আমাদের ব্যক্তিত্ব ধরে রাখার জন্য অনেক সময় চিন্তা করি আমাদের কোন কোন বিষয়গুলো মেনে চলা বা জীবনে প্রয়োগ করা উচিত আবার কোন বিষয়টি করা উচিত নয়। স্থান-কাল পাত্র বেদে আমাদের অনেক জিনিস করা উচিত আবার অনেক কিছু বর্জন করা উচিত। আসল কথা হলো ব্যক্তিত্ব ধরে রাখাটা একান্ত প্রয়োজন। আমাদের জীবনের উন্নতির জন্য বা জীবন সুন্দরভাবে পরিচালনার জন্য কোন কোন কাজ আমাদের বর্জন করা দরকার তার সাধারণ কিছু নমুনা আমাদের এই আর্টিক্যালে তুলে ধরা হলো-
কোন বিষয়গুলো কখনোই করা উচিত না
১। আপনার জীবনে ৩ শ্রেণির লোককে কখনও ভুলে যাবেন না
- আপনার বিপদের সময়ে কে আপনাকে সাহায্য করেছে।
- আপনার বিপদের সময় কে আপনাকে ছেড়ে চলে গেছে।
- কে আপনাকে আপনার বিপদের সময়ে কাছে রেখেছে।
২। কখনোই নিজেকে বড় করে প্রকাশ করবেন না বা অহংকার করবেন না। এটি দুনিয়ার সবচেয়ে খারাপ কাজগুলোর একটি।
৩। নিম্নের কাজগুলো কখনোই প্রকাশ্যে করবেন না –
- ফোনে জোরে কথা বলবেন না।
- রাস্তায় মারামারি করবেন না।
- বাচ্চাদের সাথে চিৎকার করে কথা বলবেন না, আপনি হয়ত জানেন না যে বাচ্চারা কতটা সংবেদনশীল।
৪। আপনার বাবা-মাকে কখনোই উপেক্ষা করবেন না। পিতা মাতাকে সম্মান করুন।
৫। রাগের মাথায় কখনই বড় সিদ্ধান্ত নেবেন না। হয়ত এটাই আপনার জীবনের সবচেয়ে বড় ভুল সিদ্ধান্ত হতে পারে।
৬। ধন্যবাদ, দয়া করে’ (Thank you, Please) এগুলো বলতে দ্বিধা করবেন না।
৭। অভিজ্ঞতা ছাড়া কোন ধরনের ব্যবসা করতে যাবেন না। তাহলে ক্ষতিগ্রস্থ হবার সম্ভবনা থাকে।
৮। কৌতুহলবশত হোক আর বন্ধুদের অনুরোধে হোক কখনোই সিগারেট ও অন্যান্য মাদক দ্রব্য ট্রাই করবেন না। কখনও ধূমপান একবার আপনি শুরু করলে তা ছেড়ে দেওয়া খুব কঠিন হবে।
৯। আপনার চেহারা, উচ্চতা, বাবা-মা এর পারিবারিক স্ট্যাটাস নিয়ে ইনসিকিউরড হবেন না।
১০। পরচর্চা বা গীবত করবেন না। গীবত করা আপন মৃত ভাইয়ের গোস্ত খাওয়ার সমান।
১১। নিজেকে বা অন্যকে কখনই অবমূল্যায়ন বা হেও করবেন না।
১২। জীবনে যতই কঠিন পরিস্থিতি আসুক কখনই আত্মহত্যার সিদ্ধান্ত নিবেন না। কারন প্রতিটি কষ্ঠের পর সুখ আসবেই।
১৩। কোন অবস্থাতে পর্ণোগ্রাফিতে আসক্ত হবেন না। এতে করে আপনি স্বল্পস্থায়ী সুখের জন্য আপনার সুন্দর জীবন হারাবেন।
১৪। কারো সম্পর্কে নেতিবাচক ধারণা পোষণ করবেন না। আপনি হয়ত জানেন না, আপনি যার সম্পর্কে নেতিবাচক ধারনা পোষণ করছেন সে কোন পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যাচ্ছে।
১৫। জিমে কখনও অতি উৎসাহী হয়ে অতিরিক্ত ভার উত্তোলন করতে যাবেন না এর ফলে আজীবন গুরুতর জখম হয়ে পঙ্গুত্ব বয়ে বেড়াতে হতে পারে।
আরও পড়ুন: ধৈর্য কি, জীবনে সফল হতে হলে কেন ও কিভাবে ধৈর্য ধরবেন
১৬। কাউকেই বিশ্বাস করে আপনার ব্যক্তিগত বিষয় শেয়ার করবেন না। পরবর্তীতে এগুলো আপনার জন্য কাল হয়ে দাঁড়াতে পারে।
১৭। আপনার মনের কথা প্রকাশ করতে দেরী বা বিলম্ব করবেন না। কারণ, এই একটি কাজের বিলম্বের জন্য আপনি সারাজীবন পস্তাতে পারেন।
১৮। প্রতিটি মানুষের জীবনের একটি লক্ষ থাকে। আপনি জীবনে যা হতে চান, সেটি হুট করে হবার বা হাসিল করতে চাইবেন না। ভালোভাবে চিন্তা-ভাবনা করে দেখুন, আসলে সেটা হতে চান কিনা। এই ব্যাপারটা আপনার জীবন পালটে দেবে। আমরা বেশিরভাগ লোক ই আসলে নিশ্চিত নই, আমরা আসলে কি হতে চাই।
১৯। সময়কে একদম অবহেলা করবে না। সময় আর ফিরে আসে না। তাই সময়ের কাজ সময়ে করার চেষ্টা করুন।
২০। বড়দের বা জ্ঞানীদের উপদেশকে সম্মান করবে। বয়স কম থাকায় মনে হতে পারে বড়রা বা জ্ঞানীরা ভুল বলছে, কিন্তু বড় হয়ে বুঝবে তুমিই ভুল বুঝেছিলে।
কোন বিষয়টি করা উচিত নয়
সমাজে আমাদের অনেক ছোট খাটো বিষয় আছে যা আমরা সচরাচর করে থাকি, আমরা হয়ত ভাবিনা এর ফলে কি হবে, এমন কিছু বিষয়ের মধ্যে রয়েছে :
- অন্যের প্রতি সহিংসতা করা।
- অন্যের সম্পত্তির ক্ষতি করা।
- মিথ্যা কথা বলা।
- চুরি করা।
- প্রতারণা করা।
- অন্যের গোপনীয়তা লঙ্ঘন করা।
- অন্যের প্রতি বৈষম্য করা।
- অন্যের প্রতি সহিংসতা উস্কে দেওয়া।
- অন্যেকে হুমকি দেওয়া।
- অন্যেকে অপমান করা।
- অন্যের প্রতি বিদ্বেষ ছড়ানো।
এই বিষয়গুলি আমাদের কখনোই করা উচিত না কারণ এগুলি অন্যের ক্ষতি করে। এগুলি আমাদের সুন্দর সমাজ নষ্ট করে, সমাজে অশান্তি এবং বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে। এগুলি আমাদেরকে একজন ভাল মানুষ হতে বাধা প্রদান করে।
কি কি বিষয় মেন চলা উচিত
- ‘না’ বলতে ভয় পাবেন না।
- সবাইকে সন্তুষ্ট করতে যাবেন না।
- কাউকে অন্ধভাবে বিশ্বাস করবেন না।
- যে কোনো আড্ডাতে সময় নষ্ট করবেন না।
- রিলেশনসিপে সুখী না হলে তা চালিয়ে যাবেন না।
- কালকের জন্য কোন কাজ ফেলে রাখবেন না। সময়ের কাজ সময়ে করা ভালো।
- রান্না-বান্না না শিখে নিজেকে দক্ষ রাধূনী দাবী করবেন না।
- পড়াশোনায় অবহেলা করা উচিত না।
- ভুলেও কখনই মিথ্যে কথা বলবেন না।
- অন্যায় কাজে লিপ্ত হবেন না।
- বন্ধু বাছাইয়ের সময় সর্ব্বোচ্ছ সতর্ক থাকবেন।
- কারো ভক্ত হলেও অন্ধভক্ত হতে যাবেন না।
- কারো কোনো বাজে কাজকে প্রশ্রয় বা সায় দেবেন না।
- সবধরণের নেশাজাতীয় দ্রব্য থেকে দুরে থাকা উচিত।
- অহংকারী, বদমেজাজি, হিংসুক হবেন না।
- নিজ ধর্ম পালন করবেন। ইবাদতে অবহেলা করবেন না।
- নিজেকে কখনোই অন্যের সঙ্গে তুলনা করবেন না।
- নিজের স্বাস্থ্যের প্রতি নজর রাখবেন ও নিজের মানসিক অবস্থাকে অবহেলা করবেন না।
- নেতিবাচক পরিবেশে না থাকাই ভালো।
- সময় মতো সালাত আদায় করুন।
সতর্কতা
কিছু কিছু বিষয় যা আমরা না ভেবে করে ফেলি, কোন বিষয়টি করা উচিত নয় তা কখনই চিন্তাই করি না এর ফলে আমাদের জীবনে কি কি সমস্যার সৃষ্টি হতে পারে। এর পরিনাম কখনও কখনও ভয়ংকর ও হয়। যেমন-
১। বন্ধু নির্বাচন করতে সর্বোচ্চ সতর্ক হোন। ভালো বন্ধু আপনাকে ভালো পরামর্শ দিবে আর খারাপ বন্ধু আপনাকে একেবারে খারাপ বানিয়ে দিবে। শেখ শাদী বলেছেন, সংঙ্গগুণে লোহা জলে বাসে।
২। নিজের আবেগকে কন্টোলে রাখবেন। আবেগের বসে পড়ে জীবন ধ্বংস করবেন না। যদি আবেগে পড়ে কিছু করে বসেন, তাহলে সাময়িক আনন্দ পাবেন কিন্তু সারাজীবন কাঁদতে হবে।
৩। কখনো পরিবার আত্মীয় স্বজন সবাইকে খুশি করার মনমানসিকতা রাখবেন না। আপনি চাইলেই সবাইকে খুশি করতে পারবেন না। তবে সবার সাথে ভালো ব্যবহার করা উচিৎ।
টাইটানিক জাহাজের ইতিহাস সম্পর্কে জানতে ভিজিট করুন
৪। মা-বাবার সাথে কখনো খারাপ আচরণ করবেন না। তাহলে দুনিয়া আখিরাত উভয়ই হারাবেন।
৫। আপনার অতিত ভুলবেন না। অতিতকে মনে রেখে সামনে এগিয়ে যাওয়াই বুদ্ধিমানের কাজ।
৬। আগে সালাম দেওয়ার অভ্যাস করুন। শুধুমাত্র ইমাম আর আলিমকে সালাম না করে রিকশাওয়ালাকেও সালাম করতে পারেন। তাহলে আপনি অংহকারী হতে মুক্ত থাকবেন।
৭। মহিলাদের সম্মান করতে ভুলবেন না। রাস্তা-ঘাটে মেয়েদের বিরক্ত করবেন না বা তাদের সম্পর্কে বাজে মন্তব্য করবে না। মনে রাখবেন, আপনি রাস্তা-ঘাটে মেয়েদের সাথে খারাপ আচরণ করলে কেউ না কেউ আপনার বোনের সাথে খারাপ আচরণ করবে।
৮। নতুন কিছু সম্পর্কে জানার আগ্রহ কমাবেন না। এরজন্য বিভিন্ন বই,পত্র-পত্রিকা, ম্যাগাজিন বা ওয়েবসাইটে ভালো ভালো তথ্য বা জ্ঞান মূলক তথ্য সম্পর্কে পড়তে পারেন।
৯। নিজের জন্য যা খাবেন বা ব্যবহার করবেন অন্যের জন্য তা করতে হবে, অন্দের জন্য মন্দটা পছন্দ করবেন এমন চিন্তাও মনে আনবেন না।
১০। অন্যের জন্য গর্ত খুঁড়তে যাবেন না। সেই গর্তে অন্য কেউ পড়তেও পারে আবার নাও পড়তে পারে কিন্তু আপনি যে এই গর্তে পড়বেন এটা নিশ্চিত। এই ব্যাপারে কোন সন্দেহ পোষণ করবেন না। তাই সবার ভালো চাইবেন।
শেষকথা
কোন বিষয়টি করা উচিত নয় তার সবচেয়ে সহজ সমাধান হলো ধর্মীয় আদেশ-নিষেধ মেনে চলা। কোন ধর্মেই অন্যায় কাজকে প্রশয় দেয় না। আপনি যেকোনো ব্যাপারে শুধু ধর্মের কথা মানবেন, কুরআন, হাদিসে কি বলা হয়েছে তা মানলেই আপনার জীবন সফল হবে। অন্যান্য ধর্মাবলম্বীরা তাদের নিজ ধর্মগ্রন্থ্য পড়ে জীবন চালাতে পারেন। ধর্মে এমন কিছু করতে বলা হয়নি যা করলে আপনার জন্য ক্ষতিকর হবে।