুপ্ত হওয়া ডাইনোসরদের চলাফেরার রাজ্য ডাইনোসর পার্ক কুমিল্লা জেলার কোটবাড়ির লালমাই পাহাড়ে নির্মাণ করা হয়। প্রায় ১২ একর জায়গা নিয়ে নির্মিত ডাইনোসর পার্ক সকলের কাছে ডাইনো পার্ক (Dino Park) নামে পরিচিত। এটি সমতল ভূমি থেকে প্রায় ৪৫ ফুট উঁচুতে অবস্থিত, যা পাখির কিচিরমিচির মুখরিত মনোমুগ্ধকর একটি থিম পার্ক। আধুনিকভাবে গড়ে উঠা কুমিল্লা জেলার দর্শনীয় স্থান গুলোর মধ্যে এটি বাংলাদেশের সর্বপ্রথম ডাইনোসর থিম পার্ক।

ডাইনো পার্কের প্রধান আকর্ষণ ডাইনো জোন, যেখানে ডাইনোসরদের মোটরাইজড নাড়াচড়া ও গর্জন শুনতে পাওয়া যায়। প্রতিটি ডাইনোসরের নিচে দেওয়া রয়েছে তাদের ইতিহাস সম্পর্কিত তথ্য। ডাইনো জোনে যেতে হলে পার্কের রংধনু সিঁড়ির ৪০ ধাপ বেয়ে টিলায় চড়তে হবে। ডাইনোসর ছাড়াও ডাইনো পার্কে রয়েছে রোলার কোস্টার, ড্রাগন কোস্টার, বাম্পার কার, অক্টোপাস, মেরিগো রাউন্ড ইত্যাদি আকর্ষণীয় রাইড। এছাড়াও প্যারিস হুইল, যা Eye of Lalmai (লালমাইয়ের চোখ) নামে পরিচিত। প্যারিস হুইলে ১০০ ফুট উচ্চতা থেকে লালমাইয়ের সৌন্দর্য উপভোগ করা যায়।

এছাড়াও রয়েছে কিডস জোন, কার পার্কিং, দ্যা হিল ক্যাফে রেস্টুরেন্ট, পিকনিক আয়োজনের ব্যবস্থা। ডাইনো পার্ক খোলা থাকে প্রতিদিন সকাল ১০ টা থেকে বিকাল ৬ টা পর্যন্ত। এর প্রবেশ ফ্রি জনপ্রতি ২০০ টাকা। বড়দের রাইডগুলো ১০০ টাকা এবং ছোটদের রাইডগুলো ৫০ টাকা। বিনোদনের জন্য কুমিল্লা জেলার দর্শনীয় স্থান টি।

ম্যাজিক প্যারাডাইস পার্ক

(Magic Paradise Park) ম্যাজিক প্যারাডাইস পার্ক কুমিল্লার সবচেয়ে সুন্দর ও বড় অ্যামিউজমেন্ট পার্ক।
কুমিল্লা জেলার দর্শনীয় স্থান

(Magic Paradise Park) ম্যাজিক প্যারাডাইস পার্ক কুমিল্লার সবচেয়ে সুন্দর ও বড় অ্যামিউজমেন্ট পার্ক। কুমিল্লা জেলার কোটবাড়ি এলাকায় অবস্থিত। কুমিল্লা জেলার দর্শনীয় স্থান গুলোর মধ্যে এটি ছোট বড় সবার জন্যই এটি একটি আকর্ষণীয় বিনোদনের স্থান। এই বিশাল অ্যামিউজমেন্ট পার্কে রয়েছে- ওয়াটার পার্ক, ডাইনোসর পার্ক, পিকনিক স্পট ও ২০ টির বেশি আকর্ষণীয় রাইড। এই পার্কের গেটটি বিদেশি কার্টুন ডিজনেকের নান্দনিকতার আদলে তৈরি। আধুনিক বিনোদনের জন্য প্রতিদিন বহু মানুষের আগমন হয় এই পার্কে।

ম্যাজিক প্যারাডাইস পার্কটি প্রতিদিন সকাল ৯:৩০ থেকে সন্ধ্যা ৬:৩০ পর্যন্ত খোলা থাকে। পার্কের প্রবেশ মূল্য জনপ্রতি ২০০ টাকা, তবে ৬ বছরের নিচে বাচ্চাদের কোন প্রবেশ মূল্য লাগেনা। এছাড়াও এর ওয়াটার পার্কে প্রবেশ মূল্য ৩০০ টাকা ও বিভিন্ন রাইড এর টিকেট মূল্য ৫০ থেকে ১০০ টাকা। পার্কের বিভিন্ন রাইডের টিকেট নিয়ে একসাথে অনেক ধরনের প্যাকেজ পাওয়া যায়। আপনি চাইলে একসাথে কম মূল্যে কয়েকটি রাইডের প্যাকেজ নিতে পারেন।

কুমিল্লা জেলার দর্শনীয় স্থান সমূহ ভ্রমন টিপস

  • উপরোক্ত কুমিল্লার দর্শনীয় স্থানগুলোর বেশিরভাগই কুমিল্লা শহরের কাছাকাছি স্থানে অবস্থিত। তাই একই সাথে সবগুলো স্থানে ঘুরে আসার প্লান করতে পারেন।
  • এ ধরনের স্থানগুলোতে বাংলাদেশের প্রাচীন ইতিহাস সম্পর্কে অনেক জ্ঞান অর্জন করতে পারবেন।
  • গ্রুপ করে গেলে বেশি আনন্দ করতে পারবেন ও খরচ কমে যাবে।
  • গাড়ি ভাড়া ও অন্যান্য অর্থ সম্বলিত বিষয়গুলো পূর্বেই আলোচনা করে নিন।
  • দর্শনীয় স্থানের সৌন্দর্য নষ্ট হয় এমন কিছু করবেন না।

কুমিল্লা জেলার দর্শনীয় স্থান সমূহ সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত প্রশ্নোত্তর (FAQ’s)

বাংলাদেশের প্রথম ডাইনোসর পার্ক কোথায় অবস্থিত?

ডাইনোসর পার্ক কুমিল্লা জেলার কোটবাড়ির লালমাই পাহাড়ে অবস্থিত।

ময়নামতি ওয়ার সিমেট্রি কি?

ময়নামতি ওয়ার সিমেট্রি মূলত দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে (১৯৩৯-১৯৪৫ সালে) নিহত হওয়া তৎকালীন ভারতীয় ও ব্রিটিশ সৈন্যদের কবরস্থান।

কুমিল্লা জেলার দর্শনীয় স্থান কি কি?

কুমিল্লা জেলার দর্শনীয় স্থান সমূহ হলো- শালবন বৌদ্ধ বিহার, ময়না মতি জাদুঘর, ময়নামতি ওয়ার সিমেট্রি, রানী ময়নামতি প্রাসাদ, আনন্দ বিহার, রূপবান মুড়া, ইটা খোলা মুড়া, জাহাপুর জমিদার বাড়ি, ফান টাউন পার্ক, ডাইনো পার্ক ও ম্যাজিক প্যারাডাইস ইত্যাদি।